একই পথের যাত্রী

১.
বাসস্ট্যান্ড মোটামুটি ফাঁকা। দুপুর গড়িয়ে বিকেল, আবার ছুটির দিন! যাত্রীর ভীড় কম আজ। নির্দিষ্ট সময়ে যাত্রীরা ঢাকা ময়মনসিংহগামী বাসে উঠে বসল।

ডান পাশের সারিতে পাশাপাশি সিটে প্রায় সমবয়সী দুই যুবক বসল। পোশাকে আশাকে ভিন্নতা চোখে পড়ার মত। একজন দাড়ি টুপি পরা আর অপর যুবক বেশভূষায় বলিউড ফেল টাইপ!

দাড়ি টুপিওয়ালা একবার তাকালেন তার সহযাত্রীর দিকে – উল্কি আকা পেশীবহুল হাতের দিকে চোখ পড়ল। সামান্য ভ্রু কুচকে নড়েচড়ে বসলেন তিনি!

২.
বাড়ি থেকে হলে ফিরছে আবির।
জানালার পাশেই সিট।
প্রথম বর্ষার জল গায়ে মেখে রাস্তার ধারের বুনোলতাগুলো যেন ঝকঝক করছে! তবে আবিরের সেদিকে মনোযোগ নেই। ভীষন দুশ্চিন্তা যেন চোখে মুখে।

পাশের হুজুর যাত্রীর দিকে তাকিয়ে ভালো লাগলো তার। একটা সময় ছিল যখন এসব লিবাসধারী দেখলেই মেজাজ খারাপ হতো আবিরের। কিন্তু আসিফ ভাই এর সাথে পরিচয়ের পর ওর দৃষ্টিভংগীই পাল্টে গেছে। আসিফ ভাই ওর দেখা সবচেয়ে স্মার্ট ব্যক্তি!

পাশের লোকটির সাথে কথা বলবে বলবে করেও আর বলল না কিছু আবির।

কিছুক্ষন পরেই আবির বুঝতে পারল সেই পুরনো অভ্যাসটা মাথার ভেতর কিলবিল করছে!

খুব অস্থির লাগতে শুরু করলো।
বার বার আসিফ ভাইএর কথাগুলো মাথায় আনার চেষ্টা করতে লাগলো।
মোবাইল সেটটা বের করে ক্যান্ডি ক্রাশ খেলতে শুরু করল চিন্তাকে ডায়ভার্ট করার জন্য। যদিও আজেবাজে ভিডিও গুলো অনেক আগেই ডিলিট করে দিয়েছে আর নেট কানেকশনও অফ রেখেছে।

চোখ দুটো বন্ধ করে মনে মনে দুয়া করতে লাগলো আবির, “ও মালিক আপনি ছাড়া গুনাহ ত্যাগ করার কোন ক্ষমতা আমার নেই। আপনি জানেন আমার দুর্বলতা, আমাকে সাহায্য করুন মালিক”

টপ করে দুই ফোটা পানি ঝরে পড়ল।

খুব সাম্প্রতিক আবির পর্ণ এডিকশন থেকে বেরিয়ে এসেছে। হলের সিনিয়র কিছু ভাইয়ের একনিষ্ঠ দাওয়াত, কাউন্সেলিং, দুআ আর সর্বোপরি আল্লাহর অশেষ দয়ায়!
আসিফ ভাই তাদের একজন।

সাত আসমানের উপর থেকে একজন দয়ালু সত্তা হয়তো হেসেছিলেন বান্দার প্রচেষ্টায়!

৩.
বাস ছাড়ার পরেই সোহানের মনে পড়ল আজ শুক্রবার ছিল কিন্তু সূরা কাহাফটা পড়া হয়নি আজ।

হেডফোন বের করে কানে গুজে সূরা কাহাফ ছেড়ে শুনতে লাগল। যদিও তার মনোযোগ বার বার পাশের সীটের যাত্রির দিকে যাচ্ছিল!

কি বেশ রে বাবা।

আজকালের যুবকদের সুন্নতি লিবাস ছেড়ে দেয়া এসব বিজাতীয় সাজপোশাক সত্যিই হতাশা জনক; এসব ভাবতে ভাবতেই খেয়াল করল যুবকটি মোবাইল বের করে গেইম খেলছে!

মনে মনে কিছুটা আত্নতৃপ্তি ছেয়ে গেল সোহানের!

একই বয়সী দুজন অথচ সে কী করছে আর ওই যুবক কী করছে!

নিজেকে যেন আসহাবে কাহাফের যুবকদের একজন মনে হলো তার।

মাত্র ছত্রিশ আয়াত পর্যন্ত হয়েছে তখন সোহান ভাবল একটা স্ট্যাটাস দিলে কেমন হয়!

“একই পথের যাত্রী তবে কেউ কোরআন তিলাওয়াত শুনে সময় পার করছে কেউবা গেইম খেলে বা গান শুনে পার করছে! দুজন কি আল্লাহর চোখে সমান হতে পারে?”

কিছু ক্ষনের মধ্যেই লাইক কমেন্ট শুরু হলো, সূর্য অস্ত গেল। সোহানের আর জুম্মাবারের মধ্যে সূরা কাহাফ শোনা হলো না।

আড়াল থেকে শয়তান তার ক্রুর হাসি হেসেছিল কী?

এক মুসলিম ভাইকে নিজের চেয়ে অধম ধারণা করে নিজের উত্তম আমলের পরোক্ষ প্রচারণার মাধ্যমে আমলনামা ফাঁকা করে দিতে পারলে শয়তানের তো আনন্দিত হয়ে হাসাই উচিত!

……………………..
একই পথের যাত্রী
সাবিহা সুলতানা

জুন ২৬, ২০১৮ইং