লজ্জা

লজ্জা ঈমানের সাইন। মানুষের থেকে চেয়ে নিতে লজ্জা লাগার কথা, মানুষের সামনে কাপড় বদলাতে লজ্জা পাওয়ার কথা পরপুরুষ আর বেগানা নারীর দিকে তাকাতে লজ্জা লাগার কথা। এমনকি মা-মেয়ের মধ্যেও ইসলাম সীমানা নির্ধারণ করে দিয়েছে- কেমন কাপড় পরতে হবে, কীভাবে আচরণ করতে হবে। একজন বাবা তার বালেগ কন্যাকে ঠোঁটে চুমু দিতে পারবেন না। একজন মা তার পূর্ণবয়স্ক ছেলের সাথে এক বিছানায় শুতে পারবেন না। দুই বোন বড় হওয়ার পর আর এক লেপের নিচে শোয়ার নিয়ম নেই।

ইসলাম আল্লাহর তা’আলার নির্ধারিত দ্বীন, তাই এর সবকিছুই সুন্দর। সবকিছুই সামঞ্জস্যপূর্ণ। লজ্জাকে আল্লাহ ঈমানের চিহ্ন হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। খারাপের দিকে নিয়ে যেতে পারে, এমন কোনো পথ পর্যন্ত ইসলামে খোলা রাখা হয় নি।

সেক্যুলারিজম ঠিক উল্টো। নষ্টামি, নোংরামি, অশ্লীলতার দিকে নিয়ে যেতে পারে এমন সবকিছুই এখানে শেখানো হয়। বিনোদনের নামে এখানে সব জায়েজ। নারীরা তাদের সংবেদনশীল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ উন্মুক্ত করে দিচ্ছে, যে যত বেশি শরীর দেখাতে পারবে, সে তত বেশি “সাহসী”। অভিনয়ের নামে নারী-পুরুষ ইচ্ছামত যাকে-তাকে ধরাধরি করে, স্বামী-স্ত্রীর চেয়েও ঘনিষ্ট আচরণ সবার সামনেই হয়, পর্দার আড়ালে কী হয় সহজেই অনুমেয়।

ফটোজেনিক আর সুন্দরী প্রতিযোগিতার ধোঁয়া তুলে কমবয়সী মেয়েদের শরীর নিলামে তোলা হয়, সেই সাথে কতজনের কুমারিত্ব হারায় তার ইয়ত্তা নেই। চকোলেট ডে, প্রপোজ ডে, ভ্যালেন্টাইন ডে’র নামে তরুণ-তরুণীদের মেলামেশার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে, “কাছে আসার গল্প” নাম দিয়ে সেগুলো ভালোবাসার আদর্শ কাহিনী হিসেবে প্রচার করা হয়। 

লজ্জাকে এ সমাজে নিচু চোখে দেখতে শেখানো হয়। তাই লজ্জা পাওয়া মানেই ভীরুতা। আর নির্লজ্জ হওয়ার নতুন সংজ্ঞা হল সাহসী। কেউ অভিনয়ের নামে উলঙ্গ হয়ে গেলে বলা হয়, সাহসী দৃশ্যে অভিনয় করেছে। আগে নতুন বউ ভাবলেই চোখে ভাসতো মাথা নিচু করে থাকা লাজুক এক কনের দৃশ্য। এখন বিভিন্ন ওয়েডিং ফটোগ্রাফিক পিকচারে বোঝা যায়, বিয়ের দিনে যে বউ যত “বোল্ড” হতে পারবে, সে ততই স্টাইলিশ। বউ রিকশার উপর চালকের আসনে বসে আছে, কিংবা চোখে সানগ্লাস পরে সেজে, ইয়ো-ইয়ো ভাব নিয়ে ছবি তুলছে।

এটাই সাহসিকতার নমুনা।

ওয়েডিং ফটোগ্রাফির নামে কনের লজ্জাকে একেবারে জবাই করে দেওয়া হয়েছে। কনে স্বামীর সাথে সুন্দর সময় কাটানোর বদলে বরং ফটোগ্রাফারের জন্য পোজ দিতে ব্যস্ত। স্টেইজে বসে, দাঁড়িয়ে, এমন কি শুয়ে ছবি তোলা হয়। ছবির পোজ দিতে গিয়ে তথাকথিত “ভদ্র” ঘরের নারী-পুরুষরা বিয়ের হলকেই যেন তাদের বেডরুম বানিয়ে ফেলে।

সেক্যুলার সমাজব্যবস্থায় স্বাধীনতা আর সাহসিকতার নামে নির্লজ্জতার চাষ হয়, রাসূল (সা) এর চোখে এই কাজগুলো নিশ্চিত নষ্টামি আর নোংরামি হিসেবে গণ্য হতো। নোংরামির নাম বদলে ফেললেই সেটা সুন্দর হয়ে যায় না। সেক্যুলারিজমের ছোঁয়ায় এখন পার্ক, রেস্টুরেন্ট, রাস্তাঘাটে জোড়ায় জোড়ায় ছেলেমেয়ে ঘোরে। এরাও সব ভদ্র ঘরেরই সন্তান। এদের ক্ষণিকের সুখের পরিণতি হিসেবে ডাস্টবিন আর নালা-নর্দমায় জমা হয় অবৈধ জরায়ু আর সদ্যজাত শিশুগুলো। এদেরকে শেখানো হয়েছিল – ছেলেমেয়ে একসাথে কথা বলতে, বন্ধুত্ব করতে কোনো সমস্যা নেই। যেই বয়সে এরা লজ্জার বাধ ভেঙে বিছানায় যেতে পারে, সেই বয়সে সন্তানের বাবা হতে তারা প্রস্তুত নয়। অল্পবয়সে সন্তানের দায়িত্ব নেওয়ার কথা এদেরকে শেখানো হয়নি।

সেক্যুলারিজম বলে বোরকা পরা মানে ঘরবন্দী, বর্বর। ওড়না না পরা আধুনিকতার প্রতীক। ছেলেমেয়ের অবাধ বন্ধুত্বে কোনো বাধা নেই। দুই পক্ষের সম্মতিতে বিছানায় যেতে সমস্যা নেই। পরকীয়া করার স্বাধীনতা আছে। অভিনয় করার জন্য, সুপারস্টার হওয়ার জন্য টুকটাক দেহ বিলানোতে বাধা কি? ঠিক আছে। কিন্তু নারীদের নিরাপত্তা, ধর্ষণ, যৌন-নিপীড়ন, ভ্রুণহত্যা, অ্যাবরশন, ডিভোর্স, আত্মহত্যা– এগুলোর সমাধান কে দেবে? এসব অপ্রত্যাশিত ঘটনার দায়দায়িত্ব সেক্যুলারগণ নেয় না। তারা শুধু নষ্টামি উসকে দিতে আগ্রহী।
সেক্যুলারিজম একটা মিথ্যা কোড-অফ-লাইফ, একটা ভ্রান্ত, ভুলে ভরা জীবনব্যবস্থা। যে সেক্যুলারিজমের অনুসরণ করবে, সে নামে মুসলিম হলেও জীবনে শান্তির স্বাদ পাবে না।

ইসলাম একমাত্র সত্য দ্বীন– সত্য ও সঠিক জীবনব্যবস্থা। সবচাইতে কল্যাণকর জীবনব্যবস্থাও ইসলাম। চৌদ্দশ বছর আগে যে বিধানগুলো এসেছিল, সেই বিধান পরিপূর্ণ ভাবে বাস্তবায়ন করার কারণেই সাহাবীদের যুগটা ছিল শ্রেষ্ঠ যুগ। সে যুগেই তৈরি জন্ম হয়েছে সবচেয়ে অসাধারণ সব ব্যক্তিত্ব। সে যুগে অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটেছে সবচেয়ে কম। এখনকার জীবনকে মাপার মাপকাঠি হয়ে গেছে টাকা-পয়সা, লোক-দেখানো অনুষ্ঠান, খ্যাতি এইসব। এগুলো পাবার আশায় মানুষ নষ্ট হয়ে যেতেও পরোয়া করে না। অথচ নির্লজ্জ, নোংরা, ঘুণে ধরা টালমাটাল একটা জীবনের চাইতে সহজ-সাধারণ-ভারসাম্যময় একটা জীবন অনেক বেশি সুন্দর।

[আনিকা তুবা]

(২৭ অক্টোবর ২০১৭)