সময় হবে তো?

আজকাল আমি অনেক মৃত্যু সংবাদ শুনতে পাই। এর একটা কারণ হতে পারে এখন আমরা ইন্টারনেটের কারণে দূরদূরান্তের খবর সহজেই পেয়ে যাই এই জন্য।

অমুকের আত্মীয় বা তমুকের প্রতিবেশীর মারা যাওয়ার খবর ফেসবুক, ইমেইল, হোয়াটসঅ্যাপে খুব সহজেই এখন জানতে পারা যায়। কিন্তু যে বিষয়টা আমার কাছে ভীতিকর লাগে সেটা হচ্ছে এই সকল মৃত্যুসংবাদ অনেক সময়ই এমন মানুষদের মারা যাওয়ার খবর নিয়ে আসে যাদের বয়স চল্লিশ বা পঞ্চাশের কোঠায়, যারা মারা যাবে এমনটা কেউ ঘুণাক্ষরেও ভাবেনি। “অকাল মৃত্যু” বলে আমাদের মাঝে যে একটা কথা প্রচলিত আছে তার দিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখায় এমন একটার পর একটা মৃত্যু সংবাদ। 

আমরা ধরেই নেই, বয়স হবে এরপর নাতি-নাতনির মুখ দেখে শান্তিতে দুই চোখ বুজব। অথচ কুরআন, হাদিস কোথাও কিন্তু মৃত্যুর কোন নির্দিষ্ট বয়স লেখা নেই! একের পর এক খবর শুনি বত্রিশ বছর, চুয়াল্লিশ বছর, বায়ান্ন বছর বয়সে মানুষ মারা যাচ্ছে … আনমনেই ভাবি আমার সংখ্যাটা কত? যদি জানতে পারতাম ঠিক কত নম্বর সংখ্যাটায় পৌঁছলে আমি থেমে যাব! 
সেই জাগতিক সংখ্যার বিপরীতে আমার আমল কি যথেষ্ট হবে? সম্ভাবনা নেই। এই কারণেই ইসলামের “সাদাকায়ে জারিয়ার” ধারণাটা আমার এত লোভনীয় লাগে! 

আল্লাহর রাসূল (সালাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

মানুষ মৃত্যুবরণ করলে তার আমলের সব দরজা বন্ধ হয়ে যায়, শুধু তিনটি আমল চালু থাকে। ক. সদকায়ে জারিয়া, খ. ইলম, যার দ্বারা মানুষের উপকার হয় ও গ. সুসন্তান, যে পিতামাতার জন্য দোয়া করে। (সহিহ মুসলিম)

হাদিসে বর্ণিত তিনটা আমলই এমন যা থেকে মানুষ মৃত্যুর পরও সাওয়াব পেতে থাকে। হয়ত সে ছোট একটা কাজই করেছে কিন্তু তার সাওয়াব জারি থাকার কারণে বহুগুণে বেড়ে যেতে থাকে। 

একজন মানুষের সামর্থ্যে যতটুকু কুলায় তা দিয়ে যদি কোথাও কোন মসজিদ বা লাইব্রেরি অথবা এমন কিছুতে দান করা যায় যা থেকে মানুষ উপকৃত হতে থাকবে অনেকদিন পর্যন্ত তাহলে আমরা যতটুকু দান করলাম তার চেয়ে বহু গুণ বর্ধিত আকারে আল্লাহর কাছে এর সাওয়াব জমা থাকবে আশা করতে পারি। যদি নিজে না পারি তাহলে এমন কোন দানের সংবাদ সামর্থ্যবান কাউকে পৌঁছে দিলেও আমরা সাওয়াবের ভাগীদার হতে পারি।

দ্বিতীয় পয়েন্টটা আমাদের উপকারী জ্ঞান অর্জন ও সেটা অপরকে জানানোর গুরুত্ব স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। কতকিছুই তো আমরা প্রতিদিন পড়ি, তার মাঝে অনেক কিছুই থাকে যা আমাদের আদৌ কোন কাজে আসে না। প্রতিদিন একটি হাদিস, বা কুরআনের একটি আয়াতের অর্থ আমরা জানতে পারি অথবা কোন সাপ্তাহিক পাঠচক্রের সাথে যুক্ত হতে পারি যেখানে নিজে জানার পর অন্যদের সাথে শেয়ার করারও সুযোগ থাকে। এমনটা হতে পারে ঘরে ভাইবোনদের থেকে শুরু করে নিজের বন্ধু মহলেও। আপনার থেকে জেনে আরেকজন যতদিন একটা আমল করবে ততদিন আপনিও তার জন্য সাওয়াব পেতে থাকবেন। সে যদি আরেকজনকে জানায় এবং সেই মানুষটাও যদি আমল করে তাহলেও আপনার সাওয়াব হতে থাকবে। পৃথিবীর কোন কোম্পানি কখনো এত লোভনীয় অফার দিতে পারবে না নিশ্চিত!

শেষের পয়েন্টটা হচ্ছে সুসন্তান যে বাবা-মায়ের জন্য দু’আ করে। তার মানে সুসন্তান গড়ে তোলার জন্য ছোট বড় প্রতিটা চেষ্টাই সাদাকায়ে জারিয়া হতে পারে। আপনার থেকে শিখে একটা ভালো কাজের ওপর আপনার সন্তান যতদিন আমল করবে ততদিন আপনিও তার জন্য সাওয়াব পাবেন। ঘরের মাঝেই নিজের আয়ত্বের ভেতর কী সুবর্ণ সুযোগ আমাদের দেয়া হয়েছে, সুবহানআল্লাহ! 

উম্মাতে মুহাম্মদীর যে গড় আয়ু হওয়ার কথা আমাদের প্রজন্ম তার প্রায় অর্ধেক পার করে ফেলেছে। পৃথিবীতে যেদিন আগমন ঘটেছিল সেদিনই কানে আযান দেয়া হয়ে গেছে, এখন যে কোন সময়ই জানাযার সালাত পড়া হতে পারে আমার, আপনার ওপর। নিজের মাঝে জরুরী অবস্থা অনুভব করছেন তো? পরে করব ভেবে তুলে রাখা ভালো কাজগুলো করার মতো সময় হবে তো! 

সময় হবে তো?
-বিনতে খাজা

(০৪/০১/২০১৯)