নিয়্যাহ কার

মারুফ নিয়্যাহ কারে চড়ে বসল। ডেস্টিনেশন সেট করলো আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি। দুই পাশে গিরিখাদ, বিপদসংকুল রাস্তা। পকেটের টাকা চেক করে নিল। বেতনের বেশ খানিকটা চলে যাবে খাসি কিনতে। মাসটা খুব কষ্টে চলবে হয়তো। কিন্তু কুরবানি দিবেনা এটা সে ভাবতেও পারে না! ভাবলেও বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠে। নিজেকে প্রশ্ন করে, লোক দেখানোর জন্যে দিচ্ছে কি! আয় কমে গেছে আগের চেয়ে। আগে হলে একাধিক জান কুরবানের চিন্তা করতে পারতো! আল্লাহ্‌র জন্যে কুরবানি করতেই এই মাসটা একটু কষ্টে চলতে আপত্তি নেই তার। খুব স্পিডে চলছে গাড়ি। হাটে যাবে মারুফ।

হাটে এসে থামতেই মনটা খুশিতে ভরে গেল। ছোটবেলায় বাবার সাথে হাটে আসতো। কুরবানির কত স্মৃতি! এখন বাবা বৃদ্ধ, সব দায়িত্ব তারই। কাঙ্ক্ষিত দামে খাসি পেয়ে গেলো মারুফ। রাস্তায় শুধু “কত নিলো,ভাই!” শুনতে শুনতে আসলো। “জিতছেন ভাই! খুব জিতছেন!” কথাগুলো শুনতেই নিজের রুচি আর দরদামের প্রতি আস্থাটা বেড়ে যায় হঠাৎ! চমকে নিজেকে নিয়্যাহ কারসহ ময়লার স্তুপে আবিষ্কার করল মারুফ। গার্বেজের উপর সাইনবোর্ড দেয়া “আত্ম-তুষ্টি”! নিজের ভুল বুঝতে পেরে আল্লাহ্‌র কাছে মাফ চাইলো সে! আস্তে আস্তে নিয়্যাহ কারকে উঠিয়ে নিয়ে আসলো ময়লা থেকে। দুই রাকাহ্‌ সলাহ্‌ পড়ে মাফ চাইলো আল্লাহ্‌র কাছে। ঝুম বৃষ্টি যেন গাড়িটাকে ধুয়ে মুছে দিল। গাড়ি ছুটে চলছে গন্তব্য বরাবর।

ঈদের খুতবা শেষে তাকবীর দিতে দিতে বাড়ি ফিরে মারুফ, কুরবানীর জন্যে প্রস্তুত। আল্লাহ্‌র নাম নিয়ে ছুরি চালায় সে, যেন পশুটার কষ্ট না হয় সেই চেষ্টাই করে।

আধা ঘন্টার মধ্যে দক্ষ কসাই মাংস রেডি করে ফেলে,মাংসও কম না! আশেপাশের সবার অবাক দৃষ্টি চোখে পড়ে! বন্ধুকে ফোন দিয়ে খোঁচায় সে! তৃপ্তি নিয়ে বলে,” কিরে আমাদের তো শেষ! তোদের কতদূর!” “কুরবানির মাংস রেডি করা নিয়ে ফাপড় নেয়া বাদ দে! কবুল হলো কিনা আগে সেই চিন্তা কর!” কঠিন জবাবে নিয়্যাহ কার ব্রেক কষে গিরিখাদের একদম ধারে গিয়ে, আরেকটু হলেই সব শেষ হয়ে যেত! আদিম দুই ভাই এর কথা মনে পড়ে, হাবিল আর কাবিল। তখন আকাশ থেকে আগুন এসে কবুলকৃত কুরবানী ছাই করে দিয়ে যেত! যারটা কবুল হতো না সেটা পড়ে থাকতো! আদম (আঃ) এর দুই ছেলে হাবিল-কাবিল নিজেদের মধ্যে হওয়া মতবিরোধ মীমাংসায় কুরবানী করেছিলেন। কুরবানীর জন্যে পশুপালন করা হাবিল এনেছিলেন তার সেরা পশুটি আর কৃষিকাজ করা কাবিল এনেছিল তার খারাপ শস্য! আজ যদি সেইভাবে কুরবানী কবুল-প্রত্যাখ্যান প্রকাশ্যে হতো! কুরবানী কবুল না হওয়ার কষ্টের সাথে যোগ হতো লোকলজ্জা! ইখলাসের পরিবর্তে সারাদিন কতবার রিয়া বা আত্মতুষ্টি নেক নিয়তের স্থান দখল করে নিচ্ছে! মারুফ গাড়িটা সতর্কতার সাথে ঘুরিয়ে নেয়। রিয়া থেকে বাঁচবার দুআ করে নেয় সে। শির্ক এমন একটা জিনিস যেটা অন্ধকারে কালো পাথরের উপর কালো পিপড়ার হেটে যাওয়ার চেয়েও সন্তর্পনে মানুষের মনের ভেতর ঢুকে যায়।

“আল্লাহ যেন বুঝে শির্ক, না বুঝে শির্কের পাপ থেকে প্রতিদিন সবাইকে দূরে রাখেন”- ভাবতে ভাবতে গাড়ি টান দেয় মারুফ! মারুফের গাড়িটা ছুটি চলে একমাত্র সঠিক গন্তব্যের উদ্দেশ্যে!

নিয়্যাহ কার
উম্মে লিলি

অগাস্ট ১২, ২০১৯ইং