ফেইসবুক না কী ফেইকবুক!

এইবার প্রায় তিন বছর পর বাংলাদেশ গেলাম আলহামদুলিল্লাহ্‌। গিয়ে একটা জিনিস খুব বুঝতে পারলাম তা হলো মানুষজন চরমভাবে ফেসবুকে আসক্ত। সত্যি কথা হলো ফেসবুকে খুব সহজে শো অফ করা যায়। ফেসবুকের আগের আমলে যা এত সহজ ছিলোনা। আর এই শো অফ করতে গিয়ে মানুষ যেন মিথ্যাকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে।

ফেসবুকের পিকচার পারফেক্ট জীবনের মানূষটার আসল জীবন চরমভাবে অগোছালো। ফেসবুকে খুব সুন্দর প্রোফাইল ফটোর পিছনের কাহিনী হয়তোবা এত সুন্দর না। ফেসবুকে খুব নীতিবাক্য বলা মানুষের জীবনটাই যেন উলটা নীতির। খুব কাছ থেকে জানা কিছু ঘটনা বলছি।

ঘটনা একঃ
জনৈক ব্যক্তি ফেসবুকে নিজের সম্পর্কে বলতে গিয়ে যা বলে তাঁর সারমর্ম হলো তিনি শুধু আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির জন্যই জীবন কাটান। কিন্তু বাস্তব হলো সমাজকে সন্তুষ্ট করতে গিয়ে তাঁর ফরয ছুটে যায়।

ঘটনা দুইঃ
ফেসবুকের কল্যানে সবাই জানে তিনি একজন অলরাউন্ডার। একাধিক বাচ্চা নিয়েও ভালো জব করছেন, রান্না বান্নায় পারদর্শী আবার জামাই অনেক হেল্পফুল; যাকে বলে বউকে অনেক স্বাধীনতা দেন।
কিন্তু বাস্তবে তাঁদের সংসারে চলছে ভাঙ্গনের সুর

ঘটনা তিনঃ
আরেক পিকচার পারফেক্ট মানুষকে ফেসবুকের কল্যানে সবাই ভাবে কত খুশি তারা। টাকা পয়সার অভাব নাই, এখানে সেখানে ট্যুর দিয়ে বেড়াচ্ছে। আর বাস্তব হলো এই মানুষটাই অন্য কাউকে ভালো থাকতে দেখতে পারেনা। চরম হিংসার আগুনে সে নিজেও শান্তি পায়না আর বাকীদেরও শান্তিতে থাকতে দেয়না।

ঘটনা চারঃ
অফিস থেকে কোম্পানীর গেঞ্জি পড়ে ফার্স্ট ক্লাসে করে ঢাকা থকে চট্রগ্রাম যাচ্ছিলেন তাঁরা। প্লেনে উঠার সময় সব বাদ দিয়ে তেনারা সেলফি তুলতে ব্যস্ত।

এয়ারপোর্টের লোকজনের ধমক ধামক উপেক্ষা করে তাঁরা ফেসবুকে আপ্লোড করার মতো মানানসই পিক তুলতে ক্রমাগত। বকা খেয়েছে তো কি হয়েছে ?? ফেসবুকে তো শুধু ছবি আপ্লোড হবে বকাতো আর আপ্লোড হবেনা!!!

ঘটনা পাঁচঃ
স্বামী-স্ত্রী দুইজনে উচ্চ ডিগ্রীধারী প্লাস দুইজনেই ভালো পজিশনে আছেন। দেশ বিদেশে নিয়মিত চেক ইন পাওয়া যায় তাঁদের। আশেপাশের মানুষের মন্তব্য “আল্লাহ্‌ তো আপনাদের সেই সুখে রেখেছেন!!” কিন্তু বাস্তবে কনজুগাল লাইফে প্রায়ই দুইজন একমত হতে পারেনা যার ফলাফল সংসারে মানসিক অশান্তি যা কখনও কখনও খুব বাজে কথা থেকে শারীরিক আঘাত পর্যন্ত গড়ায়।

ঘটনা ছয়ঃ
আরেক পিকচার পারফেক্ট পরিবারের কর্তা কোনভাবেই বউকে কোন কাজে হেল্প করতে রাজিনা যার ফলাফল প্রিয়তমা স্ত্রী এখন ডিপ্রেশনে আক্রান্ত।

এইভাবে লিখতে গেলে আরও বহু ঘটনা লেখা যাবে যার কোন শেষ নাই। ফেইসবুকে প্রকাশ করা সব ঘটনা মিথ্যা দিয়ে সাজানো তা বলছিনা। মূল কথা হলো এইখানের সব ঘটনা সত্য ভেবে নেওয়া হলো এক মস্ত বড় ভুল। তার উপর আমরা কিছু বোকা বাঙ্গালী এই ফেইকবুকের রংচং মাখা পোষ্টে অন্যের সুখের সফল অভিনয় দেখে দুঃখবিলাসী হই। কেউ কেউ নিজের জীবনের সুখ নষ্ট করে ফেলি এইসব মরিচীকার কথা ভেবে। এ যেন এক অদ্ভুত দুঃখ দুঃখ খেলা যেখানে শুধু মনে হতে থাকে পৃথিবীতে শুধু আমি কষ্টে আছি আর বাকী সবাই কত খুশি।

মনে রাখবেন এই ফেইসবুকের প্রতিটি মানুষ যে যার জীবনে কোন না কোনভাবে পরীক্ষা দিচ্ছে। কোন না কোন কষ্টের কারণে প্রতিনিয়ত তাঁর চোখ ভিজে যাচ্ছে। কোন না কোন দিক দিয়ে যখন একজন অনেক নিয়ামত পেয়েছে অন্য দিক দিয়ে হয়তো সে ঈমানের পরীক্ষা দিচ্ছে।

এইসব ফেইক পিকচার পারফেক্ট শুধু ভার্চুয়ালি আর আরব্য রজনীর গাঁজাখুরি গল্পে সম্ভব; বাস্তবে না।
তাই দয়া করে এই ফেইকবুকের ফেইক শো অফ দেখে নিজের জীবনের সুখকে বিসর্জন দিবেন না। এই দুঃখ চক্র থেকে বের হয়ে নিজের জীবনের নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করুন আর নিজের কষ্টে সবর করুন।

—————–
ফেইসবুক না কী ফেইকবুক!
নাইমা আলমগীর