আদেশ ও নিষেধ

এই মুসলিম জাতি শুধু ভালো বল ভালো বল তত্ত্বে চলতে চলতে মন্দকে না বলারএকটা গুরুত্বপূর্ণ পারপাস আছে সেটাই ভুলে বসে আছে। সেই জাতিতে আমি নিজেও একজন গুনাহগার বান্দা৷ কেউ যদি হিজাবি কাউকে ছেলেপেলেদের সাথে মেলামেশা করতে দেখে, তখন তাকে বলা হয়না ইসলামে ফ্রি মিক্সিং নিষেধ- কেননা এতে যদি সেই ব্যক্তি মন খারাপ করে, judged ফীল করে।

এই সমস্যা থেকে উত্তরণের পথ আমার জানা নাই, কিন্তু আমাদের মন্দকে মন্দ বলতেই হবে, নয়তো তা সমাজে ভাইরাসের মত ছড়িয়ে পড়বে, যেমনটা ইতিমধ্যেই হয়েছে। আমরা একটা নোংরা অশ্লীল সমাজের মধ্যে এভাবে বসবাস করছি যেন নোংরা এক নর্দমা, মাছি ভনভন করে উড়ছে আর আশপাশে ভয়ানক গন্ধ- তাতেই আমাদের বেঁচে থাকার চেষ্টা। যদি শুরুতেই এই নর্দমা পরিস্কারের কাজ হাতে নিতাম, তবে এতদিনে এটা আর নর্দমা থাকতোনা।

পত্রিকা পড়া ছেড়েছি অনেক দিন, বছর তো হবেই। তো গতকাল পত্রিকা হাতে পেয়ে প্রথম পেইজেই বিনোদনের যে ছবি পেলাম (প্রথম পাতা বলে), তা দেখে হা হয়ে গেলাম। আমি অবশ্যই আমার আব্বুর সামনে এই পেপার হাতে নিয়ে পড়তে পারবোনা, আমার লজ্জা লাগবে।

যাইহোক, ভেতরে যা বিনোদনের জন্য রাখা ছিল, তা দেখার জন্য আমি আরো প্রস্তুত ছিলাম না। সুইমিং স্যুট পরা বাংলাদেশি মেয়েদের পুলে তোলা এত ওপেন ছবি? পত্রিকার দুটি পাতা জুড়ে??

আজকে নিউজ দেখলাম, একজন সনামধন্য বিদেশি পর্ণ স্টার করছেন বাংলা ছবিতে অভিনয়। বাহ দেশ বেশ এগিয়েই গেছে- আমার জানা ছিল না আর কি।

তো পত্রিকায় যখন এমন ছবি দেবেন, আর পর্ণস্টারদের প্রমোট করবেন- তখন ধর্ষক তৈরীর কারখানা তৈরী করেই ফেলেছেন বলাটা বারাবাড়ি হবেনা৷ সবাই পর্ণ দেখে না, কিন্তু যখন উন্মুক্ত আর সহজলভ্য হয়ে যায়- তখন আমি তুমি সে সবাই একবার হলেও চোখ বুলাবে। আর এসবের সাময়িক/ দীর্ঘমেয়াদি মাশুল হবে নিদেনপক্ষে শিশুরা।

এখন এমন অবস্থা হয়েছে যে যারা দ্বীন মেনে চলে তাদের এক্সট্রিমিস্ট ট্যাগ দেয়া হয়, এই ভয়ে অনেকেই মুখ খুলেন না। ব্যাস হয়ে গেল প্রতিরোধ আসার একটা রাস্তা বন্ধ। এবার যত ইচ্ছে নষ্টামি কর, বলার কেউ নেই।

কিন্তু আমাদের বলতে হবে। নিজেদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা ভেবে বলতে হবে। আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার জন্য বলতে হবে। যার জবাবদিহিতার ভয় নেই, সে চুপ থাক।

মনে রাখবেন ইসলাম ভালো বলতে বলে, মন্দকেও না বলে- সম্পূর্ণ ব্যালেন্সড একটা ধর্ম- এখানে কাটছাট করে আমরা এভাবেই সমাজটা পচিয়ে দিচ্ছি।

আদেশ ও নিষেধ
উম্ম হুরাইরা

………………..

কুরআনে আমাদেরকে বলা হয়েছে ‘খাইরা উম্মাহ’ অর্থাৎ সর্বোত্তম উম্মত” or ‘the best of mankind’। এর কারণগুলোও বর্ণিত আছে একই আয়াতে।
১। সৎকাজের নির্দেশ
২। অন্যায় কাজে বাধা
৩। আল্লাহর প্রতি ঈমান

১ নং টি মোটামোটি ভাবে করলেও ২ নং টিতে আমরা ভয়াবহভাবে পিছিয়ে। কিন্তএকটিকে ছাড়া অন্যটি অসম্পূর্ণ।

“তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির কল্যানের জন্যেই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দান করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে।” [সূরা আল ইমরান,৩ঃ ১১০]

‘অন্যায় কাজে বাধা’ পেলে আমরা নিজেরাই ইদানিং কেমন যেন react করে উঠি। এভাবে এটি ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে যার জন্য আমরাই সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।

আমিনা আফরোজ

অগাস্ট ৩০, ২০১৯ইং