আল্লাহ্‌ ভীতি

এই জীবনে কোনো একটা মুসলিমকে পেলাম না যে বলেছে সে আল্লাহকে ভয় পায় না। যাকেই প্রশ্ন করি, সবাই নির্দ্বিধায় উত্তর দেয়, “আমি আল্লাহকে ভয় পাই।”

আসলে আমরা সবাই আল্লাহকে ভয় পাই। আমরা সবাই যেমন আল্লাহকে ভয় করি, আবার আল্লাহর থেকে আশাও করি।

আমরা আশা করি– আল্লাহ আমাদের ভুলগুলো মাফ করে দেবেন। আল্লাহ নিশ্চয়ই আমাদেরকে দয়া করে জান্নাত দিয়ে দেবেন!

কিন্তু মাঝে মাঝে আমাদের আশাটা ইমব্যালেন্সড হয়ে যায়। আমরা বুঝি না, আশা করতে করতে কখন আমাদের মন থেকে আল্লাহর ভয়টা একেবারে উধাও হয়ে গেছে! আল্লাহ যে ন্যায়বিচারক, কঠোর শাস্তিদাতা, সমস্ত শক্তির মালিক– এই কথাগুলো যেন আমাদের মাথাতেই নেই….!

কী! বিশ্বাস হচ্ছে না?

চিন্তা করে দেখুন, আপনি যদি আল্লাহকে ভয় পেতেন, তাহলে কি কোনো হারাম কাজ করতে পারতেন? মানুষ হিসেবে আমাদের দ্বারা ভুলত্রুটি হয়েই যায়, কিন্তু আপনি যদি আল্লাহকে ভয় পেতেন, তাহলে কি দিনের পর দিন আপনি পারতেন সেই ভুলের উপর অটল থাকতে?

পারতেন বার বার অবলীলায় কোনো গুনাহর কাজ করতে? আপনি কি আল্লাহর ভয়ে গুনাহ থেকে সরে আসতেন না? আল্লাহকে ভয় করলে, ফরয কাজগুলোর ব্যাপারে কি আপনি এত উদাসীন হতে পারতেন? নামাজ তরক করতে, হিজাব না করতে, রোজা না রাখতে কি আপনার একটুও ভয় লাগত না?

রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছিলেন, “আমি যা জানি, তোমরা যদি তা জানতে, তাহলে তোমরা খুব অল্পই হাসতে, আর অনেক বেশি কাঁদতে।” [তিরমিযী]

এই হাদীস উপলব্ধি করার ন্যূনতম যোগ্যতাও আমাদের মধ্যে নেই। আমরা গায়েবকে, অদেখা জগৎটাকে সেভাবে অনুভব করতে পারি না, তাই বিশ্বাসও করতে পারি না। আমাদের চিন্তার জগতে আখিরাতের কথা কোনো ঝড় তোলে না। আল্লাহর কথা ভেবে আমরা কখনও ভয়ে আচ্ছন্ন হয়ে যাই না। তাই বলছি, আমাদের মনে আসলে আল্লাহর ভয় নেই বললেই চলে। নইলে আমরা বুঝি এভাবে চলি!

আলী (রা) বলতেন, “আমি যদি চোখের সামনে এখন জান্নাত দেখতে পাই আমি জান্নাতকে ততটাই ভালোবাসব যতটা জান্নাতকে নিজের চোখে না দেখে আমি ভালোবাসি, কিংবা জাহান্নামকে যদি আমার চোখের সমনে আনা হয় তাহলে আমি ততটাই ভয় পাব যতটা আমি জাহান্নামের আগুন না দেখেও ভয় করি।”

আমরা কি জাহান্নামকে এতটা ভয় করতে শিখেছি? বা এর ধারেকাছেও যেতে পেরেছি?!

মানুষের ঈমান পাখির মতো দুটো ডানায় ভর করে চলে। একটা হলো আল্লাহর প্রতি ভয়, জাহান্নামের শাস্তির ভয়। আর আরেকটা আল্লাহর ব্যাপারে আশা, জান্নাতি সুখের আশা। দুটোই ব্যালেন্সড ভাবে করতে হবে।

সারাদিন হারাম আর গুনাহর মধ্যে মজে থেকে এই দিবাস্বপ্ন করবেন না যে আল্লাহর আপনাকে জান্নাতুল ফিরদাউসের বাগান দিয়ে দেবে! আবার আল্লাহর উপর নিরাশ হওয়াও মানা। তাই এরকম চিন্তা করেও নিজেকে ধোঁকা দিয়েন না যে আল্লাহ আপনাকে কখনোই মাফ করবে না।

ইসলামকে পরিপূর্ণভাবে মেনে চলার চেষ্টা করুন, এরপর আশা করুন, আল্লাহ আপনার ভুলগুলো মাফ করে আপনাকে জান্নাতের আনন্দ দান করবে। এই যে আপনি ভুল করার ব্যাপারে সচেতন হচ্ছেন, আল্লাহর আদেশ মানার ব্যাপারে সতর্ক হচ্ছেন, আল্লাহর নিষেধগুলো থেকে দূরে থাকতে সচেষ্ট হচ্ছেন– এটাই আল্লাহভীতি।

এই আল্লাহভীতিকেই বলে তাক্বওয়া। আর যাদের মনে অনেক বেশি পরিমাণে আল্লাহর ভয় থাকে, তাদেরকে বলা হয় মুত্তাক্বী। কুরআনের অর্থ পড়ে দেখুন, তাক্বওয়া আর মুত্তাকীদের ব্যাপারে আল্লাহ কতবার উল্লেখ করেছেন!

আল্লাহ তা’আলা বলেন,

“আল্লাহকে যে ভয় করে আল্লাহ তার সমস্যার সমাধান সহজ করে দিবেন।” [৬৫: ৪]

“আল্লাহকে যে ভয় করে আল্লাহ তার নিষ্কৃতির ব্যবস্থা করে দিবেন।” [৬৫: ২]

“আর যদি জনপদসমূহের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং তাক্বওয়া অবলম্বন করত, তাহলে আমি অবশ্যই আসমান ও যমীন থেকে বরকতসমূহ তাদের উপর খুলে দিতাম।”[৭: ৯৬]

“নিশ্চয়ই আল্লাহ মুত্তাকীদেরকে ভালবাসেন।” [৩: ৭৬]

“যে আল্লাহকে ভয় করে তিনি তার গুনাহসমূহ মুছে দেন এবং তাকে দেন মহাপুরস্কার।” [৬৫: ৫]

মুত্তাকীদের জন্যই জান্নাতের উঁচু তলাগুলো সাজিয়ে রাখা হয়েছে। একজন মুমিনের জন্য আল্লাহভীতির চেয়ে সুন্দর পোশাক আর কী হতে পারে!

———————–
আল্লাহ্‌ ভীতি

আনিকা তুবা