নিউজিল্যান্ড মসজিদ এটাক

৯/১১ এর ঘটনাটা যখন ঘটে তখন আমি খুব ছোট। আম্মি বাপ্পা নিজেদের রুমে আর আমি আমার রুমে খেলছি। খেলতে খেলতেই হঠাৎ টিভির দিকে চোখ গেলো। টিভিতে অদ্ভুত সব কি যেন দেখাচ্ছে। কত মানুষ রক্তাক্ত। কত মানুষ মৃত। কি কি সব বলছে।

কি ভেবে যেন বাপ্পাকে ডেকে আনলাম। বাপ্পা টিভিতে খবর দেখতো তো তাই হয়তো। তখন আম্মি বাপ্পার সেই আহত চেহারা আমার স্পষ্ট মনে আছে। আম্মি বাপ্পার বলা অনেক কথা আমার এখনো কানে ভাসে। এর পরে বিশ্বে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো নাই বা বললাম। কিন্তু একজন শিশু হিসেবে আমাকে আমার চারপাশের মানুষগুলো এটা বুঝিয়ে দিতে সফল হয়েছিলো যে “যত দোষ নন্দ ঘোষ” এর মত সব সন্ত্রাসী কাজ মুসলিমের নামেই চলে।

সৌদিতে বড় হয়েছি। তাই মুসলিম হিসেবে কখনও হীনমন্যতা আসেনি। আলহামদুলিল্লাহ্‌। কিন্তু এসব ঘটনাগুলো মনে দাগ কাটে। ক্ষত বিক্ষত করে দিত শিশু মনকেই। ঈদের দিন সাদ্দামের ফাঁসি। তখন আমি ক্লাস সিক্সে। ইরাক সিরিয়া আফগানিস্থান, ফিলিস্তিন। অদ্ভুত রকমের আবেগ কাজ করতো কেন এমন হবে? কেন আমরাই?

কেন যেন ধীরে ধীরে সময়ের সাথে চোখে সয়ে গিয়েছিলো সব। অনেকটা এমন “আমি তো নিরাপদ আছি। আমার আপনজনেরা নিরাপদ আছে। কোথায় কি হল তাতে আমার কি।” কিন্তু গতদিনের ঘটনায় আবার বুকের ভেতরটা নড়ে ওঠে।

সত্যিই কি আমি নিরাপদে আছে? আমার কাছের মানুষরা নিরাপদে আছে?

সেই পুরনো উত্তর, “না।”
তাই বলে মসজিদেও না?

এখন চারদিকে কত মত, কত কথা ডিসকাশন চলছে। কেউ বলে আমাদের দোষেই আমাদের এই অবস্থা। তো কেউ বলে এখন কে টেরোরিস্ট? আবার কেউ বলছে ওরা ৯/১১ এর পর মুসলিমদের সাথে যা করেছে আমরা তা করবো না। কারো মুখে আশার কথাও শোনা যাচ্ছে।

গত বছর “Punish a Muslim day” শিরোনামে একটা লিফলেট খুব ভাইরাল হয়েছিলো। কেন যেন এই এটাকের ভিডিওটা দেখে আমার সেই কথা মনে পড়ে গেলো।

কোথায় যেন পড়েছিলাম যে মুসলিমদের ডিহিউম্যানাইজ করলে নাকি ইসলামকে উঠিয়ে দেয়া যাবে। কথাটা ভুল। ১০০% ভুল। বরং যত ডিহিউম্যানাইজ করা হবে ইসলাম ততোটাই পাকা পোক্তভাবে আমাদের মনে গেঁড়ে বসে। কেন, বিলাল
(রাঃ) এর কথা সুমাইয়া (রাঃ) কথা কি আমরা জানি না?

আর এই ঘটনা থেকেও খেয়াল করলে দেখবো, রক্ত মাখা অবস্থাতেই সালাত আদায় করছে মানুষ। শেষ বাক্য শাহাদাহ্‌ উচ্চারণ করতে না পেরে আঙ্গুল দিয়েই ইশারা করে গেলেন এক জন। আর আমরা যারা বেঁচে আছি আমরা বুকের যন্ত্রণার দীর্ঘশ্বাস ফেলছি। না, এতো ভয়াবহ দৃশ্য দেখার যন্ত্রণা না। বা ডিহিউম্যানাইজ হবার যন্তণাও না। এই যন্ত্রণা শহীদ না হতে পারার যান্ত্রণা।

সত্যি বলতে কি, মাঝে মাঝে এই সব বোকা লোকদের কাজ দেখলে হাসিই পায়। আল্লাহ্‌ আমাদের সাথে আছেন তো কার সাধ্য আছে আমাদের কোনো ক্ষতি করবে? কি ক্ষতি করলো এই বন্দুকধারী (টেরোরিস্ট বলা যাবে না) আমাদের?

যাদের প্রাণ নিলো তারা শহীদ হয়ে গেলো। আর আমরা যারা বেঁচে আছি আমাদের ঈমান আরো মজবুত করে দিলো। আলহামদুলিল্লাহ্


নিউজিল্যান্ড মসজিদ এটাক
– নুসরাত জাহান মুন

(১৬/০৩/২০১৯)