রামাদানের মাঝে, কুরআনের সাথে

রামাদান মাস, কথাটা শুনলে প্রথমেই আমাদের কী মনে হয়?খুব সম্ভবত আমাদের অধিকাংশেরই মনে হয় যে রোযার মাস। কিন্তু আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি যে আল্লাহ রামাদ্বানকে কিভাবে আমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন?

রমদান মাসই হল সে মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কুরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুষ্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। (২:১৮৫)

অর্থাৎ আল্লাহর দৃষ্টিতে রামাদ্বান হচ্ছে কুরআন নাযিলের মাস। সত্যি কথা কী, আমরা যদি রামাদানকে কুরআন নাযিলের মাস হিসেবে দেখতাম, তাহলে মনে হয় এটার ব্যাপারে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গী একটু অন্যরকম হত। ইফতার নিয়ে এত মাতামাতি মনে হয় একটু কমতো, আল্লাহই ভালো জানেন।

এখন রামাদানে কুরআন খতম দেয়ার একটা প্রবণতা আছে আমাদের মাঝে। আরবী কুরআন তিলাওয়াত অবশ্যই একটা দারুণ সাওয়াবের কাজ এবং প্রশংসনীয় উদ্যোগ। যাদের এই অভ্যাস আছে তারা এর সাথে এবারের রামাদানে একটা নতুন আমল করে দেখতে পারেন, যেটাকে ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে অনেক কার্যকরী মনে হয়েছে।এই টিপসটা আমি একজন স্বনামধন্য দ্বায়ীর কাছ থেকে শিখেছিলাম, মালয়শিয়াতে উনার একটি প্রোগ্রামে ভলান্টিয়ার হিসেবে উপস্থিত থাকার সুবাদে।

সেটা হল কুরআনের বাংলা অর্থ পড়ে সেটাকে একটা দুআতে পরিণত করার চেষ্টা করা। একটা উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা পরিষ্কার হবে-ধরেন আমরা যদি সূরা বাক্বারা পড়া শুরু করি, যখন পড়ব-
আলিফ লাম মীম———দুআ করতে পারি যে আল্লাহ তুমি জানো, আমি জানি না। তোমার জ্ঞানের ভাণ্ডার থেকে যেটুকু আমার জন্য উপকারী তা আমাকে দাও (কারণ এটা মুতাশাব্বিহাত আয়াত গুলোর একটি, কুরআনের যে আয়াতগুলার অর্থ শুধু আল্লাহই জানেন)।

এই সেই কিতাব যাতে কোনো সন্দেহ নেই——আল্লাহ এই কিতাবের ব্যাপারে কখনও যেন সন্দেহ আমার হৃদয়ে প্রবেশ করতে না পারে!
এটা মুত্তাক্বীদের জন্য পথ প্রদর্শক—-আল্লাহ তুমি আমাকে মুত্তাক্বীদের অন্তর্ভুক্ত কর।

এখন প্রশ্ন উঠতে পারে যে কুরআনের সব আয়াতকে কি দুআতে পরিণত করা সম্ভব? যখন কোনো একটা ঘটনা বর্ণিত হয়েছে এমন আয়াত যদি পড়ি?
যেমন মুসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ঘটনাটা যদি আমি পড়তে থাকি, যেখানে ঊনি মিশরীয়কে এমন চড় দিয়েছিলেন যে বেচারা মারাই গিয়েছিল, তবে নিশ্চয়ই আমার দুআ এটা হবেনা যে আল্লাহ আমার থাপ্পড়ে কেউ যেন কখনও মারা না যায়, বরং আমার দুআ হবে-
আল্লাহ আমি যেন কখনও কারো ব্যাপারে দ্রুত কোনো উপসংহারে না পৌঁছাই।

আল্লাহ আমি যেন কোনো ভুল করলে সাথে সাথে সেটা টের পাই ও তোমার কাছে ক্ষমা চাইতে পারি, যেমনটা মুসা আলাহিওয়াসাল্লাম করেছিলেন
আমি যেন সৎ উদ্দেশ্যেও কাউকে কখনও আহত না করি……

একটু চিন্তা করলে বুঝবো যে কুরআনের আয়াত থেকে এভাবে দুআ বানাতেও অনেক প্রজ্ঞা লাগে, আয়াতগুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতে হয়। আর এটাই মনে হয় রামাদ্বানে আমাদের সবচেয়ে বড় আমল হওয়া উচিৎ, কুরআনের অর্থ নিয়ে চিন্তা ভাবনা করার অভ্যাস গড়ে তোলা। তাহলে ইনশাল্লাহ রামাদ্বান শেষ হয়ে গেলেও কুরআন আমাদের ছেড়ে যাবে না ইনশাল্লাহ।

এ প্রসঙ্গে নিচের আয়াত দুটো আমাদেরকে উৎসাহ যোগাতে পারে-

আমি কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি বোঝার জন্যে। অতএব, কোন চিন্তাশীল আছে কি? (৫৪:১৭)

তারা কি কুরআন সম্পর্কে গভীর চিন্তা করে না? না তাদের অন্তর তালাবদ্ধ? (৪৭:২৪)

একদম প্রথম প্রচেষ্টা হিসেবে আমরা আমপারার শেষ ১০টা সূরা যেগুলো আমাদের সবারই মোটামুটি মুখস্থ আছে, সেগুলো থেকে দুআ লিস্ট বানানোর চেষ্টা করতে পারি। আসুন, এই রামাদ্বান হোক কুরআনের সাথে একটা স্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে মেইল ফলক, যা কীনা চলবে আমৃত্যু। আল্লাহ আমাদেরকে তৌফিক্ব দিন, আমীন।

রামাদানের মাঝে, কুরআনের সাথে

হামিদা মুবাশ্বেরা

মে ১৬, ২০১৮ইং