নির্ণয়

-আমিনা আফরোজ

লাভ-ক্ষতির হিসেব কষতে বসব না
কারণ ‘ক্ষতি’ আমার কাছে আপেক্ষিক
এই ক্ষতির আড়ালে যে আমি কেবলই লাভ দেখতে পাই!

ভুল-ঠিক নির্ণয় করতেও বসব না
কারণ ভুলগুলো তো আমাকে শুধুই শিখিয়েছে
কী করে সঠিক পথে এগোতে হয়।

সফলতা-ব্যর্থতার সংজ্ঞা?
সে তো পুরোপুরিই আপেক্ষিক!

সুখ-দুঃখ?
সে তো জীবনের অনুষঙ্গ!
একটি ছাড়া আরেকটি যেন কোনই অর্থ বহন করে না!

বাধা-বিপত্তি তো আমার সুযোগ –
নিজেকে আরও যোগ্য করে তুলতে,
সামনে এগিয়ে যেতে।

সমালোচলকের প্রতি তো আমি কৃতজ্ঞ
আমার ঘাটতিগুলো ধরিয়ে দেয়ার জন্য।

একটু ভেবে দেখি তো?
‘ক্ষতি’ না হলে কী করে বুঝব ‘লাভ’ কীসে হয়?
‘ভুল’ না করে কী করে বুঝব ‘সঠিক’ কোনটি?
‘দুঃখ’ না পেলে কি কোন দিন বুঝতে পারব ‘সুখ’ কী জিনিস?
‘ব্যর্থ’ না হলে ‘সফলতা’ উপভোগ করব কীভাবে?
‘বাধা-বিপত্তি’ ছাড়া কি জীবন একঘেয়ে ও বিস্বাদ হয়ে যাবে না?

আমি দেব না আমার ব্যর্থতাকে আমার উপর জয়ী হতে
কারণ আমি জানি ব্যর্থতা বড্ড জরূরী
আমার স্পৃহাকে শাণিত করতে।

দুঃখ থেকে আমি শক্তি সঞ্চয় করি,
আর ভুল থেকে শিক্ষা।

ক্ষতিকে আমি দেখি লাভ করার পাথেয় হিসেবে
এই আমার জীবনের দীক্ষা।

হতাশার কোন স্থান নেই আমার মনে
কেননা আমি বিশ্বাস করি ‘নিয়তি’ তে –
নিয়তির ভাল-মন্দে।

আমি জানি যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর বিবেচনাই আমার জন্য শ্রেষ্ঠ
তিনি আমাকে তাই দিয়েছেন যা আমার জন্য সর্বোৎকৃষ্ট।

যার অপার অনুগ্রহে আমি নিমজ্জিত
কোন সাহসে অভিযোগ করি তাঁর সিদ্ধান্তে?

পরশ্রীকারতা?
সে তো কেবল আমার ভেতরটাকেই কলুষিত করবে!

বাইরের রঙচঙে আবহ আমাকে মোহিত করে না
কারণ আমি জানি ভেতরে তা কতটা বিবর্ণ!

পরোয়া করি না আমি পাছে লোকে কী বলে তাতে
কারণ আমার সুখ আমার নিজের কাছে –
অন্যের বেঁধে দেয়া সংজ্ঞায় নয়।

শুধু কামনা করি
আর একটু ধৈর্য্যর আর তুষ্টির।

যেন অসুস্থ প্রতিযোগিতায় পড়ে
হারিয়ে না ফেলি মূল্যবান সময়, অর্থ, বল।

আরও চাই আরও
আমার কেন নেই যা আছে ওর –
যেন নিজেকে রক্ষা করে চলতে পারি
এই লিপ্সা থেকে।

যেন কৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরণ করতে পারি
ভালো আছি – অনেক ভালো – বহু মানুষের চেয়ে!

যেন বারবার নিজেকে স্মরণ করাতে পারি
এই জীবন তো কেবলই একটি পরীক্ষা-ক্ষেত্র।

যেন ইহজীবনের ধোঁকায় পড়ে
পরকালের লক্ষ্য থেকে ভ্রষ্ট না হয়ে যাই।

যেন মেনে চলতে পারি
তাঁর দেয়া বিধি-বিধান –
যাতে নিহিত আছে শুধুই কল্যাণ।

যেন বিচার দিবসে উত্তীর্ণ হতে পারি
সফলতার সাথে –
অনন্ত সুখের জীবনে প্রবেশ করতে পারি
তাঁরই করুণাতে!
……………………

#রৌদ্রময়ী_কাব্য