বিষয়: সমকামীতা – স্বাভাবিক না কি অস্বাভাবিক?

আজকাল বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সমকামীতাকে বৈধতা দেয়া হচ্ছে৷ এসব অনাচার যখন সরকারি ভাবে স্বীকৃতি পাচ্ছে, তখন স্বাভাবিকভাবেই অনেকের মনে প্রশ্ন জাগছে, আসলেই কি এটি দোষনীয় কিছু নয়? সমলিংগে আকর্ষণ বোধ করা কি তবে প্রাকৃতিক?

আমাদের রবের দৃষ্টিতে অত্যন্ত ঘৃন্য এই কাজটি নিয়ে অনেকের মনে যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে, তা দূরীকরণে এই লেখাটি ইন শা আল্লাহ্ সাহায্য করবে আশা করি।

১) প্রথম কথা হলো এটা আল্লাহ্‌ নিষিদ্ধ করেছেন। উনি নিশ্চয় ভালো জানেন তার সৃষ্টির জন্য কোনটি উত্তম এবং কোনটি অপকারী।

২) অধিকাংশ মানুষের সমকামী হবার পেছনে নিম্নোক্ত কারন থাকে:

*নিষিদ্ধের প্রতি আকাঙ্ক্ষা, বহুগামীতা, শিশুকামীতা, মানসিক বিকৃতি, সামাজিক পরিবেশের প্রভাব ইত্যাদি।

*পর্ণগ্রাফি দেখা ও ধর্মীয় অনুশাসন থেকে দূরে থাকা।

*এটি একটি মানসিক বিকারগ্রস্ততা এক পর্যায়ে তা মানসিক ব্যাধিতে পরিণত হয়।

* যেমন অনেকের ক্লেপ্টোম্যানিয়া (নিজের অজান্তে চুরি করে তারা) থাকে।

এসব ক্ষেত্রে অনেক সময় নিজের ওপর সে কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলে, কিন্তু থেরাপি ও কাউন্সেলিং এ অবস্থার অনেক উন্নতি হয়।

৩) সবার আগে বুঝতে হবে, এ ধরণের প্রবণতা যদি কারো হয়, তাদের মানসিক ভাবে সাহায্যের প্রয়োজন।

এখন কারো সন্তান যদি ক্লেপ্টোম্যানিক হয়, তাহলে কি তার অভিভাবক বলবেন, ও সব সময়েই এমন। এবং ওকে কি চুরি করতে উৎসাহ দেবেন?

নাকি ওর চিকিৎসা করাবেন?

৪) শারীরিক সম্পর্ক করা, “খাদ্য খাবার মতো কিছু নয়, যে এর অভাবে লোকে মারা যাবে!

তাই কেও যদি এ ব্যাপারে অসুস্থ মানসিকতায় ভোগে তাহলে সে, শারীরিক সম্পর্ক থেকে দূরে থাকবে।

৫) আল্লাহ্‌ একেক জনকে একেক রকম পরীক্ষা করেন দুনিয়াতে। যেমন, আপন জনের মৃত্যু, দূরারোগ্য ব্যাধি, প্রতিবন্ধী সন্তান বা জন্মান্ধ/ বিকলাংগ হবার মতো শারীরিক অক্ষমতা থাকে অনেকের মাঝে।

৬) শূন্য দশমিক….. ভাগ যেসব মানুষ রয়েছে যারা সমলিংগের প্রতি আকর্ষণ বোধ করে, তাদের ধরে নিতে হবে এটি তাদের জন্য পরীক্ষা।

সে চিকিৎসা নেবে। যদি সুস্থ কোনভাবেই না হয়, তাহলে সে এই পরীক্ষা মেনে নিয়ে দরকার হলে চিরকুমার বা কুমারী থাকবে।

৭) সব সময় মনে রাখতে হবে এই জীবনটা পরীক্ষা ক্ষেত্র, পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়াটা জরুরি এবং একেক জনের পরীক্ষা একেক রকমের।

৮) সবার শেষে আবারো উপরের কথাতেই ফেরত আসি, সমাজে এখন সমকামীতার যে প্রসার লাভের প্রচেষ্টা চলছে, এসব দেখে আমাদের উচিত লুত (আ:) এর ক্বওমের ঘটনা থেকে শিক্ষা নেয়া।

এবং মনে প্রাণে আল্লাহ্‌ এর প্রতি আস্থা রেখে, উনার জ্ঞান এবং বিধান কে অলংঘনীয় হিসেবে মেনে নেয়া।

৯) অবশ্যই আমরা ‘সৃষ্টিকর্তার’ চেয়ে তার ‘সৃষ্টি’ নিয়ে অধিক জানবো না।

কেউ যদি নিজেকে আল্লাহ্‌ এর চেয়ে জ্ঞানী মনে করে, তবে তার ঈমানই থাকবে না।

১০) কোন বিষয় না বুঝলে, ধরে নিতে হবে তা আমাদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা, আল্লাহ্‌ অসীম জ্ঞানী, আমরা নই।

তখন ইসলামের আলোকে যেই ব্যক্তি আমাদের সঠিক ভাবে বোঝাতে পারবেন তার সাথে কথা বলতে হবে। তথাকথিত বুদ্ধিজীবী বা ঈমানহীন ব্যক্তির কথায় বিভ্রান্ত হওয়া যাবে না।

শয়তানের অন্যতম কাজ হল পায়ে পায়ে বা ধীরে ধীরে মানুষের চোখে খারাপ কাজকে শোভনীয় ও স্বাভাবিক করে দেয়া।

যেমন এক প্রজন্ম আগেও প্রেম করা ছিলো সামাজিক ভাবে অগ্রহণযোগ্য বিষয়। কিন্তু নাটক, উপন্যাস, অমুসলিমদের সংস্কৃতির অনুসরণের ফলে, ‘প্রেম’ করা বর্তমান সমাজে একটি অতীব গ্রহণযোগ্য ব্যাপার হয়ে গেছে। এখন বাবা মায়েরাই প্রেম করতে উৎসাহ দেয়!!!

এ কারণেই আল্লাহ্‌ তার পবিত্র গ্রন্থে বলেছেন, যেন আমরা শয়তানের ‘পদাংক’ অনুসরণ না করি!! কারন অল্প কিছু অনুসরণ করলে, আস্তে আস্তে ভয়াবহ খারাপ কাজও সহনীয় হয়ে যায়।

মিডিয়া এখন এই কাজটিই করছে, তারা বিনোদনের মাঝে সমকামীতার মত একটি নোংরা ও ঘৃন্য জিনিসকে জন সাধারণের কাছে ‘স্বাভাবিক’ বিষয় হিসেবে উপস্থাপন করছে।

তাই একজন মুসলিমের উচিত হবে শয়তানের প্ররোচনায় বিভ্রান্ত না হওয়া ও এই ব্যাপারে আল্লাহ্‌ এর কঠিন নিষেধাজ্ঞাকে স্মরণে রাখা।

——————————-

হাসনিন চৌধুরী
১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮