প্লাটফর্ম

খুব অর্থহীন কিছু কথা আমার মগজে খুব গাঢ়ভাবে গেঁথে থাকে!

যখন তায়েফে ছিলাম তখনকার দুই প্রতিবেশীদের কথা খুব মনে পরে। এক আন্টির ছিলো তিন মেয়ে পিঠাপিঠি। তিন মেয়ে আমার সমবয়সী। আমার বয়স তখন ৫/৭ হবে হয়তো।

আর অন্য আন্টির ছিল দুই মেয়ে। তখন ওদের বয়স ছিল ১/২… এত্তো এত্তো কিউটের ডিব্বা ছিলো দুইটা।

যা বলছিলাম, খুব অর্থহীন কথাও আমার মগজে গেঁথে যায়।

একদিন ওই আন্টিটা(যার পিচ্চি দুটো মেয়ে আছে) আম্মিকে অন্য আন্টির(যার তিন মেয়ে আছে) ব্যাপারে বলছিলো, “দেখেছেন ভাবী, ওরা কেমন কিপটা তিন মেয়ের জন্য ২রিয়ালের একটা চকলেট কিনে। তিনজন একটা চকলেট খেলে হয় বলেন। চকলেট এর দাম তো মাত্র ২রিয়াল। তিন মেয়ের জন্য কিনলে ৬ রিয়ালই নাহয় শেষ হবে। এতে এতো কিপ্টামির কি আছে।”
আম্মি বলছিল, “ওদের হয়তো সমস্যা চলছে।”

তায়েফ থেকে জেদ্দা চলে আসার পর কারোরই কোনো খবর ছিলো না।

কিছুদিন আগে রাস্তায় হঠাৎ সেই আন্টির(যার দুই মেয়ে) সাথে দেখা হয়ে গেল। এতো বছর পরও আমি আন্টিকে ঠিকই চিনতে পারলাম। নিজের পরিচয় দেওয়ায় আন্টিও আমাকে চিনতে পেরে খুব খুশি হল। খুব আপ্যায়ন করে নিজের বাসায় নিয়ে গেল।

সেই পিচ্চি কিউটের ডিব্বা দুটা এখন মাশাআল্লাহ্‌ অনেক বড় হয়ে গেছে, ভার্সিটিতে পরে। আরো একটা ভাইও আছে এখন ওদের ছোট। আমার সাথে আন্টি পরিচয় করিয়ে দিলো। স্বাভাবিক ভাবেই আমাকে ওরা চিনল না।

ওরা দুজনই রেডি হচ্ছিল। বেরুবে। ক্লাস আছে। খুব তাড়াহুড়ো।

একজন রেডি হয়ে খেতে বসল। আর আমার সাথে টুকটাক কথা। অন্যজন রেডি হয়ে খেতে বসবে। এমন সময় বলে উঠলো, “কিরে তুই সবটা খেয়ে নিলি যে!”

-অল্প ছিলো। দুজনের হতো না।
-তুই তো এটা রাতেও খেয়েছিলি।
-তো!?
-আমার জন্য একটুও রাখবি না?
-বললামই তো অল্প ছিলো।
-তো অন্য কিছু খেয়ে পারতি।
-তুই অন্য কিছু দিয়ে খা।
-সমস্যা কি তোর? সামান্য একটু জিনিসও কি স্যাক্রিফাইস করতে পারিস না!?
-নিজের দিকে তাকা।



চলছেই।

তর্ক! কথা কাটাকাটি! এক পর্যায়ে তুমুল ঝগড়া!

আমি হতভম্ব হয়ে আন্টির দিকে তাকালাম। আন্টিকে দেখে মনে হলো লজ্জায় মুখ লুকানোর জায়গা উনি খুঁজে পাচ্ছে না।

আমি কি বলবো কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। একটা মেকি হাসি দেয়ার চেষ্টা করে বললাম,”আচ্ছা আন্টি, আজ উঠি তাহলে।”

আন্টিও কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে আমার ফোন নাম্বারটা রেখে ভনিতা ভরা একটা হাসি নিয়ে আমাকে বিদায় দিলো।

দড়জা বন্ধ করার পর সেই দু’জনের গলার সাথে আরও একটি গলা শোনা গেলো,”সামান্য ব্যাপারে এমন কেন করস তোরা! একজন গেস্টের সামনেও কি নিজেরা মিলে থাকা যায় না? কী সমস্যা একদিন একটু ভাগে কম পেলে?”

মনে রাখা উচিৎ আজকে আপনি যে প্লাটফর্ম তৈরি করছেন কাল এই প্লাটফর্মে আপনাকেই পারফর্ম করতে হবে।

প্লাটফর্ম
নুসরাত জাহান মুন
১৬ নভেম্বর ২০১৮