ছেলের মা

‘ছেলের মা’ হওয়ার পর থেকে যা শুনছি:

– ‘wow finally! congratulations!’ (র‍্যান্ডম অমুসলিম, শ্বেতাংগ অপরিচিতা, যখন শুনলেন আমার দুই মেয়ের পরে ছেলে হলো)

– ‘খুব খুশি হইসি শুনি, আল্লাহ এত দিনে আশা পূরন করলো তোমাগো।’ (শ্রদ্ধাভাজন আত্মীয়া)

– ‘অ নে ক খুশি হইসি, ছেলে হলো!’

– ‘ছেলের মা’ হইসো! কংগ্র‍্যাচুলেশনস!’

– ‘ও এই জন্য সারপ্রাইজ! ছেলে বলে?!’ (আমি বাবুরা পেটে থাকা অবস্থায় জেন্ডার বলি না, তিনজনের কারো সময়ই বলি নি)

ইত্যাদি ইত্যাদি। মোটা দাগ থেকে শুরু করে সূক্ষ্ম!

যে সমাজে ‘ছেলে হওয়া’টাই একটা সুসংবাদ, জন্মের পর থেকে, কিছুই প্রমান করার আগেই ওকে বুঝানো হয় যে ওর দুনিয়াতে আসাটাই ওর বোনদের দুনিয়াতে আসার চাইতে বেশি মূল্যবান, সে সমাজে ছেলেগুলার এই অবস্থা হবে না তো কি হবে?

জন্ম নিয়েই যদি দুনিয়াকে ধন্য করা যায়, তাহলে আর কিছু কেন করতে হবে? কিছু না করেই যে সম্মান আর মর্যাদা পাওয়া যায়, কে চাইবে সেই সম্মানের জন্য কষ্ট করতে?

ইসলামে শুধু ছেলের মা বাবা হওয়াটা কোন সুসংবাদ না, কিন্তু শুধু মেয়ের মা বাবা হওয়াটাই একটা সুসংবাদ। আমাদের রাসুল (সা) কোন সুস্থ ছেলের বাবা হন নি, মেয়েদের বাবা ছিলেন তিনি। আল্লাহ রাসুল (সা) কে আমাদের চেয়ে বেশি ভালোবাসতেন। দুইটা মেয়েকে মিনিমাম স্ট্যান্ডার্ডের মানুষ করতে পারলেই রাসুলের কাছে এমন ভাবে জান্নাতে থাকা যাবে যেভাবে হাতের দুই আংগুল পাশাপাশি থাকে। ছেলেদের ব্যাপারে এমন কোন সুসংবাদ নেই। সুসংবাদ সব ছেলেরা হাই কোয়ালিটি মানুষ হওয়ার পরের জন্য রাখা।

আমার প্রেগনেন্সির সময় অনলাইন জগতে ‘কাওয়াম’ নিয়ে বেশ ডিবেট হচ্ছিল। আল্লাহ যে পুরুষদের মেয়েদের চেয়ে বেশি দায়িত্ব দিয়েছেন, সেসব নিয়ে।এক ব্লগার নিয়মিত পোস্ট করতেন উনার পরিচিত পুরুষেরা কিভাবে ‘কাওয়াম’ হয়ে উঠেছেন অনেক বেশি দায়িত্ব পালন করে, সেসব। তখন থেকে আল্লাহর কাছে ছেলেটার জন্য দোয়া করলে সাথে সাথে এটাও চেয়ে নিতাম যেন ছেলেটা সত্যিকারের কাওয়াম হতে পারে। কখনো ভেবে না বসে তার জন্ম হওয়াটাই একটা সুসংবাদ, জন্ম নিয়েই দুনিয়াকে ধন্য করে ফেলেছে, এখন ওর দায়িত্ব শেষ।

মনে হতো, আমাদের সমাজে, আমাদের সময়ে সত্যিকারের পুরুষ হওয়াটা কঠিন। সমাজ মেয়েদের হাত পা বেঁধে রাখে এক ভাবে। আর ছেলেদের পংগু করে রাখে আরেক ভাবে – জন্মের পর থেকে কিছু না করেই নিজেকে মূল্যবান ভাবার কুমন্ত্রনা দিয়ে।

বড়লোকের ছেলেমেয়েরা যেমন কিছু অর্জন করার আগেই সব পেয়ে যায়, তারপর অনেকেই বখে যায়, তেমন এক অবস্থা। মানুষ জেনে বুঝে নিজেদের ছেলেদের এই বিকলংগতা উপহার দেন। উনাদের বলতে ইচ্ছা হয়, ‘গুড লাক’।

আল্লাহ যেন আমার ছেলেটাকে সত্যিকারের কাওয়াম বানান।

আল্লাহ যেন আমার তিন ছেলেমেয়েতেই অনেক অনেক বারাকাহ দিয়ে দেন, ওদের এক একজনকে এক একটা বাতিঘর বানিয়ে দেন।

———————–
-ছেলের মা
সাদিয়া হোসাইন