বদনজর

-নূরুন আ’লা নূর

বাচ্চাটার ছবি ছিল প্রোফাইল পিকচারে। এত্ত কিউট, এত্ত এডোরেবল। চোখ ফেরানো যায় না। প্রশংসায় ভরে থাকে কমেন্ট বক্স। কি যে হলো হঠাৎ। অসুখ বিসুখ পিছুই ছাড়েনা। আজ ঠান্ডা, কাল জ্বর, পরশু পেট খারাপ। রাতে ঘুমায় না, ঠিকমত খায় না। বাবা মা অস্থির।

“নিশ্চয়ই কষ্টের পরে আছে স্বস্তি।” কুরআনের আয়াতটা কালারপেন দিয়ে গোটা গোটা হরফে কাগজে লিখে প্রোফাইল পিকচার করে নাবিলা। “পিকটা নিলাম” বলে, অথবা অনুমতির তোয়াক্কা না করেই শেয়ার হতে থাকে নাবিলার হাতের লেখা। হঠাৎ যে কি হলো, লিখতে বসলেই হাত কাঁপে। লেখাগুলো বাঁকা হয়ে যায়।

শাহানা পর্দা করে। ফেইসবুকে ছবি দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। কিন্তু স্বামীকে ট্যাগ করে দেওয়া রোমান্টিক আর মজার সব স্ট্যাটাস আর চেক ইন দেখেই বোঝা যায়, বড্ড সুখে আছে সে। হঠাৎই ডিভোর্স। বনিবনা হচ্ছিলো না।

সুনিতার বিয়ে হয়েছে ৪ বছর। বন্ধুমহলে পার্ফেক্ট কাপল হিসেবে পরিচিত। ফেইসবুকে ওদের কাপল পিকচারগুলোতে শতের কমে লাইক পরে না। বিভিন্ন গার্লসগ্রুপে সুনিতার পোস্টগুলো অনেক মেয়ের দীর্ঘশ্বাস এর কারণ। “আপুরা দেখো, হাবির গিফট করা আইফোন”, ” হাবির দেওয়া ঈদের শাড়ি, ইন্ডিয়া থেকে আনা।” “হাবি রান্না করেছে এই ফ্রাইডে, আমি বসে খাচ্ছি।” লাইকের পর লাইক, কমেন্টের পর কমেন্ট।

হঠাৎ এক রাতে বাথরুমে স্ট্রোক করে সুনিতার স্বামী।

আমাদের রসুলুল্লাহ বলেছেন, বদনজর সত্য। তিনি আরো বলেছেন বদনজর উটকে পাঠায় পাতিলে, আর মানুষকে পাঠায় কবরে।

বদনজর যে শুধুমাত্র ঈর্ষান্বিত হয়ে বা হিংসার বশবর্তী হয়েই লাগতে পারে তা কিন্তু নয়। প্রচন্ড মুগ্ধতার কারণেও বদনজর লেগে যেতে পারে। তাই আমাদের রসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহিস সালাম কোন কিছু দেখে ভালো লাগলে বারাকার দুয়া করতে বলেছেন।

আবূ উমামা ইবনু সহল (র) থেকে বর্ণিতঃ

‘আমির ইব্নু রবী‘আ সহল ইব্নু হানীফকে গোসল করতে দেখে বললেন, আজ আমি যেই সুন্দর মানুষ দেখলাম, এই রকম কাউকেও দেখিনি, এমন কি সুন্দরী যুবতীও এত সুন্দর দেহবিশিষ্ট দেখিনি। (‘আমিরের) এই কথা বলার সাথে সাথে সহল সেখানে লুটাইয়া পড়ল। এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে হাযির হয়ে আরয করল, ইয়া রসূলাল্লাহ! আপনি সহল ইব্নু হুনাইপ (বা হানীফ)-এর কিছু খবর রাখেন কি ? আল্লাহর কসম! সে মস্তক উত্তোলন করতে পারছে না। তখন রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি মনে করছ যে, তাকে কেউ বদনজর দিয়েছে ? লোকটি বলল, হ্যাঁ আমর ইব্নু রবী‘আ (বদনজর দিয়েছে)। অতঃপর রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আমির ইব্নু রবী‘আকে ডেকে ক্রোধান্বিত হয়ে তাঁকে বললেন, তোমাদের কেউ নিজের মুসলমান ভাইকে কেন হত্যা করছ ? তুমি بارك الله কেন বললে না ? এইবার তুমি তার জন্য গোসল কর। অতএব ‘আমির হাত মুখ, হাতের কনুই, হাঁটু, পায়ের আশেপাশের স্থান এবং লুঙ্গির নিচের আবৃত দেহাংশ ধৌত করে ঐ পানি একটি পাত্রে জমা করল। সেই পানি সহলের দেহে ঢেলে দেয়া হল। অতঃপর সহল সুস্থ হয়ে গেল এবং সকলের সাথে রওয়ানা হল। (সহীহ, ইবনু মাজাহ ৩৫০৯, আহমাদ ১৬০২৩, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন [মিশকাত- ৪৫৬২])

……………………..……………

#রৌদ্রময়ী_ফ্রাইডে_রিমাইন্ডার