জীবন যখন যেমন

মানবজীবনকে আপনি ছকে বাঁধতে পারবেন না। যদিও সোসাইটি বা সোশাল মিডিয়া বারবার আপনাকে বলবে ছক মিলাও ছক মিলাও।

কিভাবে? 

আপনার বন্ধুদের সবার গ্রাজুয়েশন শেষ হচ্ছে। সবাই ছবি দিচ্ছে, স্ট্যাটাস দিচ্ছে এই নিয়ে। আপনি হয়ত কোন কারণে পড়াশোনাটা আর না আগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এখন এই সবার গ্রাজুয়েশন আপনাকে বারবার বলবে তুমি পিছিয়ে গেলে, পিছিয়ে গেলে।

আপনার ফ্রেন্ডদের সবার বিয়ে হচ্ছে। দুইদিন পর পর দাওয়াত। আপনার ব্যাটে বলে মিলছে না। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বাজছে, পিছিয়ে গেলে পিছিয়ে গেলে।

সবার বাচ্চা হচ্ছে। দুইদিন পর পর একেকজন বাচ্চার ছবি দিচ্ছে। পিছিয়ে গেলে পিছিয়ে গেলে।

কিন্তু এই যে এত বছর বয়সের মধ্যে গ্রাজুয়েশন, এত বছর বয়সে বিয়ে, বাচ্চা, এই বয়সটা কিভাবে আমরা আশা করি সবার কাছাকাছি হবে? বা এক হবে?

আমার যখন বিয়ে হয়েছে, তখন আমার অনেক ফ্রেন্ডরাই অবিবাহিত ছিল। কিন্তু এই আগে বিয়ে আমাকে জীবনে খুব এগিয়ে দিয়েছে এমনটা কিন্তু না। আমার যে ফ্রেন্ডটা বিয়ে নিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছিলো, আমি কিন্তু ঠিক তখনই আরেকটা পরীক্ষা দিচ্ছিলাম যেটা সে দিচ্ছিলো না। যেই ফ্রেন্ড আমার অনেক আগে পড়াশোনা শেষ করে ফেললো সেও কিন্তু এমন কিছু এগিয়ে যায়নি। যখন আমি একটা পরীক্ষায় ছিলাম, ঠিক তখনই আমি আরও অসংখ্য নিয়ামতে ডুবে ছিলাম আলহামদুলিল্লাহ। 

হ্যা, অনেকেই বলবেন যদি বাঁধা না থাকে তবে কাজ গুলো তাড়াতাড়ি শেষ করে নেয়াই ভালো। আপনি সময় পেলেন জীবনে। কিন্তু আমরা তো জানিনা কে কত বছর বাঁঁচবো বা কোন নিয়ামত টা কত দিন আমরা পাবো।

একজন মানুষ ১৬তে বিয়ে করে ৩০ এ এসে বৈধব্য বরণ করলো। আবার আরেকজন মানুষ ঠিক ৩০এই বিয়ে করলো। ঠিক ৩০বছর বয়সের সংজ্ঞা কি দুইজনের কাছে এক হবে? 

একজন বিয়ের পরপরই সন্তানের সুংবাদ পেল। ১০বছর পরে সেই সন্তান এক্সিডেন্টে মরে গেল। আরেকজন বিয়ের দশবছর পর সন্তানের সুসংবাদ পেল, যে সন্তান দীর্ঘায়ু পেল। দুইজনের কাছে কি ১০বছর সমান?

খুব নামীদামী ইউনিভার্সিটি থেকে অনেক ভালো সাব্জেক্টে পড়ালেখা করে অনেকেই তাদের লাইফের গোল পালটে ফেলেছেন। তারা যদি আগে তাদের এই পরিবর্তিত গোলের কথা ভাবতেন তাহলে কিন্তু কখনোই এত কষ্ট করে ভর্তিযুদ্ধে অবতীর্ণ হতেন না। আবার খুব সাধারণ কলেজ থেকে কোনমতে পাশ করে অর্ধলক্ষ টাকা বেতনের চাকুরি করছে এমন মানুষও দেখেছি।

দিনশেষে তাই হবে যা কদরে আছে। আপনি পরীক্ষা পেয়ে সন্তুষ্ট হয়ে জিতে নিতে পারেন রব্বের সন্তুষ্টি, অথবা বোকার মত কদর মানতে না চেয়ে অসন্তুষ্টি। এখানে সিদ্ধান্ত আপনার।

পরীক্ষা শেষ হয়ে যায়। আজকে যে পরীক্ষা দিচ্ছেন, ৫/১০বছর পর এটা থাকবেনা। শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু এই দুর্দিনে আপনি কি বলেছেন, কি করেছেন তাই লেখা হয়ে থাকবে।

আমাদের রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম কে যখন তাঁর ছোট্ট বাবুটার মৃত্যু সংবাদ দেওয়া হয়, তাঁর চোখ থেকে অশ্রু ঝরছিল । তিনি বলে ওঠেন, চোখ কাঁদবে, অন্তরটা কষ্ট পাবে। কিন্তু ঠোঁট তাই উচ্চারণ করবে যা আমার রব্বকে সন্তুষ্ট করে।*

আমাদের পরীক্ষা এবং নিয়ামতে পরিপূর্ণ দুই সময়েই যেন আমরা কৃতজ্ঞ থাকার তৌফিক পাই, এবং কৃতজ্ঞ একটি হৃদয় নিয়ে স্রষ্টার সাথে মিলিত হওয়ার সৌভাগ্য পাই। আমিন।

……………………………………….

*সহীহ বুখারী ১৩০৩

জীবন যখন যেমন
নূরুন আলা নূর
(২১ ফেব্রুয়ারী ২০১৮)