সেই যাত্রা

ইসরা ও মি’রাজ হলো আল্লাহ্‌ রব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্য এক মুজিযা। এই যাত্রায় রসূল (সা) মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ্‌র আশ্চর্য কিছু নির্দশন প্রত্যক্ষ করেন। কুরআনে এই সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে।

“পবিত্র ও মহান সে সত্ত্বা যিনি তাঁর বান্দাকে সফর করিয়েছেন রাতের একাংশে মাসজিদুল হারাম থেকে মাসজিদুল আকসার দিকে, যার চতুস্পার্শকে তিনি করেছেন বরকতময়। যাতে তিনি তাকে দেখাতে পারেন তাঁর নিদর্শনসমূহ। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা সর্বদ্রষ্টা। [বনী ইসরাঈল:১]”

আল্লাহ্‌ আরও বলেনঃ “পুনরায় আর একবার সে তাকে সিদরাতুল মুনতাহার কাছে দেখেছে৷ যার সন্নিকটেই জান্নাতুল মা’ওয়া অবস্থিত৷ সে সময় সিদরাকে আচ্ছাদিত করছিলো এক আচ্ছাদনকারী জিনিস৷ দৃষ্টি ঝলসেও যায়নি কিংবা সীমা অতিক্রমও করেনি। সে তার রবের বড় বড় নিদর্শনসমূহ দেখেছে৷” [সূরা নাজমঃ ১৩-১৮]

ইসরা ও মি’রাজ আসলে দু’টো ভিন্ন নাম। ইসরা অর্থ হলো রাতের সফর যা মূলত মক্কা থেকে জেরুযালেম পর্যন্ত যাত্রাকে বোঝায়। আর মি’রাজ হলো উপরে আরোহন যা দিয়ে বোঝায় জেরুযালেম থেকে সপ্ত আসমান পেরিয়ে সিদরাতুল মুনতাহা পার হয়ে উপরের যাত্রা।

এই অসাধারণ যাত্রার কিছু উল্লেখযোগ্য পয়েন্ট শেয়ার করছিঃ

১) তায়েফের দুঃখভরা ঘটনার পর এই যাত্রা ছিলো প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা) এর জন্য এক বিরল সম্মান।

২) এই রাতে দ্বিতীয়বারের মতো রাসূল (সা) এর বক্ষ বিদীর্ন করে যমযমের পানি দিয়ে ধোয়া হয়।

৩) রাসূল (সা) আল বুরাক নামক এক প্রানীতে চড়ে বাইতুল আকসায় গিয়ে দুই রাকাত নামাজ পড়েন। সেখানে রাসূল (সা) অন্যান্য নবীদের ইমামতি করেন।

৪) এরপর রাসূল (সা) উপরের যাত্রায় এক এক আকাশে আদম(আ), ইয়াহিয়া ও ইসা(আ), ইউসূফ (আ), ইদ্রীস(আ), হারুন(আ), মুসা (আ), এবং ইবরাহীম(আ) এর সাথে সাক্ষাত করেন।

৫) ইবরাহীম(আ) তাঁর(সা) উম্মতকে সালাম জানান। সাথে আরও জানান জান্নাতের মাটি উর্বর। যখনই আমরা সুবহান্নাল, আলহামদুলিল্লাহ্‌, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার বলি একটা করে গাছ উত্থিত হয়।

৬) রাসূল(সা) উপরে উঠে সিদারাতুল মুনতাহা প্রত্যক্ষ করেন। দুনিয়া থেকে যা কিছু আসমানে যায় তা সিদরাতুল মুনাতাহায় গিয়ে পৌঁছায় আর আল্লাহ্‌র থেকে যা কিছু দুনিয়াতে প্রেরিত হয় তা এই সিদরাতুল মুনতাহার মাধ্যমে আসে।

৭) এই সিদরাতুল মুনতাহা থেকে চারটি নদী বয়ে চলেঃ নীল নদ ও ইউফ্রেটাস যা পৃথিবীতে বর্তমান; কাওসার ও সালসাবিল জান্নাতে বহমান। এই কাওসার থেকেই রাসূল(সা) তাঁর উম্মতকে পানি পান করাবেন।

৮) রাসূল (সা) জান্নাত জাহান্নাম প্রত্যক্ষ করেন। জাহান্নামের কিছু ভয়ানক শাস্তি এই যাত্রায় রাসূল(সা) প্রত্যক্ষ করেন বিশেষ করে এতিমের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ, গীবত ও সুদ খাওয়ার শাস্তির ভয়াবহতা।

৯) রাসূল (সা) আল্লাহ্‌র তিনটা মহা সৃষ্টি এই যাত্রায় প্রত্যক্ষ করেনঃ ১) সিদরাতুল মুনতাহা ২) বায়তুল মামুর ৩) জিবরীল (আ) কে তাঁর আসল রুপে দেখতে পান (উল্লেখ্য জিবরীল(আ)এর ৬০০টা ডানা, সুবহানাল্লাহ)

১০) এই যাত্রায় রাসূল(সা) কে তিনটি জিনিস দেওয়া হয়ঃ ১) পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ২) সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত এবং ৩) যদি তাঁর(সা) এর উম্মতের কেউ শিরক না করে আল্লাহ্‌র ইবাদত করে তবে তাঁকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে ও জান্নাত দান করা হবে।

প্রথমে আল্লাহ্ রাসূল(সা) ও তাঁর উম্মতের উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরয করে দিয়েছিলেন। এরপর ফেরার পথে মুসা আলাইহিস সালাম এর সাথে দেখা হলে তিনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সালাতের ব্যাপারে আল্লাহ্‌র কাছে কমানোর আবেদন করার পরামর্শ দিলেন। মুসা(আ) এর পরামর্শে রাসূল (সা) কয়েকবার গিয়ে শেষ পর্যন্ত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ নিয়ে দুনিয়াতে ফেরত আসেন।

শবে মি’রাজের আসল নামাজ হলো দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ। এছাড়া আর কোন স্পেশাল নামাজ বা ইবাদত নেই। যদি তাই থাকতো তাহলে কেন রাসূল(সা) বেঁচে থাকতে কখনও ইসরা ও মি’রাজ নিয়ে স্পেশাল কোন ইবাদত করেন নি?

ইসরা ও মি’রাজের এইসব ঘটনায় বিশ্বাস করার পাশাপাশি আমাদের অন্যতম দায়িত্ব হলো নামাজের ব্যাপারে আরও বেশী যত্নশীল হওয়া। এই সেই নামাজ যা রাসূল(সা) কে আল্লাহ্‌ নিজে ডেকে নিয়ে সম্মানের সাথে প্রদান করেছেন। এই সেই নামাজ শেষ বিচারের দিন যার হিসাব সবার আগে নেওয়া হবে। আমরা যেন এই ফরয নামাজ সুন্দর করে ওয়াক্ত মতো আদায় করি।

“হে আমার রব আমাকে নামায প্রতিষ্ঠাকারী করো এবং আমার বংশধরদের থেকেও (এমন লোকদের উঠাও যারা এ কাজ করবে)৷ পরওয়ারদিগার! আমার দোয়া কবুল করো [সূরা ইবরাহীমঃ৪০]”

…………….

সেই যাত্রা
– নাইমা উম্ম যাইনাব

(০৩/০৪/২০১৯)