ছায়ার অন্তরালে

এক

ঘাড়ের কাছটা হঠাৎ কেমন শিরশিরিয়ে উঠল সায়রার, সারা শরীরে এক অদ্ভুত জ্বালা অনুভূত হল। বাম হাত বাড়িয়ে খট করে চুলার নব বন্ধ করে দিল সে, মাথা ঘুরিয়ে পড়ে টরে গেলে যেন বাসা পুড়ে ছাই না হয়ে যায়! বাকি আধাটা পিয়াজ না কেটেই হাতের ছুরি নামিয়ে রাখল। তারপর সন্তর্পণে পা টিপে হেঁটে হেঁটে ডাইনিং-এর চেয়ারে বসল।

কেমন এক ধরনের অস্বস্তি চেপে ধরছে। সায়রা ঘড়ির দিকে মুখ তুলে তাকালো। বুয়া আজকেও দেরী করছে। প্রতিনিয়ত কোন না কোন ওজর থাকবেই। অথচ প্রথম যখন সায়রা এই বাসায় উঠল, তখন দারোয়ানকে কত অনুনয় করে চেয়ে চিন্তে সায়রার বাসার কাজটা নিয়েছিল সাফিনের মা।

‘আম্মা, আমারে দেখতে যত বয়স লাগে, অতটা না। শইলে এখনো জুত আসে। ধরেনগা, এই বিরাট বিরাট ডেকচি এক ঘষায় সাফ করতে পারি এক্ষনো। যেই কাম বলবেন হেডাই পারবাম।’ জর্দায় কালো হয়ে যাওয়া দাঁত কেলিয়ে হেসে বলেছিল প্রথম দিন।

‘আমার কাজ বেশী না, খালা।’ শান্ত স্বরে উত্তর দিয়েছিল সায়রা, ‘তবে প্রতিদিন আসতে হবে, সময়মত। দুপুরের ভাত আমি দেব। এখানেই গোসল করে যেতে পারবেন। সাবান, শ্যাম্পু সব পাবেন। কিন্তু হুট হাট না আসলে চলবে না।’

‘আরে, না, না আম্মা।’ কালো দাঁতে জিভ কাটল সাফিনের মা। “এই এলাকার আরও দুই বাসাত কাম করি। কেউ কইতে পারব না আমি ফাঁকি দেই। গেল মাস ঝড়ের সময় কোন বেডি আইসে না কামে,আমি বৃষ্টি মাথাত আসছি প্রতিদিন। আম্মা, পান দিতেন দুফুরের খাওনের পর?’

আর আজকে এক মাসের মাঝেই সব বড় বড় বুলি ধূলিসাৎ করে সে পঞ্চমদিনের মতন অনুপস্থিত।

‘সব, সবগুলা স্বার্থপর।’ বিরবিরিয়ে নিজেকেই বলে সায়রা, ‘বদ মহিলাটা জানে আমার কি বেহাল অবস্থা, তারপরেও উধাও! হবেই, কালকে বেতন নিয়ে নাচতে নাচতে চলে গেছে। আজকে নিশ্চয়ই ডগডগিয়ে নেশাখোর ছেলের বাসায় টাকা বিসর্জন করতে যাওয়া হয়েছে!’

চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ থেমে থেমে নিঃশ্বাস নিল সে। এখন খানিকটা ভালো লাগছে। জ্বালা ভাবটাও কেটে গেছে। ঘড়ির দেখল আবার, কেবল সোয়া এগারটা। আরাফাত আসতে আসতে কমপক্ষে সাড়ে সাতটা তো বাজবেই। একটা ফোন দিবে নাকি?
‘মিটিং-এ?’ আরাফাত ফোন ধরতে মৃদু গলায় প্রশ্ন সায়রার।
‘নাহ। শেষ হল কেবল। এখন একটু ব্রেক, তারপর তেজগাঁ যেতে হবে লাঞ্চের পর পর।’ ওপাশে কথা বলতে বলতেই ল্যাপটপ টেপার আওয়াজ আসছে। ‘তুমি ঠিক আছ?’

‘হুম। সাফিনের মা আজকেও গায়েব, জানো?মহিলা আমাকে পাগল করেই ছাড়বে।’ হতাশ গলায় সায়রা জবাব দিল। কথা বলতে বলতেই ফেলে রাখা কাজগুলো টুকটাক গুছিয়ে নিচ্ছে। ঠিক করল আজকে বেশী কিছু রাঁধবে না। মিক্সড সব্জি আর পাবদা মাছের ঝোল, বেশী করে টমেটো, কাঁচা মরিচ আর ছোট গোল আলু দিয়ে। ডাল চচ্চড়ি করবে নাকি একটু?ধনিয়া থাকলে বেশ হত।

ভাবনার তার ছিড়ে গেল আরাফাতের ক্ষিপ্ত কথাবানে, ‘এই যে, এই কারনে আমি সহ্য করতে পারি না মহিলাকে। নিজেরটা বুঝে নিবে ষোল আনা, কিন্তু কখনোই অন্যেরটা কন্সিডার করে না। সেইদিনও আমাকে ফিচফিচ হেসে বলে, ছেলে হইলে কিন্তু ৫ হাজার টাকা বখশিশ দিয়েন!ছেলে বলে সোনার আংটি না কি কি সব। আমি বললাম, আপনি ঠিকঠাক মতন থাকেন, তখনকারটা তখন ইনশাআল্লাহ্‌। বলে, আমি তো আছিই, আমি আর যাব কই? সারাদিন আপার বগলে থাকি।’

সায়রা হা হা করে হেসে ফেলে, ‘বগলে থাকে মানে কি? এটা কেমন কথা?’

‘ওই আর কি, পাশে থাকে।এই তার পাশে থাকা?আর চার মাস বাকি বাবু আসার, একটা ভালো সাপোর্ট না থাকলে কেমনে কি করবা, বল?’

‘কি করার?’ দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফোনের এপাশের তরুণী, ‘এতিমের না আছে এ কূল, না আছে ও কূল। মা নাই, বাবা নাই, বুয়ার উপর ভরসা করে কি আর জীবন চলে?’

এবার আরাফাত কিছুটা অপ্রস্তুত, ‘আরে বাবা। তাইলে তো সবাই কোনো না কোনো সময়ে এতিম। বাবা মা কি সারা জীবন কারো থাকে নাকি? বাদ দাও তো এসব। আজকে বরং রেস্ট নাও। খাবার অর্ডার করে ফেলো দুপুরের জন্য কিছু, আর আমি রাতে ব্যাম্বু শুট থেকে কিছু নিয়ে আসব। সিযলিং বিফ খাবা নাকি চিকেন ক্যাশুনাট?’

‘খালি টাকা খরচের বাহানা!’ কপট রাগ দেখালেও কথাটা ফেলে দিল না সায়রা। আজকে আসলেই কেমন জানি গা ছেড়ে দিতে মন চাচ্ছে। ফোন রেখে দিয়ে রান্নাঘর গুছিয়ে ফেলল আস্তে ধীরে। বেডরুমে গিয়ে খাটের নিচ থেকে সাবধানে মরিচাধরা ট্রাংক বের করল। এটা মায়ের বিয়ের ট্রাংক ছিল, মা তাকে দিয়েছিল পুতুল ঘর বানানোর জন্য। এখন রাজ্যের স্মৃতি এর ভেতরে। মায়ের বিয়ের শাড়ি, মা বাবার সাথে তার আর বাবুন ভাইয়ার ছবিগুলো, বন্ধুদের সাথে মান অভিমানের চিঠিপত্র, কয়েকটা পুরাতন ডায়েরীর ফাঁকেফাঁকে জীবনের প্রায় সাতাশ বছরের ঘ্রাণ।মা বাবার ছবি দেখে চোখের কোলে বৃষ্টির আভাস দেখা দিল। এভাবে পট করে দুইজনেই মরে যায়? আরও তো কত জনের বাস এক্সিডেন্ট হয়। বাবুন ভাইয়াটাও এমন বাউণ্ডুলে হত না বাবা মা থাকলে। কোথায় কোথায় ঘুরে বেড়ায় ছবি তুলতে, মাসের পর মাস খোঁজ থাকে না। কয়েকটা কড়ি পড়ে আছে অবহেলায় এক কোনে। আনমনেই একটু ছুঁয়ে দিল সায়রা। মাস কয়েক আগে খাবার ঘরের ঘুলঘুলি পরিষ্কার করতে গিয়ে পেয়েছিল, রেখে দিয়েছে। একটা কেমন যেন কালচে রঙের,কিছু কি আঁকিবুঁকি করা? বুঝা যাচ্ছে না। আগের ভাড়াটিয়ার বাচ্চা দুষ্টুমি করে রেখে গেছে হয়ত। কেমন ছিল তারা, সায়রা প্রায়ই ভাবে। আরাফাত অবশ্য বলেছিল এক উগ্র মেজাজের সাব জাজ থাকতেন, তার বউয়ের মাথায় ছিট ছিল। একবার নাকি কাপড় ছাড়াই…। ছিঃ ছিঃ, আরক্তমুখে ভাবনার লাগাম টেনে ধরল সায়রা।

খুট করে পিছনে শব্দ হতে চমকে ফিরে তাকালো। পরদার আড়ালে কোন ছায়া কি আকস্মিক সরে গেল? ঘাড় আবার জ্বালা করছে কেন এভাবে? খাটে হাত রেখে নিজেকে উঠালো সায়রা, কেমন যেন ভয় ভয় লাগছে। কিসের ভয়?চারিদিকে ভর দুপুরের ফকফকা আলো, নিজেকে প্রবোধ দিল সে। পায়ে স্যান্ডেল গলিয়ে রুমের দরজার বাহিরে খুঁজে দেখল। নাহ, কিছুই তো নেই।

‘কি আর থাকবে?’ নিজেকেই মৃদু বকুনি দিল, ‘আজেবাজে কথা চিন্তা করলে তো এসব উল্টাপাল্টা খেয়াল আসবেই। কলিং বেল বেজে উঠলে অন্তর ঝাঁকি দিয়ে উঠল। এ অসময়ে কে? আজ কি শুধু চমকে যাওয়ার দিন?

দরজা খুলেই সাফিনের মায়ের হাসিমাখা চেহারা দেখে মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো সায়রার। মুখ থেকে কথা বের হবার আগেই ঝাঁঝালো কটু গন্ধ ধাক্কা লাগলো নাকেমুখে। আর কি আশ্চর্য, গন্ধের সাথে কেমন এক গরম হলকা বাতাস, একেবারে ঠিকানাবিহীন! গা গুলিয়ে বমি আসল সায়রার, মাথা চক্কর দিয়ে উঠল। দরজার ফ্রেমে হাত রেখে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করল।এই মহিলা কি গাঁজা খেয়ে চলে এসেছে? ভার্সিটি লাইফের ছোট ছোট গ্রুপে বসে ঘাপটি মেরে নেশাখোর ছেলেগুলির পাশ কাটিয়ে যাবার স্মৃতি চকিতে মনে পড়ে গেল। উফ!

‘আফা, কি হইসে?’ উদ্বেগমাখা কন্ঠে জিজ্ঞেস করল সাফিনের মা। ‘এমুন করে আমার পানে তাকান কেন?’

‘সাফিনের মা!ভেতরে এসে গোসলে ঢুকো তো আগে। কি সব ছাইপাঁশ জরদা চমন বাহার মাহার দিয়ে পান খাও। গন্ধে জান যাওয়ার জোগাড়।’ ক্লান্তভাবে উত্তর করল সায়রা।

‘আফা আইজকা একটাও পান খাইসি না! ব্যাটার লগে এমন ঝগড়া সকাল থেকে। আমার কামাই সব নিব মাসের শুরুতে আর আমাকে পান সুপারির টেকাও দিব না। আমি কইয়া দিসি যে আমার টেকায় যে প্রতিদিন হাইঞ্জাবেলায় তাস খেলে সব ফিরত দিতে।’ গজগজ করতে করতে রান্নাঘরে ঢুকে সাফিনের মা।

কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ বারান্দায় চলে যায় সায়রা। কেমন খালি খালি লাগছে গাছগাছালি ঘেরা এলাকাটি। থাকার জন্য বারিধারা এ কারনেই পছন্দ তার। দোকানপাট কম, গাছ গাছড়া প্রচুর। এই দোতলা বাড়িটা তো নিতান্ত ভাগ্যক্রমে পাওয়া। আরাফাতের বস সিটিজেনশিপ পেয়ে অস্ট্রেলিয়া চলে যাবার আগে নামমাত্র ভাড়ায় আরাফাতের তত্ত্বাবধানে দিয়ে গেছে।

‘দেখেশুনে রাখবা, ব্যাস। ভাড়ার টাকা ব্যাংকে জমা দিয়ো তোমার সুবিধামতন। দিনকাল ভালো না, বুঝোই তো আরাফাত। নাহলে খালি বাসাই রেখে যেতাম। তোমার ভাবীর খুব শখের প্ল্যানিং করা বাসা এটা।’ খালেক সাহেব নরম গলায় বলেছিল আরাফাতকে। টুংটাং শব্দে কফির কাপে চিনি গুলতে গুলতে কথাগুলো কান এড়ায় নি সায়রার রান্নাঘর থেকে। মায়াই লেগেছিল। তিল তিল করে গড়ে তোলা স্বপ্নের বাড়ী ফেলে সব ছেড়েছুড়ে বিদেশবাসি হওয়া চাট্টিখানি কথা না।

উপরের তলাতেও এক হাসিখুশী দম্পতি থাকেন, তাদের দু মেয়ের প্রবাসে বিয়েথা দিয়ে ঝাড়া হাত পা। দু মেয়ের যমজ দু ভাইয়ের সাথে বিয়ে হয়েছে, একই দিনে, এক মঞ্চে। ‘বুঝছ বেটা, এক ঢিলে যমজ পাখি মেরেছি!’ স্ত্রীর কুঞ্চিত ভ্রু উপেক্ষা করে হা হা করে হাসতে হাসতে প্রায়ই বলেন লাল মিয়া আংকেল। স্বামীর নামের সাথে নাম মিলিয়ে আন্টির নামও হয়ে গেছে লাল আন্টি। এদেশ ওদেশ ঘুরে বেড়ান ইচ্ছামতন।

‘হানিমুনে যাচ্ছি রে, মা! এত হানিমুনের পরেও বুড়িটার মন পেলাম না।’ প্রতিবার বলেন নতুন কোথাও যাওয়ার আগে লাল মিয়া আংকেল।

খুশী চেপে রেখে দাঁত কিড়িমিড়িয়ে ধমকান আন্টি, ‘বুড়া বয়সের ভীমরতি! মাথায় নাই চুল, মুখে নাই লাগাম।’

আন্টি আংকেল এবার মরিশাস গেছেন, সেখান থেকে নাকি মেয়েদের কাছে অস্ট্রেলিয়া হয়ে ফিরবেন। ৪-৫ মাসের সফর। ইস, সায়রা আর আরাফাত যদি কোথাও যেতে পারত এভাবে! সায়রার যাওয়ার জায়গা বলতে তো শুধু সেই খালার বাড়ী, তাও খালুর কারনে সেখানেও স্বস্তি পায় না সে। আগের মতই বিচ্ছিরি করে তাকানো, আলপটকা মন্তব্য আর কথায় কথায় গায়ে হাত দেয়া তো আছেই, সাথে মামনি মামনি বলে চকাশ চকাশ চুমু। আলাভোলা খালাটাও কিছু বুঝে না। আরাফাতের সাথে বিয়ে হওয়াতে একরকম পালিয়ে বেচেছে ও সে বাসা থেকে।

দুই

কর্কশ কা কা শব্দে কিছুটা বিরক্ত হয়ে ও মুখ তুলে তাকালো। কি অদ্ভুত, কাকটাও ওর দিকেই কেমন রাগ রাগ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সায়রার কিছুটা হাসি পেয়ে গেল। কাকের আবার রাগ দৃষ্টি! আম গাছে বসা পাখীটা ঝপাং করে ওর মুখের সামনে রেলিং আঁকড়ে বসে পড়ল। ভয়ে এক পা পিছিয়ে গিয়ে বুকে থুতু দিলো সায়্ররা। এ কি কাণ্ড! ঠোকর টোকর দিবে নাকি আবার? পেটে এক হাত রেখে আরেক হাত নাড়িয়ে কাকটাকে তাড়ানোর প্রয়াস চালালো, ‘হুস! হুস!’ উঁহু, আবার নড়ে চড়ে সেখানেই গ্যাঁট মেরে বসে আছে। ঝাড়ুটা আনবে নাকি? থাক, বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে। নিজেই ভেতরে ঢুকে গেলো সায়রা। শুয়ে শুয়ে বাবুর নাড়াচাড়া গুনবে এখন।

সাফিনের মা ঝাড়ু দিতে দিতে তার স্বামীর নামে একশত নালিশ করে যাচ্ছে,’বুঝছেন আফা, ব্যাটার আরেক বিয়ার খায়েশ জাগসে মনে। আমিও কয়া দিসি, ঝাটার বাড়ি দিয়া হেরে বাহির করাম।’

সায়রা অলস গলায় কিছুক্ষণ হু হা করে হাতে ফোন তুলে নিল। ফেসবুকে একটু ঢুঁ মেরে দেখবে। আলগা এক ভালো লাগা মন ছুঁয়ে গেলো ফোনটা হাতে নিয়ে। নাহ, এতিম বলে আরাফাত কখনো তাকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করেনি। বাজারের ভালো ভালো মানের জিনিষটাই দিয়েছে, না চাইতেই। খালার বাড়িতে আশ্রিত থাকা সায়রা কি কখনো ভেবেছিল স্যামসাং প্রাইম মডেলের লেটেস্ট মোবাইল সে হেলাফেলায় ব্যাবহার করতে পারবে? একবার হাত থেকে পড়ে গিয়েছিল, অসম্ভব বিব্রত হয়ে সে আরাফাতকে সরি বলতে বলতে অস্থির। আরাফাত তখন ওকে বুঝিয়ে বলেছিল যে ওর জিনিষগুলো ওরই, এক্কেবারের নিজস্ব। তার জন্য মাফ চাওয়ার প্রশ্নই ওঠেনা। আরাফাতের সবই ভালো, শুধু ওই একটা ব্যাপার পুরাতন ব্যাথার মতন মাঝেমধ্যে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।

ইনবক্সে দুটি মেসেজ জ্বলজ্বল করছে। রাখীরটা প্রথমে খুলল, সবচেয়ে কাছের বন্ধু বলে কথা। রাত ৩টায় পাঠিয়েছে।

‘আজব! এত রাতে তুই জেগে কেন? আর এসব কেমন মেসেজ?তোর এই শরীরে এসব পড়া মানায়!?’ এরপর অনেকগুলা রাগত চেহারার ইমো।

সত্যিকার অর্থেই অবাক হয়ে গেলো সায়রা। রাতে দু তিনবার উঠে সে আজকাল তলপেটের চাপে, তবে বিছানায় এসেই ঘুমিয়ে পড়ে সাধারণত। কখন কি মেসেজ পাঠালো?

মেসেজ বক্সে স্ক্রল করে উপরে উঠতেই তার তরফ থেকে পাঠানো এক লিংক চোখে পড়ল। রাখীর মেসেজের কিছুক্ষণ আগেই পাঠানো। কি জানি এক আর্টিকেল। ক্লিক করে খুলতেই কেমন এক ভয় গ্রাস করল সায়রাকে। ইংরেজিতে বড় বড় করে লেখা টাইটেল দেয়া, নিজেকে কিভাবে শয়তানের জন্য উৎসর্গ করতে হয়। গা গুলিয়ে দেয়া কিছু ছবি দেয়া তাতে, ক্ষতবিক্ষত মানব দেহের। এটা সে কক্ষনো রাখীকে পাঠায়নি। আরাফাতকে ফোন করে বলবে নাকি? না, থাক। বরঞ্চ রাখীকেই ফোন দেয়া মনস্থির করল।

‘আই পাগলী, তোকেই ফোন করব ভাবছিলাম। তুই ঠিক আছিস?’ ওপাশ থেকে রাখীর কলকলানি ভেসে আসল।

আছি তো! শোন, ওটা না আমি পাঠাইনি! হয়ত ঘুমের মাঝে চাপ লেগে ভুলে চলে গেছে। সত্যি আমি দেখিওনি এই ভয়ংকর জিনিসপাতি আগে।’ সায়রা হড়বরিয়ে উত্তর দিলো।

‘তাই বল! আমি তো ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলাম রে। সাবধানে থাকিস এসব থেকে।’

একথা সেকথা শেষ করে ফোন রেখে আয়নার দিকে দিকে অপলক কিছুক্ষণ চেয়ে থাকল সে। আয়নায় কিছু একটা কিলবিল করে নড়ে উঠল মনে হল কেন জানি। ভক করে সেই কটু গন্ধ আবার নাকে এসে লাগছে। কেমন যেন পঁচা ডিম, বমি আর চুল পোড়ানো দুর্গন্ধ। নাড়িভুঁড়ি উল্টানো এই গন্ধের উৎস কোথা থেকে হতে পারে?

‘সাফিনের মা, বাজে গন্ধটা কিসের?’ নাক কুঁচকে প্রশ্ন করল সায়রা।

‘কই আফা, আমি তো পাই না।’ অবাক হয়েই বলল বয়স্কা মহিলা। ‘আফনের শরীল খারাফ লাগে মনে হয়। আপনে খায়া ঘুম যান!আসর আজান বাদে ডাক দিব।’

প্রেগ্নেন্সির কারনে কি সে মানসিকভাবে কিছুটা বিপর্যস্ত বোধ করছে? একাকীত্ব ঘিরে ধরেছে বলেই হয়ত। আকাশ পাতাল ভেবেও কোন কূলকিনারা পেলো না সে।

‘সাইকোলজিতে মাস্টার্স করে এখন নিজের পাগলামোর ঠ্যালা সামলাও!’ নিজেকে ধিক্কার দিলো ও।

ঘুম ভাঙতেই পায়ের কাছে রাখা শাল আঁটসাঁট করে গায়ে মুড়িয়ে বারান্দায় চলে এলো সায়রা। এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে ভোররাতে, টবের গাছগুলোর টলটলে পানি জমা পাতা জানান দিচ্ছে। ভীষণ এক ভালো লাগায় মন উৎফুল্ল হয়ে গেলো তার। প্রতিটি গাছ আলতো করে ছুঁয়ে দিল সে। লেবু গাছে থোকে থোকে ফুল ধরেছে, এবার কিছুতেই পিপড়াদের খেয়ে ফেলতে দেয়া যাবে না। কাক তাড়ানোরও ব্যবস্থা করতে হবে। সেই ঘটনার দু সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। এখনো প্রায়শই বারান্দায় এসে বসে থাকে বিশাল কুচকুচে কাকটা। মাঝেমধ্যে ঘরের ভেতরেও উঁকি দেয়। সায়রার আতংক লাগে আজকাল ওটাকে দেখলে। সাফিনের মাকে কয়েকবার বলেছে তাড়িয়ে দিতে।

সাফিনের মায়ের আসতে এখনো ঘন্টা দুয়েক বাকি। এর মাঝে আস্তে ধীরে নাস্তা তৈরি করে ফেলে সে। শুক্রবার দিনগুলি খুব ভালো লাগে সায়রার। আরাফাতকে নিজের মতন সারাদিন পাওয়া যায়। বিকেলে অবশ্য বন্ধুদের সাথে দেখা করতে যায়। তারপরেও, বাকিটা সময় তো তার জন্য বরাদ্দ।

ফোন বেজে উঠল। ডিসপ্লের দিকে তাকিয়ে মিশ্র অনুভূতি হল। আম্মা ফোন দিচ্ছেন। এই ভদ্রমহিলাকে সায়রা ভীষণ ভয় পায়, আবার একই সাথে ভালোও বাসে, আরাফাতের মা বলেই। তবে সে বুঝতে পারে আম্মা তাকে বিশেষ পছন্দ করে না।

দ্রুত ফোন ধরল সে, ‘আসসালামু আলাইকুম আম্মা!’

‘ওয়া আলাইকুম আসসালাম। ঘুমাচ্ছিলা নাকি?’ ওপার থেকে রাশভারী কণ্ঠ ভেসে আসল। সায়রা মানসপটে ধোঁয়া ওঠা চায়ে চুমুক দিতে দিতে মায়ের ফোনে কথা বলার দৃশ্যপট ভেসে উঠলো। ইস, আম্মুটাও চা খেতে খুব পছন্দ করত। দুপুরে বাবুন ভাইয়া আর ও ঘুমালেই কড়া লিকারের কেমন পায়েস পায়েস গন্ধ করা চা বানিয়ে খেত। মাঝে মাঝে ঘুম ভেঙে গেলে চা খেতে খেতে পত্রিকা সামনে আম্মুর প্রসন্নময়ী চেহারা দেখা যেত। মাঝে মাঝে কিছু পড়তে পড়তে মুখ টিপে হাসতেন, কখনো অন্যমনস্ক হয়ে কোন গানের কলি গুনগুন করতেন, বা চায়ে চুমুক দিতে দিতে চপলা মেয়ের মতন পা নাচাতে নাচাতে কিছু লিখতেন। আম্মুকে তখন কেমন যেন অন্য মানুষ মনে হত। যেন আম্মু আসলে আম্মু না, ভরদুপুরে ভুলে তাদের বাড়ীতে চলে আসা কোন তরুণী। বেঁচে থাকলে আম্মুর কাছে পায়েশগন্ধা চায়ের রেসিপি নিত সায়রা।

‘না, মা। অনেক আগেই উঠেছি। নাস্তা রেডি করছিলাম।’ শান্ত গলায় উত্তর দিল সে।

‘হুম। ফজর পড়া বাদই দিস মনে হয়, না? ছেলেমেয়েকে শিখাবা কি? রাজন সেদিন তোমাদের ছবি দেখালো, ইন্টারনেটে দিসো বলে, পেট মেট সব বুঝা যায়, আস্তাগফিরুল্লাহ!এসব কেমন ছবি,বউ?’

ছোট করে শ্বাস ফেলল সায়রা। জানে এখন কিছু বলে লাভ হবে না, আরো কথার খোঁচা অপেক্ষা করছে তার জন্য।

‘আচ্ছা মা, আরো ঢিলা করে বানিয়ে নেব কয়েকটা কামিয। আসলে সব চাপা হয়ে গেছে। বাসার বাইরে যাওয়াই হয় না তেমন।’ নরম সুরে বলল ও।

‘আমাদের বাচ্চা হবার আগ দিয়ে কেউ জানতেই পারতো না যে বাচ্চা হবে। নজর লাগে মানুষের, জানো না? অবশ্য জানবা কেমনে? মা বাপ না থাকলে এরজন্যই মুশকিল।’ খানিকটা তিক্ততার সাথেই মনের কথা উগড়ে দিল মিনারা খাতুন।

চুপ করে থাকা ছাড়া কিছু করার নেই। গলার কাছে কি জানি দলা পাকিয়ে আছে। দু বছরেও কেন গা সওয়া হয় না এসব তীক্ষ্ণ কথার খোঁচা?প্রতিবারেই নতুন নতুন করে ক্ষত বিক্ষত করে।

‘যাক,’ নিজেকে খানিকটা সংযত করে কথা আগালেন আরাফাতের মা, ‘শোন, ইভারা কালকে ঢাকায় যাবে। কালকে রাতে তোমাদের বাসায় যাবে বলেছে। আমি খানিকটা দোনোমনা করেছিলাম, কিন্তু ইভার মার সাফ কথা, আরাফাতকে নিজের হাতে বানানো গুড়ের ক্ষীর খাওয়াবে।’

শিরদাঁড়া বেয়ে শীতল স্রোত বেয়ে গেলো সায়রার। চিরাচরিত আদব ভুলে রুক্ষ কন্ঠে বলে ফেলল, ‘আবার কেন? গত মাসেই তো ইভা আসল। বার বার এ বাসাতেই কেন? আমি বুঝি না মা,ও প্রতি মাসেই কোন না কোন ছুতানাতা ধরে আসবেই। এ কেমন কথা?’

‘আহা, কাজেই তো যায়, বউ। প্রতি মাসে কি জানি রিপোর্ট করা লাগে ওর অফিসে।’ কিছুটা কৈফিয়তের নমনীয়তা মিনারা খাতুনের গলায়। খানিকটা অপরাধবোধও কি? ‘আসলে আরাফাতকে ওর খালাই কোলেপিঠে মানুষ করেছে, জানোই তো। আরাফাতও তো আগে ইভার মা বলতে অজ্ঞান ছিল। এক বেলারই তো ব্যাপার। আর ছেলেটা আমার তো তেমন কারো আদর যত্ন পায় না। সবার তো শ্বশুর বাড়ী, শালা সম্বন্ধী কেউ না কেউ থাকে।’

কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ ফোন রেখে দিলো সায়রা। সুন্দর সতেজ সকালটা এখন বিভীষিকাময় মনে হচ্ছে। দু হাতে মাথা চেপে ধরে কিছুক্ষণ বসে থাকল সে।

তিন

‘খারাপ লাগছে?’ আরাফাত ডাইনিং রুমে এসে ঝুঁকে দরজার নিচ থেকে পেপার নিল। ঘুম ভেঙে এটাই তার প্রথম কাজ প্রতিদিনের।
‘এই, কথা বল না কেন? খারাপ লাগছে?’

‘নাহ, চমৎকার লাগছে। বসে বসে উপভোগ করি জীবনের চমক।’ নিমের তেতো ঝরল সায়রার গলা থেকে।

কেউ গালে সপাটে চড় দিলেও এত অবাক হত না আরাফাত। বিয়ের আগে থেকে সায়রাকে চিনে সে। সেই অনার্স ফাইনাল ইয়ার থেকে। ঢাকা ভার্সিটিতে একটা সার্ভে করতে গিয়ে সায়রাদের ডিপার্টমেন্ট হেড সায়রার সাথে তার পরিচয় করায় দেয়। যে উদ্দেশ্য ছিল পরিচয়ের তা শতভাগ সফল হয়েছে সায়রা আর আরাফাতের বিয়ের মাধ্যমে। প্রবীন ভদ্রলোক সায়রাকে ডেকে পাঠিয়ে এক ফাঁকে আরাফাতকে বলেছিল, ‘আরাফাত, জানো তো আমার বিবাহযোগ্য ছেলে নেই। নাহলে এই মেয়ের সাথেই বিয়ে দিতাম। এই মেয়ের মনটা আমেরিকার টেক্সাসের চাইতেও বড়।’

এহেন উপমায় না হেসে পারেনি আরাফাত। প্রথম দেখাতেই ভালো লেগেছিল শ্যাম বর্ণের মেয়েটিকে। এই স্যারের মাধ্যমেই সায়রার খালা খালুর কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠায় প্রেমে ভালোবাসা পর্বের ধার না ধরেই। পঞ্চাশ হাজার মাইনে শুনে সায়রার খালুর সে কি তুচ্ছ তাচ্ছিল্য! যা হোক, শেষ পর্যন্ত সায়রার জেদেই বিয়েটা হয়।নরম স্বভাবের মেয়েটা এমন অনশন করে বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা করবে কে ভেবেছিল! আরাফাতের জীবনে নেয়া খুব সম্ভবত সেরা সিদ্ধান্ত ছিল বিয়েটা। মেয়েটা এত মানিয়ে নিয়েছে নিজেকে তার জীবনে যে আরাফাত আগের বিভীষিকাময় সময়গুলো কাটিয়ে উঠেছে খুব সহজেই।

‘তুমি..তোমার কি হয়েছে?’ আরাফাত স্ত্রীর পাশে বসল। হাত ধরবে কি? না থাক, আরও রেগে যেতে পারে। সায়রার রাগগুলিও ওর মতন শীতল, কেমন এক কাঁপুনি ধরিয়ে দেয় চারপাশে।

‘কিছু না। প্লিজ আমাকে একটু একা থাকতে দাও।’ মুখ তুললো না সায়রা। অনন্তকাল মাথা চেপেই বসে থাকতে ইচ্ছা করছে।

‘প্লিজ বল। আমার খুব খারাপ লাগছে। তুমি তো এমন করো না কখনো। আমি ভাবলাম সকালটা তোমার সাথে গল্প করে কাটাবো। অথচ..’

‘তোমার ইভা আসছে আগামীকাল, রাতে খাবে, থাকবে। ওর সাথে প্রান ভরে গল্প কোরো সারারাত। আমি বিরক্ত করব না।’ এতটুকু বলার পর পরই সায়রার খারাপ লাগতে শুরু করল। এভাবে না বললেও পারত মানুষটাকে। সত্যিকার অর্থে তার আর দোষ কি?

‘সায়রা,’ আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল আরাফাত। আসলেই কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।

খানিকক্ষণ চুপ থেকে বলল, ‘আমি জানতাম না। আম্মুকে ফোন করে মানা করে দিচ্ছি।’

‘আমি কি তাই বলেছি? এমনিতেই আমি রাজ্যের খারাপ, চালচুলোহীন মেয়ে। আর কত ছোট করবে আমাকে?’ ঝাঁঝিয়ে উঠে পরক্ষনেই কেঁদে ফেলল সায়রা। হচকচিত আরাফাতকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই সে ছুটে গেস্টরুমে গিয়ে দোর লাগিয়ে দিল।

মেইন ডোর কে যেন ধাক্কাচ্ছে। আরাফাত গম্ভীর মুখে দরজা খুলে দিল। সাফিনের মা ঘোমটা টানতে টানতে ঘরে ঢুকল।

‘আফা কই?’ ইতিউতি তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল।

আরাফাত উত্তর দেয়ার আগেই খুট করে ছিটকিনির আওয়াজ।সায়রার শান্ত চেহারা দেখে কে বলবে এই মেয়ে একটু আগেও হু হু করে কাঁদছিল? কিছুই হয়নি এমন ভঙ্গিতে ঘরের কাজ গুছাতে লাগল। সারাদিন হু হা ছাড়া তেমন কোন কথাবার্তা হল না দুজনের মাঝে। বয়ে যাওয়া ঝড়ের আভাস পেয়ে সাফিনের মাও আলগা কথা বলার সাহস পেলো না। এমনিতে শুক্রবারগুলোতে আপার মন মেজাজ খুব তরল থাকে। না চাইতেই ফ্রিজ খুলে থেকে নানান ফলমূল দিয়ে দেয়। গেল শুক্রবার দুইটা আনার দিয়ে দিল ব্যাগে পুরে, একেবারে টাটকা, লাল টুকটুকে। তার নাতীনটা হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে অবাক হয়ে দেখল খানিকক্ষণ, আগে কখনো খায়নি আনার। একটু ভেঙে মুখে নিয়ে আবার দানাগুলো হাত বুলিয়ে দেখে, আবার খায়। বিস্মিত হয়ে প্রশ্ন করে, ‘আল্লাহ্‌র দুনিয়ার কত আজিব আজিব খানা খাদ্য, না দাদিবু? আমার আর কয়ডা খাওন বাকি?’

‘সাফিনের মা, গাঁদা ফুলের শুকনো গাছগুলো ফেলে দিয়ে কিনারের টবগুলির মাটি একটু আলগা করে দাও তো। টমেটোর চারা লাগাবো। ‘ সায়রার চেহারা অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। আরাফাত পায়ে স্যান্ডেল গলিয়ে কিছুক্ষণ আগে কোথায় যেন গিয়েছে। হয়ত দুপুরের আগে আসবে না। না আসুক, সায়রা ফোন দিবে না।

‘আফা, দেহেন দেখি!’ সাফিনের মায়ের হাতে মাটিমাখা কি যেন ঝুলছে।

‘কি এটা?’ অনাগ্রহের সাথে প্রশ্ন করল সায়রা।

নাক কুঁচকে মুখ সামনে নিয়েও বস্তুটার আগামাথা বের করতে পারল না। কেমন যেন শুকিয়ে যাওয়া লেবুর মতন এক জিনিষ, চুল প্যাঁচানো, মাঝ বরাবর কি ওটা? পিন নাকি সুচ?

হঠাৎ গা গুলিয়ে বমি আসল। কেন মনে হচ্ছে ঘাড়ে কেউ আগুনজ্বলা দুটি হাত দিয়ে চেপে ধরে আছে?

‘ফেলে দাও। মাটির সাথে চলে এসেছে হয়ত।’ টেনে টেনে বলল সে।

‘আফা,’ সাফিনের মায়ের মুখ শুকিয়ে আমসি,’ইতা বালা জিনিষ না। আফা, ইতা খারাফের কারবার। ইতা এমতে ফেলন যাইত না।’

‘সাফিনের মা, এখন বক বক শুরু করবা না, প্লিজ। ফেলে দিতে বললাম, ফেল!’ স্বভাববিরোধি অধৈর্যতা আজকে তাকে পেয়ে বসেছে। আজ দিনটাই কেমন এলেবেলে। আগুনের হলকা ঘাড় বেয়ে চোখে উঠে আসছে। একেই কি চোখ গরম করা বলে? যন্ত্রণার মাঝেও হেসে ফেললো সায়রা।

সময় নিয়ে গোসল সারল সে মোড়ায় বসে। আরাফাত আসলে হাসিমুখে কথা বলবে, মনে মনে ঠিক করল। অন্য কিছু সে তাদের মাঝে আসতে দিবে না, তৃতীয় কাউকে তো না বটেই।

বাথ্রুমের ছোট জানালার কাচে খটখট আওয়াজ হচ্ছে।সায়রা ঝট করে তোয়ালের দিকে হাত বাড়ালো। আম গাছটার ডাল ঘষার শব্দ? একটু কাছে আগিয়ে দেখতে যেয়ে আতঙ্কে জমে গেল সে। কালো কাকটা না? গ্রিলে ঠোট ঘষতে ঘষতে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। হাসছে নাকি? জ্ঞান হারানোর আগে সায়রার মনে হল ওটা ঠোট দিয়ে জানালা খুলতে চেষ্টা করছে।

চলবে ইন শা আল্লাহ