ব্ল্যাক ম্যাজিক

-হাসনীন চৌধুরী

স্বামী পরকীয়ায় আসক্ত?
সন্তান অবাধ্য?
আপনি কি নি:সন্তান?
বিবাহ আটকে আছে?
বিদেশ যেতে চান? 

সকল সমস্যার সমাধানে যোগাযোগে করুন, “মুশকিল আসান বাবার সাথে।”

রাস্তা ঘাটে, পত্র পত্রিকায় এ ধরণের তথ্য সংবলিত বিজ্ঞাপন আমরা সকলেই দেখেছি।

অবাধ্য সন্তান বশীভূত করতে, স্বামী/স্ত্রীকে বশে আনতে, নিঃসন্তান হলে, বদ নজর থেকে বাঁচতে – এমন কি বাচ্চারা বিছানায় প্রস্রাব করে এ ধরণের সামান্য কারণেও লোকে গণক/পীর/ফকিরের কাছে ছোটে!

গরীব বুয়ারা অসুস্থ হলে দেখা যায় ডাক্তারি চিকিৎসা করতে চায় না, গ্রামে গিয়ে তাদের পরিচিত কবিরাজ দিয়ে (শিরকী) ঝাড়ফুঁক করাতে চায়।

আবার বড়লোক মন্ত্রী, ব্যাবসায়ী, নায়ক ইত্যাদি লোকদের অনেকেই কোন না কোন পীরের মুরিদ হয়ে যায়। তারা যে কোন ব্যাবসায়ীক ক্ষতিতে, জীবনের সমস্যাতে দৌড়ে চলে যায় ভণ্ড মৌলানা/পীরদের কাছে।

আরো একটি কমন কারণে মানুষ এদের কাছে যায়, তা হলো বাড়ি বন্ধনের তাবিয নিতে এবং স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ ঘটাতে।

সমাজের এক শ্রেণীর মানুষ এসবে অগাধ বিশ্বাস রাখে, আবার কিছু লোক আছে যারা একেবারেই বিশ্বাস করে না।

আপনি বিশ্বাস করুন আর না করুন, ব্ল্যাক ম্যাজিক কিন্তু সত্য!! এবং শিরক করা ছাড়া ব্ল্যাক ম্যাজিক করা সম্ভব নয়। নিশ্চয় ‘শিরক’ নিকৃষ্টতম পাপ!

ধনী- দরিদ্র নির্বিশেষে বাংলাদেশের জনগণের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ জীবনে কোন না কোন সময় তাবিয ব্যাবহার করে অথবা বিভিন্ন সমস্যায় তাবিয যারা দেয় তাদের কাছে যায়।

আপাতদৃষ্টিতে ধার্মিক হিসেবে পরিচিত পীর ফকিররাই এই ধরণের তাবিয দেয়া বা মুশকিল আসানের ওয়াদা দিয়ে থাকে।

সাধারণ মানুষ ধারণাই করতে পারে না যে, তারা না জেনে কতো বড় শিরকের ভেতর প্রবেশ করছে। তারা ভাবে, আল্লাহ্‌ এর কালাম লিখে দেয়া হয়েছে তাবিযে!

ইশ, যদি তারা জানতো কি ভয়ংকর ও জঘন্যতম পাপ কার্যে তারা লিপ্ত হচ্ছে! এসবের বিনিময়ে আখিরাত বেঁচে দিচ্ছে! জাদু টোনা ও ব্ল্যাক ম্যাজিক যারা করে আখিরাতে তাদের কোন অংশ নেই।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

“যে ব্যক্তি গণক কিংবা ভবিষ্যদ্বক্তার নিকটে যায় এবং সে যা বলে তা বিশ্বাস করে, সে নিশ্চিন্তভাবেই মুহাম্মাদের ওপর যা নাযিল হয়েছে তা অস্বীকার করে।” (আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবন মাজাহ, মুসনাদে আহমদ)

“যে ব্যক্তি কোন ভবিষ্যদ্বক্তার নিকটে যায় এবং তাকে কিছু জিজ্ঞেস করে, তার চল্লিশ দিনের সালাত কবুল হবেনা।” (সহীহ মুসলিম, ২২৩০; মিশকাত, ৪৫৯৫)

সবশেষে পবিত্র কুরআনের এ সংক্রান্ত একটি আয়াত দিয়ে লেখাটির সমাপ্তি টানছি।

আল্লাহ্‌ আযাওয়াজ্জাল বলেছেন,

“…. তারা মানুষকে জাদুবিদ্যা এবং বাবেল শহরে হারুত ও মারুত দুই ফেরেশতার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছিল, তা শিক্ষা দিত।

তারা উভয়ই একথা না বলে কাউকে শিক্ষা দিত না যে, আমরা পরীক্ষার জন্য; কাজেই তুমি কাফের হয়ো না।

অতঃপর তারা তাদের কাছ থেকে এমন জাদু শিখত, যদ্দ্বারা স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে।

তারা আল্লাহর আদেশ ছাড়া তদ্দ্বারা কারও অনিষ্ট করতে পারত না।

যা তাদের ক্ষতি করে এবং উপকার না করে, তারা তাই শিখে।

তারা ভালরূপে জানে যে, যে কেউ জাদু অবলম্বন করে, তার জন্য পরকালে কোন অংশ নেই।

যার বিনিময়ে তারা আত্নবিক্রয় করেছে, তা খুবই মন্দ যদি তারা জানত। [ সুরা বাকারা ২:১০২ ]