সোনার বাংলাদেশ

বেশ অবাক চোখে রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে তাহিরা। আরে! এ কি আমাদের দেশ? কী সুন্দর চিত্র! মন ভরে গেল তাহিরার।

প্রতিদিন রিক্সাভাড়া বাবদ বেশ কিছু টাকা চলে যায় তাহিরার আব্বুর। খরচটা সামাল দিতে বেশ বেগ পেতে হলেও বুঝতে দেন না আব্বু। তাহিরার আম্মু মারিয়াম অন্তঃসত্ত্বা। সময় শেষের দিকে। তিনি তাহিরাকে স্কুলে আনা-নেওয়া করতে পারছেন না। ওর আব্বু রফিক সাহেবও অফিসের জন্য পেরে ওঠেন না। ফলে একাই স্কুলে যাতায়াত করতে হচ্ছে তাহিরাকে। রাস্তার যা অবস্থা তাতে হেঁটে যাওয়ার সাহস হয় না তাহিরার, যদিও বাসা থেকে স্কুলের দূরত্ব বেশী নয়। “নিরাপদ সড়ক” হলে নিশ্চিন্তে হেঁটে যাওয়া যেত।

অথচ আজ রাস্তার চিত্র দেখে রিক্সা না নিয়ে হেঁটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল তাহিরা। আরে! প্রত্যেকটি রাস্তার পাশে ফুট ওভার ব্রিজ রয়েছে! পথচারীরা নিরাপদে, নিশ্চিন্তে পার হচ্ছে। যানবাহনগুলো কেমন সুশৃঙ্খলভাবে স্বাভাবিক গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। জায়গায় জায়গায় ট্রাফিক পুলিশ গাড়ির কাগজপত্র আর ড্রাইভারের লাইসেন্স চেক করছে। কোন বিশৃঙ্খলা নেই।

এক জায়গায় রাস্তার পাশে খানিকটা খালি জায়গায় জামা’তবদ্ধ হয়ে কয়েকজন পুলিশকে সালাত আদায় করতে দেখে অবাক হয়ে সেদিকে তাকিয়ে রইল তাহিরা। আশেপাশে মসজিদ নেই সেটা জানে সে। মসজিদ এখান থেকে বেশ খানিকটা দূরে। নামাজের সময় হয়ে যাওয়াতে দায়িত্বরত পুলিশের এক অংশ সালাতে দাঁড়িয়ে গেছে। আল্লাহু আকবার!! চোখে পানি চলে এল তাহিরার। যেখানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এতটা সৎ, দায়িত্ববান আর আল্লাহভীরু সেখানে বিশৃঙ্খলা হবে কেন? মা’শা আল্লাহ।

হাঁটতে হাঁটতে একটি দেয়ালে সাদা কাগজে একটি নোটিশ চোখে পড়ল তাহিরার। দাঁড়িয়ে নোটিশটা মনোযোগ দিয়ে পড়তে লাগল সে।

“সড়ক দূর্ঘটনার প্রধান কারণ হিসেবে যে তিনটি বিষয় শনাক্ত করা হয়েছে সেগুলো হলো –

১. চালক অথবা পথচারীর অসাবধানতা।
২. নিয়ম মেনে না চলা।
৩. দোষী ব্যক্তিকে উপযুক্ত শাস্তি না দেয়া।

সড়ক দূর্ঘটনা রোধে সরকার দেশের আলেম সমাজ ও প্রশাসনিক ব্যক্তিবর্গের সাথে আলোচনা করে কিছু পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। ইসলামী আইন কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সেগুলো নিম্নরুপঃ

১. সড়ক দূর্ঘটনার ফলে যে মৃত্যু হয় তা হত্যাকান্ডের শামিল। এটা “ক্বাতলে খাতা” বা ভুলবশত হত্যা। এ ধরনের হত্যা সংগঠিত হলে চালক মৃতের পরিবারকে ৫০ লক্ষ টাকা জরিমানা প্রদান করবে। যে কিনা এ অপরাধের সাথে জড়িত থাকে তাকে মুবাশির বলা হয়। মুবাশির ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকবে। শুধু যে চালক ক্ষতিপূরণ দেবে তা নয়; বরং চালকের পরিবার, বংশ আর নিকটাত্মীয় এর দায় বহন করবে। ক্ষতিপূরণ না দেয়া পর্যন্ত জেলের কোন বিকল্প নেই। হত্যাকারী যত বড় প্রভাবশালী হোক না কেন, শাস্তির কোন ব্যত্যয় ঘটবে না।

২. লাইসেন্সবিহীন চালক ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি দুটোই ফাসাদের অন্তর্ভুক্ত। ধরা পড়া মাত্রই এদের উপযুক্ত শাস্তির আওতায় আনা হবে। এক্ষেত্রে গাড়ি জব্দ ও চালকের কয়েক বছরের জেল কার্যকর করা হবে।

৩. পথচারীদের রাস্তা পারাপারের জন্য ফুটওভার ব্যবহারের নির্দেশ দেয়া হলো।

৪. সম্পূর্ণরূপে পথচারীর অসাবধানতার ফলে কোন দূর্ঘটনা সংগঠিত হলে চালক দায়ী থাকবে না।

আল্লাহ সবাইকে হেফাজত করুন।

প্রচারেঃ বাংলাদেশ সরকার।”

চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি ঝরছে তাহিরার। বাড়ি ফিরে দু’রাকাত শোকরানা নামাজ আদায় করার সিদ্ধান্ত নিল সে। সাজদায় গিয়ে মহান রাব্বুল আ’লামীনের শুকরিয়া আদায় করতে চায় তাহিরা।

এই তো তার, সবার, গোটা দেশবাসীর সোনার বাংলাদেশ।

……………………
সোনার বাংলাদেশ
জাকিয়া সিদ্দিকী।