ভালো থাকা না থাকা

ভাল থাকাটা আসলে নিজের ব্যাপার। মানুষ চাইলেই নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এ যুগের বিবাহিত নারীদের ভাল না থাকার মূল কারণ সম্ভবত একটাই, দাম্পত্য অশান্তি। কেউ কেউ আসলেও ভাল নেই। তবু পারিবারিক সাপোর্টের অভাবে অথবা সন্তানের দিক ভেবে মেনে নিয়েছেন। তারা শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য স্বামীকে ভালবেসে যান, দায়ীত্বপালন করতে থাকেন।

আবার কেউ কেউ সত্যিকার অর্থে খারাপ না থেকেও ভাবছেন তিনি ভাল নেই। তার পারিবারিক সাপোর্ট এতটাই বেশি যে, দাম্পত্য কলহে তার কোন দোষ গুণ আছে কি না বিচার না করে বরং তার পক্ষ নিয়ে তার স্বামীকেই দোষারোপ করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এমনও দেখা যাচ্ছে, মেয়ে নিজের পছন্দে স্বামী নির্বাচন করেছে অথচ তাকেই অসহ্য লাগছে এখন!

কেন?

সেদিন একটি ভিডিও দেখলাম। প্রেগন্যান্ট স্ত্রীর প্রতি তার স্বামীর কেয়ারনেস সম্পর্কিত ভিডিও। প্রেগন্যান্ট স্ত্রীর প্রতি প্রত্যেক স্বামীরই দায়ীত্বশীল হওয়া কর্তব্য। হাতে গোনা কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া অধিকাংশ পুরুষই তার প্রেগন্যান্ট স্ত্রীর প্রতি কম বেশি দায়ীত্বশীল এবং কেয়ারিং। যেকোন গাইনী ডাক্তারের চেম্বারে অপেক্ষারত প্রেগন্যান্ট স্ত্রীদের সাথে থাকা স্বামীকুল কে দেখে অন্তত এরকমই মনে হয়। ভিডিওটি এতবেশি আবেগঘন করে দেখানো হয়েছে যে, যারা মোটামুটি কেয়ার পায়, তারাও হয়ত আফসোস করে বসবে এমনটা না পাবার জন্য।

আসলে গল্প, উপন্যাস, নাটক সিনেমাতে প্রেম-দাম্পত্য এসব বিষয়কে এত বেশি আবেগঘন করে তুলে ধরা হয়, যা মানুষের অজান্তেই ব্রেইন ওয়াশ করে দেয়। মেয়েরা স্বপ্ন দেখে, যার সাথে তার বিয়ে হবে – সে তাকেই সবচেয়ে বেশি ভালবাসবে! সবসময় আগলে রাখবে! সে যা বলবে, স্বামী তাই করবে!

ইদানীং ফেসবুকে স্ত্রীর প্রতি স্বামীদের দায়ীত্ব, কর্তব্য, আচরণ ইত্যাদি কেমন হওয়া উচিৎ তা নিয়ে প্রচুর পোস্ট ভাইরাল হয়ে ঘুরে বেড়ায়। এসব দেখে মেয়েরা ভাবছে, আহা তাইতো! এমন হওয়া উচিৎ অথচ আমার হ্যাজবেন্ড তো এমন নয়! হয়ত দাম্পত্যকে শান্তিময় করার উদ্দেশ্যে নসিহা মূলক এসব পোস্ট পুরুষদের উদ্দেশ্যেই বের হয়। কিন্তু ফল হয় হিতে বিপরীত। হ্যাজবেন্ডের প্রতি স্ত্রীদের প্রত্যাশা এত বেশি বেড়ে যায় যে, নিজের পছন্দ করা বরকেও তখন আর ভাল লাগে না! যে দাম্পত্য বিয়ের পরও ভালই চলছিল, তা ক্রমশ অসহনীয় হয়ে উঠে।

তাই তো সামান্য বিষয়েই তর্কাতর্কি লেগে যায়। একসময় ভালবাসার স্থানে ইগো স্থান করে নেয়। দুদিন পর পর ঝগড়া হয় আর নিজ পরিবারের কাছে ইনিয়ে বিনিয়ে তুলে ধরে তার ভাল না থাকার কথা। মেয়েরা ভেবে দেখে না, দিনের পর দিন তার অশান্তির কথা শুনে তার আপনজনেরাও পেরেশানিতে ভুগছে যার ফল স্বরূপ যেকোন সময় ঘটতে পারে হার্ট এটাক, স্ট্রোকের মত ভয়ানক দুর্ঘটনা। অথবা যে আপনজনেরা তাকে উত্তম পরামর্শের বদলে বারংবার চলে আসতে বলছে, আজ বাদে কাল যখন এই আপনজনেরাই দুনিয়া ছেড়ে চলে যাবেন তখন তার দায়ীত্ব কে নিবে! এক সংসার ভাঙলেই যে তার থেকেও উত্তম সংসার কপালে জুটবে তার কি নিশ্চয়তা আছে? সন্তান থাকলে সে সন্তানের জীবনেই বা কেমন প্রভাব পরবে সেটা কি তারা ভাবে?

তার মানে এই নয় যে, মুখ বুঁজে নির্যাতন আর জুলুম মেনে নিয়ে পড়ে থাকতে হবে। কোনটা সত্যিকারের জুলুম আর কোনটা মনগড়া সেটাই মেয়েদের অনুধাবন করতে বলি। ইগো কেন্দ্রিক অথবা তুচ্ছাতিতুচ্ছ বিষয়ে হ্যাজবেন্ডের উপর অতিশয় রাগ অনুভূত হওয়া শয়তানের ওয়াসওয়াসা ছাড়া আর কিছু নয়।

ঝগড়া হলেই যে সঙ্গীটির থেকে দূরে সরে যাবার কথা ভাবে, সত্যিকার অর্থেই সে কতটা খারাপ?
~ সে কি পরকীয়ায় জড়িত?
~ সে কি পর্নগ্রাফিতে আসক্ত?
~ সে কি স্ত্রীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক রাখে না?
~ সে কি শারীরিক নির্যাতন করে?
~ স্ত্রীকে অশ্লীল গালি গালাজ করে?
~ সে কি ইসলাম পরিপন্থী?
~ সে কি সন্তানের অসুখ হলে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায় না? সন্তানের দরকারী জিনিসগুলো কিনে দেয় না?
~ সে কি সন্তানের সাথে খেলে না? সন্তান কে খাইয়ে দেয়া, গোসল করিয়ে দেয়া, ঘুম পারানো এসব কাজে কোনদিনও সাহায্য করে না?
~ তার সাথে এতদিনের দাম্পত্যে একটি ভাল স্মৃতিও কি নেই?

এসব প্রশ্নের উত্তর যদি ‘পজিটিভ’ হয়, তারপরেও সেই হ্যাজবেন্ড খারাপ হয় কোন অর্থে? একই আচরণগুলোই যদি কোন মেয়ের ভাই তার স্ত্রীর ক্ষেত্রে করে, তাহলেও মেয়েদের ঈর্ষাবোধ হতে থাকে। যেন তার ভাই স্ত্রীকে কতই না ভালবাসে! কী অদ্ভুত এই নারী সমাজ!

আজকাল হিজাব পড়া যেমন ট্রেন্ড হয়ে দাড়িয়েছে, বোধ করি নিজেদের প্র‍্যাকটিসিং বলাটাও ট্রেন্ড হয়ে গিয়েছে। তাই সম্ভবত নিজেকে প্র‍্যাকটিসিং দাবী করা মেয়েরাও স্বামীকে শ্রদ্ধা দিতে পারছে না। একজন আদর্শ স্ত্রীর কেমন হওয়া উচিৎ তা নিজেদের সাথে মিলিয়ে দেখছে না। স্বামীর প্রতি স্ত্রীর কী দায়ীত্ব কর্তব্য তা নিয়ে ভাবছে না। দু’ একদিন ঘটা করে কিছু রান্না করলেই স্বামীর প্রতি খুব কেয়ার হয়ে যায় কী! যেখানে স্বামী সন্তানের দায়ীত্বগুলো শত শত মেয়ে রোজই করে চলছে হাসি মুখে, সংসার কে ভালবেসে! সর্বোপরি নিজ দায়ীত্ব মনে করে।

দাম্পত্য আসলে এক পাক্ষিক বিষয় না। এখানে উভয়েরই উভয়কে বুঝতে হবে। পরস্পরের প্রতি পরস্পরের ভালো দিকগুলো বেশি বেশি হিসাব করতে হবে। হ্যাজবেন্ড কতটুক কী করল না ভেবে স্ত্রীই তার জন্য করার কথা ভাবতে পারে। জীবনের প্রাপ্ত নিয়ামতের কথা (সুস্থ সন্তান, জীবিত বাবা-মা, নিজের শারীরিক সুস্থতা ইত্যাদি) ভাবতে পারে। নিজের অবস্থানের চেয়েও খারাপ অবস্থানে থাকা মানুষদের কথা ভাবতে পারে। মৃত্যুকে স্মরণ করা, দুনিয়া কে ক্ষণস্থায়ী ভাবা মনের সব রকম অশান্তি দূর করে দেয়।

…………………….
ভালো থাকা না থাকা
নীল ফুল

এপ্রিল ২৪, ২০১৮ইং