উপলব্ধি

সকাল থেকেই আকাশটা মেঘাচ্ছন্ন। কিচ্ছু ভালো লাগছে না জারার। শোবার ঘরের জানালা দিয়ে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে থাকতে জারার মনটাও হঠাৎ কেন জানি মেঘলা আকাশের মতো বিষণ্ণ হয়ে গেল। ভাবনারা এলোমেলো হয়ে এদিক ওদিক ছুটছে। হিতাকাঙ্ক্ষীরা ভয় দেখায় অনলাইন-অফলাইন (বাস্তব জীবনে) সবখানেই। 

জীবন অনেক বড়। ভবিষ্যতের কথা বলা যায় না, এতটা গা ছাড়া ভাব ঠিক না।
এত পড়াশুনো করছো কি শুধু চুলা গুতানোর জন্য!! জীবনে কখন কী হয় কিছুই বলা যায় না!
হ্যাঁ, আজকাল কত মেয়েরা পর্দা করে কত কাজ করছে, আর তুমি কিনা!
তোমার মতো একটা ক্যারিয়ার ওরিয়েন্টেড মেয়ে কিভাবে এই রকম বদলে গেল?
শুনো তোমার নিজের একটা আইডেন্টিটি থাকা দরকার! 

আরো কত কি…। সদ্য গ্রাজুয়েশন শেষ করা যারার এই কথা গুলো নিজ পরিবার থেকে শুরু করে নিকটাত্মীয়রা কেউ বলতে একটুও ছাড় দেয়নি। মাঝে মাঝে আপন মানুষগুলোও দুনিয়াবি চিন্তা দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে কথার বাণে জর্জরিত করে আহত করে।

দ্বীনের বুঝ এসেছে খুব বেশি দিন হয়নি ওর। আর আট-দশটা মেয়ের মতো সে-ও তথাকথিত নারী স্বাধীনতায় বিশ্বাসী হয়ে চাকুরী করার, ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন দেখতো। কিন্তু আল্লাহ্‌র অশেষ রহমতে সে এই সেক্যুলার সমাজের ফাঁকা বুলিগুলোর অসাড়তা বুঝতে পারলো। সে বুঝতে পারলো স্বাধীনতার মিথ্যে স্বপ্ন দেখিয়ে এই পুঁজিবাদী সমাজ নারীর শ্রম আর ইজ্জত নিলামে তুলেই ক্ষান্ত হয়নি – সেই সাথে নারী স্বাধীনতার ধুঁয়া তুলে সমাজের মেরুদণ্ড পরিবার গুলোর সুখ-শান্তি নষ্ট করে দিয়ে পাশ্চাত্য সমাজের মতো এক অনিশ্চিত সমাজ নির্মাণের প্রচেষ্টায় লিপ্ত। যার বিষবাষ্প থেকে রেহাই পাচ্ছে না মুসলিম পরিবারগুলোও। মুসলিম নামধারী হয়েও চিন্তায় চেতনায় মুসলিম পরিবারগুলি দ্বীন ইসলাম থেকে যোজন যোজন দূরে চলে যাচ্ছে, যার ভয়াবহ পরিণতি আজ সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে পরিলক্ষিত হচ্ছে।

ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় নিয়ে জীবনযাপন কতটা ভারসাম্যপূর্ণ জারা তা হৃদয় দিয়ে অনুভব করে। সে বিশ্বাস করে একজন মুসলমানের প্রধান এবং একমাত্র আইডেন্টিটি হওয়া উচিৎ সে একজন মুসলিম। আর একজন মুসিলম নারীর প্রকৃত সম্মান ও গৌরব নিহিত আছে একজন আদর্শ স্ত্রী, আদর্শ মা সর্বোপরি আল্লাহ্‌ তা’আলা যেভাবে বা যে গুণাবলীর আলোকে জান্নাতি নারীদেরকে সম্মানিত করেছেন সে সবের মধ্যেই।

এই সমাজের বেঁধে দেওয়া কোন স্ট্যান্ডার্ড সে মানতে রাজি নয়, কারণ সে তো আল্লাহ্‌র একজন দাসী। নিজের সমস্ত ভালো-মন্দের দায়িত্ব সে সঁপে দিয়েছে সেই মহান সত্ত্বার হাতে যার হাতে রয়েছে তার জীবন আর মরণ। সে স্বপ্ন দেখে সুন্দর এক পরিবার গঠনের যেখানে থাকবে “সুকুন” আর “চক্ষুশীতলকারী” প্রিয় মুখগুলি – এই ভাবতে ভাবতে জারার সূরা ত্বালাক এর একটি আয়াতের কথা মনে পড়ে —

“এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিযিক দেবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্যে তিনিই যথেষ্ট। আল্লাহ তার কাজ পূর্ণ করবেন। আল্লাহ সবকিছুর জন্যে একটি পরিমাণ স্থির করে রেখেছেন।”

সে জানে আল্লাহ্‌র প্রতিশ্রুতিই সত্য, তার কোন ভয় নেই, মুমিন ব্যক্তি শুধু আল্লাহকেই ভয় করে,… কথা গুলো চিন্তা করতে করতে জারার মনে জমে থাকা মেঘ গুলো চোখের কোণ বেয়ে বৃষ্টি হয়ে ঝড়ে পড়তে লাগলো,কিছু কিছু কান্না এত প্রশান্তির হয় কেন তা বোঝা যায় না! হয়তো সেই মহান রবের স্মরণে অন্তরাত্মা এভাবেই প্রশান্ত হয়।

উপলব্ধি
জান্নাবি মৌ
(২ জানুয়ারী ২০১৮)

#রৌদ্রময়ী_জীবনের_গল্প

বিঃদ্রঃ মেয়েদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হতে ইসলাম কোনভাবেই বাধা দেয় না। বরং ইসলামি বিধান মেনে মেয়েদের জ্ঞান অর্জন করা এবং তাদের জন্য নির্ধারিত দায়িত্ব-কর্তব্যগুলোকে প্রায়োরিটি দিয়ে জনস্বার্থে যে কোন কল্যানকর কাজে তারা নিয়োজিত হতে পারে। 
– এডমিন