ক্ষমা

“বুয়া, এ ব্যাগে কি নিয়েছো?”
সন্দেহের কোন অবকাশ না থাকলেও তিথি বুয়াকে জিজ্ঞেস করে, কারণ এ শপিং ব্যাগটা কালই সে তোষকের নীচে রেখেছিল। কিন্তু আজ সে শপিং ব্যাগটা কিচেনে দেখে সে কৌতুহলী হয়ে চেক করে দেখে সেখানে ওর ছেলের কয়েকটি শার্ট, প্যান্ট, গেঞ্জি।

কিন্তু বুয়ার নির্লিপ্ত মিথ্যে জবাব, ঐ বাসা থেকে দিয়েছে।
তিথির খুব রাগ হচ্ছিল। তবু সংযত হয়ে বললো কি বলো, আমার ছেলের শার্ট, প্যান্ট আমি চিনবো না?
তবু বুয়ার একরোখা জবাব, আমি কইছি ঐ বাসা থুন আনছি।
তিথির রাগ হচ্ছিল খুব, বুয়ার সাথে মোটেও কথা বলতে ইচ্ছে করছিল না।
কারণ তিন, চারবার বলার পর ও বুয়া একই কথা বলছে এবং শেষে এ কথাও যোগ করলো “আপনি দারোয়ানরে জিগান”। কিন্তু মিথ্যেটাতো প্রমাণের দরকার, সেই সাথে বুয়াকে মিথ্যে এবং চুরির অপরাধ বোঝানো দরকার। কারণ আজ প্রমাণ না করলে সে ঠিকই তার মিথ্যে কথা প্রমাণিত হওয়ার আনন্দে, চুরি না ধরা পড়ার আনন্দে আনন্দিত হবে। অন্য আরেকদিনও একই অন্যায় করবে।

ওদের দুজনের কথার মাঝখানেই সায়েমের বাবা আর সায়েম মসজিদ থেকে এসে ঘরে ঢুকলো।
তিথি আজ দীর্ঘদিন পর জুমআর সালাত পড়তে গিয়েছিল। কারণ বুয়াকে নিষেধ করলেও ঠিক মসজিদের সময়টাতেই সে আসে। ওকে একা বাসায় রেখে যাওয়া যায় না। তাই তিথিরও মসজিদে যাওয়া হয়না। কিন্তু তিথি নিয়্যাত করেছে ইনশাআল্লাহ্ এখন থেকে প্রতিটি জুমআয় যাওয়ার চেষ্টা করবে। তাই বুয়াকে বলেছিল হয় সকালে, নয়তো বিকেলে আসবে। কিন্তু ওরা সবাই যখন মসজিদে, বুয়া ঠিকই ওর নিজের টাইমে এসেছে। বড় মেয়ে দরজা খুলে আবার শুয়ে আছে, আর বুয়া এ ফাঁকেই তার চৌর্যবৃত্তি চালিয়ে যাচ্ছিল।

সায়েমের বাবা তো সব বুঝে ফেললেন। বললেন, কারো প্রমাণের কোন প্রয়োজন নেই। বুয়া যখন বলেছে ও ঐ বাসা থেকে এনেছে, তো আমাদের সি.সি ক্যামেরাই সব প্রমাণ করবে বুয়া হাতে কি নিয়ে ঢুকলো। সি.সি ক্যামেরায় যখন ধরা পড়লো বুয়া ঘরে ঢোকার সময় হাতে কোন ব্যাগ ছিল না, তখনই বুয়ার মুখ কালো মেঘের মতো কালো আর ফ্যাকাশে হয়ে গেল। ভয়ে, লজ্জায় সে আর কোন কথাই বলতে পারছিল না। ফ্যাকাশে, ভীত, লজ্জিত মুখে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো।

তিথির তো বুয়াকে ভীত বা লজ্জিত করার কোনই ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু বুয়াকে তো অপরাধ, গুনাহ্ সম্পর্কে বোঝাতে হবে। তাছাড়া তিথির ভীষণ মন খারাপ হয়েছে বিশ্বাস ভঙ্গের কারণে। কারণ সে বুয়াকে যথেষ্ট স্নেহ করতো। বুয়ার বড় ভাই, বাবা নেই, স্বামীও অত্যাচারী বলে। কখনো এমন করেনি, আজ কেন করলো?

তিথি আপন মনে বার বার বলছে কেন বুয়া এমন করলো, চুরিও করলো, আবার মিথ্যেও বললো। কেন? আমার মন আজ অনেক খারাপ হয়েছে। আমি কত মায়া করতাম। এ যুগে কাউকে মায়া দেখাতে নেই… ইত্যাদি, ইত্যাদি।

এদিকে সায়েমের বাবা অনেক রেগে গেছে। সে গজগজ করতে থাকে, “এ পর্যন্ত তোমার বুয়া কত কি নিয়েছে। তাড়াতাড়ি ওকে বিদেয় করো। ওকে আর রাখবে না। যে একদিন নিয়েছে সে অন্যদিনও সুযোগ পেলে ঠিকই নেবে”।

কিন্তু তিথি মন খারাপ করে বুয়াকে কোন কড়া কথা না বলে, চলে যেতে বললো। বললো, যাও তোমার ভাগ্যে যে বাসা আছে, সেখানে কাজ করবে। তোমাকে রাখতে নিষেধ করেছে।

কারণ ওকে আবার রাখলে কোন অঘটন ঘটলে সায়েমের বাবার কড়া বকার হাত থেকে তিথি রেহাই পাবে না। বুয়াকে বললো, “তুমি নিয়েছো আবার আমাকে মিথ্যেবাদী বানিয়েছো, অথচ আল্লাহ্ মাফ করুন আমি মিথ্যে বলি না। বলেছো দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করতে, আজ দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করলে কি অবস্থা হতো? তোমার লজ্জা হতো না? দারোয়ান জানতো, অন্যরাও জানতো… কি খারাপ অবস্থা হতো?” এসব বলে তিথি অন্য রুমে চলে গেলো। মন খারাপ করে কাপড় ভাঁজ করছিল আর কিচেনে বুয়ার অশ্রুসিক্ত চেহারা মনে করে কেন যেন নিজেকেই অপরাধী মনে হচ্ছিল। যাক তবু ভুল বুঝতে পারলে, অনুশোচনা মনে এলে আল্লাহ্ও ক্ষমা করবেন। বুয়া যাচ্ছে না দেখে মেয়েকে বললো, ওকে চলে যেতে বল।

অনেকক্ষণ কেটে গেলো। হঠাৎ কিচেন থেকে বুয়া এসে তিথির পা জড়িয়ে ধরলো, “আফা আমারে মাফ করে দেন”।
তিথি চমকে গিয়ে ওকে হাত ধরে টেনে তুললো। আরে উঠো, উঠো। বুয়ার ভীত অপরাধী, অনুশোচনার ছায়াযুক্ত মুখের দিকে তাকিয়ে কোমল কন্ঠে বললো তোমার এটা করা মোটেই ঠিক হয়নি, কখনোই করো না, আজ কেন করলে? আজ দুইটা অন্যায় করলে, এক- চুরি করলে, দুই – মিথ্যা বললে। অথচ তুমি যদি চাইতে আমি ঠিকই তোমাকে দিতাম। আজ জুমআর খুৎবায় কি বলেছে জানো? কেউ যদি একটা সুতাও চুরি করে সে সুতাই তাকে জাহান্নামে নেয়ার জন্য যথেষ্ট হবে। স্বর্ণ চুরি করো আর সামান্য সুতা চুরি করো একই অপরাধ, একই শাস্তি পাবে। আর মিথ্যে বললে যে কি শাস্তি হবে তাও বোঝালো। যাও, আমি মাফ করলাম, আল্লাহ্ও তোমাকে মাফ করুন।

তিথি কাউকে ক্ষমা করতে পারলেই যেনো বাঁচে। ও নিজেও ভুল বশতঃ কারো সাথে কোন অন্যায় করে ফেললে ক্ষমা চাইতে দেরী বা দ্বিধা করে না। কারণ তিথি জানে আমাদের প্রিয় রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি ক্ষমা করে আল্লাহ তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। আর কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বিনীত হলে তিনি তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন।” (মুসলিম)

আজ সে কাউকে ক্ষমা করলে মহান আল্লাহ্ও তাকে ক্ষমা করবেন। পরম করুণাময় তো অসীম ক্ষমাশীল, তিনি ক্ষমা ভালবাসেন। যে কেউ আল্লাহ্ র জন্য ক্ষমা করলে আল্লাহ্ অবশ্যই তাকে তার প্রতিদান দেবেন।

মেয়েকে ইশারা করলো ওর বাবাকে ডাকতে। কারণ ওর পারমিশন ছাড়া তো রাখা যাবে না। সায়েমের বাবা মেয়ের অনুরোধে এলেন। তিথি ওর দিকে আশার দৃষ্টিতে তাকালো। সায়েমের বাবা বললো বুয়া তোমার গায়ের জামাটা কার? তিথি বললো আমি দিয়েছি। সায়েমের বাবা বললো হ্যাঁ, বুয়া দেখো তুমি চাইলেই কিন্তু তোমার আপা দিতো, তোমাকে অনেক জামা-ই তো দিয়েছে। কখনো কিছুর প্রয়োজন হলে চাইবে, না বলে কখনো কিছু নেবে না। তিথিকে বললো, শয়তানের ওয়াসওয়াসায় আজ হয়তো করেছে, ঠিক আছে, মাফ চাইলে করে দাও। আর কখনো যেন এমন না করে।

হঠাৎ ডোরবেল বেজে উঠলো। কে যেন এসেছে। তিথি বুয়াকে তাড়াতাড়ি চলে যেতে বললো, কারণ ও চায় না বুয়াকে অন্যদের সামনে লজ্জিত হতে দিতে। ওর অন্যায়ের ঘটনা অন্য কাউকে জানাতে। কারণ তিথি জানে আজ সে কারো দোষত্রুটি গোপন করলে শেষ বিচারের দিন মহান আল্লাহ্ও তার কোন দোষ গোপন করবেন।
***

উপরের ঘটনাটি একটি সত্যি ঘটনা। তিথি আর সাহায্যকারী বুয়ার সম্পর্ক কাছের সম্পর্ক নয়। কিন্তু এদের ব্যাপারে তো নয়ই বর্তমানে আমরা সবাই আমাদের অতি কাছের, অতি আপন সম্পর্ক গুলোর ক্ষেত্রেও কেমন যেন ছাড় দিতে রাজি হই না। স্বামী-স্ত্রী, বউ-শ্বাশুড়ী, ননদ- ভাবী, এমনকি কখনো ভাইবোন যে কারো ক্ষেত্রে এখন আমরা ক্ষমা করতে বা ক্ষমা চাইতে দ্বিধা বোধ করি। ক্ষমা করতে চাইনা কারণ সে অন্যায় করছে আমি ক্ষমা করবো কেন? আর ক্ষমা চাওয়া হয়না ইগোর জন্য, প্রেস্টিজের জন্য। আবার অনেক ক্ষেত্রেই লজ্জায়। কারণ এ যুগে ক্ষমা চাওয়াটাকেই দুর্বলতা মনে করা হয়। অথচ ক্ষমা করলে উভয় ব্যক্তিই দায়মুক্ত হয়ে যাই। উভয়ই আল্লাহর ক্ষমা আশা করতে পারি।

ক্ষমার ব্যাপারে আল্লাহ্ বলেন, “তোমরা যদি কল্যাণ কর প্রকাশ্যভাবে কিংবা গোপনে অথবা যদি তোমরা অপরাধ ক্ষমা করে দাও তবে জেনে রাখো আল্লাহ্ নিজেও ক্ষমাশীল, মহাশক্তিমান। (সূরা-নিসা: ১৪৯)

কাজের বুয়াটা শখের ডিনার সেটের একটা প্লেট ভেঙে ফেললো। রেগে কটু কথা বললে বা বেতন থেকে কেটে নিলে কি সেটা আমি ফেরত পাবো? কখনোই না। একটু বুঝিয়ে বলে ক্ষমা করে দেখিনা এখন থেকে সে কাজের ব্যাপারে আরো যত্নশীল হয় কিনা হ্যাঁ কিছু কথা বলা যেতেই পারে যেন সে সতর্কতার সাথে কাজ করে। তবে অবশ্যই তা কটু বা সীমার বাইরে গিয়ে নয়। কারণ আজ এটার জন্য ক্ষমা করলে আখিরাতে যে তার বিনিময়ে আমি মণি-মুক্তা, হীরা-পান্নার ডিনার সেট পাবো। ভাবতেই কেমন খুশি লাগে।

রিকশাওয়ালা পঞ্চাশ টাকার ভাড়া আশি টাকা চাইলো। আমরা কি করি? “এই ব্যাটা, মাথা ঠিক আছে তো..”? বা “পাগল নাকি?” “টাকা কি গাছে ধরে”? ধমক দিয়ে ইত্যাদি অনেক কথা বলে ফেলি। আচ্ছা ওর ইচ্ছে হয়েছে চেয়েছে, আমার ইচ্ছে হয়েছে যাবো না, ব্যস্।

ওসব কথা বলে খারাপ আমলের খাতাটা ভারী করার কোন দরকার আছে? বরং রিকশাওয়ালার সাথে দরদাম করে ভাড়া দেয়ার সময় যদি সামান্য কিছু টাকা আমরা সাদাকা হিসেবে বাড়িয়ে দেই এর বিনিময়ে সে খুশি হয়ে যে হাসি দেবে তার মূল্য তো আমরা এখানে পাবো না। সাতশো গুণ হয়ে তা জমা থাকবে পরের জগতের জন্য।

তেমনিভাবে কোন অসহায় এতিম বা মিসকীনকে যদি আমরা রেগে, ধমক দিয়ে কথা না বলে সুন্দর ব্যবহার করে আমার যা সামর্থ্য আছে সেখান থেকে কিছু দিই, তাদের করা দোষণীয় কাজগুলি ক্ষমা করি তবে তা অবশ্যই কিয়ামতের দিনে আমাদের জন্য দলিল হয়ে থাকবে।

রক্ত সম্পর্কীয় বা অন্যান্য আত্মীয়দের বেলায়ও হয়তো কেউ কোন দায়িত্ব বা কর্তব্য পালন করছেন না। কিন্তু আমরা যেন সব কিছু মেনে নিয়ে আমাদের দায়িত্বগুলো পালন করতে পারি। যত অসুবিধা হোক, মনে যত দুঃখ থাকুক তা চেপে রেখে। এজন্য দয়ালু আল্লাহ্ সুবহানাহু তা’আলার কাছে আমরা শুধু তাঁর দয়াটুকু চেয়ে নেব।

স্বামী, স্ত্রী, শ্বশুর, শ্বাশুড়ি, ননদ, ভাবী, দেবর, ভাসুর, জা, এদের কেউ হয়তো আমাদের সাথে এমন কোন আচরণ করেছেন যা মনে পড়লে তীব্র কষ্টে বুকের ভেতর হাহাকার করে ওঠে। চোখের পানি বাধ মানে না। হাজার চেষ্টা করে ও সে স্মৃতি ভুলতে পারি না। আর ক্ষমা করার কথা তো চিন্তাই করতে পারি না। এত এত কষ্ট দিয়েছে আমাদের কিভাবে ক্ষমা করবো…!!??

কিন্তু না, আমরা একবার আমাদেরকে দুঃখদানকারী সব মানুষকে ক্ষমা করে দেখি। দেখি কেমন অনুভূতি হয় মনে। দেখবো কি অনাবিল প্রশান্তিতে রহমানুর রহীম আমাদের মন ভরিয়ে দিয়েছেন। এত প্রশান্তি, এত তৃপ্তি আর কোথাও নেই। কারণ মহান রাব্বুল আলামীন যে অসীম ক্ষমাশীল! উনি যে ক্ষমাকে বড় ভালবাসেন। পরম করুণাময়ের ভালবাসার কাজ করতে পারলে আমাদের মন তো প্রশান্ত হবেই।

অন্যদিকে আমরা যদি নিজেদের দিকে তাকাই তো দেখবো হয়তো আমরা জেনে, না জেনে কতজনের সাথে অন্যায় করেছি, কতজনের হক্ব নষ্ট করেছি, মনের কষ্ট সইতে না পেরে শেয়ার করতে গিয়ে অনিচ্ছাসত্ত্বেও বা ভুলবশতঃ হয়তো গীবাহ্ করে ফেলেছি। আমরা যতটুকু পারি সে মানুষ গুলির কাছে অবশ্যই ক্ষমা চেয়ে নেবো। ক্ষমা চাইলে কেউ ছোট হয়না বরং বড় হয়। আর মহান আল্লাহ্ র হক্ব আল্লাহ্ যখন ইচ্ছে চাইলেই মাফ করতে পারেন, কিন্তু বান্দার হক্ব বান্দা মাফ না করা পর্যন্ত আল্লাহ্ ও মাফ করবেন না।

আসলে এখনকার সময়ে আমাদের জীবন ধারণ বড়োই কঠিন। পথে চলতে গেলে কতরকম ভয়, জ্যাম, খেতে গেলে ভেজাল, অসুস্থ হলে সুচিকিৎসার অভাব, বাচ্চাদের পড়ালেখার প্রচন্ড চাপ, গেমসে্র প্রতি বাচ্চাদের আসক্তি, অবাধ ইন্টারনেটের অপপ্রয়োগ, অশ্লীলতার বাড়াবাড়ি প্রচার, বাস কন্ট্রাক্টর, রিকশাওয়ালা, ড্রাইভার, বুয়াদের অন্যায় আচরণ ইত্যাদি ইত্যাদি সব মিলিয়ে আমাদের পক্ষে ধৈর্য্য ধারণ করা খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। না চাইলে ও আমরা অনেক সময় বাধ্য হয়ে দূর্ব্যবহার করে ফেলি। পরে অনুশোচনা করলেও আর লাভ হয় না। কারণ কথা হচ্ছে এমন তীর, যা একবার বেরিয়ে গেলে আর ফিরে আসে না। তাই আমাদের খুব কষ্ট হলে ও ধৈর্য্য ধারণের জন্য আল্লাহ্ র কাছে সাহায্য চাইবো। তিনি যেন আমাদের উত্তম আখলাক বা ভালো আচরণ দান করেন।

আমাদের রাসূল (সাঃ) একে অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন,

“বিচারের দিনে মীযানের পাল্লায় এমন কিছু নেই যা উত্তম আখলাকের চেয়ে ভারী হবে “। (আবু দাউদ)

জাহান্নামের পথ অনেক সহজ, সাময়িক আনন্দদায়ক। আর জান্নাতের পথ অনেক কঠিন, দুর্গম, কণ্টকাকীর্ণ। বড়ই সাবধানে পথ চলতে হয়। মুমিনের জীবন তো কারাগারে বন্দীর মতো কষ্টকর। কিন্তু মুমিনের প্রতিটি কষ্টের বিনিময়েই আল্লাহ্ উত্তম পুরস্কার রেখেছেন। তিনিই তো বলেছেন, “নিশ্চয়ই কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে। অবশ্যই কষ্টের সাথে স্বস্তি আছে”। (সূরা ইনশিরাহ্ঃ ৯৪: ৫-৬)

“আল্লাহ্ কষ্টের পর সুখ দেবেন” (সূরা তালাকঃ৬৫: ৭)

“এবং তাদের সবরের প্রতিদানে তাদেরকে দিবেন জান্নাত ও রেশমি পোশাক”। (সূরা দাহরঃ ৭৬: ১২)

আমরা সবাই তাই এ রমাদানে যারা আমাদের সাথে অন্যায় করেছে, সবাইকে ক্ষমা করে দেবো আর অামরা যাদের সাথে অন্যায় করেছি, যাদের গীবাহ্ করেছি তাদের কাছ থেকে অবশ্যই ক্ষমা চেয়ে নেবো। আমরা নিশ্চয়ই এতটা বোকা হতে চাইব না যে অন্যরা কি করেছে তা নিয়ে চিন্তা করবো। কারণ অন্যদের হিসেব অন্যরা দেবে, আর আমাদের হিসেব আমরা দিবো। পৃথিবীর কোন গুরুত্বপূর্ণ ভাইবা বোর্ডে প্রশ্ন করার সময় যদি বলি ও আমার সাথে এমন করেছে তাই পড়তে পারিনি, বা কেউ ডিস্টার্ব করেছে তাই লিখতে পারিনি। তাহলে কি ভাইবায় উর্ত্তীন হতে পারবো? কখনোই না। আর আমাদের পরকালের হিসেব তো হবে সূক্ষ্ম বিচারক অন্তর্যামী আল্লাহ্ র কাছে। যেখানে তিলমাত্র ফাঁকির স্থান নেই, কোন ধরনের অযুহাতই চলবে না। তাই আমরা সবচেয়ে বেশি বেশি চাইব পরম করুণাময়, অসীম ক্ষমাশীল মহান আল্লাহ্ সুবহানাহু তা’আলার কাছে ক্ষমা। কারণ আমরা তওবা করে কেঁদে কেঁদে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলে তিনি অবশ্যই আমাদের সবাইকে ক্ষমা করবেন। কারণ তাঁর রাগের চেয়ে ক্ষমা, ভালবাসা যে অনেক, অনেক, অনেকগুণ বেশি। আমরা যত পারি, ততো বেশি বেশি পড়ব ইনশাআল্লাহ্।

আস্তাগফিরুল্লাহ্….. আস্তাগফিরুল্লাহ্…. আস্তাগফিরুল্লাহ্……

“আল্লাহুম্মা ইন্নাকা ‘আফুউউন তু’হিব্বুল ‘আফ্ওয়া ফা’ফু ‘আন্নী”

“হে আল্লাহ্! তুমি নিশ্চয়ই ক্ষমাশীল, তুমি ক্ষমা করতে ভালবাসো, তাই আমাকে ক্ষমা করো”।

…………………………

ক্ষমা
ইসমাত কনক

জুন ১৪, ২০১৮ইং