কফি কথন

উম্মে হুরাইরা

শম্পা সকাল সকাল দু’কাপ কফির ছবি আপলোড করেছে আজ। আপলোড করতেই লাইক এর ধুম।
তিথি ‘love’ reaction দিয়েছে এই ছবিতে। আর তার পাশে মোবাইলে বুদ হয়ে থাকা স্বামীর দিকে কটমট করে তাকিয়ে আছে। ভাবছে, কী কপাল শম্পার। কী মজায় আছে, কফি খাচ্ছে স্বামী-স্ত্রীতে মিলে। বৃষ্টি ওদের ঘরে কত রোমান্টিক, আর ওর ঘরে কত্ত বোরিং।

মেহনাজ ছবিটা দেখেছে, কিন্তু লাইক কমেন্ট কিছু দেয় নি। ছবি দেখে ওর বুকের ভেতরটা হুহু করে উঠেছে। কারণ তারেক আর ও এভাবেই কত সকাল বিকেল কফি-চা-নাস্তা খেত, কখনো ছবি আপলোড দিত, কখনো দিত না। অথচ এখন আর এগুলোর উপায় নেই, তারেকের সাথে মেহনাজের ডিভোর্স হয়েছে প্রায় এক বছর হবে, কিন্তু স্মৃতিগুলো এখনো তাজা।

আবিরা, পাপড়ি, নাদিয়া- ওরা লাইক না, কমেন্টেও অস্থির কাপাকাপি। 

“আপু আমাদেরকেও খাওয়ান।” 

“হুম আপু খুব খুব…” 

“আমাদের কবে কফি পার্টনার হবে 

🙁 “

ওরা এখনো অবিবাহিত। বিয়ের স্বপ্নে বিভোর।

__________________________________________________

শম্পার ঘরে আসি এবার। রাত থেকে স্বামী-স্ত্রীতে ঝগড়া চলছে। শম্পা রাগ ভাঙাতে কফি নিয়ে এসেছে দুজনের জন্য। আর স্বামীকে দেয়ার আগে ফেইসবুকে ছবি আপলোড করেছিল। কিন্তু আপলোডের কিছুক্ষণ পরের ঘটনা- স্বামীর রাগ ভাঙেনি। উলটো দুজনের পুনরায় ঝগড়া। শম্পা রেগে গিয়ে একটা কাপ ভেঙে ফেলেছে, আর নিজের জন্য আনা কফিটাও খায়নি।
__________________________________________________

নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নি:শ্বাস
ওপারেতে সর্বসুখ আমার বিশ্বাস
__________________________________________________

পৃথিবীতে কেউই শতভাগ সুখী না। সুখ দুখ মিলিয়েই জীবন। আর প্রতিটা জীবনেই আছে কঠিন পরীক্ষার গল্প। কেউ বিয়ে করে দুখী, কেউ বিয়ে না করে। কেউ সন্তান পেয়ে দুখী, কেউ না পেয়ে।
সবটাই আসলে perception, কীভাবে আমরা আমাদের জীবনটাকে দেখি।

(২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭)