একটু কথা একটা ক্লিক

– এই ম্যাসেজ এতজনকে ফরওয়ার্ড না করলে অমুক হ্যাকার আপনার একাউন্ট হ্যাক করে নিবে।

– অমুক দেশে দুইটা সূর্য দেখা গেছে…।

– আয়রন ক্যাপস্যুলে “লোহা” পাওয়া গেছে।

– অমুক ডাক্তার ভুল চিকিৎসা করে রোগী মেরে ফেলেছে।

এছাড়াও রমাদান আসার খবর যে আগে দিবে তার গুনাহ মাফ হবে; অমুক সেলেব্রিটি ইসলাম গ্রহণ করেছে অথবা মাছ, গাছ, পাথরে আল্লাহর নাম লেখা; রাসূলের (সাঃ) ব্যবহৃত জামা, জুতা; আমীন না বলে যাবেন না ইত্যাদি।

আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “কোন ব্যক্তির মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শুনে তাই বলে বেড়ায়।”
[মুসলিম]
রিয়াদুস সলিহীন – ১৫৪৭

এধরনের যে কোন সন্দেহজনক/বিভ্রান্তিকর পোস্ট ফরওয়ার্ড বা শেয়ার করার আগে যাচাই করে নেয়া উচিত। বেশি কিছু না – শুধু প্রথম শুব্দগুলো দিয়ে গুগল করলেই পেয়ে যাব যে এগুলো বানোয়াট কথা ছাড়া আর কিছুই না। যে পাঠিয়েছে তাকে সতর্ক করি, নিজেও শেয়ার করা থেকে বিরত থাকি।

……..

“আজকে ওই লোকের কথা শুনে থাবড়াইতে মন চাইসে! ভদ্রতার খাতিরে চুপ ছিলাম।”

“আমার শাশুড়ি সেইরকম দজ্জাল মহিলা। উঠতে বসতে কথা শোনায়।”

“আমার জামাই একটা হাতি। আমাকে একটুও সাপোর্ট করে না, সময় দেয় না। বাসায় থাকলে শুধু খাওয়া, ঘুম আর মোবাইল…”

“মেয়েটা এধরনের স্ট্যাটাস দিচ্ছে, নিশ্চয়ই ঝামেলা চলছে পরিবারে…”

আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন ভালো কথা বলে অন্যথায় চুপ থাকে।” [বুখারী,মুসলিম]

হাদিসটি ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেছেন। ইমাম নববী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, হাদিসটির বক্তব্য এ ব্যাপারে স্পষ্ট যে, কোন কথায় উপকার ও কল্যাণ নিহিত না থাকলে তা না বলাই উচিত। অর্থাৎ যেসব কথার মধ্যে কল্যাণ ও উপকার বিদ্যমান সেগুলো এ পর্যায়ভুক্ত। কিন্তু যদি কল্যাণের দিকটা সন্দেহপূর্ণ হয় তবে কথা না বলাই উত্তম।
[রিয়াদুস সলিহীন – ১৫১১]

শুধু তাই না, অনুমান করে কোন মন্তব্য করাও কিন্তু ঠিক না। কুরআনে আল্লাহ বলেন,

“হে মু’মিনগন! তোমরা অধিকাংশ অনুমান হতে দূরে থাক, কারণ অনুমান কোন কোন ক্ষেত্রে পাপ এবং তোমরা একে অপরের গোপনীয় বিষয় সন্ধান করোনা এবং একে অপরের পশ্চাতে নিন্দা করোনা। তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে চাইবে? বস্তুতঃ তোমরা তো একে ঘৃণ্যই মনে কর। তোমরা আল্লাহ তা’য়ালাকে ভয় কর, আল্লাহ তা’য়ালা তওবা কবূলকারী, পরম দয়ালু।”
[সূরা হুজুরাত:১২]

আমরা কোন অত্যাচারী মা, স্বামী বা কোন ডাক্তার সম্পর্কে লেখা পোস্ট পড়ে কমেন্টে পারলে তাকে শেষ করে দিই। অতি ভদ্র(!) মানুষেরও ভাষা নির্বাচনে হুশ থাকে না তখন। এমন কি হতে পারে না যে যার ব্যাপারে বলা হচ্ছে প্রকৃতপক্ষে সে দোষী ছিলই না?

কোন স্ট্যাটাস লেখার আগে, কোথাও মন্তব্য করার আগে চেক করে নিই যা বলছি তা আদৌ কারো কোন কাজে আসবে কি না। ছোট একটা বাক্য লিখলেও তা কোন কল্যান বয়ে আনবে নাকি শুধু শুধু গুনাহ খাতা ভারী করবে ভেবে নিই। 

আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছেনঃ “বান্দা যখন ভালো-মন্দ বিচার না করেই কোন কথা বলে, তখন তার কারণে সে নিজেকে জাহান্নামের এত গভীরে নিয়ে যায় যা পূর্ব ও পশ্চিমের দুরত্বের সমান।” 
[বুখারী,মুসলিম]

হাদিসটি ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেছেন। এই হাদিসে ‘তাবাইয়্যান’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে যার অর্থ ভালো না মন্দ তা চিন্তা করে দেখা।

[রিয়াদুস সলিহীন – ১৫১৪]

……………………….. 

আমাদের মেয়েদের একটা স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অতিরিক্ত কথা বলা। আমরা প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে মুখে বলার পাশাপাশি সোশাল নেটওয়ার্কিং-এও অনবরত লিখে যাই। আজ সারাদিন কি কি করলাম, কই গেলাম, কী খেলাম….এগুলো চেনা-অচেনা লোকজনকে জানিয়ে নিজের আর তাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করার দায়ভার কে নেবে? 

আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “আল্লাহর যিকর ছাড়া বেশি কথা বলো না। কেননা আল্লাহ তা’আলার যিকর বা স্মরণবিহীন বেশি কথাবার্তা মনকে পাষাণ করে দেয়। আর পাষাণ হৃদয় ব্যক্তি আল্লাহ থেকে সর্বাধিক দূরে।” 
[মুসলিম]
রিয়াদুস সলিহীন – ১৫১৮

…….

প্রায়ই দেখা যায় আমরা বিভিন্ন ব্যক্তিকে নিয়ে ট্রল করছি। স্বাস্থবান কালো মেয়ের ছবি দিয়ে বলছি এ কার বউ হবে। কেকা ফেরদৌসি হোক কী অনন্ত জলিল – কারো কোন ভুলকেই আমরা ছাড় দিচ্ছি না। যেন নিজেরা সব ভুলের ঊর্ধ্বে!

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “মু’মিন ব্যক্তি কখনো ঠাট্টা-বিদ্রুপকারী, অভিশাপকারী, অশ্লীলভাষী ও অসদচারী হতে পারে না।” [তিরমিযি]

ইমাম তিরমিযি হাদিসটি বর্ণনা করে বলেছেন, এটি হাসান হাদিস।
রিয়াদুস সলিহীন – ১৫৫৫

……..

অনেক সময় আমরা মন খারাপের সময়গুলোতে আবগের আতিশয্যে নিজেদের জীবন, চারপাশের মানুষ অথবা পারিপার্শ্বিক অবস্থার উপর অতিষ্ট হয়ে পোস্ট দিয়ে ফেলি। যদি আমার লেখা কল্যানকর কিছু বয়ে আনে তো আলহামদুলিল্লাহ্‌! না হলে চুপ থাকাই অধিক কল্যানকর।

আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “সত্যবাদী মুমিনের জন্য অত্যাধিক অভিসম্পাতকারী হওয়া শোভনীয় নয়।” [মুসলিম]
রিয়াদুস সলিহীন – ১৫৫২

উকবা ইবনে আমের (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহ রাসূল! নাজাতের উপায় কি? তিনি বললেনঃ তোমার জিহবাকে সংযত রাখ, তোমার ঘরকে প্রশস্ত কর* এবং তোমার অপরাধের জন্য কান্নাকাটি কর। [তিরমিযি]

* ঘরকে প্রশস্ত কর অর্থাৎ মেহমানদারি কর।

রিয়াদুস সলিহীন – ১৫২০

…..

আজকাল ব্যাঙেরছাতার মত গজিয়ে ওঠা নিউজ পোর্টালগুলোতে আকর্ষণীয় হেডিং এর আড়ালে বাকোয়াস সব খবর পাবলিশ করা হয়। ধোঁকায় পড়ে আমরা অনেকেই হুট করে শেয়ার দিয়ে ফেলি। ওসব লিংকে গেলে দেখা যায় ডানে-বামে-নিচে অশ্লীল সব খবর ছবি-ভিডিওসহ দেয়া থাকে। কখনো ভালো খবর থাকলেও প্রত্যেকটা পেইজে একটা না একটা নোংরা এড দেখা যায়। 

সতর্ক থাকি আমরা, যেন আমাদের পোস্ট করা কন্টেন্টের মাধ্যমে অন্য কারো চোখের যিনার কারণ না হই। আমি নিজে এড়িয়ে গেলেও যারা অশ্লীল ওসব লিংকে আমার মাধ্যমে ক্লিক করছে, তাদের গুনাহর ভাগীদার যেন আমি না হয়ে যাই!

আল্লাহ তা’আলা বলেন, “তোমরা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য কোন অশ্লীল কাজের নিকটবর্তী হয়ো না।” (সূরা-আন’আম, আয়াত-১৫১)

বর্তমানে ফেসবুক আমাদের অনেকের জীবনের অবিচ্ছেদ্য একটা অংশ। আমাদের বাস্তব জীবনের চাইতে ভার্চুয়াল জগতেই যেন বেশি বিচরণ। প্রত্যেক ব্যক্তির প্রতি মুহূর্তের হিসেব নেয়া হবে একদিন। সেদিন নীল-সাদার পাতায় লেখা কথাগুলি যেন আমাদের বিরুদ্ধে না সাক্ষ্য দেয়!

একটু কথা একটা ক্লিক
বিনতে আদাম
(১ ডিসেম্বর ২০১৭)