একটি গড়পড়তা গল্প

প্রায় সব গল্পগুলোই একরকম।

কোন একটা ক্লাসে একটা ছেলে থাকে – আকর্ষণীয়, মেধাবী, চটপটে, সবার বিপদে এগিয়ে যায় ধরনের; যার সাথে সবাই বন্ধুত্ব রাখতে চায়। সেই একই ক্লাসে হয়ত একটা মুখচোরা মেয়ে থাকে। ছেলেটা চায় সেই মেয়েটার বন্ধু হতে। গল্পের মাঝামাঝিতে এমন কিছু হয় যার ফলাফল হিসেবে গল্পের শেষে তারা দুইজন ঠিক বন্ধু হয়ে যায়।

আর বাকি গল্পে ক্লাসের মধ্যমণি থাকে তুখোড় মেধাবী, অসামান্য রূপসী, কোন এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের চঞ্চল মেয়েটি যে – কারো গল্পে অহংকারী হয়, কারো গল্পে হয় না। সে মনে মনে পছন্দ করে বসে ক্লাসের সবচেয়ে চুপচাপ, চশমা চোখের ছেলেটিকে যে কিনা কখনো আগ বাড়িয়ে মেয়েটার প্রশংসাই করল না। এদের গল্প কখনো মিলনে গড়ায়, কখনো মেয়েটির আত্মহননে।

আজকের গল্পটা কেমন হবে? 

ফাহাদকে নিয়ে কম বেশি মজা সবাই করে। সহপাঠীরাও করে, সিনিয়ররা এমন কি অনেক দুঃসাহসী জুনিয়রও টিটকারি দেয়। 

খুব সুন্দর করে কথা বলে সে। ভরাট স্বর। আবৃত্তি করলে বেশ হতো। কিন্তু তাকে কোন অনুষ্ঠানে টেনে আনা যায়? অনুষ্ঠান শুরুর কুর’আন তিলাওয়াত করতেও আসেনা। অদ্ভুত তো! ক্লাস মিস করে না। ঠিকভাবে লেকচার তুলে। সময় পেলে লাইব্রেরিতে যায়। অকারণ আড্ডা, হইচই এ সে নাই। রেজাল্ট ভালো কিন্তু অহংকারী নয়। কাউকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে না, আর চাটুকার তো সে হতেই পারেনা। 

হা হা হা, নায়ক হিসেবে বেশ কমন চরিত্র।

তারই এক সহপাঠিনী, নায়িকা চরিত্রের সব বৈশিষ্ট্যই তার আছে। অনেকদিন গড়ালো। কিন্তু তাদের মধ্যে ভাব হয়না। আনিকা কম চেষ্টা তো করলো না। নিজেও চেষ্টা করলো, ফাহাদের দু’একজন বন্ধুর মাধ্যমেও আগানোর চেষ্টা করে দেখলো। ফাহাদের কোন প্রতিক্রিয়াই নেই।

প্রায় কোর্সের শেষ দিকে, হঠাৎ ফাহাদ একটু নমনীয় হলো। হঠাৎ হঠাৎ কথা বলতো। খুব রুক্ষভাবে হলেও বলতো। আর নীতি কথা বলতো। আনিকা তো বুঝে সে যে দ্বীনের পথে নেই। ফাহাদ সাহায্য করলে বিয়ের পর সে ঠিক হয়ে যাবে। কতভাবে প্রমিজ করলো। ফাহাদের বিরক্ত মুখ ছাড়া আর কিছুই দেখে না আনিকা।

ঋষির ধ্যান ভেংগে যাওয়া সাজ নিয়ে একদিন আনিকা এলো ফাহাদের সামনে। আজ কী করে ফিরিয়ে দেয় সেও দেখে নিবে। রুক্ষতা ভুলে ফাহাদ হঠাৎ খুব তরল গলায় বলে বসলো, “feeling hot!”

ব্যস, আর পায় কে আনিকাকে। যাক, এতদিনে সে ফাহাদের মনে নাড়া দিতে পেরেছে। আহ! কার মুখ দেখে যে আজ ঘুম থেকে জেগেছিল! নিজের কানকে সে বিশ্বাস করতে পারছিল না। আবার জিজ্ঞেস করল, সত্যি করে বলতো, আমাকে কেমন লাগছে তোমার?

ফাহাদ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, “তোমাকে দেখেই জাহান্নামের কথা মনে পড়ে গেল। তাই তো বললাম, feeling hot!”

বিঃদ্রঃ নন-মাহরাম নারী পুরুষের অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা, হাসি ঠাট্টা ইসলামে নিষিদ্ধ। এমনকি নাসীহার জন্যেও নন মাহরামের সাথে একাকী কথা বলা উচিত নয়। এক্ষেত্রে বারসীসার গল্পটি আমাদের জন্য শিক্ষণীয় হতে পারে। 

একটি গড়পড়তা গল্প
রাইহানা পারভিন
(৭ জানুয়ারী ২০১৮)