প্রতিশোধ!

জানালার পর্দার ফাঁক দিয়ে আড়চোখে বাইরে তাকালো সাকিব। দিনের আলো প্রায় নিভু নিভু। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। আর কিছুক্ষণের মাঝেই বহুদিনের তীব্র প্রতীক্ষার অবসান ঘটবে। আজ সে তার বহুদিনের পরিকল্পনাকে বাস্তবে রূপ দিবে। হাতের অস্ত্রের দিকে তাকিয়ে ক্ষণিকের জন্য ভাবনায় হারিয়ে গেলো সে।

দিন দিন পিশাচগুলোর উপদ্রব বাড়ছেই। প্রথমে সাকিবের বাবা-মাকে টার্গেট করেছিলো তারা। দীর্ঘদিন বিছানায় পড়ে ছিলেন তারা। ছোট বোন রিয়াকেও রেহাই দেয়নি রক্তখেকোর দল। সাকিবকেও আক্রমণ করতে এসেছিলো একদিন, আগেই টের পেয়ে কোনমতে তাদেরকে ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে বেঁচেছে সে।পরিবারের কাছের মানুষদের অবর্ননীয় কষ্টের আর যন্ত্রণার দিনগুলোর কথা মনে পড়তেই রাগে নিজের অজান্তেই হাতটা অস্ত্রের উপর চলে গেলো তার। আজ তাকে প্রতিশোধ নিতেই হবে, যেভাবেই হোক খুন করতেই হবে। বিগত কিছু সপ্তাহ ধরে ওদের গতিবিধি লক্ষ্য করেছে সে। কখন তারা আসে, কোথায় যায়, কতোক্ষণ অপেক্ষা করে, কোথায় অপেক্ষা করে – সব ডিটেইলস একে একে টুকে নিয়ে এনালাইসিস করে মার্ডারটা প্ল্যান করেছে সে। প্ল্যানটা ফুলপ্রুফ। ভুল করার কোন অবকাশ নেই সাকিবের আর।

ভাবনার জগত থেকে বাস্তবে ফিরে এলো সাকিব।ভ্যাম্পায়ারগুলো কালো পোশাকেই আসে বেশিরভাগ সময়। মাঝে মাঝে গ্রুপের কেউ কেউ সাদা কালো স্ট্রাইপ অথবা হাল্কা ধূসর রঙের গাউন পরে আসে।ড্রেসের রঙের উপরে ডিপেন্ড করে গ্রুপে তাদের স্পেশালিটি কি। এগুলো দীর্ঘদিন অব্জার্ভ করে বের করেছে সে।

সন্ধ্যা থেকে তারা একে একে আসতে শুরু করে। মাঝে মাঝে গুনগুন করে গান গাইতে গাইতেও আসে কয়েকজন। রক্তখেকোর দল! তাদেরকে দেখেই প্রতিশোধের আগুনে জ্বলতে শুরু করে সাকিব ।অনেক ভেবেছে সে, কিভাবে খুন করলে সবগুলোকে একসাথে খুন করতে পারবে সে। বিষাক্ত ধোঁয়া, কেমিক্যাল বিভিন্ন মেথড নিয়ে ভেবে দেখেছে সে। বেস্ট মেথডটা পেয়েও গেছে সে। খুব দ্রুত খুন করতে হবে তাকে, আর খেয়াল রাখতে হবে যাতে কেউই বাদ না পড়ে। তার বন্ধু মারুফকে ডেকেছিলো এই প্লানটাতে হেল্প করার জন্য। সে রাজি হয়নি। তাই যা করার সব সাকিবকে একাই করতে হবে এখন।

সন্ধ্যাটা আরো গাঢ় হয়ে এসেছে। একটু পরেই ওরা শিকারের সন্ধানে এখানে আসবে। হাতের অস্ত্রের দিকে নার্ভাসভাবে তাকালো সাকিব। পারবেতো একা এতোগুলোর সাথে? না,এখন ভয় পেলে চলবে না।নিজের মনকে বোঝালো সাকিব। আজ তাকে পারতেই হবে।

ওই তো। কালো গাউন পরে গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে আসছে পুরো ট্রুপ। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে,নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। হাতের অস্ত্রটার দিকে তাকিয়ে বাটনটা প্রেস করলো সাকিব। এরপরে ঠিক সামুরাই এক্স স্টাইলে ঝাপিয়ে পড়লো।

পটপট শব্দে আগুনের ফুল্কি ছুটিয়ে একে একে মরে ঝরে পড়তে লাগলো ভ্যাম্পায়ারগুলো। নিমেষেই কালো,ধূসর ভ্যাম্পায়াররুপী রক্তচোষাদের মেরে ফেললো সাকিব। বিজয়ের ভংগিতে মশা মারা ব্যাটটা উপরে তুলে মেঝেতে পরে থাকা মশাদের ডেডবডিগুলোর দিকে তাকালো সাকিব। জানালা আর বারান্দার দরজা সন্ধ্যার আগেই লাগিয়ে দেয় এখন সে।বারান্দার টবে পানি জমতে দেয় না আর। ডেংগু, ম্যালেরিয়া, চিকনগুনিয়ার মতো ভয়ংকর সব রোগের বাহক ভ্যাম্পায়াররূপী মশাদের এভাবেই সমাজ থেকে নিশ্চিহ্ন করতে চায় সাকিব।

প্রতিশোধ! 
-বিনতে আলম

(০৩/০১/২০১৯)