আমার দেখা জাতীয় জাদুঘর

আমি ঘুরতে অনেক পছন্দ করি। আমার মা সবসময় বলেন, মানুষ শুধু বই পড়েই শেখে না, চোখে দেখেও অনেক কিছু শিখতে পারে। তাই আমি, মা আর বাবা মিলে ছুটির দিনগুলোতে প্রায়ই ঘুরতে যাই বিভিন্ন দর্শনীয় জায়গায়।

এমনই এক ছুটির দিনে, গত ১লা ফেব্রুয়ারী, ২০১৯ শুক্রবার বিকেল বেলা আমরা তিনজন গেলাম ঢাকার শাহবাগে অবস্থিত “জাতীয় জাদুঘরে।” টিকেট কাউন্টার থেকে টিকেট কাটার পর আমরা দাঁড়ালাম দীর্ঘ লাইনে। ছুটির দিন হওয়ায় সেদিন ছিল অনেক ভীড়।

নিরাপত্তা চেকিং শেষে জাদুঘরের গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকে আমি তো অভিভূত। মূল ভবনের সামনে সাজানো রয়েছে মনোরম ফুলের বাগান ও ঝর্ণা। বাগানের ফুলের সামনে আমরা অনেক ছবি তুললাম। ফটোসেশন শেষ হওয়ার পর আমরা গেলাম মূল ভবনে।

সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠে প্রথম যে রুমে ঢুকলাম সেখানে ছিল বাংলাদেশের বিরাট এক মানচিত্র। মানচিত্রের পাশে বসা আংকেলের কাছে গিয়ে জানতে চাইলাম রাজধানী ঢাকার অবস্থান। উনি সামনে রাখা অনেকগুলো সুইচের মধ্যে একটিতে চাপ দিতেই মানচিত্রের মাঝামাঝি একটি জায়গায় হলুদ বাতি জ্বলে উঠল। বুঝলাম এটিই ঢাকা জেলা।

এরপর আমার জেলা নারায়ণগঞ্জকে খুঁজে পেলাম ঢাকার পাশেই। একে একে দেখলাম মানচিত্রের উত্তরে অবস্থিত মা’র দাদা বাড়ি দিনাজপুর ও মা’র নানা বাড়ি রংপুর। সবশেষে আমার প্রিয় ঘোরার জায়গা কক্সবাজারকে খুঁজে পেলাম মানচিত্রের দক্ষিণ দিকে।

এরপর মানচিত্র রুমের ডান পাশ থেকে শুরু করলাম গ্যালারি পরিদর্শন। একের পর এক গ্যালারিতে সাজানো বাংলাদেশের বিভিন্ন ফুল, ফল,পাখি, পশু, নৌকা, মাছ, গাছ, খাদ্যশস্য প্রভৃতির নমুনা দেখে আমার চোখে যেন পুরো বাংলাদেশের প্রকৃতির একটি চিত্র ফুটে উঠল। একটি গ্যালারির পুরোটা জুড়ে সাজানো সুন্দরবনের প্রাকৃতিক দৃশ্যের নমুনা দেখতে দেখতে মনে হলো আমি যেন সত্যিই সেখানে পৌঁছে গেছি।

এছাড়াও অন্যান্য গ্যালারিতে সাজানো সাঁওতাল,চাকমা, মারমা,মনিপুরি ,গারোদের নিজ হাতে তৈরি পোশাক,অলংকার ও গৃহস্থালী সামগ্রীর সংগ্রহ দেখে আমার মনে পড়ে গেল সমাজ বইয়ে পড়া নৃগোষ্ঠীদের পরিশ্রমী জীবনের কথা। আরও দেখলাম মাটি, সিরামিক ও কাঁচের তৈরি জিনিস, জামদানী, নকশীকাঁথা, হাতপাখা ও বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের সংগ্রহ।

প্রাচীন কালের মানুষদের ব্যবহৃত পালঙ্ক , পালকি, সিন্দুক, দরজা ও সিঁড়ির অংশ, হাতির দাঁতের তৈরি অলংকার, পাটি, শো-পিস ইত্যাদি দেখতে দেখতে আমি যেন হারিয়ে গেলাম সেই সময়ের বাংলায়। এসব জিনিসে খোদাই করা নিখুঁত কারুকাজ দেখে বুঝতে পারলাম, সেই কালের মানুষের রুচি ও শিল্পবোধও ছিল অনন্য।

এরপর দেখলাম অামাদের ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন স্মৃতিচিহ্ন। রক্তে ভেজা পোশাক, মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহৃত অস্ত্রের ভাঙ্গা টুকরা, বোমা, তৎকালীন দৈনিক পত্রিকার পাতা,পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের সময় ব্যবহৃত টেবিল এত কিছু দেখে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে যে ধারণা পেলাম তা বইয়ের পাতার বর্ণনার চেয়েও অনেক বেশি নির্মম ও সাহসিকতার।

এভাবে সব গ্যালারি ঘোরা শেষে সন্ধ্যাবেলা যখন জাদুঘর থেকে বের হলাম তখন আমি ছিলাম একই সাথে ক্লান্ত ও ইতিহাসের ঘোরে আচ্ছন্ন।

এছাড়া জাতীয় জাদুঘরের আরও যে বিষয়গুলো আমার ভালো লেগেছে তা হলো, দর্শনার্থীদের জন্য বিশ্রাম কক্ষ ,নামাজের কক্ষ, বিনামূল্যে নিরাপদ পানির ব্যবস্থা, পরিষ্কার -পরিচ্ছন্ন টয়লেট, শিশুদের জন্য খাবার ও টয়লেটের বিশেষ ব্যবস্থা প্রভৃতি।

তবে দর্শনার্থীদের যে বিষযটি আমার শিশু মনে প্রশ্ন জাগিয়েছে তা হলো, কর্তৃপক্ষের নিষেধ থাকা স্বত্ত্বেও অনেকেই মোবাইলে জাদুঘরের বিভিন্ন সংগ্রহের ছবি তুলছিল। এভাবে বড়রাই যদি নিয়ম ভাঙ্গে তবে আমরা ছোটরা তাদের থেকে কি শিখব? আশা করি সবাই এ বিষয়ে সচেতন হবে।

পাঠক বন্ধুরা তোমরা যারা এখনও জাতীয় জাদুঘরে যাওনি, সময় করে তারাও একবার ঘুরে এসো জাতীয় জাদুঘর থেকে বেড়ানোও হবে, সাথে অনেক কিছু জানতেও পারবে।

আমার দেখা জাতীয় জাদুঘর
সামিন বিনতে ইয়াসির
বয়সঃ ৯

অগাস্ট ২৭, ২০১৯ইং

বিদ্রঃ রৌদ্রময়ীর অনেক শিশু কিশোর পাঠকও আছে, শিশুতোষ বা শিশুদের উপযোগী শিক্ষনীয় গল্পগুলো মায়ের কাছে শোনে তারা। তাই ইন শা আল্লাহ্ এখন থেকে শিশুতোষ লেখাও ছাপা হবে রৌদ্রময়ীর পাতায়। রৌদ্রময়ী কিন্তু শিশু-কিশোরদের ফেসবুক অথবা ডিভাইসে ইন্টার্নেট ব্যবহার কোনোভাবেই সমর্থন করে না।