গীরাহবোধ

হাসব্যান্ড ওয়াইফের বিয়ের প্রথম প্রথম কয়েক বছর একে অন্যের প্রতি মারাত্মক possessiveness কাজ করে । তখন ওয়াইফ তার ছেলেবেলায় খেলতে খেলতে বেড়ে উঠা কাজিন ভাইটির সাথে কথা বলতে গেলেও হাসব্যান্ড আড় চোখে তাকায় অথবা ওয়াইফ মনে মনে রাগে ফুসতে থাকে যখন হাসব্যান্ড তার বিশ্ববিদ্যালয়ের বান্ধবীটির সাথে একেবারে নির্ভেজাল স্বচ্ছ টেক্সট আদান প্রদান করে । ইসলামে এ ব্যপারটিকে বলা হয় “ গীরাহবোধ”। এ গীরাহবোধ পরিমানমত স্বামী স্ত্রী উভয়ের জন্য উত্তম ।

দুঃখজনক ব্যপার হলো এ গীরাহবোধ বিয়ের কয়েক বছর পর উধাও হয়ে যায় এবং সেটা পুরুষের বেলায় খুব বেশি পরিমানে হতে দেখেছি। স্ত্রী বাইরে কাজ করছে, ছেলে কলিগের সাথে অফিসের কাজে এখানে সেখানে যাচ্ছে, এডাল্ট কাজিন ভাইদের সাথে পাশাপাশি বসে কিংবা কাঁধে হাত দিয়ে ছবি তুলছে, অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের সাথে রিইউনিওনের নামে এখানে সেখানে আড্ডা ঘুরতে যাওয়া সব করছে এমনকি ফেইসবুকে স্ত্রীর ছবি তে স্বামীর বন্ধু বা চেনাজানা কেউ এসে “ভাবী কে অনেক নাইস লাগছে “ বলে কমেন্ট করে গেলেও ক্যাবলা স্বামী গদগদ হয়ে “ থ্যাংকস “ লিখে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে !!!

এসব স্বামীদেরকে যদি তাদের পূর্বের পসেসিভনেসের ব্যপারে জিজ্ঞাসা করা হয় তখন বলে বসেন স্ত্রীর ব্যপারে তার পূর্ণ আস্থা তৈরী হয়েছে, তিনি জানেন তার স্ত্রী স্বচ্ছ মনের মানুষ আর তাছাড়া তিনি নারী স্বাধীনতায় বিশ্বাসী সুতরাং স্ত্রীর ব্যক্তিগত স্বাধীনতায় তিনি হস্তক্ষেপ করা পছন্দ করেননা।

আল্লাহর মনোনীত দ্বীনে সব বিধানগুলো যে মারাত্মক লজিক্যাল এটা নিজের ব্যক্তিজীবনের সুখ শান্তির দিকে তাকালে পানির মত পরিষ্কার হয়ে যাবে । একজন পুরুষের যখন স্ত্রীর ব্যপারে গীরাহবোধ কমে যায় তখন বুঝে নিতে হবে স্বামী তার স্ত্রীর ব্যপারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।

আপনি কেন আপনার দামী জিনিসপত্র ব্যাংকের লকারে রেখে দেন কারণ আপনি তা হারাবার বা ক্ষতিগ্রস্থ হবার ভয় করেন অথচ এই আপনি আপনার স্ত্রীর বেলায় এসে মারাত্মক উদাসীন হয়ে পড়েন । আপনি কেন আপনার স্ত্রীকে অন্য নন মাহরাম পুরুষের কাছে উন্মুক্ত করে দেওয়ার ব্যপারে ভয় করেন না , তখন কেন আপনার মনে হয়না যে আপনার স্ত্রী আপনার সন্তানের মা তার সম্মান আপনার জীবনে কতটা গুরুত্ব বহন করে।

গীরাহ বিহীন এইসব পুরুষদের কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘ দাইয়ুস ‘ বলে অভিহিত করেছেন । তিনি (সাঃ) বলেছেন, “ তিন ব্যক্তির জন্যে আল্লাহ তা’আলা জান্নাত হারাম করেছেনঃ
-যে ব্যক্তি মদ বা নেশা জাতীয় জিনিস তৈরী করে ,
-যে সন্তান পিতা মাতার সাথে নাফরমানি করে এবং
-ঐ চরিত্রহীন ব্যক্তি (দাইয়ুস)যে নিজ স্ত্রী কে অশ্লীলতার ও ব্যভিচার করতে সুযোগ দেয়।
[মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং ৫৮৩৯]

ইমাম যাহাবী রহ. বলেছেন, ‘দাইয়ূস’ সে ব্যক্তি, যে তার স্ত্রীর ফাহেশা কাজ সম্পর্কে অবগত। কিন্তু তার প্রতি ভালোবাসার কারণে এ ব্যাপারে সে উদাসীন থাকে। অথবা তার উপর তার স্ত্রীর বৃহৎ ঋণ বা মোহরানার ভয়ে কিংবা ছোট ছেলেমেয়েদের কারণে সে স্ত্রীকে কিছুই বলে না এবং যার আত্ম-সম্মানবোধ বলতে কিছুই নেই’। (যাহাবী, কিতাবুল কাবায়ের- ১/৫০)

সমাজে পরকীয়া, ব্যভিচার -এইসব মহামারি আকারে রুপ নিচ্ছে। স্বামী স্ত্রী এক ছাদের নিচে থেকেও একে অন্যের থেকে মানসিকভাবে দুরে চলে যাচ্ছে। স্বামী তার দৃষ্টির হেফাজত না করে অন্য নারীর প্রতি আকর্ষণ অনুভব করছে আর স্ত্রী ঝু্ঁকে পড়ছে অন্য পুরুষের প্রতি।

একজন বুদ্ধিমান নারী কখনই স্বামী হিসেবে গীরাহ বিহীন (আত্মসম্মানহীন) কোন পুরুষ কে পেতে চাইবেনা যদি না সে নিজেও ব্যভিচারিনি হয়। স্ত্রী শুধু মাত্র শারীরিক কর্ম দ্বারা ব্যভিচারিনি হয় তা নয় বরং নিজে বেপর্দা চলে অন্য পুরুষের দৃষ্টি নন্দন হবার মাধ্যমেও সে ব্যভিচারিনি হতে পারে।

শেষ করছি কুরআনের একটি আয়াত দিয়ে । আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’লা বলেন

“ দুশ্চরিত্রা নারীকূল দুশ্চরিত্র পুরুষকুলের জন্যে এবং দুশ্চরিত্র পুরুষকুল দুশ্চরিত্রা নারীকুলের জন্যে। সচ্চরিত্রা নারীকুল সচ্চরিত্র পুরুষকুলের জন্যে এবং সচ্চরিত্র পুরুষকুল সচ্চরিত্রা নারীকুলের জন্যে। তাদের সম্পর্কে লোকে যা বলে, তার সাথে তারা সম্পর্কহীন। তাদের জন্যে আছে ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকা।”
[ সুরা নূর, ২৬ ]

আমরা সবাই যার যার অবস্থান থেকে পরিচ্ছন্ন থাকার চেষ্টা করি, দৃষ্টির হেফাজত করি এবং আল্লাহ কে ভয় করে তাঁর মনোনীত বিধানগুলো কে সর্বোচ্চ ভাবে পালন করার চেষ্টা করি । আল্লাহপাক তো ওয়াদা করেছেন যে সৎ চরিত্র ও সৎ চরিত্রার জন্য আছে ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকা।

দুনিয়া ও আখিরাতে আপনার আর কিছুর প্রয়োজন আছে কি ?

—————————-