মৃত্যু

আনিকা তুবা

আমরা খুব ঘটা করে মৃত্যুর গল্প বলতে ভালোবাসি। একজন মানুষ কীভাবে মারা গেছে, তার কী হয়েছিল, মরার আগে শেষ কথা কী ছিল, শেষ কী খেতে চেয়েছিল, মরার সময় হাতটা কোথায় ছিল, মুখের রেখাটা কেমন ছিল– সবকিছুর খুঁটিনাটি বিবরণ আমাদের মনে থাকে। আমরা খুব নিঁখুতভাবে এইসব আলোচনা করি। 

মারা যাওয়ার পর আত্মীয়রা তাকে নিয়ে অনেকরকম কথা বলে। এর মধ্যে একটা প্রসঙ্গ থাকে সে মানুষ হিসেবে কেমন ছিল, কীভাবে মানুষের সাথে চলত, ফিরত, কথা বলত। নামাজ-রোজা, কুরআন পড়ার ব্যাপারে সে কতটা সচেতন ছিল.. 

মানুষ মারা গেলে বোঝা যায় তার কোন কাজটা বেশি দামি ছিল। হঠাৎ করেই তখন তার আখলাক, তার দানশীলতা, তার নামাজ-রোজা, তার কুরআনের অভ্যেসটা মানুষের নজরেও খুব দামি হয়ে যায়। সবাই এ ব্যাপারগুলোর খুব প্রশংসা করতে শুরু করে। অথচ বেঁচে থাকতে খুব কম লোকই সে কথা স্বীকার করত। এই কাজগুলোকেই তখন গোড়ামি, জঙ্গিবাদ হিসেবে দেখত। বলত, এই লোকটার কোনো বিষয়জ্ঞান নাই। এই লোক দুনিয়াদারির আর কী বোঝে! কিন্তু মরার পর এগুলোই হয়ে যায় তাকে মাপার মাপকাঠি। আর আল্লাহর নজরে এই কাজগুলো সবসময়ই দামি ছিল, মর্যাদার ছিল। 

মানুষের মৃত্যুর ধরণ তার কবুলিয়াত সম্পর্কে অনেকটাই বলে দেয়। কেউ মারা যায় বিছানায়, কেউ মারা যায় ময়দানে। কারো মৃত্যুর সময় প্রস্রাব-পায়খানা বের হয়ে যায়। কারো মৃত্যুর পরও মুখে চিলতে হাসি লেগে থাকে। কারো মৃত্যুর পর পা থেকে টাইট জিন্স খোলার, গায়ের সাথে এঁটে থাকা কামিজ কাটার জন্যেও ছুরি-কেঁচি আনতে হয়। আর কারো মৃত্যুর পর শরীরটা এত হালকা হয়ে যায়, যেন ফেরেশতারা তাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। 

মানুষের মৃত্যুর পর সে বুঝতে পারে কী করা উচিত ছিল৷ মানুষের মৃত্যুর পর তার আশেপাশের মানুষগুলিও এক মুহূর্তের জন্য টের পায়, জীবনের আসল উদ্দেশ্য হল আখিরাত। তবু কেউ মনে রাখে না…

(২১ ডিসেম্বর ২০১৮)