ডোন্ট জাজ মেহ

কেউ যদি আমার ভুল আড়ালে শুধরে দেয়ার চেষ্টা করে সেটা নাসীহা। যদিও আমার ভুলের পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। হতে পারে সেটা ভুল না,কিন্তু যিনি মেনশন করছেন তিনি হয়ত ভুলভাবে সিচুয়েশন ইন্টারপ্রেট করেছেন। এটাকে ইন্টারপ্রিটেশনের মিসটেক বলা চলে, জাজিং বলা চলে না। এটাকে যদি আমি জাজিং বলে বসি তাহলে আমি মূর্খ, আর নাসীহায় যদি আমার গাত্র দাহ শুরু হয় তাহলে আমি অহংকারী। 

আমার কি নিজের কোনদিন কাউকে বুঝতে ভুল হয় নি? তাহলে অন্য কেউ ভুল করলে এমন কেন করি আমরা? এভাবে চলতে থাকলে আর মন্দ কাজের নিষেধ কমতে কমতে তলানিতে ঠেকবে একদম।

আমরা কি উমারের(রা) ওই ঘটনাটা ভুলে গেছি যে, উনি একদিন এক কাপলকে রাস্তায় দেখে ছড়ি দিয়ে হিট করেছিলেন, পরে যখন জানতে পেরেছেন তারা বিবাহিত কাপল এবং মুসাফির তখন নামার ক্ষমা চেয়েছেন। আমাদের যুগে উনি থাকলে আমরা তো বোধয় উমারকে(রা) বলে বসতাম,

“ডোন্ট জাজ মেহ।”

আমরা ভুলে যাই যে মন্দ কাজে নিষেধ একটা গুরুত্বপূর্ন বিষয়। যেমনটা ভালো কাজের আদেশ করা। কেউ আমার মন্দ দেখলে বা আমি কারও মন্দ দেখলে অবশ্যই বলা উচিৎ। হতে পারি আমার দেখতে ভুল হচ্ছে। হতে পার তার দেখতে ভুল হচ্ছে। যখন নাসীহা দিতে আসবে তখন হাসিমুখে বললেই হয় যে, এটা তো আসলে এরকম না যেরকম টা আপনি ভাবছেন আসলে এটা ওরকম। ব্যাস খতম। না, আমরা এই জিনিসটাকে চুইংগামের মত টানব। আমার জীবনে হ্যান হইসে ত্যান হইসে, আমি এই করসি সেই করসি, মরতে ধরসি আর উমুকে বলে এই কথা। অথচ দেখেন উমুক এসব জানেই না, আর কথাটাও হয়তো ইনবক্সেই বলেছে বার আলাদা করে ডেকে বলেছে। সেটা সেখানেই সমাধান না করে বিশ্রী রকম এনালিসিস চলে। যেন আমরা পার্ফেক্ট, আমাদের কোন ভুল নাই। আমরা নিজেরা কোনদিন ভুল করিনি।

আজকে এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে যে মুখ খোলা রেখে কেউ মেইক আপ করলে আমরা তাকে নাসীহা দিতে ভয় পাই। কারণ সে তার মেকাপ করা চেহারাটাকে জাস্টিফাই করবে এই বলে “ডোন্ট জাজ মেহ”/ নাসীহা কারী একজন”হারাম পুলিশ”

কেউ পোস্ট দিচ্ছে যে লিসেনিং টু উমুক মিউজিক বা ওয়াচিং উমুক মুভি সেখানেও কিছু বলা যায় না। বললেই শুনতে হবে “এহ তোমার বাপ এই করসে, তোমার মা এই করসে, তুমি কয়দিন আগে কি করতা, আর আসছে আমাকে জাজ করতে, নো ওয়ান ক্যান জাজ মেহ। অনলি আল্লাহ ক্যান”

এন্ড দ্য লিস্ট গোজ অন। মানে অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে প্রকাশ্যে কেউ ইসলাম বিরোধী কাজ করছে আর বাকি মুসলিমরা তাকে সেটা শুধরে দিতেও ভয় পাচ্ছে এই “ডোন্ট জাজ মেহ” কালচারের কারনে।

আচ্ছা একটু হাম্বল হওয়াটা কি খুব কঠিন? নিজের ফল্ট স্বীকার করাটা কি খুব দুঃসাধ্য কিছু? আমার যে ভুল ধরে দেয় সে যে নিয়তেই ধরুক না কেন, আমার কি উচিৎ না যে, আমার কাছে একটা রিমাইন্ডার আসছে জাহান্নাম থেকে নিজেকে একটু করে সরে আনানোর সেটা আমি একটু আমলে নেই?তা না করে উল্টো নিজেকে পার্ফেক্ট দেখানোর চেষ্টা। কি অদ্ভুত তাইনা?

ডোন্ট জাজ মেহ
শাবনাজ রাফনী