ধমুকজ ম্যাট্রিমনি

ধমুকজ ম্যাট্রিমনির খুব অল্পদিনেই নামডাক হয়েছে। প্রতিদিন তাদের সাইটে হাজার হাজার বায়োডাটা পড়ে। এক মাসে তারা গড়ে ১০০ টা বিয়ে দেয়। 

তাদের ফেসবুক পেইজে রিভিউ খুবই ভাল। অনেকেরই বিয়ে হচ্ছিল না, কিন্তু ধমুকজে বায়োডাটা দেয়ার এক সপ্তাহের মাথায় তারা বিয়ে করে সুখী জীবন যাপন করছে।

পাড়ার ঘটক আন্টিকে বায়োডাটা দিয়ে সাড়া না পাওয়া আঙ্গুরি তার বান্ধবীর পরামর্শে একদিন ধমুকজে বায়োডাটা দিল। ঐদিনই ঠিক একই সময়ে সদ্য চাকরিতে জয়েন করা রুবেল নিজের বায়োডাটা সাবমিট করল।

গল্পের শুরু এখানেই। আঙ্গুরি আর রুবেলের অসম্ভব বিয়েকে ধমুকজ সম্ভব করল মাত্র ৫ দিনে! 

★প্রথম দিন★

বায়োডাটা দেয়ার পর আঙ্গুরি আর রুবেল সারাদিন নিজেদের মেইল আইডিতে সাইন ইন করে বসেছিল। ধমুকজ থেকে একটা থ্যাঙ্ক ইউ মেসেজ এসেছে। আর কোনো সাড়াশব্দ নেই। দুজনের দিন কাটল অস্থিরতায়।

★দ্বিতীয় দিন★

ধমুকজ থেকে মেইল পেয়েছে আঙ্গুরি। ওরা একটা বায়োডাটা পাঠিয়েছে। আজ বিকেলের মধ্যে জানাতে হবে ছেলে পছন্দ হয়েছে কিনা। ছেলের নাম রুবেল। আঙ্গুরির বায়োডাটা পছন্দ হয়নি। মেইল করে সে জানিয়ে দিয়েছে।

কিছুক্ষণ পর আঙ্গুরির ফোন বেজে উঠল।

– হ্যালো, আসসালামু আলাইকুম। ধমুকজ থেকে বলছি। আপনি কি আঙ্গুরি আপু?

– ওয়ালাইকুম সালাম। জ্বী, আমি আঙ্গুরি।

– আপু বায়োডাটা পছন্দ হয়নি কেন? কী সমস্যা জানতে পারি?

– আমার সাথে তার কিছুই ম্যাচ হচ্ছে না, ক্রাইটেরিয়া মিলছে না।

– আপু ক্রাইটেরিয়া মিলাতে চাইলে মিলে, না মিলাতে চাইলে মিলে না। আমি কিছু কথা বলছি মনযোগ দিয়ে শুনুন। আপনাকে এই বায়োডাটা দেয়ার আগে আরো ১৭ জনের কাছে আপনার বায়োডাটা পাঠিয়ছি। তারা রিজেক্ট করেছে কেন জানেন? তারা রিজেক্ট করেছে কারণ আপনি কাইল্লা, বাইট্টা এবং ভুটকা। 

– আমি কাইল্লা, বাইট্টা আর ভুটকা? এই ফালতু কথা বলার জন্য আপনি আমাকে ফোন দিয়েছেন?

– আহা আপু! কথা শেষ করতে দিন। সবকিছু মেইলে বলা যায় না বলে ফোন দিয়েছি। আমাদের সময় কম। যা বলছিলাম… ১৮ নাম্বার জন ছিলেন রুবেল ভাই, তিনি বললেন কাইল্লা বাইট্টা ভুটকা হলেও একটা মেয়ের বিয়ে করার অধিকার আছে। এই মেয়ের বয়স ধাই ধাই করে বেড়ে যাচ্ছে, আমি রিজেক্ট করে দিলে আরেকজন রিজেক্ট করবে তারপর আরেকজন ততদিনে তার বিয়ের বয়স পার হয়ে যাবে। আমি একেই বিয়ে করতে চাই।

– কিন্তু ভাই আমি তো কাইল্লা বাইট্টা ভুটকা না। আমার রঙ শ্যামলা, আমাকে কেউ কখনও বাইট্টা বলেনি। আর বিএমআই চেক করে দেখেছি ওজন ঠিকই আছে। 

– আপু আপনি নিজেকে কীভাবে দেখেন আর অন্যরা আপনাকে কীভাবে দেখে তার মাঝে বিস্তর ফারাক আছে। আপনি কখনো চিন্তা করে দেখেছেন এত বয়স হওয়ার পরও কেন আপনার বিয়ে হয়নি? প্লিজ চিন্তা করে দেখুন। আপনি কাইল্লা বাইট্টা ভুটকা হবার পরও আপনার ব্যাপারে রুবেল ভাই আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আগের ১৭জনের মত রিজেক্ট করে দেয়নি। গতকাল মাত্র সিভি দিয়েছেন এর মাঝে ১৭ জন রিজেক্ট করে দিয়েছে। আপনি কি অবস্থাটা বুঝতে পারছেন? আপনি আজকের দিনটা চিন্তা করে দেখুন, আংকেল আন্টিকে রুবেল ভাইয়ের বায়োডাটা দেখান। কাল রাতে আমাদেরকে ফোন দিয়ে জানাবেন কী সিদ্ধান্ত নিলেন। আল্লাহ্ হাফেজ।

ফোন কেটে গেল, আঙ্গুরি হাপুস নয়নে কাঁদতে লাগল। সে কাইল্লা বাইট্টা এবং ভুটকা বলে এতদিন তার বিয়ে হয়নি। আর সে কিনা ভেবেছে তার বিয়ের জন্য ঠিকমত চেষ্টা করা হয়নি, চেষ্টা করলেই বিয়েটা হয়ে যাবে।

ওদিকে…

রুবেল গতকাল রাতে ঘুমায়নি। একটু পর পর মেইল চেক করে দেখেছে ধমুকজ কোনো মেইল দিল কিনা। অবশেষে সকাল ৮ টায় মেইল এল। আঙ্গুরি নামে এক মেয়ের। বায়োডাটায় ভালো লাগার মত কিছু নেই।

ধমুকজে হাজার হাজার বায়োডাটা, একটা রিজেক্ট করে দিলে ওরা আরেকটা নিশ্চয়ই পাঠাবে। রুবেল বায়োডাটা রিজেক্ট করে দিল। কিছুক্ষণ পর ফোন এল রুবেলের নাম্বারে।

– হ্যালো, আসসালামু আলাইকুম। ধমুকজ থেকে বলছি। আপনি কি রুবেল ভাইয়া?

– ওয়ালাইকুম আসসালাম। জ্বী বলুন।

– ভাইয়া বায়োডাটা রিজেক্ট করে দিলেন যে? কোনো সমস্যা? মেয়েকে চেনেন নাকি আগে থেকে?

– আরে না ভাই আমি চিনব কী করে। মেয়ে শ্যামলা, তার উপর ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড মিলছে না। আকাশ পাতাল তফাৎ!

– ভাই আকাশে কে আছে? আপনি না আঙ্গুরি?

– এটা কি বলে দেয়া লাগে ভাই? আমাদের এটলিস্ট ঢাকায় একটা ফ্ল্যাট আছে।

– ভাইয়া হাতে সময় কম। কিছু কথা বলব মনযোগ দিয়ে শুনবেন। কথার মাঝে বাগড়া দিবেন না। আপনাকে এই বায়োডাটা দেয়ার আগে ৩০জন মেয়ের বাবাকে আপনার বায়োডাটা পাঠিয়েছিলাম। আঙ্গুরি আপা ৩১ নাম্বার। এই ৩০ জন…

– কী বলেন ভাই! বায়োডাটা তো দিলাম কালকে! ৩০ জন কীভাবে রিজেক্ট করে?

– ভাই কথার মাঝে বাগড়া দিতে মানা করেছিলাম। আমাদের অনেক বড় প্রতিষ্ঠান। ৩০ জনের সাথে বায়োডাটা চালচালি করা কোনো ব্যাপারই না। এই ৩০ জন মেয়ের বাবারা আপনার চাকরি আর বেতন দেখেই রিজেক্ট করে দিয়েছে। আর ফ্ল্যাটের কথা বলছেন? ওটা কি আপনার ফ্ল্যাট নাকি আপনার বাবার বলুন তো? এরমধ্যে একজন গার্জেনের কথা শুনে আমি লজ্জায় পড়ে গেছি। তিনি বলেছেন আপনার নাম রুবেল, মাথায় টাকবেল, ভুড়ি ৪০ ইঞ্চি, বেতন পান ১৫ হাজার। যে ভোটকা পেট বানিয়েছেন এই ১৫ হাজার টাকা নিজে খাবেন না বউকে খাওয়াবেন? আমি আংকেলকে কোনো জবাব দিতে পারিনি। উনি যা একটু খোলাসা করে বলেছেন। তা না হলে বাকী আংকেলরা রাখঢাক করে ঐ একই কথা বলেছেন। কেবল আঙ্গুরি আপার বাবা বলেছেন ছেলের নিজের ফ্ল্যাট থাকুক না থাকুক ওটা ব্যাপার না। ছেলে ১৫ হাজার মাইনে পায় ওতেও আমার আপত্তি নেই। আপনি খোঁজ খবর নিন ছেলের মন মানসিকতা কেমন। আমার মেয়ে দরকার হলে মাসের ১৫ দিন ছেলের টাকায় খাবে ১৫ দিন আমার টাকায়। তবু একটা ভালো মানুষ চাই। 

এখন ভাই আমাদের জানা দরকার আপনি ভালো মানুষ কিনা। কিছুটা মনে হয় বুঝেও ফেলেছি। ঘটকালি তো আর আজ করছি না!

– আরে বাবা আপনি কী বুঝেছেন? আমি শুধু বলতে চেয়েছি আমার বাবার ফ্ল্যাট আছে, মেয়ের বাবার ফ্ল্যাট থাকলে লেভেলটা মিলতো।

– রুবেল ভাই, এইসব মিলামিলি করে কখনও ভালো বিয়ে হয়না। আপনি বায়োডাটা এখনই আপনার বাবাকে দেখান। আমি দুই ঘন্টা পর আপনাকে ফোন দিচ্ছি। আল্লাহ্ হাফেজ।

দুই ঘন্টা হওয়ার ঠিক পাঁচ মিনিট আগে আবার ফোন…

– আসসালামু আলাইকুম রুবেল ভাই, আংকেলকে বায়োডাটা দেখিয়েছেন?

– ওয়ালাইকুম সালাম। ভাই আমার বাবা সব কথা শুনে খুব ক্ষেপে গেছেন। আপনার বাবার সাথে কথা বলার দরকার নেই। এই বিয়ে হবে না।

– রুবেল ভাই, আংকেল কার উপরে ক্ষেপেছেন? আমার উপর? আমরা উপর ক্ষেপলে তার রাগ ভাঙ্গানো আমার দায়িত্ব। মুরুব্বিদের রাগ মাথায় নিয়ে ঘটকালি করতে চাই না। আংকেলকে দিন, বিয়ে না হোক তার রাগটা ভাঙ্গাই।

ধমুকজের নাম শুনে রুবেলের বাবা প্রায় কেড়ে নিলেন ফোনটা।

– হ্যালো, আপনারা নাকি বলেছেন আমার ছেলের ৪০ ইঞ্চি ভুড়ি?

– আসসালামু আলাইকুম আংকেল। ভালো আছেন?

– আগে আমার কথার জবাব দেন। আমার ছেলের ভুড়ি আছে মাথায় টাক আছে তাই ফকিন্নি মেয়ে পেলেও বিয়ে দিতে হবে?

– আংকেল, আপনি না বুঝে রাগ করছেন। আপনি আমার বাবার সমান। আমি আপনার ছেলের মতই। আপনি করে ডাকবেন না আমাকে। কিছু কথা বলার ছিল, আপনি যদি শুনতেন।

– ধানাই পানাই না করে আগে আমার প্রশ্নের জবাব দাও।

– আংকেল, ভুড়ি, টাক এগুলো ছেলেদের অহংকার। এগুলোর জন্য কেন ফকিন্নি মেয়ে বিয়ে করাবেন? মিনিমাম একটা স্ট্যান্ডার্ড তো মেনটেন করতেই হবে।

– ঢাকা শহরে বাড়ি নাই, ফ্ল্যাট নাই, কালো খাটো মেয়ে আমার ছেলের জন্য স্ট্যান্ডার্ড?

– আংকেল আপনার সাথে দ্বিমত করব না। কিন্তু বিষয়টা আপনি যেভাবে দেখছেন তার থেকেও জটিল। আপনার সারাজীবনের সঞ্চয়ে ঢাকায় একটা ফ্ল্যাট কিনেছেন। সেই ফ্ল্যাটে ছেলে মেয়ে সবাইকে নিয়ে আছেন। এটা পাত্রের কোনো যোগ্যতা না। পাত্রের যোগ্যতা হল সে মাসে ১৫ হাজার টাকা ইনকাম করে। ভবিষ্যতে বেতন বাড়বে কিনা তার কোনো ঠিক নেই। এখন যদি বাড়ি গাড়িওয়ালা রাজকন্যা বিয়ে করান, প্রতি পদে পদে তার হুকুমে আপনাদের চলতে হবে। আজ নিজের ফ্ল্যাটে ছেলেমেয়ে সবাইকে নিয়ে আছেন। কাল শুধু রাজকন্যা আর আপনার ছেলে থাকবে ফ্ল্যাটে। আর আপনারা সপরিবারে গাছতলায়। ফকিন্নি মেয়েকে মানানো সহজ, রাজকন্যাকে মানাতে পারবেন?

– তাই বলে এমন মেয়ে? চেহারা সুন্দর হলেও তো বুঝতাম।

– চেহারা দিয়ে কী হবে আংকেল? এখন বুঝতে পারছেন না। সুন্দরী রাজকন্যা গাছতলায় পাঠিয়ে দিলে হয়ত বুঝবেন। ঘটকালি অনেকদিন যাবত করছি। তাই সব ঘটনার শেষটা আগেই দেখতে পাই। আপনাকে এখনই কোনো সিদ্ধান্তে আসতে হবে না। আজকের দিনটা চিন্তা করে দেখেন। রুবেল ভাইয়ার বয়স কম। আবেগ দিয়ে সব চিন্তা করে। তাই আপনার সাথেই কথা বললাম। ভালো থাকবেন আংকেল, আল্লাহ্ হাফেজ।

★তৃতীয় দিন★

আঙ্গুরি গতকাল রাতে তার বাবা মা কে বায়োডাটা দেখিয়েছে। মায়ের মন, ঠিকই বুঝেছেন মেয়ের কিছু হয়েছে। একটু মাথায় হাত রাখতেই হাউমাউ করে মেয়ের কান্না…মা আমি কাইল্লা বাইট্টা ভুটকা বলে ১৭ টা ছেলে আমাকে রিজেক্ট করে দিয়েছে। 

আঙ্গুরির বাবা বায়োডাটা পড়বেন কী, মা মেয়ের কান্নার মহোৎসব দেখছেন। মেয়ে কাঁদে, মা-ও কাঁদে। মা বলছে “কে বলেছে তুই কালো? ওদের চোখের সমস্যা। আন্ধা ছেলের সাথে বিয়ে দিব নাকি! তুই আমার কাছেই থাকবি। তোকে বিয়ে দিব না আমি।”

ওদিকে মেয়ের কান্না এখনই পাড়ার আন্টিরা জিজ্ঞেস করে বিয়ে করি না কেন। বিয়ে না করলে সারাজীবন কথা শুনতে হবে।

আঙ্গুরির বাবা দুজনকে ধমকে থামালেন। মেয়ের থেকে ধমুকজের ফোন নাম্বার নিয়ে রাখলেন ফোন দিবেন বলে।

তৃতীয়দিন সকাল বেলা আঙ্গুরির বাবা ধমুকজের নাম্বারে ফোন দিলেন। এক চাপুন দুই চাপুন ইত্যাদি ঝামেলায় টাকা গেল প্রচুর কিন্তু কথা হল না।

ওদিকে রুবেলের বাবা সারারাত চিন্তা করে সিদ্ধান্তে আসলেন আঙ্গুরির সাথেই ছেলের বিয়ে দিবেন। ১৫ হাজার মাইনের ছেলে নিয়ে অত নকশা চলে না। নিজেরও সম্বল বলতে ঐ একটা ফ্ল্যাট। কোন মুখে মেয়ের বাড়ির প্রাচুর্য দেখবেন? প্রাচুর্যের চেয়ে শান্তি বড়।

সকালে ধমুকজ থেকে ফোন এল। তিনি জানিয়ে দিলেন তিনি রাজি, ছেলেকে ম্যানেজ করা দুই মিনিটের ব্যাপার। ছেলের মা ঝামেলা করতে পারে, তাতে কী যায় আসে।

ছেলের দিকে সব ম্যানেজ হওয়ার পর ধমুকজ থেকে ফোন গেল আঙ্গুরির কাছে। ধমুকজ প্রতিনিধি আঙ্গুরির বাবার সাথে কথা বলতে চান।

– আসসালামু আলাইকুম আংকেল। ভালো আছেন?

– ওয়ালাইকুম সালাম বাবা। ভালো আছি। তোমাকে তো ফোন দিয়েছিলাম। লাইনে পেলাম না। তুমি করে ডাকলাম কিছু মনে কোরো না।

– না আংকেল কী যে বলেন। আপনি আমার বাবার মত। বায়োডাটা কী পছন্দ হয়েছে আংকেল?

– অত পছন্দ অপছন্দের উপায় আছে বাবা! যা শুনলাম! ১৭ জন রিজেক্টই করেছে কেবল মেয়েটা কাইল্লা বাইট্টা আর ভুটকা বলে। এরপর আর পছন্দ অপছন্দ কী! বিয়ে দেয়াটা দরকার হয়ে পড়েছে। বয়স বেড়ে যাচ্ছে মেয়ের।

– আংকেল এইজন্যই! এইজন্যই আমি মেয়ের বাবাদের রেসপেক্ট করি। যতগুলো ফ্যামিলি ডিল করেছি তার মধ্যে মেয়ের বাবাদেরকেই বিচক্ষণ পেয়েছি। তাহলে আংকেল আপনি রাজি?

– হ্যাঁ বাবা আমি রাজি। আমার মেয়ে একটু কষ্ট পেয়েছে। কিন্তু ওকে তো বাস্তবতা বুঝতে হবে।

– সেটাই আংকেল। আপনার মেয়েকে তো আমি তেমন কিছুই বলিনি কষ্ট পাবে বলে। আপনাকে বলি…এক ছেলে আপনার মেয়ের বায়োডাটা দেখেই বলেছে এটা কোন জাতের আঙ্গুর? কালো কালো গামা সাইজের গুলা? চিন্তা করেন অবস্থাটা!

– ওসব কথা থাক। তুমি ডেইট ঠিক করার ব্যবস্থা কর।
ঠিক আছে আংকেল। কালকেই দেখা সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে ফেলব। হাতে সময় কম। রাখি তাহলে আল্লাহ্ হাফেজ।

★চতুর্থ দিন★

আঙ্গুরি আর রুবেলের পরিবারের দেখা সাক্ষাতের ব্যবস্থা হল। সবার সবাইকে পছন্দ হয়েছে। আঙ্গুরির মা বারবার বলছেন একেবারে সোনায় সোহাগা। রুবেলের মা চুপচাপ আছেন। তবে দুই পক্ষের বাবারাই বেশ খুশি।

ধমুকজ প্রতিনিধি নিজ উদ্যোগে বিয়ের তারিখ ঠিক করলেন। ঠিক হল আগামীকালই বিয়ে পড়িয়ে নেয়া হবে। বিয়ে যত দেরি হবে তত সমস্যা। আত্মীয়স্বজন এসে নিত্যনতুন গেঞ্জাম বাঁধানোর আগেই বিয়েটা পড়িয়ে ফেলা জরুরী। কাল সকালে প্রতিনিধি নিজে উপস্থিত থেকে আরেকটি বিয়ে দিবেন। তাই এই বিয়ে পড়ানো হবে দুপুরে।

★পঞ্চম দিন★

একদিনের মাথায় খুব বেশি ধুমধাম হইচই করা গেল না। হইচই যা হল সবই আঙ্গুরির বাবা করলেন। আঙ্গুরি সাজবে কখন, এখনও পার্লারে যাচ্ছে না কেন? বাবুর্চি মুরগির গিলা কলিজা কই সরালো এসব নিয়ে তিনি সকাল থেকে হইচই করে গেলেন পাত্র পক্ষ আসার আগ পর্যন্ত। ধমুকজ প্রতিনিধি খেয়াল রাখলেন যাতে শেষ মুহূর্তে কোনো ক্যাচাল না হয়। কোনোরকম ঝামেলা ছাড়াই বিয়ে পড়ানো হয়ে গেল। এখন থেকে আঙ্গুরি রুবেলের স্ত্রী। 

মেয়ের বাবার মাথা থেকে যেন বোঝা নামল। মেয়েকে গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে ধমুকজ প্রতিনিধি বিদায় নিবেন এমন সময় মেয়ের বাবা তাকে হাত ধরে বসালেন।

– বাবা, এই বিয়ের ঝামেলায় তোমাকে একটা ব্যাপার জিজ্ঞেস করতে পারিনি। তোমাদের এই ধমুকজের মানে কী?

– আংকেল ধমুকজ মানে “ধর মুরগী কর জবাই”। এটা আমরা কাউকে বলি না। আপনাকে আমার পছন্দ হয়েছে তাই বললাম। 

– কী! এখানে মুরগী কে?

– আহহা! মুরগী চিনেন না আংকেল? মুরগী হল যেটার রোস্ট আমরা খেলাম আজকে।

– কিন্তু এর সাথে ঘটকালির সম্পর্ক কী?

– এই সম্পর্কটাও বলা নিষেধ। তবু আপনাকে বলি… ঘটকালি মানেই বিয়ে। বিয়ে মানেই মুরগীর জবাই। কারণ বিয়েতে মুরগীর রোস্ট থাকতে হবে। জবাই না করে রোস্ট খাওয়া যায়, বলেন আংকেল?

– আরেহ তাই তো! এই সামান্য ব্যাপারটা বুঝলাম না! মেয়ে বিয়ে দিয়ে একলাফে বুড়ো হয়ে গেলাম নাকি! হাহাহা!

আঙ্গুরির বাবা দুলে দুলে হাসছেন। ঘটকও হাসিতে তাল দিয়ে উঠে পড়লেন। সন্ধ্যায় আরেকটা বিয়ে পড়াতে যেতে হবে। 

শিক্ষণীয় : কোনো অসম্ভব কাজকে সম্ভব করার সবচেয়ে সহজ উপায় হল ঐ কাজ সংশ্লিষ্ট সবার মনে কমপ্লেক্স তৈরি করে দেয়া। তাই যখন কারো সম্মুখীন হবেন যিনি অকারণে কমপ্লেক্স তৈরি করায় পারদর্শী তখন সালাম দিয়ে দূরে সরে যাওয়াই সমীচীন। 

“ধমুকজ ম্যাট্রিমনি”
আফিফা আবেদীন সাওদা
(১২ নভেম্বর ২০১৭)