রং পেন্সিল

মিরা ছবি আঁকতে খুব ভালবাসে। সামনে কোন কিছু পছন্দ হলেই স্কেচ বানায়। ড্রয়ারে যে পুরানো রং পেন্সিল বক্সটা আছে তার বয়স অনেক হল। এখন একটা নতুনের খুব প্রয়োজন। সেদিন বই আনতে মার্কেটে গিয়ে দাম করল। দাম শুনে আর কথা না বাড়িয়ে চলে এসেছে।

মাস শেষের পথে। হাতে তেমন টাকা নেই। বিকাশ চেক করে যা আছে তা দিয়ে একটা রঙ পেন্সিল বক্স কেনা যাবে। মনে অনেক আনন্দ হল। কি কি আঁকবে তার লিস্ট করতে লাগল আর আনমনে ফেসবুকে ঢুকল। রেগুলার আসে না বলে অনেক নোটিফিকেসন এসেছে। এক পরিচিত আপু গ্রুপে দিয়েছে যে, এক অসুস্থ আপুর জন্য অর্থের প্রয়োজন। মনটা খারাপ হয়ে গেল। ভেবে দেখল তার রঙ পেন্সিল এর চেয়ে ঐ আপুর টাকাটা বেশি জরুরি। বিকাশ থেকে টাকা ট্রান্সফার করে একটি শান্তির নিশ্বাস ছাড়ল। ড্রয়ার থেকে পুরানো বক্সটা বের করে একবার দেখে আবার ঢুকিয়ে রাখল। 

ভাইয়ার কাছে কোন কিছু চাইতে ইচ্ছে করে না। এই ভাইটাই তো সব খরচ চালায়। ওর মাসের টাকা, বাবা-মার খরচ সবই ভাইয়া দেয়। কতই বা বেতন পায়। আগে টিউশনি করত, সামনে ফাইনাল পরীক্ষা বলে ছেড়ে দিয়েছে। মনে মনে ভাবল আগামী মাসে কেনা যাবে, রঙ পেন্সিল তো আর ফুরিয়ে যাচ্ছে না।

মা এসেছে হলে। যাওয়ার সময় কিছু টাকা মিরার হাতে দিয়ে বলল, “নাস্তা কিনে খাস”। টাকাটা নিতে ইচ্ছে করছিল না, হয়ত অনেক কষ্টে জমিয়েছে। থাক না মার কাছে। তবুও মা জোর করে হাতে দিল। মায়ের দিকে তাকাতে পারছিল না, খুব কান্না পাচ্ছিল।

রাতে টেবিলে বসে ভাবল যা টাকা আছে তা দিয়ে কি রঙ পেন্সিল হবে? মনে মনে গুনতে গিয়ে দেখলো একশ কম। তারপরও আত্মিক শান্তির জন্য ব্যাগটা হাতে নিল। গুনে দেখল ঠিকই টাকা আছে, কম নয়। যে পকেটে ও দুইশ ধরেছিল ওখানে আসলে তিনশ ছিল। খুশীতে চোখে পানি এসে গেল।

[ফাতিমা]

(২২ অক্টোবর ২০১৭)