আমার মাসনাটা!!

একটা আমল জানা দরকার!

কদিন ধরে বউ মাসনার কথা বলছিল আমাকে, হাসি আনন্দের ছলে আবার রাগের ছলে। এই যেমন দেরিতে বাসায় ফিরলাম আর বলে বসলো, আমাকে তো এখন আর মিস করো না, মাসনা টাসনা করেছো নাকি?
আলু ভর্তাটা সেই মজা লাগলো,আমার উম আম আওয়াজ করে খেতে দেখে বলে- হুহ,খেয়ে নেও খেয়ে নেও,মাসনার রান্না মোটেও এমন মজা হবে না।

একদিন বলছিলাম কাচুমচু হয়ে- ইয়ে মানে,আজকাল মাসনা মাসনা কর কথায় কথায়, তুমি কি সিরিয়াস নাকি?

তিনি আড়চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলেন- করবা নাকি?

আমি আরো লজ্জায় লাল হয়ে বললাম- তুমি যখন এতো করে মাসনার কথা স্মরণ করো …..

পরদিন আমি অফিসে বসে মোবাইল গুতাচ্ছিলাম, দেখি বউ স্ট্যাটাস দিলো- “Patri dekhte ashchi”

আমি তো মানে কি যে আনন্দিত, যেন মেঘ না চাইতে বৃষ্টি !!
নক দিলাম বউ কে,

  • সিরিয়াসলি?
  • সামনে অনেক মুরুব্বী, পরে জানাচ্ছি সব, হুট করেই আসা হলো।

আমি সাথে সাথে নক দিলাম বন্ধুমহলে, সেই গর্বের সাথে বলছি, আমার বউ আমার জন্য পাত্রী দেখতে গেছে, তোদের কারোও বউ এমন করবে নাকি? মাসনার কথা বললেই দৌড়ানি খাস তোরা, আর দেখ আমার বউ নিজেই সব করছে।

সেই আনন্দে আমার ঘন্টাখানেক কেটে গেলো। টুস করে একটা স্ট্যাটাসও দিয়ে ফেললাম – বউ পাত্রী দেখতে গেছে।

সেখানে অনেক মজার মজার কমেন্টও করলো সবাই। কেউ কেউ বিয়ের দাওয়াত চাইলো, কেউ কেউ সাবধান করলো ইনসাফের ব্যপারে, কেউ কিভাবে বউ কে রাজি করালাম সেই টিপস চাইল, কেউ আফসুস করছে আমার ভাগ্য দেখে।

বাড়ি ফিরলাম সন্ধায়,বউ আসেনি এখনো। কল দিলাম।

  • হ্যালো
  • হ্যা হ্যালো,শুনো তোমাকে এখুনি কল দিতাম। আর তুমিই দিলে। তুমি এখুনি চলে আসো, আমি ইনবক্সে ঠিকানা টা দিচ্ছি।
  • আচ্ছা আচ্ছা মানে কি? আমি যাবো কেন? আর আজই?
  • হ্যা,পরে বিস্তারিত বলছি, আগেই তো বলেছিলাম পাত্রীপক্ষ কি চায়, এখন তুমি দেরি কর না, গত ঈদের পাঞ্জাবি টা আলমারিতে আছে, ওটা পরে নিও।

আমার মনে হচ্ছিল আমি ১৫/১৬ বছরের যুবতী কন্যা, আমাকে হুট করে কথা নাই বার্তা নাই আমার বাবা এসে বললেন তৈরি হয়ে নে মা, তোকে দেখতে আসছে আর আজই তোর বিয়ে!

আমি চট করে গোসল সেরে তৈরি হয়ে নিলাম। ততক্ষণে বৌ ইনবক্সে ঠিকানা দিলো। কাছেই আছে,যেতে বড়জোর আধঘণ্টা। মনে মনে খুশিই হলাম। বাপের বাড়ি আনা নেওয়া করতে খুব একটা ঝামেলা হবে না।

প্রথমে পাঠাও তে ঢুকলাম,পরে ভাবলাম নাহ! পাঞ্জাবি তে ভাজ পরবে,আজ উবারেই যাবো।

যতগুলো আতর ছিল ঘষে নিলাম। গাড়ি তে বসে বার বার চুল দাড়ি ঠিক করে নিচ্ছিলাম। কত আকাশকুসুম ভাবতে ভাবতে চলে এলাম গন্তব্যে।

ভাড়া চুকিয়ে বাড়ির দিকে তাকিয়ে ভাবছি বাহ,আমার বউ তো পয়সাওয়ালা শ্বশুর দেখে পাত্রী ঠিক করলো! কি আলিশান বাড়ি।

ভিতরে ঢুকতেই আমার শালা আমাকে চেপে ধরলো।
আরেহ দুলাভাই, এতোসময় লাগে আসতে! সবাই আপনার জন্য অপেক্ষায় ছিল! জলদি আসেন!!

শালা আমাকে যেই টান দিলো যেন আমি জাহাজের লাঙল। আমি শুধু অবাকই হচ্ছি। উফফ আমার বউ একটা জিনিয়াস। তার মা বাবা কে কিভাবে রাজি করালো? আফসুস হচ্ছিল ইশ আগে জানলে আমার আব্বা আম্মাকেও নিয়ে আসতাম।

যাইহোক, মনে মনে বউ এর জন্য প্রচণ্ড ভালবাসা ভক্তি উথলে পড়ছিল। শালা আমাকে টেনে নিয়ে গেলো বিশাল এক ড্রইংরুমে,আমার শশুড় সহ আরো অনেক মুরুব্বীরা আছেন, সবাইকে খুব লজ্জা নিয়ে সালাম করলাম। কেউ কেউ কোলাকোলি করলো। শালা কাউকে কাউকে বলে দিচ্ছিল ইনি আমার দুলাভাই।

আমি যেয়ে বসলাম আমার শশুড় মশাইয়ের পাশে,আরেক পাশে এসে বসলেন পাত্রীর বাবা। আমার যে কি লাগছিল তখন! এও কি সম্ভব! এমনটাও কি হয়!দুই শশুড়ের মাঝে আমি! উফ আমার বউ তুমি আমার উলা,তুমি সত্যিই জিনিয়াস।

আমার শশুড় আমার কানে কানে বললেন- ওরা হুট করেই বলছে আজই পাত্রী দেখা আজই বিয়ে। তাই হুট করে সব ব্যবস্থা করতে হলো।

উনার কথা শেষ না হতেই হুজুর কেশে উঠলেন। উনি এখন বিয়ে পড়াবেন। আমি ভাবছি কেউ আমাকে ধরে হুজুরের পাশে নিয়ে যাবে নাকি আমি একাই যাবো? আমার মনে আছে প্রথম বিয়ের সময় আমার বাবা আমাকে নিয়ে হুজুরের পাশে বসিয়েছিলেন।

আমি ভাবতে ভাবতে উঠি উঠি করতে করতে দেখি আমার শালা যেয়ে বসলো হুজুরের পাশে। উমা! আমার শ্বশুর আবার আমার হবু(!) শ্বশুরও হুজুরের পাশে বসলেন। হুজুর কাবিননামায় কি কি লিখছেন। শালা আর তার বাবা কথা বলছেন। সব কেমন ঘোরের মাঝে দেখছি যেন! আমার মাথা ঘুরছে নাকি এই ঘর?
হুট করে গায়ে মাখা আতরগুলোর ঘ্রাণ মারাত্মক ভাবে নাকে লাগছিল আর মাথা ঘুরে উঠছিল। এই বুঝি বমি আসবে!

শালা আমাকে তুলে কোলাকোলি করতে ঘোর কাটলো। সেই হাসি তার মুখে! আরেহ! এই হাসি তো আমার মুখে থাকার কথা ছিল!!

হঠাৎ মনে হলো,কদিন আগে না বউ বলেছিল, তার ছোট ভাইয়ের জন্য প্রস্তাব দিয়েছিল। তারা নাকি রাজি, বিয়ের কথাবার্তাও মোটামুটি পাকা! ওহ তাইতো! এই কাহিনী তাহলে … আমি কিভাবে সব ভুলে গেলাম …

কখন খাওয়ার পর্ব শেষ হলো আর কখন আমরা গাড়িতে বসে বাসার দিকে রওনা হলাম কিছুই বুঝছিলাম না। শুধু মাথায় ঘুরছে বন্ধুদের কি বলবো? সবাই তো সমানে মেসেজ দিচ্ছে !!

কি কি বলা যায় তা ভাবতে ভাবতে পাঞ্জাবি ছেড়ে বিছানায় শুইলাম। আমার বউ ও এসে বসলো। হুট করে মনে হলো স্ট্যাটাসটা না আবার ওর চোখে পরে! তাহলে তো সর্বনাশ! আজীবন পচাবে!

বন্ধুদের কি জবাব দিবো সেই টেনশনও বেমালুম ভুলে গেলাম। জলদি করে স্ট্যাটাস ডিলিট করতে যেয়ে দেখি বউ এর কমেন্ট-

Not for you,for your shala.

আর তাতে আমার সব বন্ধুদের হাহা রিয়েক্ট!

এমন কি কোন আমল আছে? যা করলে আজকের এই স্ট্যাটাস,সবার কমেন্ট আর ইনবক্স গুলো সবার ব্রেইন থেকে একদম মুছে যাবে? মানে আমারও, শালার রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস ম্যারিড দেখলেই আমার লজ্জা লাগে!

আমার মাসনাটা!!
– যাইনাব আল গাজী
(১০/০৪-২০১৯)