প্যারেন্টিং ভাবনা

সাকিবা আহমেদ

ছোটজন জন্মের আগে অনেকেই অনেক কথা বলেছিল। দুই বাচ্চার গ্যাপ কম থাকলে একই ধরনের অভ্যাস হয়! বাচ্চার গ্যাপ যাই থাকুক এক এক বাচ্চা এক এক মেরুর মত হয়! বড়টা ছোট থাকতে আরেকটা হলে পালতে(!!) সুবিধা, ইত্যাদি ইত্যাদি নানা কথা।

আসলে সবাই বলে যার যার অভিজ্ঞতা থেকে। সবার সবটা নাও মিলতে পারে। এই জন্য আমি কারো কথা ধরে বসে থাকি নি। কারো জন্য যেটা সহজ আমার জন্য সেটা কঠিন হতে পারে আবার আমার জন্য যেটা সহজ অন্য কারো সেটা কঠিন লাগতে পারে।

তবে সহজ কঠিন যাই হোক বাচ্চা পালা বিশাল এক দায়িত্ব। বিশাল মানে আসলেই বিশাল। আমার কাছে তো সীমাহীন বিশাল মনে হয়!

অক্লান্ত পরিশ্রম আর অসীম ধৈর্য্যের প্রয়োজন। এই বিগড়ে গেল, এই ট্যান্ট্রাম উঠলো, এই ঘুম নাই, এই মাথা নষ্ট, এই খাওয়া বন্ধ, ওরেহ!!

এক মিনিট, যারা এতোটুকু পড়েই মনে মনে একবার বলে ফেলেছেন, “আমরা আর বাচ্চা পালি নাই!” তাদের জন্য বলছি- দিন দিন বাচ্চাদের আচার আচরনে ভয়ংকর রকমের পরিবর্তন আসছে। একটু খেয়াল করলেই হবে চারপাশে।

কড়া মা, নরম মা, রাগি মা, মাঝারি রাগি মা, গম্ভীর মা, হাসিখুশি মা, চালাক মা, বোকা মা যেই মা কেই জিজ্ঞেস করবেন শুনবেন বাচ্চা ইদানিং পালতে কি কষ্ট হয় সবার। এগুলা কে ম্যানেজ করা আর রোবট সাইন্স নিয়ে কাজ করা দুইটাতেই সেইম স্ট্রেস লাগার কথা! আমাদের সময়ের মত বাচ্চারা এখন আর লেফট রাইট বললেই লেফট রাইট করে না।

কনিষ্ঠজনের বয়স দুই মাস আর বড়জনের চার বছর।এখনি আমি মাঝে মাঝে দুই বাচ্চার কান্ড দেখে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকি…. এরা এমন কেন!? (ভাল-খারাপ উভয় দিক দিয়েই বলছি)

আমার কথায় কি মনে হয় জানি না তবে আমি মোটেও এমন মা হতে চাই না যে সব যায়গায় গিয়ে “আমার মেয়ে না এ+ ” অথবা “মেয়েটার মাথায় গোবর কিচ্ছু ঢুকে না” টাইপ কথা বলে বেড়াবো। আল্লাহ মাফ করুক, দুই ধরনের কথাই বাচ্চাকে নষ্ট করে দিতে যথেষ্ট।

যাই হোক, আমার কাছে তো মনে হয় প্যারেন্টিং এমন এক প্রক্রিয়া যেটা তে আমৃত্যু কাজ করে যেতে হবে। ভাবছি মেয়েদের বিয়ে দিলেই শেষ!? নাহ, তখন আরো বড় পরীক্ষা শুরু। কলিজার টুকরাকে বিয়ের পর চোখের পানি নাকের পানি ফেলতে দেখেও শক্ত পিলারের মত সাজতে হতে পারে।

সংসার নামক ফিল্ডে কাজ করার জন্য ছোট থেকে দেওয়া ট্রেনিং গুলার বাস্তবায়ন করার জন্য উৎসাহ দিয়ে যেতে হতে পারে, তাদের ভেতরেও প্যারেন্টিং এর বীজ বুনে দিতে হতে পারে। আর সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেই বিষয় এই যে চিংড়ি মাছের সাইজের দুই পিচ্চিকে নিজের সবটুকু দিয়ে পেলে বড় করলাম বিবাহ পরবর্তী সময়ে তাদের কে ম্যাচিউর্ড হতে দিতে হবে, সব বিষয়ে তখন নাক না গলালেও চলবে!

এই যে এক এক সময়ে প্যারেন্টিং এর এক এক রকম আচরণ এটা বিশাল কাজ মনে হয় আমার কাছে। এই বিশালতার পেছনে থাকে কতো চিন্তা, কতো ভাবনা, কতো কান্না আর কতো শত নির্ঘুম রাত!

————————