পবিত্র রমাদানে করনীয়-বর্জনীয়

আলহামদুলিল্লাহ রমাদানের আর মাত্র একদিন বাকি। কোন কোন দেশে চাঁদ দেখা সাপেক্ষে মহিমান্বিত এই মাস ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। আজ আপনাদের জন্য থাকছে রমাদানের ইবাদাত ভিত্তিক ‘আমলের পরিকল্পনা। একেক জনের সুযোগ, সুবিধা বা সময় যেহেতু একেক রকম, যার কাছে যেটা সহজ মনে হবে সে সেভাবে রুটিন করে নেবেন। এই রমাদানে পুরোটা পালন করতে না পারলে ও আমরা চেষ্টা করে যাবো ইনশাআল্লাহ্। কারণ আল্লাহর কাছে সে ইবাদতই প্রিয়; যা পরিমাণে অল্প, কিন্তু নিয়মিত করা হয়।

প্রথমে আমরা জেনে নিই রমাদানে সিয়াম পালন আর তারাউই ছাড়া অন্যান্য করণীয় আমলসমূহ সম্পর্কে। এরপর ইনশাআল্লাহ্ বর্জনীয় কাজগুলি সম্পর্কে জানব।

১. সঠিক ওয়াক্তে সালাত আদায়ঃ
রমাদানে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত অবশ্যই প্রথম ওয়াক্তেই পড়ার অভ্যাস করতে হবে। এ বিষয়ে হাদীসে এসেছে,

আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ (রাঃ)বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী! কোন আমল জান্নাতের অতি নিকটবর্তী? তিনি বললেন, সময় মত সালাত আদায় করা। (সহীহ মুসলিম : 263)

২. কুরআন তিলাওয়াতঃ
আল্লাহ্ সুবহানাহু তা’আলা রমাদান মাসেই পবিত্র কুরআন নাযিল করেছেন। এজন্য রমাদানে বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করা উচিত।

হজরত উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) বলেন, “লোহায় পানি পড়লে যেমন মরিচা ধরে, তেমনি মানুষের অন্তরে মরিচা পড়ে।’ রাসূল (সাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘অন্তরের মরিচা দূর করার উপায় কী?’ তিনি বললেন, ‘বেশি বেশি করে মৃত্যুর কথা স্মরণ করা, আর কুরআন তিলাওয়াত করা” (বায়হাকি)।’

কুরআন তিলাওয়াতের ফযিলত বর্ণনা প্রসঙ্গে রাসূল (সাঃ)বলেন,”তোমরা কুরআন পড়ো।কেননা কুরআন কিয়ামতের দিন তার পাঠকদের জন্য আল্লাহর দরবারে সুপারিশকারী হিসেবে আসবে” (মুসলিম)

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, “যে ব্যক্তি শুদ্ধ উচ্চারণে কুরআন তিলাওয়াত করে, সে আখিরাতে আল্লাহর অনুগত ফেরেশতাদের সাথে থাকবে। আর যে কষ্ট করে বারবার উচ্চারণ করে তিলাওয়াত করে তার জন্য রয়েছে দ্বিগুণ সওয়াব” (বুখারি-মুসলিম)।

৩. অন্যকে কুরআন শিক্ষা দানঃ
রামাদান মাস কাউকে কুরআন শেখানোর জন্য উত্তম সময়। যদি কারো সময় বা সুযোগ থাকে তাহলে এ নেক আমলটি অবহেলা করা আমাদের উচিত হবে না। কেননা রাসূল (সাঃ) এ মাসে নিজে সাহাবীদের কুরআন শিক্ষা দিতেন। এ প্রসঙ্গে রাসূল (সাঃ)বলেছেন,

‘‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি সেই, যে নিজে কুরআন শিক্ষা করে ও অপরকে শিক্ষা দেয়’’ (সহীহ আল-বুখারী)

৪. অর্থ বুঝে কুরআন পড়াঃ
অর্থ জেনে, বুঝে সহীহ্ পদ্ধতিতে কুরআন পড়া আর অর্থ না জেনে, বুঝে কুরআন পড়ার মাঝে অনেক পার্থক্য। তাই রামাদানে শুধু খতমের চিন্তা না করে বরং অর্থ সহকারে প্রতিদিন অল্প করে হলেও কুরআন পড়ার চেষ্টা করতে হবে।

৫. তাহাজ্জুদ সালাত আদায়ঃ
মহান আল্লাহ তা’আলার কাছে সবচেয়ে প্রিয় একটি ইবাদাত হলো বান্দার গভীর রাতের ইবাদাত অর্থাৎ তাহাজ্জুদ সালাত। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূল (সাঃ) বলেছেন,
‘‘ফরয সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত হল রাতের সালাত অর্থাৎ তাহাজ্জুদের সালাত’’ (সহীহ মুসলিম : ২৮১২)

তাহাজ্জুদ সালাতের দুআ অব্যর্থ তীরের মতো। অনেকে হয়তো অন্য সময় নিয়মিত তাহাজ্জুদ পড়তে পারেন না। রমাদান তাহাজ্জুদ সালাত পড়ার সুবর্ণ সুযোগ করে দেয়। সেহরীর জন্য যখন উঠতেই হবে, সেক্ষেত্রে আমরা তাহাজ্জুদ পড়ার জন্য কিছুসময় আগে উঠে সেটা আদায় করে নিতে পারি। সেহরীর প্রয়োজনীয় কাজগুলি গুছিয়ে ঘুমালে আমাদের জন্য আগে ওঠা সহজ হবে।

৬. চাশতের সালাত আদায়ঃ
তাহাজ্জুদের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ নফল সালাত হলো চাশতের সালাত। অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ কিন্তু অবহেলিত এ আমল রামাদানে তো করা যায় এবং সারা বছর ও করা উচিত। দুনিয়ার কাজে আমরা ঘন্টার পর ঘণ্টা সময় ব্যয় করি আর এ সালাত পড়তে বড়জোর পাঁচ মিনিট সময় লাগে।

প্রতিদিন সকালে আমাদের শরীরের প্রত্যেকটি জোড়ার পক্ষ হতে তাসবীহ্ বা সাদাকা দেয়া উচিত। সে সাদাকা হচ্ছে এ সালাত। সে সাথে ভালো কাজের নির্দেশ ও খারাপ কাজের নিষেধের জন্য যে সাদাকা হয়, চাশতের সালাতে এ দু সাদাকার সওয়াব পাওয়া যায়।
(মুসলিম)

৭. সুন্নাহ্ পালনঃ
প্রতিদিনের প্রায় প্রতিটি কাজে অনেক সুন্নাহ্ আছে, যা পালন করার কথা হয়তো আমরা খেয়ালই করি না । অথচ রাসূল (সাঃ) বলেছেন “যে আমার সুন্নাতকে ভালবাসে, সে আমাকে ভালবাসে। আর যে আমাকে ভালবাসে সে জান্নাতে আমার সাথে থাকবে”। এই সুন্নাত পালন করা কিন্তু কঠিন কোন কাজ নয় ।যেকোন কাজ বিসমিল্লাহ্ বলে শুরু করতে হবে। আমরা খাওয়ার আগে-পরে, ঘুমানোর আগে, জেগে উঠার পরে , ঘর থেকে বের হওয়ার আগে, ঘরে ঢুকার পরে ইত্যাদি ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রের সব দুআ রামাদানে প্রতিদিন পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারি। ছোটদেরকেও শেখাতে পারি।

৮. আযানের উত্তর দেয়াঃ
সুন্নাত হিসেবে আরেকটি সহজ কিন্তু অত্যন্ত ফযিলতপূর্ণ আমল হচ্ছে আযানের উত্তর দেয়া ও আযান শেষে দরূদ ও দুআ পড়া। আযানের উত্তর দেয়া ওয়াজিব। তাছাড়া রাসূল (সাঃ) বলেছেন “যে ব্যক্তি আযানের পর দুআ পড়বে তার জন্য সুপারিশ করা আমার জন্য অনিবার্য হয়ে যাবে “। (সহীহ্ মুসলিম)
সুবহানআল্লাহ্!! মাত্র তিন চার মিনিটের এ আমলের জন্য আমরা প্রিয় রাসূল (সাঃ) এর সুপারিশ থেকে বঞ্চিত হবো?
যারা আযান শেষের দুআ পারিনা, তারা যত দ্রুত সম্ভব শিখে নিই। কারণ রামাদানে একাধারে আমল করলে সব আমলই আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ্‌।

আর একটি অল্প সময়ের কিন্তু ফযিলতপূর্ণ সুন্নাত হলো তাহিয়্যাতুল ওযুর সালাত। ওযু করে কোন কথা না বলে মাত্র পাঁচ মিনিটে পড়া যায়। এছাড়াও প্রতি ওয়াক্তে ওযু করে কালিমা শাহাদাত পড়লে ঐ ব্যক্তির জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে যাবে।

৯. ইস্তেগফার পড়াঃ
রমাদান যেহেতু পুরো মাসটাই মাগফিরাতের মাস তাই রমাদানে বেশি বেশি ইস্তেগফার পড়তে হবে। প্রতি সোম এবং বৃহস্পতিবার মহান আল্লাহ্‌র কাছে ফেরেশতারা বান্দার আমলনামা পেশ করেন । ঐদিন ও বেশি, বেশি ইস্তেগফার পড়তে হবে আমাদের। রাসূল (সাঃ) জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত হয়ে ও দৈনিক সত্তরবার ক্ষমা প্রার্থনা করতেন, সেক্ষেত্রে আমরা কত বেশি গুনাহ্গার বান্দা! আমাদের সব সময়ই বেশি ইস্তেগফার পড়তে হবে। এই রামাদানে রাহমানুর রাহীম আমাদের যেন ক্ষমা করে দেন ।

১০. ছোট সুরাহ শেখাঃ
দেখা যায় সবসময় আমরা একই সুরাহ দিয়ে সালাত আদায় করি। অথচ পবিত্র কুরআনে একশত চৌদ্দটি সুরাহ আছে। একেক সুরাহর একেক অর্থ বা তাৎপর্য রয়েছে। আমরা অন্ততঃ শেষ পারার সুরাহগুলি মুখস্থ করে নিতে পারি। যাতে একেক সালাতে একেক সুরাহ পড়তে পারি।

১১. আল্লাহর নামসমূহ শেখাঃ
মহান আল্লাহ্ সুবহানাল্লাহু তায়ালার অনেকগুলি অর্থপূর্ণ গুণবাচক নাম আছে। কয়টি নাম আমরা জানি? এ নামগুলি শিখে নিয়ে দুয়া করার সময় এসব নামে ডাকতে পারি। আন্তরিকতার সাথে ডাকলে আল্লাহ্ কতই না খুশী হবেন! তাঁর কাছে কিছু চাওয়ার সময়ে তাঁর উপযুক্ত নাম ধরে ডাকলে তিনি মনের আশা পূর্ণ করেন।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, আল্লাহর এমন ৯৯টি নাম রয়েছে; যে ব্যক্তি এগুলো গণনা করবে (তা জানবে, বুঝবে এবং এর দাবী অনুযায়ী চলবে) সে জান্নাতে যাবে। (বুখারী:২৭৩৬, মুসলিম: ২৬৭৭)

১২. যিকিরঃ
সহজ, কষ্টহীন কিন্তু নেক আমলের পাল্লা ভারী করে এমন ইবাদত হলো মহান আল্লাহ্ তা’আলার যিকির।

প্রতিটি ইবাদতের জন্য স্থান, কাল, পাত্র ইত্যাদির বিবেচনা রয়েছে। কেবল যিকিরই এমন ইবাদত যার বেলায় এসব নিয়ে ভাবার প্রয়োজন নেই। যে কোনো ব্যক্তি যে কোনো অবস্থায় যে কোনো সময় এবং যে কোনো জায়গায় যিকির করতে পারেন, শুধুমাত্র অপবিত্র স্থান ছাড়া।

আপনি ঘরে থাকুন বা বাইরে, পাক থাকুন বা নাপাক আর আপনি শোয়া, বসা বা দাঁড়ানো যে অবস্থায়ই থাকুন না কেন — কোনো না কোনো প্রকার যিকির আপনার জন্য বিধিসম্মত। রান্না করতে করতে, বাচ্চাদের পড়ানো বা খাওয়ানোর ফাঁকে, ঘরের অন্যান্য কাজ করার ফাঁকে ফাঁকে, বাচ্চাকে স্কুল বা মাদ্রাসায় আনা নেয়ার পথে; সর্বাবস্থায় আপনি যিকিরের মাধ্যমে জিহ্বাকে সজীব এবং নিজেকে প্রাণবন্ত রাখতে পারেন।

যে পথ দিয়ে আল্লাহর যিকির করা হয় সে পথ ঐ বান্দার পক্ষে সাক্ষী দেয়। যিকির করা অন্তর আর যিকর না করা অন্তরের পার্থক্য জীবিত আর মৃত অন্তরের ন্যায়। কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন,

“হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ কর। এবং সকাল ও সন্ধ্যায় তোমরা তাঁর গুণাগুণ বর্ণনা কর।” (সূরা আল-আহযাব, আয়াত : ৪১)

ছোট বাচ্চার মায়েরা, যারা অন্য ইবাদাতের জন্য সময় কম পান তারা সহজেই এ উৎকৃষ্ট ইবাদাতের মহাসুযোগ কাজে লাগাতে পারেন। আর আমাদের মতো দুনিয়াবী কাজে ব্যস্ত মানুষদের জন্য এটাই পরম সুযোগ…।

১৩. রোযাদারদের ইফতার করানোঃ
প্রতিদিন আমরা অন্ততঃ একজন রোযাদারকে ইফতার করানোর চেষ্টা করতে পারি। হোক তা দারোয়ান বা হেল্পিং হ্যান্ড বা অন্য মেহমান। অপরকে ইফতার করানো একটি বিরাট সাওয়াবের কাজ। কেননা হাদীসে এসেছে,

‘‘যে ব্যক্তি কোন রোযাদারকে ইফতার করাবে, সে তার সমপরিমাণ সওয়াব লাভ করবে, কিন্তু এতে তাদের উভয়ের সওয়াব হতে বিন্দুমাত্র হ্রাস করা হবে না’’ (সুনান ইবনে মাযাহ্ , তিরমিযী: ৮০৬)

১৪. বেশি বেশি সাদাকা করাঃ
দান বা সাদাকা মহান আল্লাহর ক্রোধকে নিবারণ করে। যেমন পানি নিভিয়ে দেয় আগুনকে। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, “হে মুমিনগণ, আমি তোমাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা হতে ব্যয় কর, সে দিন আসার আগে, যে দিন থাকবেনা কোন বেচাকেনা, থাকবেনা কোন বন্ধুত্ব এবং না কোন সুপারিশ। আর কাফিররাই জালিম।” (সূরা আল-বাকারাঃ )

রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “সাদাকা সম্পদকে কমায় না, ক্ষমার মাধ্যমে আল্লাহ্ বান্দার মর্যাদা বৃদ্ধি করেন এবং কেও আল্লাহর জন্য বিনয়ী হলে আল্লাহ তাকে উঁচু করেন।” (মুসলিম)

সাদাকা, হাদিয়া সব সময় দেয়া গেলেও রমাদানে এর অনেক মাহাত্ম্য অনেক বেশি। কেননা রাসূল (সাঃ) তখন গতিমান বায়ুর চাইতেও বেশি দানশীল হয়ে উঠতেন। (বুখারী:১৯০২, মুসলিম : ২৩০৮)
কোন মিসকিনকে আপনি রামাদানের আগেই এক মাসের ইফতারীর প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে দিতে পারেন । হোক তা আপনার কাজে সাহায্যকারী, দারোয়ান, নিকটাত্মীয় বা দূরসম্পর্কীয় আত্মীয় স্বজন ।

১৫. দ্রুত ইফতার করাঃ
ইফতারের সময়ে তাড়াহুড়ো না করে কিছু সময় আগে সব প্রস্তুত করে সবাই মিলে একত্রে ইফতার করার চেষ্টা করতে হবে। সূর্যাস্তের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে দ্রুত ইফতার করতে হবে। রাসূল (সাঃ) বলেছেন “লোকেরা যতদিন দ্রুত ইফতার করবে, ততোদিন কল্যাণের মধ্যে অবস্হান করবে”। (বুখারী: ১৯৫৭,মুসলিম : ২৫৫৪)

১৬. সেহরী খাওয়াঃ
অনেকে সেহরী না খেয়েও সিয়াম প্লাওন করে। এটা ঠিক না। সেহরী খাওয়া সুন্নাত। কারণ এতে বারাকাহ্ আছে।
হাদীসে এসেছে,
‘‘সেহরী হল বরকতময় খাবার। তাই কখনো সেহরী খাওয়া বাদ দিও না। এক ঢোক পানি পান করে হলেও সেহরী খেয়ে নাও। কেননা সেহরীর খাবার গ্রহণকারীকে আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর ফেরেশতারা স্মরণ করে থাকেন’’ (মুসনাদ আহমাদ : ১১১০১)

১৭. তারাবীহ্ পড়াঃ
তারাবীহ্ পড়া রামাদানের অন্যতম আমল। তারাবীহ্ পড়ার সময় তার হক আদায় করতে হবে অর্থাৎ এ সালাত ধীরে সুস্থে আদায় করতে হয়। হাদীসে এসেছে,

“যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সোওয়াবের আশায় রামাযানে কিয়ামুল লাইল বা রাতের নফল সালাত আদায় করবে তার পূর্বের সমস্ত (ছোট) গুনাহ মোচন হয়ে যাবে।” (বুখারী ও মুসলিম)

১৮. জুম’আর বিশেষ ইবাদাতঃ
শুক্রবার বা জুম’আর দিন মুসলিমদের সাপ্তাহিক ঈদের দিন। এ দিনের কিছু ফযিলতপূর্ণ ইবাদাত রয়েছে। যেমন বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা। রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “তোমাদের দিনগুলির মধ্যে সর্বোত্তম দিন হলো জুম’আর দিন।কাজেই সেই দিনে তোমরা আমার উপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করো। কেননা তোমাদের দরুদ আমার উপর পেশ করা হয়।” (আবু দাউদ )

শুক্রবার আসর থেকে মাগরিবের মধ্যবর্তী একটি সময় দুআ কবুল হওয়ার সময়। যারা তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করতে পারেন না, তারা এ সময় মহান আল্লাহর কাছে কান্না কাটি করে দুআ করতে পারেন।

জুম’আর দিনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আমল সূরা কাহফ পড়া। পুরোটা সম্ভব না হলে অন্ততঃ প্রথম দশ আয়াত পড়তে হবে। এ সূরা দাজ্জালের ফিতনা থেকে রক্ষা করবে।

১৯. শবে কদর অনুসন্ধান করাঃ
রমাদান মাসে এমন একটি রাত রয়েছে যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। রমাদানের শেষ দশদিনের বেজোড় রাতে এটি রয়েছে। কদরের রাতেই পবিত্র কুরআন নাযিল হয়েছিল। আল-কুরআনে মহান আল্লাহ্ বলেছেন,

‘‘কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম’’ (সূরা কদর : 8 )

কদরের রাতের ইবাদত অত্যন্ত ফযিলতপূর্ণ। রাসূল (সাঃ) বলেছেন,” যে ব্যক্তি ঈমানের সহিত ও সওয়াবের নিয়তে শবে কদরে সলাত পড়বে তার পূর্বের গুনাহ্ সমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। “
(বুখারী : ১৯০১)

২০. দুআ করাঃ
রমাদানে বেশি বেশি দুআ করতে হবে। কখন কার দুআ দয়ালু আল্লাহ্ কবুল করবেন তা আমরা কেউ জানি না। মহান আল্লাহ্ বলেন, “আর তোমাদের প্রভু বলেছেন, তোমরা আমার কাছে দুআ করো, আমি তোমাদের দুআ কবুল করবো “। (সূরা ফাতির: ৬০)

রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “দুআ হচ্ছে ইবাদত”। আমরা আমাদের নিজেদের জন্য, মা- বাবার জন্য, অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু – বান্ধব, সমগ্র মুসলমানদের জন্য দুআ করবো।

২১. আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করাঃ
ইসলামে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করার জন্য গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। রাসূল(সাঃ)বলেছেন,”আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন কারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।” (বুখারী: ৫৯৮৪, মুসলিম : ২৫৫৬, আবূ দাউদ : ১৬৯৬)

এই রমাদানে আমরা আত্মীয়দের সুন্দর হাদিয়া বা গিফট দিতে পারি। অপেক্ষাকৃত অস্বচ্ছল আত্নীয়দের যাকাত প্রদান করে তাদের হক্ব আদায় করতে পারি। তাদেরকে ইফতারীর দাওয়াত দিতে পারি। কল করে বা ম্যাসেজ দিয়ে ওদের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখতে পারি।

২২. প্রতিবেশীর হক্ব আদায়ঃ
প্রতিবেশীর হক্ব আদায়ের জন্যেও আমাদের তাগিদ দেয়া হয়েছে। রাসূল (সাঃ) বলেছেন, হে মুসলিম নারীগণ! এক প্রতিবেশিনী অপর প্রতিবেশিনীকে বকরীর পায়ের এক টুকরা ক্ষুর হলেও তা উপহার দিতে যেন অবহেলা না করে। ” (বুখারী: ৬০১৭, মুসলিম: ১০৩০)

রমাদানে কি কি নেক আমল করা যেতে পারে তা জানার পর এখন আমরা জানব বর্জনীয় কাজগুলি সম্পর্কে। কারণ রমাদানের শিক্ষা বা অভ্যাসকে আমাদের সারা বছরের অভ্যাসে পরিণত করার চেষ্টা করতে হবে।

আমরা সবসময় কি করি? শুধু নেকী অর্জনের কথাই চিন্তা করি। কিন্তু বিভিন্ন প্রকার বড়, ছোট গুনাহ্ (আপাতঃদৃষ্টিতে ছোট মনে হলেও ছোট নয়) আমাদের কষ্টে উপার্জিত নেক আমলগুলিকে নিমেষেই ধ্বংস করে দিতে পারে; একটি ছোট ছিদ্র যেমন পারে একটি বড় জাহাজকে ডুবিয়ে দিতে। আর মানুষ তো কখনো পাহাড়ে হোঁচট খায় না; হোঁচট খায় নুড়ি, পাথরের সাথে। একটুখানি বেখেয়ালের গুনাহতেই আমরা কাঙ্খিত লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হতে পারি।

১. শিরক্ঃ
সর্বাধিক বড়, মারাত্মক ও অত্যন্ত ভয়াবহ কবীরা গুনাহ্ হলো শিরক্। শিরক্ হচ্ছে আল্লাহ্ র সাথে এমন বিষয়ে সমকক্ষ স্হির করা, যেটা আল্লাহ্ র জন্যই প্রযোজ্য; যেমন, তার সাথে অন্য কাউকে ডাকা, ভয় করা। অন্যের কাছে আশা করা, আল্লাহ্ র চাইতে অন্যকে বেশি ভালবাসা। মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন, “নিশ্চয়ই যে আল্লাহর সাথে শরীক করে, তার উপর অবশ্যই আল্লাহ্ জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন এবং তার ঠিকানা আগুন। আর যালিমদের কোন সাহায্যকারী নেই।” (সূরা মায়েদা: ৫: ৭২)

আমরা হয়তো না জেনেই বা মনের ভুলে কখনো শিরক্ করে ফেলি। হয়তো বলি, “অমুক না থাকলে কাজটা হতো না” অথবা, “অমুকের জন্য বেঁচে গেছি” এসব ক্ষেত্রে খুবই সতর্ক থাকতে হবে। তাওবা করত হবে, শিরক্ থেকে বেঁচে থাকার জন্য দুআ করতে হবে।

কেননা রাসূল (সাঃ) তার উম্মতের জন্য এসব ছোট শিরক্ কে সবচেয়ে বেশি ভয় করেছেন। তিনি বলেন, “আমি তোমাদের উপর সবচেয়ে বেশি ভয় করছি শিরক্ আসগার বা ছোট শিরক্ “। (মুসনাদে আহমাদ: ২৩৬৮৬, ইবনে কাসীর: ২য় খন্ড, ৬৫০ পৃঃ)

২. কুফরঃ
আল্লাহ্, তাঁর সৃষ্টি ও বিধান সবকিছুকে অস্বীকার বা অবিশ্বাস করাটাই কুফরী। বর্তমান পৃথিবীতে মানুষের মধ্যে এটা এত বেশি পরিমাণে বেড়ে গেছে যে কুরআনের অর্থকে নিজেদের মতো ব্যাখ্যা করা হয়, নিজেদের সুবিধা মতো ব্যবহার করা হয়। কুরআন, হাদীসের যে অংশগুলো মানতে অপেক্ষাকৃত সহজ মনে হয় সেগুলি গ্রহণ করা, আর যেগুলি একটু কঠিন মনে হয় সেগুলি গোপন করা বা এড়িয়ে যাওয়া হয়। এটি মারাত্মক কবীরা গুনাহ্।

আল্লাহ্ বলেন, “নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ্ ও তার রসূলগণের সাথে কুফরী করে এবং আল্লাহ্ ও তার রসূলগণের মাঝে পার্থক্য করতে চায় এবং বলে, ‘আমরা কতককে বিশ্বাস করি আর কতকের সাথে কুফরী করি ‘ এবং তারা এর মাঝে একটি পথ গ্রহণ করতে চায়, তারাই প্রকৃত কাফির এবং কাফিরদের জন্য প্রস্তুত করেছি অপমানকর আযাব”। (সূরা নিসা: ৪: ১৫০-১৫১)

মহান আল্লাহ্ যেন আমাদের সবাইকে এ ভয়াবহ গুনাহ্ থেকে বেঁচে থাকার তৌফিক দেন।

৩. মুনাফিকীঃ
মিথ্যা বলা, ওয়াদা ভঙ্গ করা, আমানত খিয়ানত করা এ তিনটি বিষয় মিলিয়েই মুনাফিকী। আমরা কেউ মুনাফিক হতে চাই না। অথচ হয়তো আমাদের অজান্তে আমরা ঠিকই মুনাফিকী আচরণ করে ফেলি। মুনাফিকরা দ্বিমুখী আচরণ করে, এদের মুখে এক, অন্তরে আরেক থাকে।

এদের সম্পর্কে আল্লাহ্ বলেন, “নিশ্চয়ই মুনাফিকরা জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে থাকবে। আর তুমি কখনো তাদের জন্য কোন সাহায্যকারী পাবে না।” (সূরা নিসা: ৪: ১৪৫)

৪. মিথ্যা বলাঃ
ছোটবেলা থেকেই আমরা সবাই জানি মিথ্যা বলা মহাপাপ। রাসূল (সাঃ) বলেছেন “নিশ্চয়ই সততা মানুষকে কল্যাণের দিকে নিয়ে যায়। কোন ব্যক্তি সদা সত্য কথা বলতে থাকলে শেষ পর্যন্ত আল্লাহর দরবারে পরম সত্যবাদী হিসাবে তালিকাভুক্ত হয়। আর মিথ্যা নিশ্চয় মানুষকে পাপের দিকে পথ দেখায়, আর পাপ দোযখের দিকে নিয়ে যায়। কোন ব্যক্তি সদা মিথ্যা বলতে থাকলে শেষ পর্যন্ত সে আল্লাহর দরবারে মিথ্যাবাদী হিসাবে তালিকাভুক্ত হয়।”
(বুখারী: ৬০৯৪, মুসলিম: ২৬০৭)

তাই আমাদের সবার উচিত হবে সবসময়, আর অবশ্যই রমাদানে ছোট, বড় সবধরনের মিথ্যা থেকে দূরে থাকা, এমনকি ঠাট্টা করে হলে ও মিথ্যা না বলা। মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া ও হারাম।

৫. গীবতঃ
‘গীবত হচ্ছে কোন ব্যক্তির এমন দোষ যা বাস্তবিকই তার মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে, কিন্তু সে সম্পর্কে কেউ আলোচনা করলে সে তা অপছন্দ করে।’
গীবত করা কবীরা গুনাহ্। মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার মত ঘৃণ্য কাজ।অথচ আমরা হয়তো ইচ্ছায়, অনিচ্ছায়, দুঃখে এ মারাত্মক গুনাহ্ টি করে ফেলি।

মহান আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন “তোমরা একে অপরের পশ্চাতে নিন্দা করো না। তোমাদের মধ্যে কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করতে চাইবে..? বস্তুতঃ তোমরা তো এটাকে ঘৃণাই মনে করো। তোমরা আল্লাহ কে ভয় করো। আল্লাহ্ তাওবা গ্রহণকারী, পরম দয়ালু।” ( সূরা আল হুজুরাত: ১২)

আল্লাহ আমাদের সবাইকে এ কবীরা গুনাহ্ থেকে বাঁচিয়ে রাখুন।

৬. পরনিন্দা বা চোগলখুরীঃ
চোগলখুরী হচ্ছে কোন ব্যক্তির মধ্যে যে দোষ নেই তার সম্পর্কে সে দোষের মিথ্যা অপবাদ দেয়া। কারণ এতে অনেক ভুল বোঝাবুঝি হয় ও সম্পর্ক নষ্ট হয়। রাসূল (সাঃ) বলেন ” চোগলখোর জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না “। (বুখারী: ৬০৫৬, মুসলিম: ১০৫)

৭. হিংসাঃ
হিংসা করা হারাম। আমাদের সবাইকে আল্লাহ্ যেন হিংসা থেকে বাঁচিয়ে রাখেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূল (সাঃ) বলেছেন “তোমরা হিংসা – ঈর্ষা থেকে সতর্ক থাকো, কেননা হিংসা ভালো কাজগুলি নষ্ট করে দেয়, যেমন আগুন জ্বালানিকাঠ বা খড়কে জ্বালিয়ে দেয়।” (আবূ দাউদ: ৪৯০৩)
তাই অন্যের ভালো কিছুতে হিংসিত না হয়ে তার জন্য আমাদের দুআ করতে হবে। পরবর্তীতে হয়তো আল্লাহ্ সে জিনিসটাই আমাদের দেবেন।

৮. দোষ, ত্রুটি খোঁজাঃ
রাসূল (সাঃ) বলেছেন “তোমরা কারো প্রতি খারাপ ধারণা পোষণ থেকে বিরত থাকো, কেননা খারাপ ধারণা পোষণ সব কথার চেয়ে বেশি মিথ্যা। লোকদের অন্যের ব্যাপারে মন্দ কথা শুনো না, একে অপরের পেছনে গোয়েন্দাগিরি করো না”। (বুখারী: ৬০৬৬, মুসলিম: ২৫৬৩)

৯. কাউকে তুচ্ছজ্ঞান করাঃ
কাউকে কখনোই তুচ্ছজ্ঞান করা উচিত হবে না আমাদের। কেননা হতে পারে সে আমাদের চেয়ে উৎকৃষ্ট। আল্লাহই তো একমাত্র ভালো জানেন। রাসূল (সাঃ) বলেন ” মানুষের মন্দ – খারাপ হওয়ার জন্য এটা যথেষ্ট যে, সে তার মুসলিম ভাইকে তুচ্ছজ্ঞান করবে”। (মুসলিম: ২৫৬৪)

১০. রিয়া বা লোক দেখানো কাজঃ
মহান আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে না করে লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে, মানুষের প্রশংসা পাওয়ার উদ্দেশ্যে কোন সৎকর্ম করলে সেটাই ‘রিয়া’ বলে গণ্য হবে। রিয়া হারাম ও অতি নিন্দনীয়। রাসূল সাঃ বলেছেন “কিয়ামতের দিন রিয়াকারীকে উপুড় করে ছেঁচড়াতে ছেঁচড়াতে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।” (মুসলিম: ১৯০৫)

১১. কাউকে কষ্ট দেয়াঃ
মহানবী (সাঃ) বলেছেন ” যার জিহ্বা ও হাত থেকে মুসলমানরা নিরাপদ থাকে, সে-ই মুসলিম “। (বুখারী: ১০) তাই কাউকে শারীরিক, মানসিক কষ্ট দেয়া থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে। দেখা যায় যে, অন্য কিছুর চেয়ে ও মুখের কষ্টকর কথাতেই মানুষের হৃদয় অধিক রক্তাক্ত হয়।

১২. গালি দেয়া, অভিশাপ দেয়াঃ
কাউকে গালি দেয়া হারাম। রাসূল (সাঃ) বলেছেন ” মুসলমানকে গালি দেয়া ফাসেকী এবং মুসলমানের সাথে লড়াই করা কুফরী”। (বুখারী: ৪৮, মুসলিম: ৬৪)

রাগের মাথায় কখনো কাউকে অভিশাপ দেয়া ঠিক নয়। এতে উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রাসূল (সাঃ) বলেছেন “মু’মিন ব্যক্তি কখনো দোষারোপকারী ও ভর্ৎসনাকারী হতে পারে না, অভিসম্পাতকারী হতে পারে না, অশ্লীল কাজ করে না এবং কটুভাষী ও হয় না।” (তিরমিযী: ১৯৭৭)

১৩. অপচয় করা, অপব্যয় করাঃ
রমাদানের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হওয়া উচিত অপচয় না করা। আমরা ইফতার পার্টি করতে গিয়ে দেখা যায় হরেক রকম আইটেম তৈরি করে খাবারের অনেক অপচয় করি। বহুবিধ আইটেম পরে নষ্ট খাবার হিসেবে ডাস্টবিনে যায়। অথচ অনেক এতিম, বিধবা, মিসকীন এ খাবার গুলির হকদার ছিল।

মহান আল্লাহ্ বলেন, হে বণী আদম, তোমরা প্রতি সলাতে তোমাদের বেশ-ভূষা গ্রহণ করো এবং খাও, পান করো ও অপচয় করো না। নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদেরকে পছন্দ করেন না। (সূরা: আ’রাফ ৭: ৩)

রমাদানে আরেকটি বিষয় খুব বেশি হয়। তাহলো ঈদের শপিং এর জন্য প্রচুর অপব্যয়। হয়তো একটি ড্রেস কিনলেই চলতো কিন্তু অনেকেই একাধিক জামা, জুতা, কসমেটিকস কিনে প্রচুর অপব্যয় করে থাকে। আল্লাহ্ অপব্যয় মোটেই পছন্দ করেন না। তিনি বলেন, “নিশ্চয় অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। আর শয়তান তার রবের প্রতি খুবই অকৃতজ্ঞ”। (সূরা বনী ইসরাঈল: ১৭: ২৭)

১৪. অনলাইনে সময় নষ্টঃ
মুসলমানদের উচিত অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা বা অপ্রয়োজনীয় কাজে যতদূর সম্ভব সময় নষ্ট না করা। কারণ কি কাজে জীবনের সময় গুলি কাটিয়েছে সে ব্যাপারে
বিচার দিবসে জিজ্ঞেস করা হবে। সময় নষ্ট করার জন্য ও ইবাদতের খুশু, খুজু অর্থাৎ মনোযোগ নষ্ট করার জন্য ফেসবুক শয়তানের একটি সফল ও নিঃশব্দ মারণাস্ত্র। যারা সঠিকভাবে সময়ের ব্যবহারে পারদর্শী, নিজের ইবাদত ঠিক রেখে ফেসবুকে কিছুটা সময় দেন তাদের ছাড়া আমাদের মত গুনাহ্গারদের জন্য ফেসবুক শয়তানের একটি মারাত্মক অস্ত্র ছাড়া ভালো কিছু নয়। রমাদানে যতটা সম্ভব অনলাইন বা ফেসবুক থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করতে হবে। কারণ শয়তান ভালো কাজের কথা বলে ভুলিয়ে ইবাদত নষ্ট করবে।

এছাড়া আরো অনেক অনেক নিষিদ্ধ বিষয় যেমনঃ রাগ করা, ঝগড়া করা, স্বেচ্ছাচারিতা করা, কৃপণতা করা, দান করে খোঁটা দেয়া বা বলে বেড়ানো, প্রতারণা করা, চুরি করা, গান শোনা, বেপর্দা হওয়া, নিজের গুনাহকে ছোট করে দেখা, মৃত্যুকে, আল্লাহর শাস্তিকে হালকা মনে করা ইত্যাদি সম্পর্কে আমরা মোটেই ওয়াকিবহাল নই।

তাকওয়া অর্জনের মাধ্যমে, বিনম্র চিত্তে মহান রবের দরবারে সিজদায় লুটিয়ে পড়ে আমরা এ পবিত্র রমাদানে যেন সকল গুনাহ্ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিতে পারি, আল্লাহ্ যেন আমাদের সবাইকে সেই তৌফিক দান করেন।

এই রমাদান হোক আমাদের বদলে যাওয়ার মাস।
……………………………………………………

পবিত্র রমাদানে করনীয়-বর্জনীয়
ইসমাত কনক

মে ১৬, ২০১৮ইং