সমীকরণ

লেকচার গ্যালারিতে সবার সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটি। প্রাণপণ চেষ্টায় চোখের পানি আটকে রেখেছে সে। স্যারের কোনো কথারই জবাব দিচ্ছেনা। জানে, জবাব দিয়ে লাভ নেই। তাতে করে আরো বেশি অপমানিত হতে হবে তাকে।

সবাই ওকে আরো বেশি অপমানিত হতে দেখবে, আরো বেশি লজ্জিত হতে দেখবে।
দেখে অবশ্য ফেলেছে ইতোমধ্যে…..ওর লাঞ্ছনা…ওর হয়রানি…ওকে।

হ্যাঁ, ওকে!
এই প্রথম!!
এই এতদিনে এই প্রথম!!!

চোখ ভরে তাই কৌতুহল মেটাচ্ছে অনেকে।
কে জানে কবে আবার নিকাব ছাড়া ওর চেহারাটা দেখা যাবে!

এদিকে স্যারের চোখ রক্তিম থেকে রক্তিমতর হচ্ছে…রক্ত ফুটে তপ্ত থেকে তপ্ততর হচ্ছে…গলা চড়ে উচ্চ থেকে উচ্চতর হচ্ছে…

এ যে বড় বেয়াদবি, বড় ধৃষ্টতা।
স্যারের ক্লাসে বসে স্যারের সামনে মুখ ঢেকে রাখার মত এমন গোস্তাকি মানা যায়না, মানা সম্ভব না!

*** *** *** *** *** *** *** *** *** *** ***

অন্যরকম একটা জায়গা।
সবাই কেন যেন একত্রিত হয়েছে সেখানে।
কত্ত যে মানুষ! গুণে বের করার কোন উপায় নেই।
গুণে বের করবে এমন চেষ্টা করার মানসিকতাও কারো
নেই। সবার কেমন নাভিশ্বাস উঠেছে যেন।

সূর্যটা মাথার খুব কাছে নেমে এসেছে।
রক্ত ফুটে উঠেছে টগবগ করে।
খালি পা।
মলিন মুখ।
কাউকে কাউকে ঘিরে এত অন্ধকার যে তার হাতটা পর্যন্ত দেখা যাচ্ছেনা।

সবার সামনে দাঁড়িয়ে আছে একজন।
মাথা নিচু করে।
অপমানে-লজ্জায়-আফসোসে যেন কুঁকড়ে যাচ্ছে বারবার।
বাঁ হাতে একখানা কিতাব- পিঠের দিকে লুকোবার ব্যর্থ চেষ্টা সেটাকে নিয়ে।

জিজ্ঞাসাবাদ চলছে…

কঠোরতম সেই জিজ্ঞাসাবাদ।

কৌশল খাটিয়ে যে কিছু বলবে সে উপায় নেই।
মুখটাই যে আজ বন্ধ!
বরং চোখ, কান, হাত, পা– সবকিছু, এমনকি যামীনও জবাব দিয়ে যাচ্ছে কোনরকম রাখ-ঢাক ছাড়াই!

কিচ্ছু করার নেই।
আজ আর ইচ্ছের কোনই মূল্য নেই, জোর খাটাবার কোনই সুযোগ নেই।।।

অদূরেই কিছু মুখ দেখা যাচ্ছে– চিন্তামুক্ত,সজীব,সন্তুষ্ট।
এই খাঁ খাঁ করা উত্তপ্ত বিরানভূমির মাঝেও ওরা কিসের যেন ছায়ার নিচে!
প্রশান্তির সেই ছায়া….ও যে আল্লাহর আরশের ছায়া।।

সেদিনের সেই কান্না আটকে রাখা মেয়েটি আজ এদেরই সাথে– প্রফুল্ল চিত্তে অপেক্ষার প্রহর গুণছে মিশকের মাটিতে প্রথম পদক্ষেপের। 
নাকে যেন এখনি নাড়া দিয়ে যাচ্ছে মিশকের সেই সুবাস…কানে যেন দোলা দিয়ে যাচ্ছে সালসাবিলের কলকল ধ্বনি!

যৌবনকালের ইবাদাতগুজারী আজ দেখছে দুনিয়ার সেই প্রবল প্রতাপকে ধূলায় লুণ্ঠিত হতে, লজ্জায় মিইয়ে যেতে!!!

জাহান্নাম নিকট থেকে নিকটতর হচ্ছে… তার আগুন গর্জে উঠে বিকট থেকে বিকটতর হচ্ছে…প্রহরীদের দেয়া বাঁধন শক্ত থেকে শক্ততর হচ্ছে…

এ যে বড় অবাধ্যতা, বড় ঔদ্ধত্য
আল্লাহ্‌র যামীনে আল্লাহ্‌র বিধান মানতে বাধা দেয়ার মত এমন গুনাহ্ থেকে সহজেই পার পাওয়া যায়না, পার পাওয়া সম্ভব না

“সমীকরণ”
ফালাহ ফিযা
(২৭ নভেম্বর ২০১৭)