কৃতজ্ঞতা

মেয়েকে ঘুম পাড়িয়ে বাহিরের রৌদ্রজ্জ্বল দিনের মেঘমুক্ত আকাশ দেখতে দেখতে নিজের চিন্তার জগতে হারিয়ে গেলো শম্পা। দিনের এই সময়টা শম্পার একান্ত নিজের। এই সময়ে নিজের পড়াশুনা কিংবা একটা আরামের গোসল কিংবা নিজের চিন্তা চেতনার জগতে ঘুরে বেড়ানো এই হলো তার কাজ। 

আজকে বারবার নিজের অতীতের কথা মনের মাঝে ঘুরপাক খাচ্ছে। সেদিন শম্পা, রনি ও মেয়ে জুয়াইরিয়্যা ফ্যামিলি ট্রিপে গিয়েছিলো। ঘুরতে গিয়ে ভার্সিটির পুরোনো বান্ধবী নূরীর সাথে দেখা। দুইজনে মিলে অনেক গল্প হলো সাথে বাকীদের খবরাখবর জানা হলো। 

সাত বছর আগে বিদেশে এসে যখন থেকে শম্পা আর রনি একটু একটু করে সত্য পথের সন্ধানে ব্যস্ত তখন থেকেই এক এক করে ভার্সিটির অনেক ফ্রেন্ডরাই ওদেরকে ফেসবুকে আনফ্রেন্ড করতে ব্যস্ত ছিলো। কারণ হিসেবে কেউ কেউ বলেছিলো “তোদের সাথে আমাদের চিন্তার এখন অনেক ফারাক। তাই ফ্রেন্ডলিষ্টে রাখা দুই পক্ষের জন্যই কষ্টকর”। তখন মন খারাপ লাগলেও এখন বুঝে সেই ফ্রেন্ড ছুটে যাওয়াটাও আল্লাহ্‌র এক রহমত ছিলো। 

তখন শম্পা ছিলো নারী-স্বাধীনতায় বিশ্বাসী ক্যারিয়ারিষ্ট একজন মানুষ। এই ফ্রেন্ড সার্কেলের সাথে ক্লাস করা, আড্ডা ঘুরে বেড়ানো ছিলো ডেইলি রুটিন আর জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এই ছিলো স্বপ্ন। 

নূরীর থেকেই জানা গেলো একসময়ের ভার্সিটির বিশাল সার্কেলের মধ্যের প্রিয় একজন বান্ধবী বিয়ে করেছে ফ্রেন্ড সার্কেলেরই অন্য ধর্মের একজনকে। কেউ ধর্ম চেঞ্জ করেনি কিন্তু অনেক সুখী তারা। এরপর প্রসঙ্গ বদলাতে অন্য কাছের বান্ধবীর কথা জিজ্ঞেস করেও একই কাহিনী শুনলো। এই ক্ষেত্রে জামাই হিসেবে বেছে নিয়েছে অন্য ধর্মের কলিগকে। এগুলো শুনে মন খারাপ লাগায় প্রসঙ্গ বদলে অন্য কথায় চলে গেলো শম্পা। 

অন্য কথা বললেও নিজের মধ্যে আল্লাহ্‌র প্রতি শুকরিয়ায় মনটা পরিপূর্ণ হয়ে গেলো। শম্পা ভাবছিলো আজকে তো এদের সাথে থেকে আমিও এই পথে চলে যেতে পারতাম যদি না আমার রব আমাকে সত্য পথের সন্ধান দিতেন। নিজের অতীতের দিকে তাকিয়ে বিভিন্ন ঘটনা মনে হচ্ছিলো আর সাথে মনে হচ্ছিলো সারাদিন শুকরিয়ার সিজদা দিলেও বোধহয় কম হবে।

শম্পা যখন প্রথম হিজাব পরা শুরু করে তখন এই সার্কেলের একজন সুন্দর করে হিজাব পরা শিখিয়ে দিলো কারণ সেই বান্ধবী স্কুল লাইফ থেকে বোরখা পরে। আজকে সেই বান্ধবী ওয়েস্টার্ন ড্রেসে অভ্যস্ত আর শম্পা বোরখা পরে। এই যে পরিবর্তন শম্পার মধ্যে এতে তো শম্পার কোনই হাত নেই; আছে শুধুই আল্লাহ্‌র রহমত। আল্লাহ্‌ হেদায়েত না দিলে তো আজকে শম্পাও ঐ অন্ধকার পথে হারিয়ে যেতো। আল্লাহ্‌ জ্ঞান না দিলে তো আজকে বান্ধবীদের মতো শম্পারও মনে হতো নামাজ পড়া আর রোজা রাখার মধ্যেই ইসলাম ধর্ম সীমিত। 

নূরীর সাথে কথা বলে শম্পার নতুন করে আবার উপলব্ধি হলো আল্লাহ্‌ শম্পা ও রনিকে ইসলামের সুশীতল ছায়ায় স্থান দিয়ে কত বড় রহমত করেছেন। আজ হয়তো ফেসবুকে শম্পা-রনির কোন সুন্দর রোমান্টিক প্রোফাইল পিকচার নেই; নেই কোন আপডেট দু’জনে কে কাকে কি গিফট দিলো। 

কিন্তু ওদের জীবনে যা আছে তা হলো আল্লাহ্‌ ও দ্বীনের বুঝ। এখন ওরা জানে পিকচার পারফেক্ট পরিবার মানুষকে দেখানোর জন্য না বরং সত্যিকারের পিকচার পারফেক্ট পরিবার হলো যারা একে অপরের জন্য চক্ষু শীতলকারী; যারা একসাথে জান্নাতে থাকার জন্য কাজ করে যায়। এইসব ভাবতে ভাবতেই শম্পার চোখের কোণে কিছু কৃতজ্ঞতার ফোঁটা চিকচিক করতে থাকে।

——————-
কৃতজ্ঞতা

আহিলা রিফাত
(১০ মার্চ ২০১৮)