অভিশপ্ত

সারা পৃথিবীতে এখন human rights আর civil rights এর নামে LGBT rights নিয়ে বেশ ভালোই মুভমেন্ট চলছে। United Nations এখন তাদের এই মুভমেন্ট কে সমর্থন করছে। আর এই মুভমেন্টের কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এখন সমকামীতা বৈধ। শুধু বৈধ না, কিছু কিছু দেশে এদের বিরুদ্ধে কথা বললে সেটা hate speech হিসাবে ধরা হবে, যা দণ্ডনীয় অপরাধ। ‘প্রচারেই প্রসার’ বলে একটা কথা আছে। বিভিন্ন ‘মুভি’ আর ‘ডেইলি সোপ’ দেখতে দেখতে আমরাও এখন খুব সহজভাবে এদের কার্যকলাপ মেনে নিচ্ছি। অথচ একটা সময়ে এটা ছিল ঘৃনিত ব্যাপার। বাংলাদেশেও এক ঈদের নাটকে এটাকে প্রোমোট করা হয়েছিল।

সমকামীদের ম্যাগাজিন বাংলাদেশের মত একটা মুসলিম দেশে প্রকাশ করার মানে হচ্ছে, এর প্র‍্যাকটিস দেশে বেশ ভালো ভাবেই হচ্ছে। আলহামদুলিল্লাহ্‌ যে, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে সমকামীতা বৈধ নয়। যদিও এই উপ- মহাদেশে মাত্র দু’টি দেশে সেটা বৈধ করা হয়েছে। সেটা হচ্ছে নেপালে এবং সম্প্রতি ভারতে। কিন্তু দিন যেভাবে গড়াচ্ছে , তাতে আল্লাহ্‌ না করুক, কবে আবার আমাদের দেশে তা বৈধ হয়ে যায় ! আল্লাহ্‌ মাফ কর। বছর কয়েক আগেও পহেলা বৈশাখের সময় মংগল শোভাযাত্রার পাশাপাশি সমকামীরা রঙধনুর রঙ মাখা পতাকা হাতে করে র‍্যালি বের করেছিল। এরপর প্রতিবাদের কারনে বের করতে আর পারেনি।

পৃথিবীতে বহু আগে থেকেই এর প্রসার ছিল। লুত আলাইহে ওয়া সাল্লামের সময় সর্বপ্রথম এর প্রচলন হয়। কুরআন থেকে তা জানা যায়। এছাড়া কামসুত্র, প্রাচীন ইরানের কবিতা, রোমান আর গ্রীকদের উপাখ্যান পড়লে সেই সময়ের এসব ব্যাপারে অনেক কিছুই জানা যায়। জাপানিজ ‘সামুরাই’ যোদ্ধাদের প্রায় সবাই সমকামীতায় লিপ্ত ছিল। রোমান সম্রাজ্যে রাজা ‘নিরো’ আর তার সময়ের কথা পড়লে জানতে পারবো তাদের নোংরামির কথা। এই উপমহাদেশের জমিদারদের ‘ঘেটুপুত্র’ রাখার কথা আমরা নজরুলের গান থেকেও জানতে পারি।

কেয়ামত ঘটার আগে কিছু লক্ষন দেখা যাবে এই পৃথিবীতে। তার একটি হচ্ছে এই সমকামীতার হার বেড়ে যাবে অনেক। এটা আল্লাহ্‌র আইনের বিরুদ্ধে চলা। সর্বক্ষণ তাদের উপর আল্লাহ্‌’র লানৎ বর্ষণ হয়। এই কাজকে আল্লাহ্‌ এতই অপছন্দ করেন যে লুত আলাইহে ওয়া সাল্লামের সময় পুরো জাতি যখন এই কাজে লিপ্ত ছিল, আল্লাহ্‌ রাগ হয়ে সেই জাতিকে উপরে উঠিয়ে উল্টিয়ে মাটির উপর আছড়ে ফেলে দিয়েছিলেন। যেটা এখন ‘ডেড সী’ নামে পরিচিত। এখনো কোন প্রাণী সেখানে বসবাস করতে পারেনি। একটা পোকা পর্যন্ত না। কুরআনে সমকামীদের ব্যাপারে বহু আয়াত আছে, হাদীসে বহু বক্তব্য আছে।

ইতিহাস খুঁজে দেখুন, পৃথিবীতে যেসব জায়গায় ভূমিকম্প, ভূমিধ্বস, সুনামির মত ইত্যাদি আসমানি আযাব এসে একেকটা সমাজ ধ্বংস হয়েছে, সেসব সমাজে এই ঘৃণিত ব্যাপারটা স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিল।

এইসব সমকামীরা যেহেতু নিজেরা মা-বাবা হতে পারবে না, কিন্তু মনের মাঝে মা-বাবা হওয়ার ইচ্ছা থাকে, তারা তখন দ্বারস্থ হয় ‘surrogate mother’ এর কাছে। অর্থাৎ একটা গুনাহ আরেকটা গুনাহর কাছে পৌছে দিচ্ছে। খেয়াল করলে দেখবেন, যেখানে সমকামী বেশী, সেখানে ‘surrogate mother’ এর সংখ্যা বেশী। যেমন এই উপমহাদেশে নেপাল ও ভারতে এদের দেখা যায় বেশী।

সমকামীদের মাঝে দেখা যাচ্ছে এইডস, সিফিলিস, গনোরিয়া, শ্যাংক্রয়েড ও অন্যান্য যৌনরোগ। কারো গায়ে ট্যাটু আকা থাকলে সেই ব্যক্তি যেমন রক্ত দিতে পারবেন না, তেমনি অনেক দেশে সমকামীরাও অন্যকে রক্ত দিতে পারে না। কারণ বেশিরভাগ সমকামীদের এইডস ও যৌনরোগ রোগ থাকে। তবে ইদানীং তারা আন্দোলন করছে যে তাদেরকে যেনো রক্ত দিতে দেওয়া হয়। এই আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে অনেকে তাদের দাবি মেনেও নিচ্ছে।

ইসলাম ধর্ম, খৃষ্টান ধর্ম, হিন্দু ও ইহুদী ধর্ম সহ কোন ধর্মই এই সমকামীতাকে সমর্থন করে না। যেহেতু এটা এখন সমাজে নরমাল হয়ে যাচ্ছে তাই নিজের ছেলে মেয়ের দিকে নজর দেওয়া উচিৎ। আমাদের বাবা- মায়েরা এসব ব্যাপারে আমাদের তেমন কিছুই বলেননি। কারণ পরিস্থিতি তেমন ছিল না। কিন্তু এখন লজ্জা করে বসে থাকলে চলবে না। নিজে সচেতন হয়ে বাচ্চাদের সচেতন করা খুবই জরুরী। অনেকেই জানেন না যে, দেশে এই ব্যাপারে প্রচুর সিক্রেট গ্রুপ আছে, যারা অন্যদের এই দিকে টেনে আনে।

বাচ্চাদের সবসময় নিজের কাছে রাখুন, সময় দিন। বন্ধুদের বাড়িতে বা অন্য কোন আত্মীয়ের বাড়িতে রাত্রিযাপন করতে না দেওয়াই ভালো, নিজের বাসাতেও আলাদা বিছানায় থাকার ব্যবস্থা করুন। তাদের পর্নোগ্রাফির হাত থেকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করুন, ফলে বিকৃত রুচিবোধ জন্মাবে না। অনেকেই নিজের ছেলেকে মেয়েদের মত সাজিয়ে রাখেন বা মেয়েকে ছেলেদের মত সাজিয়ে রাখেন, এটা কখনো করবেন না। তাদের কাছে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে যে এটা অপরাধ তার ব্যাখ্যা করুন, সমাজের বর্তমান পরিস্থিতির কথা তাদের সামনে তুলে ধরুন। এর ফলে যে রোগবালাই হয়, সেসব জানান।

বাচ্চারা অনেক কিছুই প্রকাশ করে না। কিন্তু তারা দেখে, শুনে, পর্যবেক্ষণ করে। তাদের মাথায় ন্যায় অন্যায়ের ব্যাপারটা ঢুকিয়ে দিলে একটা সময় সেটা তাদের মাথায় রয়ে যায়। পরবর্তিতে কোন কাজের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় সেটা তাদের জন্য সহায়ক হয়, অন্যায় করার চান্সটা কম হয়। আর সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে আল্লাহ্‌র সাহায্য কামনা করুন। আল্লাহ্‌ রক্ষা না করলে কিছুই করার নেই। লুত আলাইহে ওয়া সাল্লাম তো নিজেও উনার স্ত্রীকে রক্ষা করতে পারেননি।

কুরআনে বলা আছে, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করতে। অশ্লীলতাকে প্রচার ও প্রসার করাও নিষেধ করেছে। তাই এমন অভিশপ্ত কাজকে একজন মুসলিম হিসাবে আমি মেনে নিতে পারি না। সারা দুনিয়ার মানুষ কোন অন্যায়ের পক্ষে কাজ করলে সেই অন্যায়টা কখনোই ন্যায় হয়ে যাবে না। অনেক মুসলিম নিজে সমকামী না হলেও তাদের সমর্থন করে থাকেন। মুসলিম হিসাবে এটা সমর্থন করা যাবে না। সারা দুনিয়ার মানুষকে খুশী করে লাভ কি, যদি আল্লাহ্‌ই খুশী না হন।

একটা কথা মাথায় রাখা দরকার, মুসলিম মানে আল্লাহ্‌র কাছে নিজেকে সমর্পন করা। যদি সত্যি মুসলিম হই তাহলে আল্লাহ্‌র আইনকে, আল্লাহ্‌র নিয়মকে সমর্থন করতে হবে, মানতে হবে।

দু’আ করি আল্লাহ্‌ যেনো আমাদের সবাইকে সঠিক পথে রাখেন। আমীন।

অভিশপ্ত
তাহনিয়া ইসলাম খান।
৯ নভেম্বর ২০১৮