হজ্জ ও উমরাহ তে মহিলারা যেসব ভুল করেন

হজ্জ ও উমরাহ্‌তে মহিলারা না জেনে অনেক ভুল করে ফেলেন। আপনাদের কাছে মনে হবে যে এসব ভুল খুবই সামান্য। কিন্তু না, সামান্য নয়। ইচ্ছে করলে ভুলগুলো এড়িয়ে চলা যেতে পারে।

# অনেক মেয়ে ভিড়ের মাঝে ধাক্কা দিয়ে চলেন। তাওয়াফ করার সময়, সায়ী করার সময় অথবা হাজরে আসওয়াদ বা রুকনে ইয়ামিন ধরার সময়। মনে রাখবেন, হারাম সবসময় হারাম।

মক্কা বা মদিনায় গেলে হারাম কখনো হালাল হয়ে যায় না। পর পুরুষের সাথে ধাক্কাধাক্কি হারাম। হাজরে আসওয়াদ এবং রুকনে ইয়ামিন ধরা সুন্নাহ। সুন্নাহ পালন করতে গিয়ে কি আপনি পর্দার ফরজ লংঘন করবেন?

তাওয়াফ এবং সায়ী ভিড় কমলে নীচে করা যেতে পারে। নাহলে উপরে করা যায়। উপরে তাওয়াফ করলে কারো সাথে একফোঁটা ধাক্কা লাগবে না । শুধু সময় বেশী লাগবে। আমি হিসাব করে দেখেছি, উপরে স্বাভাবিক ভাবে হেটে একবার চক্কর দিতে ১০/১২ মিনিট লাগে। তার মানে সাত বার চক্কর দিতে প্রায় ১ ঘন্টা ১০ মিনিট লাগে। আর যদি জোড়ে হাটেন, তাহলে ১ ঘন্টার কম সময় লাগে।

বেশিরভাগ পুরুষ ও মহিলা মনে করেন যে, সেখানে মহিলা ও পুরুষের ধাক্কা লাগাটা কোনো ব্যাপার না, এটাই স্বাভাবিক। জ্বী না, এটা স্বাভাবিক হিসাবে নেওয়ার সাহস করাই উচিৎ না।

আয়েশা রাদিয়াল্লাহ তায়ালা আনহাকে একবার এক মহিলা বলেছিলেন হাজরে আসওয়াদ ধরতে। উনি ভিড় দেখে ধরতে যাননি। বেশিরভাগ সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাললাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের স্ত্রীগণ রাতে অথবা ভিড় কম থাকা অবস্থায় তাওয়াফ করতেন।

# আরেকটা ভুল মেয়েরা যেটা করে, সেটা হচ্ছে তাওয়াফ করার সময় খেয়াল করে না যে, ফরয সালাতের সময় হয়ে আসছে। সালাতের সময় যখন সবাই সালাতে দাঁড়িয়ে যায়, তখন মহিলা পুরুষদের মাঝে আটকে যান, না সে তখন সালাত আদায় করতে পারে, না সে তাওয়াফ করতে পারে।

সালাতের আগেই তার তাওয়াফের এড়িয়া থেকে বের হয়ে আসা উচিৎ। পরে সালাত শেষে বাকি তাওয়াফ শেষ করা উচিৎ। অন্যের অসুবিধার কারণ হয়ে দাঁড়াবেন না।

# অনেক মহিলা পুরুষদের কাতারে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করেন। হারাম পুলিশ চেষ্টা করেন সরিয়ে দিতে। কিন্তু ঘুরে ফিরে সে আবার তার স্বামী, ভাই বা বাবার পাশে এসে দাঁড়িয়ে যান। পুরুষের পাশে এক কাতারে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করে নিজের ও অন্যের সালাত নষ্ট করবেন না।

পুরুষ ও মহিলা এক কাতারে সালাত আদায় করতে পারেন না। অনেক মহিলারা এটা করেন হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে। আর সংগী পুরুষ সেটাতে সমর্থন দিয়ে থাকেন। যদিও মদিনাতে এটা সম্ভব না। মদিনাতে সালাত আদায়ের জন্য পুরুষ ও মহিলাদের আলাদা জায়গা আছে।

# অনেক মহিলা উন্মুক্ত স্থানে বেপর্দা হয়ে অযু করেন। বিশেষ করে মক্কায় হারামের চত্তরে, মিনা, মুযদালিফা আর আরাফাতের ময়দানে। আরাফাতের ময়দানে অনেক মহিলা উন্মুক্ত স্থানে গোসল পর্যন্ত করে ফেলেন। এসব অনুচিত। পর্দা লংঘন হয়। আবার অনেক মহিলা না বুঝে ছেলেদের জায়গায় চলে যান এবং বলার পরেও শুনেন না। এদিকে খেয়াল রাখা উচিৎ।

# অনেক মহিলাকে দেখেছি ওড়না, রুমাল নিয়ে কাবা ঘরের দেওয়াল, হাজরে আসওয়াদ মুছে আনেন সোওয়াবের আশায়। এমনকি মসজিদে নববীতে গিয়ে রওযাতে কাপড় দিয়ে বানানো ওয়ালে নাম লিখেন, ওড়না ঘষে মুখ মোছেন। অনেক পুরুষও এমন করেন। এসব বিশ্বাস শিরকের পর্যায়ে পরে যেতে পারে। তাই এসব থেকে সাবধান হওয়া উচিৎ।

# মসজিদে নববীতে রিয়াদুল জান্নাহতে যাওয়ার জন্য মহিলাদের দৌড়াদৌড়ি, ধাক্কাধাক্কি, চিল্লাচিল্লি করা মোটেও উচিৎ না। কিন্তু মহিলারা এসব করেন। মসজিদের আদব মেনে চলা দরকার।

# অনেক মহিলা মিনা আর আরাফাতে বসে দু’আ না পড়ে নিজের ঘর সংসারের গল্প করেন আর গীবত করেন। ফলে নিজের আমল নষ্ট করেন, নিজের সময় নষ্ট করেন, হজ্জের টাকাটাও নষ্ট করেন। এটা চরম বোকামি। কেউ এমনটা করলে তাকে সুন্দর করে বুঝিয়ে থামিয়ে দিন, না বুঝলে তাকে এড়িয়ে চলুন।

# মিনার তাবুতে বা হোটেলের রুমে অনেক মহিলা নিজের মাহরাম পুরুষকে হুট করে ঢুকিয়ে ফেলেন বা অনেক পুরুষ নিজ দায়িত্বে ঢুকে যায়। মনে রাখতে হবে আপনার সংগী পুরুষ আপনার জন্য মাহরাম হতে পারে, অন্য মহিলার জন্য তিনি মাহরাম নন। তাই আগে থেকেই সংগী পুরুষকে সাবধান করে দিবেন যাতে মিনার তাবুতে বা হোটেলের যৌথ রুমে হুট করে যেনো প্রবেশ না করেন।

# বেশিরভাগ মহিলা জানাজার সালাত আদায় করেন না বা করতে পারেন না। অথচ জানাজার সালাতে এক কিরাত পরিমাণ সোওয়াব আদায় হয়। এক কিরাত মানে হচ্ছে উহুদ পাহাড়ের সমান সোওয়াব। হারাম শরীফে সালাত আদায়ের সোওয়াবের সাথে এক কিরাত সোওয়াব যোগ করে হিসাব করুন তো! তাই জানাজার সালাত আদায় না করলে কি পরিমান সোওয়াব থেকে বঞ্চিত হবেন, চিন্তা করেছেন কি?

# অনেক মহিলা মাহরাম ছাড়া চলে যান হজ্জে। অন্য একজনকে মাহরাম বানিয়ে নেন। এজেন্সিও টাকার লোভে এই কাজ করেন। এটা শরিয়ত সম্মত কাজ নয়।

পরিশেষে বলবো আপনি আপনার সময় আর টাকা খরচ করে হজ্জে যাচ্ছেন সোওয়াব আদায়ের জন্য, আল্লাহ্‌’র সন্তুষ্টির জন্য। তাই প্রতিটা পদক্ষেপ নিতে হবে সাবধানে। আপনি কি চান যে সময় ও টাকা খরচ করে হজ্জ থেকে সোওয়াব অর্জনের বদলে গুনাহ অর্জন করে নিয়ে আসবেন?

হজ্জ ও উমরাহ তে মহিলারা যেসব ভুল করেন
তাহনিয়া ইসলাম

জুলাই ২৭, ২০১৯ইং