চক্র

– মোবাইল হাত থেকে পড়ে কীভাবে! নিজের টাকায় কিনো না তো…গায়ে লাগে না!

– তুমি সারাজীবন নিজের টাকায় চলসো? বাপের টাকায় খাওনাই? চাকরীর আগে খরচ কে দিতো তোমার? বিয়ের খরচ কে দিসে?

দুই ভাইয়ের চিৎকার ওয়াশরুম থেকেও শোনা যাচ্ছে। প্রথম প্রথম খুব খারাপ লাগত রীতার। এ বাড়িতে আসার পর থেকেই ভাইয়ে ভাইয়ে ঝগড়া দেখছে। ঝগড়া বললে কম বলা হবে। এদের মাঝে সাপে নেউলে সম্পর্ক। রীতার বোনের সাথেও তো ওর ঝগড়া হয়, মান অভিমান হয়,কই! এমন রেষারেষি তো হয়নি! 
এই ঝগড়ার জের অনেক্ষণ চলবে। রীতার ইচ্ছে করছে অনন্তকাল বেসিনের কল ছেড়ে হাত ধুতে। ওয়াশরুম থেকে বের হলেই দুই ভাইয়ের মাঝে পড়বে। শাশুড়ি অসহায়ের মত বলতে থাকবে মা সায়েমকে থামাও। ওকে রুমে নিয়ে যাও।

রীতার প্রায়ই মনে হয় এটা তার শাশুড়ির ট্রিক। তিনি সব কিছুতে ছোট ছেলের পক্ষে থাকবেন আর রীতার দায়িত্ব স্বামীকে সামলানো। কেন উনি নিজে সামলাতে পারেন না! ছোট ছেলেটা টাকাকে টাকাই মনে করছে না। দেদারসে খরচ করে যাচ্ছে। এই নিয়েই তো নিত্যদিনের ঝগড়া! ছোটটাকে মাথায় না তুলে তিনি বোঝালেই পারেন হিসেব করে চলতে হবে। বড় ভাই রক্ত পানি করে টাকা কামাবে আর ছোটটা শুধু নিয়েই যাবে! মানুষের বিবেক বলতেও তো কিছু থাকে!
রীতার রাগ উঠে যায়। ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে রুমের দরজা লক করে দেয়। আজ শাশুড়ি ডাকলেও এসবের মাঝে যাবে না সে। ডাইনিং রুমে এখনও দুই ভাই ও তার মায়ের নাটক চলছে। একশন পার্ট শেষ। এখন ব্যাকগ্রাউন্ডে করুণ সুর। মায়ের আহাজারি। আজ যদি তোদের বাবা বেঁচে থাকত আমাকে এই দিন দেখতে হত না…

নাটকের শেষ দৃশ্য রীতার জানা আছে। দুই ভাই মায়ের সাথে কান্নায় যোগ দিবে। বড় ভাই কাঁদতে কাঁদতে ছোট ভাইয়ের হাতে ফোন কেনার টাকা তুলে দিবে। মায়ের মন শান্ত হবে।

নাটক চলতে থাকুক। রীতা এর মাঝে নেই। এদের নাটক শেষ হলে এক ফাঁকে সকালের নাস্তাটা সেরে আসবে। 

আপাতত ফেসবুক ঘাঁটাঘাঁটি করে খিদে ভুলে থাকা যাক। 

ফেসবুক ওপেন করতে না করতেই দরজায় নক। সায়েম নক করেছে। তার মানে নাটকের শেষ পর্ব- এখন লকার থেকে টাকা নিয়ে ভাইয়ের হাতে গুঁজে দেয়া হবে।

রীতা হেলেদুলে দরজা খুলে দিয়ে আবার ফোন হাতে নিয়ে ব্যস্ততার ভান ধরল। আসলে আড়চোখে ঠিকই সায়েমের গতিবিধি দেখছে। লকারের ধারেকাছেও গেল না সায়েম। অফিসের জন্য রেডি হচ্ছে। অন্যদিন হলে শার্ট কই, টাই কই বলে বলে রীতার মাথা খারাপ করে দিত। আজ নিজেই সব খুঁজে নিচ্ছে। এতেও রীতার মনটা খারাপ হয়ে গেল। ভাইয়ের সাথে ঝগড়া হলে বউয়ের সাথেও মুখ ভার করে রাখতে হবে!

রেডি হয়ে সায়েম লকার খুলল। রীতাকে অবাক করে দিয়ে হাজার তিনেক টাকা বের করে ওর সামনে রাখল।

– এটা কী জন্য?
– ৫ হাজার চেয়েছিলে না? এখন অত টাকা নেই। এই ৩ হাজার রাখো।
– তোমার ভাইকে দিলেই তো পারতে! আরেকটা ফোন কিনত।

মুখের কথা আর বন্দুকের গুলি… একবার বের হয়ে গেলে ফিরিয়ে নেয়া যায় না। রীতা কারণে অকারণে খোঁচা দেয়ার বদ অভ্যাসটা ছাড়তে পারল না আজও। খোঁচা দেয়ার পর নিজেই অপরাধবোধে ভোগে। 
সায়েম অগ্নি দৃষ্টি হেনে গটগট করে বেরিয়ে গেছে। সকালটা এমনিতেই তিক্ত ছিল, রীতার কারণে তিক্ততা আরও বাড়লো। 

রীতার সামনে তিন হাজার টাকা পড়ে আছে। হাত দিয়ে ছুঁতেও ইচ্ছে করছে না। সায়েমের কাছে এক সপ্তাহ আগে টাকাটা চেয়েছিল। প্রতিবার বাবার বাড়িতে খালি হাতে যেতে ভাল লাগে না। বাসায় গেলেই বাবা বাজারে দৌড় দিচ্ছেন, মা সারাদিন রান্নাঘরে। বড় মেয়ে বাড়ি এসেছে, এখন লিস্ট ধরে ধরে রান্না হবে। ছোট বোন রিমার খুনসুটি, “আপু তুমি ঘন ঘন আসলেই তো পারো! একটু ভালমন্দ খাবার জোটে!”

রীতারও খুব ইচ্ছে করে সপ্তাহে একদিন অন্তত বাসায় আসবে। কিন্তু বাবার এত খরচ, মায়ের এত পরিশ্রম দেখতে ভাল লাগে না। জব করলে হয়ত নিজেই দু’হাত ভরে বাজার করে নিতে পারতো। একটু চড়া রেটে ছুটা বুয়া রেখে মায়ের কাজের চাপ কমাতে পারতো।
বাড়ি গিয়ে সামান্য একটু খরচ করবে সেজন্যও সায়েমের কাছে হাত পাতা লাগে। হাত পাতার পর শুরু হয় দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর পর্ব। এত টাকা কেন লাগবে, বাসার কেউ চেয়েছে কি না, রীতার কেন মনে হচ্ছে সায়েম টাকার গাছ লাগিয়েছে…নানান প্রশ্নে স্বাভাবিক একটা চাওয়াকে অস্বাভাবিক রকম জটিল করা। 

রীতার প্রচন্ড অপমান লাগে। আজ যদি ও বাবার কাছে টাকা চাইতো, বাবার হাতে টাকা না থাকলেও কোথাও না কোথাও থেকে ম্যানেজ করে দিত। হাতে দেয়ার সময় বলত, মা তুই তো কখনো টাকা চাস না। কোনো দরকার? এত কম টাকায় কাজ হবে তো?

সায়েম টাকাটা ঠিকই দিল। সপ্তাহখানেক পর, অনেক ইনভেস্টিগেশন শেষে। এমন সময়ে দিল, যখন রীতার আর টাকা নেয়ার কোনো ইচ্ছেই নেই। আজ যদি ও একটা জব করত, অন্তত কারো কাছে হাত পাততে হত না। 

টাকাটা তোশকের নিচে রেখে রুম থেকে বেরিয়ে এল রীতা। ঝড় থেমে গেছে। এখন পরিস্থিতি শান্ত। শাশুড়ি বিমর্ষ মুখে একা একা নাস্তা করছেন। নাস্তা করছেন না বলে নাস্তা নিয়ে নাড়াচাড়া করছেন বলা ভাল। রীতার খুব মায়া লাগে এই মহিলার জন্য। যদিও মাঝে মাঝে নাটুকেপনার সীমা ছাড়িয়ে যান, তবু মায়া লাগে। নিত্যদিন সন্তানদের ঝগড়া দেখতে কার ভাল লাগে!
রীতা দুইটা রুটি আর ডিম ভাজি নিয়ে বসে পড়ল শাশুড়ির পাশে। 

দু’জন জ্বলজ্যান্ত মানুষ নীরবে নাস্তা সারল। নীরবেই রান্নাঘরে চলে গেল। একজন শেল্ফ থেকে ডালের কৌটো বের করল, আরেকজন চুলায় পানি চড়িয়ে দিল। কারো মুখে কথা নেই। তবু রান্না চলছে পুরোদমে। এ এক অদ্ভুত বোঝাপড়া!

রীতার মাথায় চিন্তার ঝড় বইছে। কিছু একটা করতেই হবে। মাস শেষে হাতে কিছু টাকা আসলে নিজের মত করে খরচ করা যাবে। টাকা দিয়ে কী করবে কখন করবে কেন করবে…কোনো ফিরিস্তি দিতে হবে না।
টাকা পয়সার ভাবনায় কই মাছের ঝোলে লবণ বেশি হয়ে গেছে। চারটা পেঁয়াজ কেটে দিয়ে রুমে চলে এল রীতা। বাকীটা তার শাশুড়িই সামলাবে। 

কিছু একটা করব বলে বসে থাকলে চলে না। অনেক ভেবে রীতা ফোন দিল তার আঁতেল বান্ধবী সুমিকে। সুমি দুনিয়ার সব ব্যাপারে পরামর্শ দিতে পারে। একটাই সমস্যা, কিছু একটা জানতে চাইলেই ধর্ম দর্শন বিজ্ঞান একাকার করে জ্ঞানের সাগরে চুবিয়ে দেয়। রীতা অবশ্য ওর জ্ঞান বিজ্ঞানের ধার ধারে না। আজও সুমি বেশ দার্শনিক মুডে ছিল। রীতা যখন বলল সে নিজে উপার্জন করতে চায় তখনই দর্শনের ঝাঁপি খুলে বসল।

– দেখ রীতা, টাকা আর্ন করা কোনো কঠিন ব্যাপার না। তবে তার আগে জানতে হবে তুই কেন আর্ন করতে চাইছিস?
– আমার নিজের মত খরচ করার জন্য টাকা দরকার। বাবার বাড়িতে যাব, টাকা নেই। একটা ড্রেস ভাল লেগেছে কিনব, টাকা নেই। সায়েমকে পছন্দ করে কিছু কিনে দিব, সে টাকাও সায়েমের থেকে চেয়ে নিতে হয়! সবসময় ওর কাছে হাত পাততে ভাল লাগে না। একবার টাকা চাইলে দশবার জিজ্ঞাসা করে কীজন্য চাই কোথায় খরচ করব। কখনও নিজে থেকে হাত খরচও দেয় না। 

– টাকা চাইলে দিতে চায় না?
– তা দেয়। রীতিমত রিমান্ডে নিয়ে তারপর দেয়।
– আমি তো শুনেছি সায়েম ভাই পুরো সংসার একা চালাচ্ছেন…তাই হয়ত এত হিসাব করেন…
– আহা আমি তো সায়েমের উকিলকে ফোন দিয়েছি। উকিল আপা, আপনার মক্কেল যেটা করে সেটাকে হিসাব বলে না। সেটাকে ছোটলোকি বলে। সেদিন একটা জামদানি শাড়ি কিনে দিল। সুস্মিতার বিয়ে খেতে গিয়েছিলাম। খেতে গিয়ে রোস্টের ঝোল পড়েছে শাড়ির উপর। তাই নিয়ে কত কথা। একটা শাড়ি একদিন পরেই নষ্ট করে ফেলি আমি। আমাকে কিছু কিনে দেয়াই লস! তুই বল এটা হিসেব করে চলা নাকি ছোটোলোকি? বল?
– তোর জামাই ছোটলোক না মহাত্মা সেটা নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছি না।

রীতার মেজাজ আরো খারাপ হয়ে গেল। কাকে ফোন দিয়েছে ও! ওর পক্ষ নেয়া দূরে থাক, উলটো ওর বরের পক্ষে ওকালতি করছে। এখন কিছু বলতে গেলেই বলবে গীবত করা মহাপাপ। আপন ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করিও না। 

– দেখ সুমী, সুবিধাবাদীর মত কথা বলবি না। সত্যি করে বল, আমার টাকা দিয়ে কাউকে কিছু কিনে দিলাম, আবার সারাক্ষণ চোখে চোখে রাখলাম জিনিসটা ঠিকঠাক আছে কিনা…এটা ঠিক? স্পষ্ট উত্তর দিবি।
– নাহ, ঠিক না।
– তাহলে? 
– এজন্যই বলছিলাম তুই কেন আর্ন করতে চাস। হাতে টাকা থাকলেই তো জবাবদিহিতার ভয়। বাড়তি দায়িত্ব। আমরা তো দায়িত্বকে ক্ষমতা ভেবে ভুল করি। কীভাবে টাকাগুলো খরচ করবি, যার জন্য খরচ করবি তার প্রতি তোর আচরণ কেমন- আল্লাহর কাছে জবাব দিতে হবে না? 

– আরে বাবা! আমি কি লোককে টাকা দিয়ে মানুষ মারব? নাকি যখন তখন টাকা উড়ানোর জন্য আর্ন করতে চাচ্ছি? নিজের প্রয়োজনে, শশুড়বাড়ি, বাবার বাড়িতে একটু খরচ করলে আমার গুনাহ হয়ে যাবে? আল্লাহ তো দেখবেনই আমি কী করছি!

– না সেটা বলছি না…আজ তুই সায়েম ভাইকে নিয়ে যে অভিযোগ করছিস তোকে নিয়ে সেই অভিযোগ কেউ করবে না, এ ব্যাপারে তুই নিশ্চিত?

– আমাকে মাফ করে দে। আমার ভুল হয়েছে। আমি আর্ন করতে চাই না। আর্ন করা মহাপাপ। টিএসসিতে থালা হাতে বসে যাব। পাপ হবে না।

সুমি আবার নতুন করে জ্ঞানের ঝাঁপি খোলার আগেই রীতা ফোন রেখে দিল। প্রতিজ্ঞা করল ওর সাথে আর কথাই বলবে না। জীবনে বহুবার করা এ প্রতিজ্ঞা কিছুক্ষণ পরই যে ভেংগে যাবে তা রীতা নিজেও জানে। ঠিক তাই হল। সুমিই আবার ফোন করে মান ভাংগালো। নকশি বুটিক শপের ওউনার সামিয়ার সাথে রীতার পরিচয় করিয়ে দিল। সামিয়া অনেকদিন ধরে একজন পার্টনার খুঁজছিল। একা সব কাজ কুলিয়ে উঠতে পারছিল না। খুব অল্প সময়ে সামিয়া রীতাকে কাজ বুঝিয়ে দিল। ও আসলে ভাবতেই পারেনি এত সহজে উপার্জনের একটা পথ খুঁজে পাবে। কাজ তেমন জটিল না। প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকাটাই আসল। আর একটু পরিশ্রম। এটুকু পরিশ্রম না করলে আর কীসের উদ্যোক্তা!

এখন আর সায়েমের কাছে হাত পাততে হয় না রীতার। মাঝে মাঝে টের পায় সায়েম বেশ সমীহের চোখেই দেখছে ওকে। সুমিকে এ কথা বলতেই ওর আজব প্রশ্ন, এই সমীহ তোর ভাল লাগে? মন খারাপ হয় না?
এতে মন খারাপের কী আছে রীতা ভেবে পায় না। অবশ্য সুমির আবোল তাবোল প্রশ্ন নিয়ে এত মাথা ঘামানোর কিছু নেই। ওকে বেশি ঘাঁটাতে গেলে আবার না জানি “স্বামীর সমীহে স্ত্রীর অপমান” বিষয়ক হাদিস হাজির করে ফেলে। এসব জটিলতা কুটিলতা ছাড়াই রীতা বেশ আছে।

এবার মা কে ভাল ব্র‍্যান্ডের একটা ব্লেন্ডার কিনে দিয়েছে। মা ভীষণ খুশি! রিমি বায়না ধরেছিল ওর একটা ইলেক্ট্রিক বীটার লাগবে। সারাদিন ইউটিউবে বেকিং এর টিউটোরিয়াল দেখে। সব এখন নিজ হাতে বানিয়ে দেখা চাই। রীতাও না করে নি। একটা বীটার ঘরে থাকলে সুবিধাই হয়। 

দিনশেষে মায়ের প্রয়োজন, বোনের আবদার মেটানো- এটুকুতেই ওর ভাল লাগা।

আজ রীতা বাবার বাড়ি যাচ্ছে। এখন আর বাবাকে বাজারে দৌড়ানোর সুযোগ দেয় না রীতা। বাসার সামনের সুপার শপ থেকে বাজার করে তবেই ঘরে ঢোকে। বাবা রেগে যান, মা বকেন। বাসায় আসলেই বাজার করতে হবে? আজকাল বকা খেতেও ভীষণ ভাল লাগে।

মা শংকিত মুখে জিজ্ঞেস করেন, তুই সব টাকা এখানেই খরচ করিস? শাশুড়িকে কিছু কিনে দিস না? দেবরকে কিছু দিস না?

রীতার ভাললাগায় ছেদ পড়ে। শশুড়বাড়িতে দুনিয়া উজার করে দিলেও ওরা যেন খুশি না। মা কে ব্লেন্ডার দিল, যে-ই বাড়িতে আসে মা সবাইকে দেখায়, আমার মেয়ে ব্লেন্ডার কিনে দিয়েছে। তার পাঁচগুন দামে ওভেন কিনে দিয়েও শাশুড়ির মুখে হাসি ফোটাতে পারেনি। একবার কেবল শুকনো মুখে বলেছে, ওভেন দিয়ে কী করব বল তো মা! সব টাকা খরচ না করে জমাও। ভবিষ্যতে কাজে লাগবে।

ব্যস! ওটুকুই! ভাতটা গরম করতে, কফিটা বানাতে প্রতিদিন ওভেন ব্যবহার করছে। কিন্তু কোনো কৃতজ্ঞতা নেই। যেন এটা তাদের পাওনাই ছিল!

এসব ভাবলে মন তেতো হয়ে যায়। মায়ের সাথে আর আলাপ জমে না রীতার। ওদিকে রিমিটা এখনও পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে। অনেক্ষণ ডাকাডাকির পর ঘুম ভাংগে রিমির।

বোনকে দেখে ভীষণ খুশি ও। রীতা প্রায় মাস খানেক পর বাড়ি এসেছে।

” যা তো রিমি, বীটারটা নিয়ে আয়। আজ মেরাং কুকি বানিয়ে খাওয়াব তোকে।”

রিমি খানিকটা অপ্রতিভ। বীটার গত সপ্তাহেই পটল তুলেছে। কিছুতেই কাজ করছে না। হালকা একটা গোঁ গোঁ আওয়াজ তুলে বন্ধ হয়ে যায়। 

রীতাকে সে কথা বলতেই পরিস্থিতি কেমন পালটে গেল। 

” দুই মাসও হয়নি কিনে দিয়েছি! নষ্ট হয় কী করে? এটা কি খেলনা? আর্ন কর না তো…ঘরে বসে খাও! তাই কোনো কিছুর মূল্যও বোঝো না!”

রিমিরও রাগ উঠে যায়, “তুমি কখনও ঘরে বসে খাওনি? সারাজীবন নিজে কামাই করেছো?”

এক কথায় দুই কথায় ঝগড়া আরও বিশ্রীরূপ নিচ্ছে। এখন মুখের সাথে হাতও চলছে। যার হাতের সামনে যা আছে তা-ই ছুড়ে মেরে যে যার রাগ প্রকাশ করছে।
মা-বাবার ধমকে রিমি কাঁদতে কাঁদতে নিজের রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দেয়। জীবনে আর কখনোই কারো কাছে কিছু চাইবে না সে। টিউশনি করে নিজের খরচ নিজেই চালাবে। কারো কাছে হাত পাতবে না! কক্ষনো না!

[উম্ম মারিয়াম]

(১২ অক্টোবর ২০১৭)