ভ্যালেন্টাইনের বিষবৃক্ষ

বর্তমান সময়ে কথায় কথায় এবং দেখায় দেখায় ক্রাশ খাওয়া ছেলে মেয়েদের জন্য দুটি সত্য ঘটনা বর্ননা করছি।

নবী ইউসুফ আলাইহিস সালামের সৌন্দর্য কেমন ছিলো তা কিছুটা অনুমান করা যায় কুর’আনে বর্নিত সুরা ইউসুফ থেকে। মিশরে আজিজের স্ত্রী আয়োজিত ভোজ সভায় উপস্থিত সকল নারীরা কিভাবে নবী ইউসুফ আলাইহিস সালাম কে হেঁটে যেতে দেখে অন্যমনস্ক হয়ে ছুরি দিয়ে নিজেদের আঙ্গুল কেটে ফেলে, তার পরিস্কার বর্ণনা পাই আমরা পাই ৩০ ও ৩১ নং আয়াতে।

ইউসুফ আলাইহিস সালামের সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে যখন তাঁকে ব্যভিচারের জন্য আহবান জানানো হয় তখন তিনি (আঃ) আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’লার নিকট অসাধারণ একটি দুআ করেন ।

“ইউসুফ বললঃ হে পালনকর্তা তারা আমাকে যে কাজের দিকে আহবান করে, তার চাইতে আমি কারাগারই পছন্দ করি। যদি আপনি তাদের চক্রান্ত আমার উপর থেকে প্রতিহত না করেন, তবে আমি তাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ব এবং অজ্ঞদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাব।”
[ সুরা ইউসুফ, ৩২-৩৩ ]

ইউসুফ আলাইহিস সালাম তখন ছিলেন টগবগে যুবক। নবী হলেও তিনি মানবীয় চাহিদার উর্ধ্বে ছিলেন না। তবুও তিনি অন্যায় ভাবে নারী সঙ্গের চেয়ে কারাগার কে উত্তম মনে করলেন সুবহান আল্লাহ!!

নবী ঈসা আলাইহিস সালামের মাতা মারইয়াম আলাইহিস সালামের কথাও আমরা জানি, যিনি ছিলেন একজন সতী নারী। কুরআনে সুরা আত-তাহরীমে স্বয়ং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’লা তাঁর (আলাইহিস সালাম) সতীত্ব কে সুস্পষ্ট করে দেন।

“আর দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন এমরান-তনয়া মরিয়মের, যে তার সতীত্ব বজায় রেখেছিল। অতঃপর আমি তার মধ্যে আমার পক্ষ থেকে জীবন ফুঁকে দিয়েছিলাম এবং সে তার পালনকর্তার বানী ও কিতাবকে সত্যে পরিণত করেছিল। সে ছিল বিনয় প্রকাশকারীনীদের একজন “।
[ সুরা আত-তাহরীম, ১২]

মারইয়ম আলাইহিস সালামকেও আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’লা পরীক্ষা করেছেন। ফেরেশতা কে সুন্দর পুরুষ রুপে পাঠান তাঁর (আঃ) নিকট। মারইয়াম আলাইহিস সালাম মানুষ রুপী ফেরেশতা কে দেখে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন এবং আল্লাহকে ভয় করতে বলেন।

“অতঃপর তাদের থেকে নিজেকে আড়াল করার জন্যে সে পর্দা করলো। অতঃপর আমি তার কাছে আমার রূহ প্রেরণ করলাম, সে তার নিকট পুর্ণ মানবাকৃতিতে আত্মপ্রকাশ করল।

মারইয়াম বললঃ আমি তোমা হতে দয়াময়ের আশ্রয় প্রার্থনা করি, যদি তুমি আল্লাহভীরু হও।”
[ সুরা মারইয়াম, ১৭-১৮]

আসছে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস…

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’লা ভালোবাসার জন্য বিয়ের মত একটি হালাল পন্থা বলে দিয়েছেন ।

“আর এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সংগিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।”
[ সুরা আর-রুম, ২১]

‘ভালোবাসা দিবস’ নামকে এই দিবস কে কেন্দ্র করে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে হারাম ভাবে ভালোবাসাবাসিতে মেতে উঠে । এই দিনে প্রকাশ্যে, ঘটা করে বেশির ভাগ নারী-পুরুষ একে অপরকে ব্যভিচারের জন্য আহবান জানায় । তৈরী হয় অনেক গুলো হারাম ভাবে “কাছে আসার গল্প”। এই কাছের আসার গল্পগুলোর সমাপ্তি হয় ডাস্টবিনে, চিপা গলিতে কিংবা হাসপাতালে ফেলে আসা মানব শিশুর ভ্রুন দিয়ে।

হালাল রিলেশনশীপে (স্বামী-স্ত্রী) যারা আছেন তারাও পিছিয়ে থাকেন না এই দিনে। হালাল এই সম্পর্কগুলোও হারাম দিবসগুলো তে, অধিকতর হারাম উপায়ে উদযাপন করে পুলকিত বোধ করেন। অথচ ক্ষণিকের এই পুলকিত বোধগুলো জীবন থেকে কেড়ে নিচ্ছে অনেক কিছু। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ডাক্তারের আত্মহত্যা যেন তা মনে করিয়ে দিলো।

আমরা দুরে চলে যাচ্ছি, অনেক…. দুরে। আমাদের রাব্ব থেকে, যিনি আস-সালাম (শান্তি)। সেই সাথে তাই হারিয়ে ফেলছি জীবনের স্বস্তিগুলো।

এই জীবন যেন বড়ই জিল্লতের,
এই বেঁচে থাকা যেন বড়ই অসম্মানের …


ভ্যালেন্টাইনের বিষবৃক্ষ
– নুসরাত জাহান

(১৩/০২/২০১৯)