ইফতারি তৈরিতে সময় বাঁচানোর কিছু অগ্রীম টিপস!

ইন শা আল্লাহ্‌ রামাদান আসতে আর অল্প কিছু দিন বাকি। প্রস্তুতি নেবার এখনই সেরা সময়। রামাদান যদিও আত্মিক উন্নয়নের মাস, তবুও দু:খজনক হলেও সত্য যে, এ মাসে আমাদের নারীদের সময়ের একটি বিশাল অংশ চলে যায় ইফতারি তৈরির পেছনে।

আজকের লেখায় শুধু ইফতারি বানানোর পেছনে যে পরিমান সময় নষ্ট হয়, তা থেকে বাঁচার কিছু টিপস থাকবে! বলা বাহুল্য টিপসগুলোর অনেক কিছুই ব্যাক্তিগত জীবনে পরীক্ষিত।

# রোজার শুরু হতে এক মাস ও নেই। এখন থেকেই কিছু খাবার তৈরি করে ডিপ ফ্রিজে জমানো শুরু করা যায়।

যেমন সমুসা, ডালপুরি, সিঙ্গাড়া, কাবাব, সব্জির চপ, রোল ইত্যাদি খাবার তৈরী করে বায়ু নিরোধক বাক্সে অথবা জিপ লক ব্যাগে রাখলে প্রায় তিন মাস পর্যন্ত তরতাজা থাকে!!

প্রতিদিন ইফতারিতে প্রয়োজন মত পরিমানের বের করে, ভেজে খেয়ে নিলেই হবে।

# প্রতি দিন অল্প অল্প করে কিছু পরোটা বানিয়ে, হাল্কা সেঁকা দিয়ে ডীপ ফ্রিজে জমানো যায় (জিপ লক অথবা এয়ারটাইট বক্সে)। রোজার দিনগুলোতে তাহলে অনেক সময় বেঁচে যাবে!

# দুই তিন কেজি ছোলা, ডাবলি বুট অথবা চটপটির ডাল প্রেশার কুকারে সেদ্ধ করে, প্রতি বেলা ইফাতারের আন্দাজে ছোট ছোট প্যাকেটে করে ডিপে রেখে দিলে, ইফাতারের সময় শুধু মাত্র বাগার দিলেই রেডি হয়ে যাবে কাঙ্খিত খাবারটি!

# বিশ্বাস না হলেও সত্য যে পেঁয়াজুর ডালও বেটে ছোট ছোট বাক্সে/ প্যাকেটে করে ডিপে রেখে সারা মাস খাওয়া যায়।

# পেঁয়াজুর ডাল পাটায় না বেটে ব্লেন্ডারেও বাটা যায়, এতে অনেক সময় ও শ্রম বাঁচে!

বাসায় লোকজনকে যদি ‘ভাজাভুজি’ খাবারের প্রেম থেকে উদ্ধার করা যায়, তাহলে ইফতার তৈরি আরো সহজ হয়ে যাবে। আজকাল শিক্ষিত ও স্বাস্থ্য সচেতন ব্যাক্তিরা অনেকেই এসব ভাজা খাবার পরিহার করছেন। নিচের টিপস গুলো তাদের জন্য।

# গরু গোস্ত ৯০ ভাগ রান্না করে, ডিপে রেখে দেয়া যায়। খাবার সময় বাগাড় দিয়ে নিলেই হবে।

# মুরগীর বুকের গোস্ত আদা রসুন দিয়ে সেদ্ধ করে ডিপে রাখলে, প্রয়োজনে তা সালাদে, স্যান্ডউইচে, নাস্তায় ব্যবহার করা যায়।

# মাছ ভেজে ফ্রিজে রেখে দিলে, দরকারের সময় হাল্কা মশলা কষিয়ে অল্প সময়ের ভেতর রান্না করে ফেলা।যায়।

# ইফতারির সময় খিচুরি একটি খুব ভাল অপশন! এতে প্রোটিন এবং কার্বো হাইড্রেট দুটিই থাকে। রাইস কুকার অথবা প্রেশার কুকারে রাঁধলে, নাম মাত্র তেল ব্যবহার করলেই চলে। এটি খেতেও উপাদেয় এবং তৈরিতেও সময় কম লাগে।

# ইফতারির টেবিলে ভাজা খাবারের বদলে ফলের চাট অথবা আধা সেদ্ধ সবজি বা সালাদ রাখা যায়। আজকাল ইন্টারনেটে অনেক মজার মজার সালাদ রেসিপি পাওয়া যায়। সেগুলো দিয়ে তৈরি করা যায় নানা স্বাদের সালাদ।

# সালাদে স্বাদ বৃদ্ধির জন্য মুরগীর মাংস (আদা রসুন দিয়ে সেদ্ধ করে), সেদ্ধ ডিম, চিংড়ী, কাজুবাদাম ইত্যাদি ব্যবহার করা যায়।

# সালাদ ড্রেসিং হিসেবে দই, সরিষার তেল ইত্যাদি ব্যবহার করলে রেডিমেড অস্বাস্থ্যকর ড্রেসিং ব্যবহার করতে হবে না।

# বাজারের রঙ দেয়া জুস, ট্যাং অথবা কোল্ড ড্রিঙ্কসের বদলে ভিন্ন ভিন্ন দিনে ঘরে বানানো যায় বিভিন্ন রকমের শরবত। যেমন কাঁচা আম, লেবু, বেল, তরমুজ, আনারস, পেঁপে ইত্যাদি ফলের রস, লাচ্ছি, মিল্ক শেক ইত্যাদি।

# মিল্ক শেক তৈরির সময় দুধের সাথে আম/ কলা/ চকলেট সিরাপ/ কাঠবাদাম/পেস্তা ইত্যাদি মিশিয়ে স্বাদে ভিন্নতা আনা যায়।

# হালিমের ডালও সেদ্ধ করে ডিপ ফ্রিজে রাখা যায়।

# নিমকি, চিড়া ভাজা ইত্যাদি আগে থেকে তৈরি করে অন্তত মাস খানেক সহজেই টিনের/কাঁচের বোতলের ভেতর রেখে খাওয়া যায়।

# প্রতি দিন রান্না না করে অন্তত দু/তিন দিনের আন্দাজে মাছ, মাংস, তরকারি রান্না করে ফ্রিজে রেখে, গরম করে খাওয়া যায়।

যারা উপরের টিপস গুলোকে অতি কল্পনা মনে করছেন, তাদের জন্য বলছি এখানের অধিকাংশ টিপস আমি বিগত রামাদান গুলোতে নিজের ঘরে ব্যাবহার করে দেখেছি এবং সত্যিই আলহামদুলিল্লাহ্‌ অনেক সময় বেঁচেছে। দেখা গেছে ইফতারির আধা ঘন্টা কিংবা কখনো মাত্র পনের মিনিট আগে রান্নাঘরের ঢুকলেও হত!!

কেউ যদি মনে করে থাকেন ফ্রিজে রাখলে খাবার এর স্বাদ নষ্ট হয়ে যায় অথবা বাসি হয়ে যায়, তাদের কে বলছি উপরে বর্ণিত নিয়ম অনুযায়ী ডীপে খাবার রাখলে খাবারের স্বাদে কোন পরিবর্তন হয় না। আর নিচের ফ্রিজেও যদি সঠিক ভাবে খাদ্য সংরক্ষণ করা হয়, কেউ বুঝতেই পারবে না যে খাবার গুলো আগে থেকে প্রস্তুত করা ছিল!

অনেকের পরিবারের সদস্যরা এক রান্না দু দিন খেতে চায় না অথবা ভাজাপোড়া না হলে চলে না। সে সব পরিবারের মহিলাদের ক্ষেত্রেই সব চেয়ে সমস্যা হয়। কারণ অন্যান্যরা তো খাবারের অর্ডার দিয়েই খালাস হয়ে যায়, কাজ গুলো তো করতে হয় আমাদেরই!!

রান্নার প্রিপারেশন, রান্না করা ও খাবার শেষে সব গুছিয়ে রাখতে গিয়েই চোখের পলকে চলে যায় তিন চার ঘন্টা কিংবা আরো বেশি।

আল্লাহ্‌ তৌফিক দিলে এই সময়টায় এক পারা কুরআন পড়ে ফেলা যায়! সূরা মুখস্ত করা যায়, তাফসির পড়া যায় ও করা যায় আরো অনেক কিছু!! ইন শা আল্লাহ্‌ আশা করি এই রামাদানে আমরা পরিবারের সদস্যদের খাবারের বিলাসীতা থেকে বিমুখ করতে পারব ও নিজেরাও টাইম ম্যানেজমেন্টের ব্যপারে সচেতন হব।

রামাদান এ অধিকাংশ মহিলার দিনের একটা বড় সময় কেটে যায় ইফতার বানাতে ও পরিবারের সদস্যদের নানা পদের খাদ্যের চাহিদা মেটাতে। পাঠকদের প্রতি অনুরোধ, ইফতারিতে এত রকমারি পদের খাবার থাকা কতটা যুক্তিসংগত সেটি নিয়ে একবার ভেবে দেখবেন দয়া করে।

আল্লাহ্‌ যে জন্য রামাদান দিয়েছেন, সে দিকে ফোকাস থাকাটাই বাঞ্ছনীয়। সংযমের এই মাসে রসনার বিলাসিতায় কি আমরা কিছুটা সংযম আনতে পারি না!

প্রডাক্টিভ রামাদানের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে এখন থেকেই। আল্লাহ্‌ যেন সব কিছু সহজ করে দেন।

————————
ইফতারি তৈরিতে সময় বাঁচানোর কিছু অগ্রীম টিপস!

রৌদ্রময়ী এডমিন

এপ্রিল ২৭, ২০১৮ইং