নতুন মায়েদের ইবাদত

নতুন মায়েদের একটা অভিযোগ থাকে সাধারণত, “আপু, কোন ইবাদত করতে পারিনা!”

নফল ইবাদতের কথায় পরে আসি, অনেক বোন আছে নতুন নতুন মা হওয়ার পরে সলাতে অমনোযোগী হয়ে যান। বা সলাতে দাঁড়ালে বাচ্চা কাঁদলে কেউ তাকে থামানোর নেই ভেবে সলাত ছেড়ে দেন। প্রথমত, আমাদের রসুলুল্লাহ ছোট শিশু কোলে নিয়ে সলাত আদায় করেছেন। সিজদা আর রুকুতে যাওয়ার সময় তাকে নামিয়ে দিতেন আর বাকি সময় কোলে রাখতেন। আপনিও চাইলে বাচ্চাকে কোলে নিয়েই সলাত আদায় করতে পারেন। আর দ্বিতীয়ত, পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ সলাত পড়া ফরজ। হাশরের ময়দানে আমরা কি এই অযুহাত দিতে পারবো বাচ্চা কাঁদতো বলে সলাত পড়িনি? সেদিন বোন আপনার হিসাব আপনাকেই দিতে হবে। আর কেউ দিবে না।

এবার দেখা যাক মায়েদের জন্য কি ইবাদত করা খুব সহজ।

তবে তার আগে একটা কথা বলে রাখি, অনেক বোন নিচে বলা আমলগুলোর চেয়েও বেশি ইবাদত করেন হয়ত। আর কেউ কেউ হয়ত একটা আমল করতেই হিমশিম খেয়ে যাবেন। আমাদের আমলগুলো হাশরের ময়দানে ওজন করা হবে। গোণা হবেনা। আল্লাহ সব দেখছেন। কে কোন পরিস্থিতিতে, কোন আমল করেছে, কি কি করার ইচ্ছা পোষণ করেও বাস্তবায়ন করতে পারেনি তাও তিনি জানেন। ইখলাসহীন হাজার আমল ধুলায় মিশে যাবে আর শুদ্ধ নিয়তে করা দুই রাকাত সলাতের ওজন অনেক হবে।

ভালো কাজ করে আল্লাহ কে সন্তুষ্ট রাখার ইচ্ছা রাখাটাও ইবাদত। কিছু করতে না পারলেও নিয়ত রাখুন ভালো কাজ করার।

সন্তান প্রতিপালন কাজটাই একটা নিয়ামত। আপনি একজন মানুষকে বড় করছেন যে ভবিষ্যতে মুসলিম উম্মাহর গুরুত্বপূর্ণ একজন সদস্য হবেন। তার সামনে ভালো উদাহরণ রাখুন, সে আপনাকে দেখে যাই শিখবে তাই সাদকায়ে জারিয়া হিসেবে কাজে আসবে ইন শা আল্লাহ।

যখন আপনি কোন কাজ আল্লাহ কে খুশি করার জন্য করবেন তখন সেগুলো জন্য ভালো প্রতিদান পাওয়ার আশা রাখুন। ইন শা আল্লাহ বাচ্চাকে খাওয়ানো, গোসল করানো, ঘুম পাড়ানো, রাত জেগে তার যত্ন নেওয়ার উত্তম প্রতিদান দিবেন আমাদের মালিক। কারণ কাজগুলো তাঁর সন্তুষ্টির জন্য করা।

সুবহানআল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এবং আরো অনেক সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত যিকির আপনি নির্দ্বিধায় করতে পারেন টয়লেট বাদে যেকোন স্থানে। পিরিয়ডের সময়েও। ওযু লাগবে না, মাথায় কাপড় দিতে হবেনা।

সুরাহ ফাতিহা, ইখলাস, নাস ইত্যাদি ছোট সুরাহগুলো মুখস্ত তিলাওয়াত করতে পারেন।

কুরআন শুনতে পারেন। মোবাইলে আপনার পছন্দের ক্বারীর রিসাইটেশন ছেড়ে তিলাওয়াত শুনতে থাকুন। এক সুরাহ বারবার শুনে মুখস্থ হয়ে যাবে ইন শা আল্লাহ।

কিছু এপ আছে(আই কুরআন, কুরআন ফর এন্ড্রয়েড) যাতে একই সুরার একই বা একাধিক আয়াত রিপিট করে। এইগুলোর সাহায্যে রোজ এক আয়াত মুখস্থ করা যায়।

আল্লাহর কাছে সেই আমল অধিক পছন্দনীয় যা নিয়মিত করা হয়। আপনি হয়ত ছোট বাচ্চা নিয়ে একঘন্টা কুরআন পড়তে পারবেনা। কিন্তু প্রতিদিন দুই/পাঁচ/দশ আয়াত তো পড়ার টার্গেট করুন আমল ছোট হোক। নিয়মিত করুন।

দৈনন্দিন কাজে যে দুয়াগুলো আছে যেমন: বাথরুমে ঢোকার দুয়া, ঘুমাতে যাবার দুয়া ইত্যাদি দুয়াগুলো পড়ার অভ্যাস করুন। এতে আপনার দৈনন্দিন জীবনের সাধারণ কাজও ইবাদতে পরিণত হবে, আবার আপনার থেকে আপনার সন্তান শিখলে সে যতদিন বেঁচে থাকবে এবং এই আমল করবে এবং যাকে যাকে এই আমল শিখাবে সবার ভালো কাজের প্রতিদান আপনি পাবেন ইন শা আল্লাহ।

আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করতে বলেছেন আমাদের রসুলুল্লাহ। শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সপ্তাহে বা মাসে একদিন একজন আত্মীয়ের সাথে ফোনে কথা বলতে পারেন। তার খোঁজ খবর নিতে পারেন, তাঁকে দ্বীনের দাওয়াত দিতে পারেন। তবে এই আত্মীয়তা রক্ষায় রক্তের সম্পর্ক এবং মাহরাম-ননমাহরাম অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।

ভালো কিছু রান্না করলে বা নাস্তা বানালে প্রতিবেশীর বাসায় পাঠাতে পারেন। আমাদের দ্বীনে প্রতিবেশীদের হক আদায় করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

আল্লাহ আমাদের নেক আমলগুলো, আর নেক নিয়তগুলো কবুল করে নিন। আমিন।

……………

নতুন মায়েদের ইবাদত 
নূরুন আলা নূর