ননদ-ভাবী

ননদ-ভাবী

ছোট মামীর ফোনটা রেখে তিথি বারান্দা থেকে আনা কাপড়গুলো ভাঁজ করতে শুরু করল আবার। ভাঁজ করতে করতেই ভাবতে লাগল তিথি, আজ বার দিন হয়ে গেল ওর শাশুড়ি পরলোকগমন করেছেন। এর মাঝে ওর ভাই, বোন, মামা, খালা সবাই ফোন দিয়েছে। যারা যারা পেরেছিল ওর শাশুড়ির ইন্তেকালের দিন বাসায় এসেছিল, জানাযায় শরিক হয়েছে।

শুধু ওর প্রবাসী একমাত্র ভাবীই এখনো পর্যন্ত একবারও ফোন দিল না। শাশুড়ির মৃত্যুর পর ছোট বাচ্চা নিয়ে কিভাবে সদ্য হাতে পাওয়া একটা সংসার সামলাচ্ছে একবার জানতেও চাইল না? এমন না যে ভাবীর সাথে ওর কোন মনোমালিন্য চলছে। আবার ওর ভাবী এত বেখেয়ালও না যে ননদকে এমন সময় ফোন দেয়ার কথা মনে থাকবে না।

তিথির মা বলতেন, ননদ-ভাবীর সম্পর্ক খুব মধুর সম্পর্ক। ছেলের বউর সাথে উনি নিজেও ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে সচেতন ছিলেন, মেয়েকেও সেটাই শিখিয়েছেন। তারপরও, মানুষের মন তো!

এক দুইবার তিথির অভিমান হয়েছে। মাকে বলেও ফেলেছে ওর খারাপ লাগার কথা। ওর মা স্বভাবসুলভ ভাবেই বউকে সেফ সাইডে রেখে বলেছেন, “অনেকসময় ব্যস্ততার কারণে মানুষের প্রয়োজনীয় কাজের কথাও মনে থাকে না, হতে পারে এমন কিছুই হয়েছে।”

এদিকে তিথিরও মনে হতে লাগল যে ভাবী ফোন না দেয়া পর্যন্ত সেও আর ফোন দিবে না। কিন্তু দিন পেরিয়ে নতুন মাস আসল, তিথির মনে পড়ে গেল এই মাসেই তো ভাইয়ার শহর পাল্টিয়ে নতুন শহরে যাওয়ার কথা। বিদেশে একা একা বাসা পাল্টানো, তাও আবার অন্য শহরে যাওয়া চাট্টিখানি কথা না। সেই সাথে ওদের ছোট একটা বাচ্চাও আছে।

তিথির মন আঁনচান করতে লাগল কিভাবে ওরা সবকিছু পেরে উঠছে জানার জন্য। ভাইয়ের ছোট বাচ্চাটা কী করছে, নতুন বাসা নতুন পরিবেশ পেয়ে তার কেমন লাগছে জানার জন্য। ওখানে তো কোন সাহায্যকারী নেই, সব কাজ নিজেদেরই করতে হয়। এসব ভেবে শেষ পর্যন্ত সে-ই ফোন দিল।

ফোন হাতে নিয়ে ওর ভাবী প্রথমেই দুঃখিত হল ইচ্ছা থাকার পরও নিজে ফোন দিতে না পারার জন্য। যখন বলল বাসা পাল্টানোর জন্য সব গোছাতে ও এতটাই ব্যস্ত ছিল যে নিজের আম্মুকেও ফোন দেয়ার সময় পায়নি, তখনই আর তিথির খারাপ লাগাটা রইল না। স্বাভাবিক খোঁজ খবর নিয়ে দুইজনই ফোন রেখে দিল।

ঘটনাটা ছোট্ট। কিন্তু তিথির মনে দাগ কেটে গেছে। হতে পারত এই ফোন না করা নিয়ে ও নানান কথা চিন্তা করে নিজের মনের শান্তি আর না জেনে অপরকে সন্দেহ করায় আমলনামা নষ্ট করত। কিন্তু বউর পক্ষে অযুহাত দাঁড় করিয়ে ওর মা-ও বিষয়টাকে সহজ করে দিলেন।

সে নিজেও খারাপ চিন্তা আঁকড়ে না থেকে আগে কথা বলায় সম্পর্কটাও সাবলীল থাকল। নিজের মনকে সহজ করলে অনেক জটিলতার নিরসন করা যায়।

————————
ননদ-ভাবী
বিনতে খাজা