গয়না কোথায়? শেষ পর্ব

কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে গেছে নীতি। ব্যাংকবেডের দোতালায় অনীমাও মাত্র ঘুমালো। স্মার্টফোনের নীল আলোটা নিভে যায়নি এখনো। ফোনটা যে ওর ক্ষতি করছে ওর বাবা মা এখনো বিষয়টা ধরতে পারছে না। কিয়ামুল্লাইলের জন্যে ওযু করে নেয় চৈতি। সালাত শেষে দুই হাত তুলে দুআ করে যেন ওর মা বাবা আবার এক হয়ে যান। নিজে না হয় কষ্টে পাথর হয়ে গেছে বা পাথর হওয়ার অভিনয় করে যাচ্ছে, কিন্তু ছোট বোনটার কষ্ট সহ্য করা কঠিন। নানা কিছু দিয়ে ব্যস্ত রাখে ও নীতিকে। কিন্তু আজ রেবা আন্টির কথায় বেচারি কষ্ট পেয়েছে খুব। কুশল বিনিময়ের সময় গয়নার বিষয়েও কথা উঠেছিল। নীতি মুখ ফসকে বলে বসে, “আরে আমরা তো গোয়েন্দাগিরি করছি, চোরকে বের করেই ছাড়বো। “

“কি বললে? মাথা টাথা খারাপ হয়ে গেলো নাকি?” অবাক হয় রেবা আন্টি।

নীতি ততক্ষণে নিজের ভুল বুঝে ফেলেছে। কথা ছিল ও কাউকে বলবে না। নিজের ভুল কোনোভাবে ধামাচাপা দেয়ার আগেই রেবা আন্টি আঘাত দেয়, “দেখিস রে সিমি! মা ছাড়া মেয়ে দুটো থাকে। আমার ফুপুর সংসারে এমন ছিল। ফুপার সাথে বনিবনা হয় না দেখে ছেলে মেয়েগুলো কেমনো ছন্নছাড়া হয়ে গেলো। আমার এক ফুপাতো বোন প্রতিবন্ধী আরেক ভাই ড্রাগ এডিক্ট।“

চাচী কিছু বলার আগেই অনীমা ঝাঁঝিয়ে উঠে, “কী যা তা বলছেন!”
“অনীইই! বেয়াদবি হচ্ছে কিন্তু!”

মা’র কথায় চুপ হয়ে যেয়ে নীতির হাত ধরে চৈতির দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে রুম থেকে বের হয়ে আসে অনীমা। চৈতি অপরাধবোধে ভোগে। দেখা করতে না আসলেই হয়তো ভালো ছিল। রাতে অনেক মজার খাবারের লোভ দেখিয়েও খাওয়ানো যায়নি নীতিকে। মা’র জন্যে একবার কান্না শুরু করলে ও থামতে পারেনা। মা’র সাথে কাল দেখা হবে এটা মনে করিয়ে দিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করেছে। স্কুল বন্ধ তাই কালই ওরা নানাবাড়ি যাবে অনীমাসহ। ফজর পর্যন্ত আর ঘুম আসে না চৈতির। দুই বোনকেও ডেকে দিয়ে সলাত আদায় করে নেয়।

তিন ঘন্টা ঘুমিয়ে নিয়ে তৈরি হয় মা’র কাছে যাওয়ার জন্যে, একসাথে নাস্তা করবে নানাবাড়িতে সবাই। নানীকে ফোন দেয় নীতি। ওর প্রিয় কেকটা বানিয়েছে কিনা নিশ্চিত হয়ে নেয় রওনা হওয়ার আগে। নানী তিনকোনা একটা কেক বানায় সেন্ডুইচ টোস্টারে বেক করে। সেটা নীতির প্রিয়। চৈতির গলায় সবসময় আটকে যায় কেক। তাই এক গ্লাস পানি নিয়ে বসে কেক খাওয়ার সময়। গাড়িতে করে চাচা দিয়ে আসে ওদের। গাড়িতে খুব খারাপ লাগে চৈতির। অনীমার গায়ে হেলান দিয়ে চুপচাপ শুয়ে থাকে ও। অনীমা ফেইসবুক হোম পেইজ স্ক্রল করে চলে সময় কাটাতে। আর নীতি প্রতিটা বিলবোর্ড জোরে পড়তে পড়তে যায়। বানান ভুল বের করে উচ্ছসিত হয়। এই মজার খেলাটা ওর বাবার কাছ থেকে শেখা। ওদের নানাবাড়িতে নামিয়ে দিয়ে চলে যায় আবরার। ভেতরে ঢোকে না। সম্পর্কগুলো আর আগের মতো নেই।

মাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নীতি। আবার কান্না শুরু হওয়ার আগেই নানীর থেকে কেক নিয়ে ওর হাতে গুঁজে দেয় অনীমা। নাস্তা সেড়ে মা’র রুমে হানা দেয় ওরা। মা’র রুমটা সেই আগের মতই। বুকশেলফে ডাই করা বই। ছোট্ট বিছানায় কোনোমতে দুইজন শোওয়া যায়। মা’র বিশাল পোট্রেইটটা উলটো হয়ে ঝুলছে। বান্ধবীর এঁকে দেয়া। ছবির জন্যে নামায হবে না দেখে চৈতি উল্টে রেখেছিল। নীতি কতবার বলেছে ছবিটা নষ্ট করে ফেলতে, মা করেনি। মেঝেতে পা ছড়িয়ে বসে অনীমা আর চৈতি। নীতি মা’র সাথে বিছানায়। গয়নার রহস্যের পুরোটা মাকে বলে ওরা।
“উই আর স্টাক জেঠিমণি। একটা সল্যুশন দাও না।“
“ফরেনসিক টেস্ট করে এমন কারো কাছে যা। তোর জেঠার হেল্প নিচ্ছিস না কেন?” বাবার কথা বলতে একটুও মুখের রেখায় পরিবর্তন দেখতে পায় না চৈতি। মা’র এই চাপা স্বভাবটাই চৈতি পেয়েছে।

“আব্বুকে আইএমও তে পাচ্ছি না। এমনটা প্রায়ই হয়। নেটওয়ার্কের সমস্যা।“
“আর মাইমুনার কথা ভুলে গেছিস?”
“মাইমুনাপু কি হেল্প করতে পারবে?” নীতি অবাক হয়।
“পারার তো কথা। ও তো ঢাকা মেডিক্যালেও ফরেন্সিক টেস্ট করেছে কত! আর ওর ছোট্ট ল্যাবটায় তো একা একা কত কী করে! তোরা কথা বলে দেখ না!”

মাইমুনা ওদের মামাতো বোন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জেনেটিক্সে পড়ে এখন পরমাণু শক্তি কমিশনে গবেষণারত। বিয়ে করেনি এখনো। কালো বলেই কিনা আল্লাহ জানেন, বিয়ের কথাবার্তা আগানোর পরও থেমে যায় বারবার। আপুর যেন কিছুই যায় আসে না এতে, বাইরে থেকে এমনটাই মনে হয়। কাজ নিয়েই দিব্যি ভালো আছেন। আস্তে আস্তে একটু একটু করে যেন ইসলামিক জীবনের দিকেও ঝুঁকছেন। ইবাদত আর কাজ এই নিয়ে ভালোই আছেন তিনি। বাসায় ছোট একটা ল্যাব করেছেন। ছোট ল্যাব হলেও খুব সুন্দর করে গোছানো। যেই ঢুকবে তারই বিজ্ঞানের প্রতি ভালোবাসা জন্মাতে বাধ্য। নীতি তো ওই ল্যাবে ঢুকলেই নিজেকে বিজ্ঞানী মনে করে। এই ল্যাবের চশমা পরে তো ঐ হ্যান্ড গ্লাভস পরে টেস্টটিউব নাড়ে চাড়ে।

ফোন দিয়ে মাইমুনাকে সব জানালো চৈতি। মাইমুনার বাসা ভর্তি মেহমান, মা অসুস্থ। অফিসে ছুটি নিয়ে ঘরেই আছে। কিন্তু ঘরের কাজের ব্যস্ততায় ওদের আজ সময় দেয়া সম্ভব না। ওরা স্যাম্পলগুলো দিয়ে গেলে টেস্ট করে পরে জানাতে পারবে। চৈতি আগেই কী মনে করে ব্যাগের ভেতর স্যাম্পলগুলো এনেছিল, কাজে লেগে গেল। মাইমুনার বাসা নানাবাড়ি থেকে এক গলি পরে। দুপুরের আগেই তিন বোন পায়ে হেটে রওনা দিল। বাসায় এসে যুহরের সালাত আদায় করবে আর একসাথে খাবে নানীকে জানিয়ে গেল। নানা মামার বাসা পর্যন্ত এগিয়ে দিতে চাইলেও ওরা নিলো না। মাইমুনা ওদের জোর করে ভেতরে বসালো। পুদিনা পাতা দেয়া অসাধারণ স্বাদের লেবুর শরবত খাওয়ালো। বেশি কথা বলা সম্ভব না, মেহমান অনেক। তাই দ্রুত বিদায় নিলো তিন বোন। তবে আসার আগে অসুস্থ মামীকে সুস্থতার দুআ পড়ে দিতে ভুলেনি নীতি।

……………..

“চৈতি তোর ফোন” দাদীর ডাকে চৈতি দৌড় লাগালো। নিশ্চয়ই মাইমুনাপু। আপু প্রায়ই ফোন নঃ হারায়। দাদাবাড়ির টিএন্ডটি নঃ টাই কেবল তার মুখস্থ।

“আসসালামু আলাইকুম”
“ওয়ালাইকুম সালাম! তোদের জন্যে একটা দুঃসংবাদ আছে।“
“কি দুঃসংবাদ! আমরা ভালো মত ছাপ নিতে পারিনি?”
“আরে না! যা নিয়েছিস মা শা আল্লাহ ভালোই নিয়েছিস। যদিও আমাদের ফরেন্সিক পাউডার আর ব্রাশ এর চেয়ে অনেকগুণ বেটার রেজাল্ট দিবে। তাতে কি যায় আসে। সব ছাপই মোটামুটি স্পষ্ট…”
“তাহলে?” মুখের কথা কেড়ে নেয় চৈতি।
“তোরা যাদেরকে সন্দেহ করেছিস তাদের সাথে ছাপ মিলে না রে!”
“ভালো ফ্যাসাদ হলো তো!”
“শোন তোকে আমি কিছু বোনাস দেই। জেন্ডার,এইজ আর হাইট গেস করতে পেরেছি তোদের গয়নার বাক্সের ছাপগুলো থেকে।“
“বলো কি!”
“ আরে হ্যা ছাপ যদি বেশিদিন আগের না হয়, ১৫ দিনের কম হলে ছাপে এমিনো এসিডসহ আরো কিছু ক্যামিকেলের মিক্সচার থাকে। সেটা থেকে এ সবই বের করা পসিবল। তোদের কাহিনী তো বেশিদিনের না,তাইনা রে? হ্যান্ডপ্রিন্টগুলো তাই বলে।“

“আরে আপু তাত্তারি বলো! কি কি উদ্‌ঘাটন করলা?”

“হাহা! মিডল এইজড এর দুইজন মহিলার হাতের ছাপ আছে। দুইজনের মধ্যে একজনের হাইট চোখে পড়ার মত বেশি। কিছু ইরর থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু মোটা দাগে রেজাল্ট এটাই।এইবার তোরা গোয়েন্দাগিরি কর। আমি রাখলাম ফোন। চুলায় করলা ভাজি। না নাড়লে পুড়ে যেতে পারে!”
হাইট বেশি যে চাচীমণির এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নাই চৈতির। বুয়া খালার বয়স যথেষ্ট। বুয়া খালা,ইমন আংকেল দুজনই বাদ। বুক ধড়ফড় করে উত্তেজনায় চৈতির। রুমের দরজা লক করে তিন বোন বসে। লক করার প্রয়োজন ছিল না,ওদের রুমে সচরাচর কেউ ঢুকে না। ঢুকলেও নক করে ঢুকে। কিন্তু গোপন মিটিং বলে কথা! দুই বোনকে সব খুলে বলে চৈতি। অনীমার কাছে বিষয়টা স্পষ্ট হলেও নীতি বুঝে না।

“কে করলো তাহলে চুরি। চাচীমণি কি লুকিয়ে রেখেছে নিজের গয়না নিজেই।“

“ওই ছেমড়ি! আমার আম্মা বেকুব মহিলা হতে পারে। কিন্তু চালবাজ না মোটেই।“

“টিট টিট! এই তোরা থামবি!” চৈতি সম্ভাব্য ঝগড়াটা থামিয়ে দেয়।

“তুই আসলেও দুধ-ভাত! আমাদের শাকচুন্নিই আসল চুন্নি!” অনীমা পরিষ্কার করে।

“রেবা আন্টি!” চোখ বিষ্ফোরিত হয় নীতির।

“দেখ আমরা এখনো শিওর না।“ চৈতি সতর্ক করে।

“ আগেই বলছিলাম…! তখন ছাপটা নিয়ে রাখলে? পরশু ওদের ইন্দোনেশিয়া যাওয়ার ফ্লাইট। ইন্দোনেশিয়ার বালিতে যাবে ঘুরতে!” অনীমা হতাশ হয়ে বলে।
“কিন্তু আন্টির কিসের অভাব। আন্টি কেন নিবে?” নীতি মানতে পারে না।

“অভাবটা কিসের আমি প্রমাণ হলে পরে ব্যাখ্যা করব। চাচ্চুর সাথে আসিফ আংকেলের সম্পর্ক কেমন রে?”
“সম্পর্ক খুব ভালো। কিন্তু তুই কেন আগেই বলবি না। সাসপেন্স রাখবি কেন। আমরা কি ভাইসা আসছি।“
“একটু সাসপেন্স রাখতে হয় আরকী। চাচ্চু রাতে ফিরলে আমার তার সাথে গোপন মিটিং আছে।“ গা জ্বালানো একটা হাসি দেয় চৈতি।
নীতি জানে চেপে ধরেও কাজ হবে না কোনো। তাই রুবিক’স কিউবটা ঘুরাতে থাকে। কোনোদিনই মিলাতে পারেনাই এ পর্যন্ত। অনীমা রাগ প্রশমিত করতে মোবাইলে মুখ গোঁজে।

………………….

ফজরের সালাত শেষে বেল বাজে হঠাৎ। নীতি দেখে আসে আসিফ আংকেল এসেছেন হাতে শপিং ব্যাগসহ। অনীমা আপডেট জানায়, গয়না উদ্ধার হয়েছে। আংকেল চলে গেলে আবরার রিডিং রুমে ডেকে নেয় বিচ্ছুবাহিনীকে। রিডিং রুমটার চারদিকে দেয়াল আলমারি। থরে থরে বই সাজানো,ক্যামেরা, টেলিস্কোপও আছে কিছু। আবরার, ওয়াসিম দুই ভাইয়েরই পড়ার অভ্যাস। আবরার ভালোবাসে আকাশের তাঁরা দেখতে আর বড় ভাই ওয়াসিমের প্রিয় ভ্রমণ ও ফটোগ্রাফি।

“তোরা তো ফাটালি রে। তোর চাচী রাগে গজগজ করছে। এতোদিন মানুষ চিনেনি বলে।“
“ মানুষটাকে খারাপ বলতে পারবো কি আমরা? এটা তো তার মানসিক রোগ?” চৈতি বলে।
“চুরি করা আবার রোগ হয় কিভাবে? রোগ হলে আর চুরির অপরাধে হাত কাটার নিয়ম হয়?” অনীমা প্রতিবাদ করে।
“ তোর কথায় অবশ্য যুক্তি আছে। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সময়ে এক সম্ভ্রান্ত বংশের মহিলা এমন এর ওর থেকে জিনিস নিতো। পরে আর ফেরত দিতো না, অস্বীকারও করতো। তাকে কিন্তু রাসূলুল্লাহ হাত কাটা থেকে রেহাই দেননি। মহিলাটার কিন্তু প্রয়োজন ছিল না। অভাবের তাড়নায় চুরি করতো না। স্বভাবটাই খারাপ ছিল। কিন্তু সাইকোলজির টার্মে এটা এক ধরনের মানসিক রোগ। এটাকে বলে ক্লেপ্টোমেনিয়া। চুরির ইচ্ছা থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারে না পেশেন্ট। অর্থাৎ নফ্‌সের উপর কন্ট্রোল নাই।“

“কি বললে? ক্রিপ্টোমেনিয়া?” নীতি শব্দটা মুখস্থ করে নিতে চায়।

“নারে! সে আরেক জিনিস। ওটা আমাদের আছে। সাংকেতিক ভাষায় কথা চালানোর অভ্যাস। ‘র’ না ‘ল’ হবে। ক্লেপ্টোম্যানিয়া।“
“কিন্তু পাপা তুমি আংকেল কে কি বলেছিলে?” অনীমা জানতে চায়।
“ফেলুদা থুক্কু চৈতি যা শিখিয়ে দিয়েছিল। গয়না চুরির নিউজটা দিয়েছিলাম। আর সন্দেহ যে ক্লেপ্টোম্যানিয়া আছে এমন কাউকে করছি এটাই গল্প করেছিলাম। এত সহজে সব সমাধান হয়ে যাবে বুঝিনি। তোদের রেবা আন্টিও নাকি কান্নাকাটি করে সব বের করে দিয়েছে অল্প জেরাতেই। অনেকদিন ধরেই ট্রিটমেন্ট চলছে তার, আমরা যদিও জানতাম না। কিন্তু চৈতি তোর কেন ক্লেপ্টোম্যানিয়ার কথা মাথায় আসলো। শুধু সন্দেহ থেকে অনুমান করেছিস?”

“সন্দেহের তীর আসলে এক দিকেই যাচ্ছিল। মিডল এইজড মহিলা আর কেউ আসেনি এর মাঝে। ‘হাতের ছাপ পরীক্ষা’ সফল হয়েছে বলতে হয়। তার উপর সেদিন গোয়েন্দাগিরির কথা নীতি মুখ ফসকে বলে ফেলায় আন্টি একটু বেশিই রিএক্ট করেছে। আর গত কয়েক বছরে আমি, নীতি আর অনীমা আমাদের প্রিয় অনেক জিনিস হারিয়েছি। তাও আবার রেবা আন্টি প্রশংসা করার পরপরই। এতোদিন ভেবেছি আন্টির বদনজরে এসব হারিয়েছে।“

“কি বলিস! আমার ফুটবল মিনিয়েচার পাজলটা…!” অনীমাকে জেঠা খুব সুন্দর একটা ফুটবল দিয়েছিল। একদম হাতের মুঠোয় রাখা যায়। আসলে ওটা কোনো বল নয়, ওটা ছিল একটা পাজল। খুলে আবার লাগানো যেত।
“আমার অপটিক্যাল ইল্যুশনের বইটা কী তাইলে রেবা আন্টিই নিছে। এই চাচ্চু আসিফ আংকেলকে একটু বলো না প্লিজ।“ নীতি কাঁদো কাঁদো হয়ে যায়।

“নীতি চুপ। আব্বু আবার কিনে দিবে বলছে না?”
“গোয়েন্দারা তো ভালোই গোয়েন্দাগিরি করলা! তোমরা কি তিন গোয়েন্দা?” আবরার হাসে।
“ইশ আমরা কারো দেখাদেখি করবো কেন! তোমার কি মনে হয় না আমরা ইউনিক?” বেশ ভাব নিয়ে বলে অনীমা।
“এতো ভাব নিয়ো না অনীমাপি। জানো তো দানা পরিমাণ অহংকার থাকলেও…”

“ জান্নাতে যাওয়া যাবে না।“ কথা শেষ করে দেয় অনীমা। “ওকে ওকে। আমাদের ডাউন টু আর্থ হতে হবে। বিনয়ী গোয়েন্দা আমরা। আল্লাহ চেয়েছেন বলেই আমরা আমাদের প্রথম কেইসে সফল হলাম।“
“আলহামদু লিল্লাহ!” না মিলাতে চাইতেও একসাথে বলে উঠে তিনজন।
“এই শোনো! চাচীমণি কিন্তু আমাদের কাচ্চি বিরিয়ানী খাওয়াতে পারে এই উপলক্ষ্যে।তাইনা?” নীতি লোভী দৃষ্টিতে বলে। ওর সবচেয়ে প্রিয় খাবার কাচ্চি।
“ যা গিয়ে বল। আজ তোরা যা চাবি তাই হবে মনে হয়।“ চাচা হাসেন।

চাচা ওদের নাম দেয় টিম “প্রত্যুৎপন্নমতি।“ ওদের উপস্থিত বুদ্ধির জন্যেই এতোগুলো টাকার গয়না ফিরে পাওয়া গেলো কিনা।

সমাপ্ত

……………
উম্মে লিলি
২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮