ক্রিস্টমাস

ক্রিস্টমাস আমার জন্য ছোটবেলা থেকেই অনেক আনন্দের দিন ছিল। ক্রিস্টমাস মানেই নানির বাসায় থাকতে যাবো, সব কাজিনরা আসবে, দিনের পর দিন খেলা ধুলা,আড্ডা। একসাথে লুডু খেলা, ছাদে বসে রাতেরবেলা গান গাওয়া, এক অন্যরকম আনন্দ।

যখন একটু বড় হলাম ক্রিস্টমাস মানে নতুন জামা, নতুন জুতা, সুন্দর করে সাজা। জামা ২৪ তারিখ রাতে পরার আগে কাউকে দেখানো যাবেনা। শীতের মধ্যে রাতেরবেলা চার্চে যেতেই হবে। না গেলে তো আনন্দই মাটি। সকাল থেকে কাজিনদের সাথে একেক কাজিনের বাসায় ঘুরতে যাওয়া, মজা করা।

যখন কলেজে, ভার্সিটিতে যাওয়া শুরু করলাম ক্রিস্টমাস মানে ফ্রেন্ডদের দাওয়াত দিতে হবে। আর আমার মুসলিম ফ্রেন্ড ছিল বেশি। ওরা আগে থেকেই বলতে থাকতো, “২৫ তারিখ দাওয়াত দিবি না”? আর ক্রিস্টমাসের দিন আসলেও বার বার বলতো, “তোরা কত মজা করিস”!

এরপর এক সময় আল্লাহ হেদায়েত দিলেন আলহামদুলিল্লাহ। আগে যে জিনিসগুলো আনন্দের ছিল এখন আর তা আনন্দের লাগেনা। শীতের মধ্যে রাতে সাজুগুজু করে চার্চে যাওয়াকে বোকামি মনে হয়।সারাদিন এতো গান বাজনা, নাচানাচি, হই-হুল্লোর আর ভালো আগেনা আগের মত। যদিও অনেক অনেক দিনের অভ্যাস একদিনে বদলায়নি, কিন্তু আগের মত আনন্দ আর পেতাম না। এরপর এক সময় একেবারেই আনন্দ বন্ধ হয়ে গেল।

হটাৎ এই পরিবর্তন কেন? যারা আমাকে এতদিন দেখে এসেছে সবাই অবাক হয়ে যেত। যতই লুকানোর চেষ্টা করতাম পরিবর্তনটা ঠিকই ধরা পরতো। আগে কাউকে বলতে পারতাম না। আমি সব জেনে ঠিকমত বুঝে নিতেই তো কত সময় লাগিয়ে ফেললাম, আর যারা জানেনা তারা কি একবার বলতেই সব বুঝে যাবে?

আগে আমার জীবনে সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস, আল্লাহর হেদায়েত ছিলনা। আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা ছিলনা, নবীদের প্রতি ভালোবাসা-শ্রদ্ধা ছিলনা।ক্রিস্টমাস পালন করা আর এটাকে কেন্দ্র করে এতো হারাম কাজের কুফল সম্পর্কে জ্ঞান ছিলোনা।

ক্রিস্টমাস মানে যীশুখৃষ্টের জন্মদিন। মজার ব্যাপার হচ্ছে উনি যে ২৫শে ডিসেম্বর জন্ম নিয়েছেন তা বাইবেলে কোথাও নাই। তারিখটা যে সঠিক তারই কোন প্রমাণ নেই।

আমাদের কোন নবী,রাসূল (আ) কখনো জন্মদিন পালন করেনি। জন্মদিন পালনের রেফারেন্স কোন হাদিসে বা কিছুতেই পাওয়া যায়না। জন্মদিন পালন মুসলমানদের মধ্যেই নাই।

আর আমি আল্লাহকে ভালোবাসি, আল্লাহকে আমার রব মেনেছি, সে রকম জায়গায় আমি কিভাবে যাই যেখানে আল্লাহকে বাদ দিয়ে আল্লাহর প্রাপ্য সম্মান একটা মূর্তিকে দেওয়া হয়েছে! একটা মূর্তি? আস্তাগফিরুল্লাহ। যার কিনা নিজেকে রক্ষা করারই ক্ষমতা নাই। দেখা,শোনা তো পরের ব্যাপার। যে আল্লাহকে ভালোবাসবে তার জন্য এটা শুধুমাত্র একটা উৎসব না,আল্লাহর জায়গা এমন তুচ্ছ একটা জিনিসকে দেওয়া মেনে নেওয়া একেবারেই সম্ভব না।

যাদের আল্লাহ হেদায়েত দেয়নি তাদের কাছে হয়তো অবাক লাগবে। মনেহবে সৃষ্টিকর্তা তো একই,তাকে আমরা যে যেভাবেই ডাকিনা কেন, একজনকেই ডাকছি। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা এক যেমন সত্য, তাঁর আর কোন দ্বিতীয় স্বত্তা নাই যেমন সত্য, একটা মাটির তৈরী মূর্তি যে তাকে রিপ্রেজেন্ট করতে পারেনা তাও সত্য। যে মাটি আল্লাহ বানিয়েছে, যে মানুষ আল্লাহ বানিয়েছে, তাদের তৈরী মূর্তি আল্লাহর মত? বুদ্ধি থাকলে কেউ সহজেই দেখতে পারবে ব্যাপারটা কতটা অযৌক্তিক।

এখন অনেকদিন পার হয়ে গেছে। এখনো ক্রিস্টমাস আসে, তবে এখন আর আমার কাছে এর সাথে অন্য কোনদিনের পার্থক্য নাই। ক্রিস্টমাস কি, আমরা কত আনন্দ করতাম তা আমার ছেলেরা জানেও না।

আমি আল্লাহকে ভালোবাসি। আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া এটা। আল্লাহ যা নিষেধ করেছেন আমি তা বর্জন করি। হয়তো আগে বুঝিনি,দেরিতে বুঝেছি। কিন্তু যখনই জেনেছি ক্রিস্টমাস পালন করা যাবেনা শুধুমাত্র আল্লাহকে ভালোবাসি বলেই তা অপছন্দ করেছি।আর যখন বুঝতে পেরেছি , মন থেকেই এর প্রতি ভালোবাসা চলে গেছে।

আর আমরা সুরা ইখলাসে পড়ি, আল্লাহ সুবহানাতা’লা কাউকে জন্ম দেননি, তিনি কারো জাঁত নন। তাহলে আমরা কিভাবে মেরি ক্রিস্টমাস বলে কাউকে শুভেচ্ছা জানাতে পারি, যার অর্থ দাঁড়ায় আল্লাহর সন্তানের জন্ম উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানানো, আস্তাগফিরুল্লাহ।

খ্রিস্টানরা যখন ক্রিস্টমাস পালন করে হেদায়েতের দুয়া করি। কিন্তু মুসলমানরা যখন পালন করে খুব কষ্ট লাগে। আমরা কি আমাদের রবকে ভুলে গেছি? একবারও কি মনেহয়না কেন বিধর্মীদের উৎসব পালন করা হারাম? আসলেই যে চিন্তা করে আর যে করেনা তারা কখনো এক হতে পারেনা।

ক্রিস্টমাস
নাইলাহ আমাতুল্লাহ