সখী তোরা যখন গ্র‍্যাজুয়েট

একটি সাদা স্বপ্নের গল্প শুনবি সখী? তবে শোন…

বড় হয়ে কী হবে? মুখে ডাক্তার বললেও তার সখ ছিল পাইলট হবার। যদিও মজার বিষয় হল তার হাইট ফোবিয়া ছিল! তাতে কী!? স্বপ্ন কোন ফোবিয়া কে মানে নাকি? স্বপ্ন ছিল আকাশ ছুঁবে, ছুট লাগাবে অদূর দূরে।

একটু বড় হতেই মনে হল নাহ! এর চেয়েও মজার কাজ আছে যে, বড় হয়ে টিচার হবে সে! অনেক অনেক অনেএএক ডাক্তার, পাইলট, ইঞ্জিনিয়ার তৈরি করবে! বস এর বস! এটাই বেস্ট!

এরপর আরেকটু বড় হওয়ার পর তার মনে হল, এতো খারাপ, এতো নকল, এতো পচা, এতো ঠকবাজ মানুষ গুলোকে দিয়ে আর চলে না হতে হবে সৎ ব্যবসায়ী! একটা উদ্যোগ নিতে হবে, সব ভাল থাকবে সেখানে! চোখ বন্ধ করে মানুষ যেন বিশ্বাস করতে পারে!

কিন্তু সব কথার শেষ কথা! ফিজিক্স এতো কঠিন কেন? ইয়ে মানে, হ্যাঁ! জ্যামিতির ঘোর প্যাঁচ, ফিজিক্সের ঘ্যাচ ম্যাচ, আর ত্রিকোণমিতির ট্যান কস থিটা পার করে এস এস সি কমপ্লিট করাটা এক অবিশ্বাস্য বিষয় মনে হতো যেন!
বায়োলজিকে ভালোবেসে, বীজগণিত কে কাছে টেনে কেমনে কেমনে উতরে গিয়েছিল সে নিজেও জানে না!

ভয়ংকর সেই পথ পারি দিয়ে কানে ধরা, আর না আর না। মাথায় যা ঢুকে না তাকে নিয়ে আর না!
ডাক্তার, পাইলট কিচ্ছু হতে চাই না! সুস্থ মানুষ হয়ে বেঁচে থাকতে চাই! সরন, তরন, দ্রুতি, গতির প্রেসারে নিজেকে জটলা চুলের পাগলী ছাড়া আর কোন স্বপ্নই যে চোখে ভাসতো না!

তার এইচ এস সি তে উঠেই পাগলা পাগলা অবস্থা হয়ে গেল নতুন বিষয়গুলো নিয়ে, একাউন্টিং! ম্যানেজমেন্ট! আহা যেন ইহাকেই খুজছিলাম এতোটা কাল! ফাইনাল একাউন্ট মিলে গেলে মনে হতো, জীবনের সব হিসাব এভাবেই চুটকিতে মিলিয়ে ফেলা গেলে মন্দ হতো না! খটাখট ক্যালকুলেটরে আওয়াজ তুলতে তুলতে যখন তার মাথার ভেতরও ঝড়ের গতিত হিসাব চলতো, মনে হতো নিজের একটা প্রতিষ্ঠান থাকলে মন্দ হয় না! যেখানে মানুষ গড়া হবে, যে মানুষগুলো সুদ, ঘুষ, ভেজাল, দুই নম্বরির নোংরা সিস্টেম থেকে মুক্ত থাকবে! ছড়িয়ে যাবে তারা চারিদিকে সাদা পোশাকে, সাদা মন নিয়ে। কিছু সাদা স্বপ্ন!! আহা!!

এরপর!? এরপর গল্পের ক্লাইম্যাক্স। একটা ছোট্ট সংসার, ছোট্ট ছানা এবং আরো কিছু নতুন ছোট ছোট স্বপ্নের বুনন। এর ভেতর কিভাবে কিভাবে হারিয়ে গেল সেই পুরাতন সাদা স্বপ্নগুলো!

সখী তোরা যখন অনার্স ফাইনাল নিয়ে তোড়জোড় করতি, সারা বছর না পড়ার বাহানা গুলোর সুন্দর ফিরিস্তি দিতি, সে তখন পরীর মতন মিষ্টি একটা সন্দেশের টুকরা কোলে নিয়ে ভাবতো! ৬ ঘন্টা এই সন্দেশ কার বর্গায় রেখে পরীক্ষাটা দিয়ে আসা যায়? আফসোস কেউ ছিল না! কেউ ছিল না! ভাংতে থাকে মন, ভাংতে থাকে সাদা স্বপ্নগুলো!

সখী তোরা যখন রেজাল্ট এর উল্লাসে মেতে উঠতি! স্ক্রলিং করে সকলের খুশি ঠিকি সে দেখে নিতো, হয়তো ঝাপসা হয়ে ওঠা স্ক্রিনটা সরিয়ে রেখে ছোট্ট পরীর হাত ধরে হাটি হাটি পা পা সেখানোটাই জীবনের বড় পাওয়া হিসেবে মেনে নিতো সে। সাদা স্বপ্নগুলো মনের আড়ালে উঁকি দিতো। মাঝে মাঝে হয়তো কুঁড়ে কুঁড়ে খেতো!

সখী তোরা যখন কালো কালো ক্যাপগুলো পরে ছবি দিস, প্রো পিক চেঞ্জ করিস। তার তখন সাদা স্বপ্নগুলো বলে উঠে, “কে বলেছে পারব না?, আল্লাহ্‌ চাইলে অসম্ভব ও সম্ভব হয়! শুধু চাইতে হবে, চাওয়ার মত করে! স্বপ্ন দেখতে হবে পূরণ করার নিয়ত নিয়ে!”

তো যাই হোক, চলতে চলতে তোরা কতটা পথ এগিয়ে গেলি! সে এগিয়েছে কিনা জানিস?

গ্রেজুয়েশনের টার্সাল লাগানো কালো ক্যাপ তার মাথায় শোভা না পেলেও তার সাদা স্বপ্নগুলোর পথচলা কিন্তু থেমে নেই, আলহামদুলিল্লাহ্‌! তোদের পরীক্ষার সিলেবাসে বুঁদ হয়ে থাকা সময়গুলোতে সে যেই ছোট্ট পাখির গুটি গুটি পায়ে পথচলার সম্বল ছিল সে এখন নিজ পায়ে হেঁটে মায়ের স্বপ্নের সাহায্যকারী হয়! পাশের মানুষটি অনেক ত্যাগ, অনেক শ্রম মেনে নিয়ে তাকে শুধু বলে, এগিয়ে যাও তুমি পারবে! নিজের সাথে প্রতিদিন প্রতি মুহূর্ত চলে তার প্ল্যানিং, কাউন্সেলিং এবং মোটিভেশনাল থেরাপি!

এভাবেই তার স্বপ্নের পথচলা শুরু হয়… সাদা স্বপ্নের!

সখী তোরা কোনদিন বুঝবি না তোদের গ্র‍্যাজুয়েশান ক্যাপ তার এগিয়ে যাওয়াকে কতোটা দৃঢ় করে।
আশা করি তোরাও কখনো স্বপ্ন দেখবি, নোংরা সিস্টেম টাকে ৩৬০ ডিগ্রি পালটে দেওয়ার স্বপ্ন! অসম্ভব বলিস না! তুই এক ডিগ্রি পালটা বাকিটা অন্য কেউ করে ফেলবে দেখিস! স্বপ্ন দেখ তোরাও!

সে সকল মায়েদের উৎসর্গ করা হল, যারা জীবনের নানা জটিলতায় গ্র‍্যাজুয়েশন শেষ করতে না পারলেও আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন নিয়ে ছুটে চলেছে প্রতি নিয়ত। যারা প্রতিদিন স্বপ্ন বুনে, সাদা স্বপ্ন। এবং সেই স্বপ্নের পানে এক পা এক পা করে এগিয়ে যাওয়ার সাহসিকতাও মনে পোষণ করেন।

সখী তোরা যখন গ্র‍্যাজুয়েট
– সাকিবা আহমেদ

(১৪/০৩/২০১৯)