গোস্ট!

ভয়ংকর কোনো স্বপ্ন দেখে ধরফর করে জেগে উঠলো তমা। অন্ধকার হাতড়ে খাটের কোনের সুইচ টিপে লাইটা জ্বালানোর চেষ্টা করলো। বিকট শব্দ করে টেবিলের কোনায় রাখা গ্লাসটা পড়ে ভেঙ্গে গেলো। হাত লেগেছে হয়তো। আম্মু সব সময় বলে টেবিলের কোনায় যেন গ্লাস না রাখা হয় যেন মাঝে রাখা হয়। কিন্তু কাজের সময় কিছুই মনে থাকে না।

কোনো ভাবেই সুইচটা খুঁজে পাচ্ছে না তমা। বুকের ভেতরটা এখনো ধরফর করছে। বিছানার পাশে হাতড়ে আম্মুকে কিছুক্ষণ খুঁজলো। আম্মুও তো নেই। আজ যেন অন্ধকার অন্য দিনের তুলোনায় আরো অনেক বেশি। আর কেমন গুমুট একটা ভাব। তমা অল্পতে চিৎকার করে না। খুব শান্তভাবেই তাই সে কিছুক্ষণ নিজেকে বুঝালো,”কিচ্ছু হয়নি। এটা একটা স্বপ্ন। এখন তমা নার্ভাস তাই সুইচ খুঁজে পাচ্ছে না। তমা ভয় পাচ্ছো কেন!? এটা কোনো ভূত না। ভূত বলে কিচ্ছু নেই। জ্বীন আছে। জ্বীন অযথা মানুষের কোনো ক্ষতি করেনারে বোকা! আর হাশরের মাঠে তো জ্বীনেরও হিসাব হবে। ও যদি এখন তোমার অযথা কোনো ক্ষতি করে তাহলে তো ওকে জবাবদিহি করতে হবে আল্লাহ্‌ এর কাছে। তাই না!? তাহলে তুমি কেন এখনো নার্ভাস হয়ে আছো তমা!? আয়াতুল কুরসি পড়ো।”

আরে তাই তো আয়াতুল কুরসি পড়লেই তো জ্বীন আসতে পারেনা। এতক্ষণে বুকের ভেতরটা একটু শান্ত হচ্ছে। তমা গা থেকে লেপটা সরিয়ে খাট থেকে নামলো।

“উহহ্…”

বাম পায়ের গোড়ালির দিকে প্রচণ্ড ব্যাথা টের পেলো তমা। যেন পেন্সিলের মত মোটা কোনো সুই ঢুকে গেছে। আরে একটু আগেই তো গ্লাসটা পরে ভেঙ্গেছে। সেটাই হয়তো। আবার বুকের ভেতরটা তীব্র গতিতে ধরফর শুরু করার চেষ্টা চালাচ্ছে! তমা খুব দ্রুত ঠোট নেড়ে ফিসফিস শব্দ করে আয়াতুল কুরসি আওড়াতে শুরু করলো। আর মনে মনে ঠিক করতে শুরু করলো এখন কি করবে। আম্মু বলেছিলো কোনো সমস্যায় পড়লে নিজেকে নিজে প্রশ্ন করতে, “এখন কি করতে হবে?” তমাও তাই করলো। মনে মনে কাজের একটা লিস্ট তৈরি হলো,

“১। লাইট অন করতে হবে।
২। টাইম কত সেটা দেখতে হবে
৩। এক গ্লাস পানি খেতে হবে।
৪। বুকের ভেতরটা শান্ত হলে ওয়াশ রুমে যেতে হবে না হলে আম্মুকে ডাকতে হবে।
৫। ফজরের সময় না হলে আবার ঘুমাতে হবে হলে আম্মুকে ডাকতে হবে।”

খাট থেকে নেমে তমার মনে হলো ইশ খাটে দাঁড়িয়ে লাইটা অন করলেই তো হতো। এখন এই অন্ধকারে চেয়ার কোথায় খুঁজে পাবে! তবু সাহস করে সামনের দিকে পা ফেললো। একটু পা ফেললেই মনে হয় যেন বাম পায়ে পেন্সিলের মত সুইটা আরো একটু বেশি করে গভীর হয়। ব্যাথায় চোখ মুখ কুচকে “উহ্” শব্দটা গোপন করে তমা।

আম্মুর ঘুম পাতলা। আবার যদি ঘুম ভেঙ্গে যায়! এভাবেই ৫/৭ পা সামনে যেতেই চেয়ারের সাথে মাথায় একটা ধাক্কা খেলো। এবার আর “উহ্” শব্দ গোপন করতে পারলো না। মোটামুটি ভালো শব্দ করেই “আউহ্!” বলে চেয়ারের সাথে বাড়ি খাওয়ার ফলে সদ্য প্রাপ্ত কপালের ব্যাথা ও পায়ে পেন্সিলের মত সুই ঢুকে থাকার ব্যাথার জানান দিলো। সাথে সাথে সামনের মাড়ির নড়বড়ে দাঁতটা ও বাকি তিনিটা শক্তপোক্ত দাঁত দিয়ে জিব কেটে ধরল। এই না আবার আম্মুর ঘুম ভেঙ্গে যায়।

এখনি হয়তো আম্মু লাইট অন করে ঘুম ঘুম চোখে বলবে,”কি হয়েছে তমা ওখানে কি করছো!?” আবার নিজের উপর নিজের খুব রাগও হচ্ছে তমার। রাতে পড়া শেষ করে চেয়ারটা জায়গামত রাখেনি; তাই তো এখন এমন ব্যাথা পাওয়া লাগছে। আম্মু সব সময় বলে পড়া শেষ হলে চেয়ার টেবিল সব গুছিয়ে রাখতে।

কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে দেখলো নাহ্ আম্মুর ঘুম ভাঙ্গেনি। যাক, এবার চেয়ারে উঠে লাইটটা অন করে দিলো তমা। অন করেই বিছানায় তাকিয়ে দেখলো আরে আম্মু তো নেই। মনে মনে বললো,”তমা তুমি ভুলে গেছো! তুমি তো এখন এইট ইয়ারস হয়ে গেছো! এখন কি আর বেবিদের মত আম্মুর পাশে ঘুমোবে নাকি বোকা!”

হঠাৎ দরজা খুলে গেলো! তমা নিজের অজান্তেই চিৎকার করে উঠলো,”নো! গোস্ট প্লিজ ডোন্ট ইট মি!” কিছুক্ষেণ চোখ মুখ হাত দিয়ে ঢেকে রেখে দেখলো কই গোস্ট তো আসছে না উল্ট হাসছে। আস্তে একটু আঙ্গুল ফাক করে দেখলো নাহ্ গোস্ট না আম্মু হাসছে। তমাও মুখে থেকে হাতটা সরিয়ে বোকা বোকা একটা হাসি দিলো।

আম্মু বললো, “দিন দুপুরে ভুতের ভয়! তোমাকে না কতবার বলেছি ভুত বলে কিচ্ছু নেই। বেশি ভয় পেলে আয়তুল কুরসি পড়বা।”

তমা খুব বোকা বোকা ভাব করে আম্মুর দিকে তাকিয়ে আছে!

আম্মু কথা বলেই যাচ্ছে,”হায় আল্লাহ্‌! দেখেছো গ্লাসটা ভেঙ্গে পা কেটে ফেলেছো। ফজরের নামাজ পরার আগে বলেছিলাম গ্লাসটা সাইডে রেখো না।”

তমার মনে পরলো আরে তাই তো ফজরের নামাজ পড়ার আগেই তো ও পানি খেয়ে গ্লাসটা এখানে রেখেছিলো। আম্মু তো তখনি বলেছিলো,”সাইডে রেখো না; ভেঙ্গে যাবে!”

“ভাগ্যিস এখন ছুটি চলছে। তা না হলে কি করতে তুমি? এই কাটা পা নিয়ে স্কুলে যেতে!”

আম্মু কাটা জায়গাটা মুছে দিতে দিতে কথা বলে যাচ্ছে।

তমা এখনো একটা বোকা বোকা হাসি ঠোটে নিয়ে আম্মুর দিকে তাকিয়ে আছে।

“দেখো এত্তো ব্যাথা পেয়েও বোকা মেয়েটা আবার হাসছে!”, আম্মুও ঠোটের কোনে হালকা একটু হাসি নিয়ে বললো। আর মনে মনে বললো,”আমার মেয়েটাকে আল্লাহ্‌ অনেক ধৈর্য দিয়েছেন আলহামদুলিল্লাহ্‌।ইয়া মালিক, সারাজীবন ওকে তুমি তোমার কৃতজ্ঞ ও ধৈর্যশীল বান্দাদের একজন করেই রেখো।আমিন।”

………………………..