সৌদি আরবে রামাদান

সৌদী আরবে রামাদান মাস আসে সম্পূর্ণ ভিন্ন আঙ্গিকে। রহমত, মাগফিরাত, নাজাতের এই মাসকে এদেশে বরণ করা হয় রাজকীয়ভাবে। প্রতিটি শপিংমল আলোয় আলোয় সুসজ্জিত করা হয়। রামাদান মাস উপলক্ষে সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়ে সওয়াব অর্জনের পালা । গোপনে দান করা, ইবাদাতের জন্য রাত্রিজাগরণ, রোজাদারদেরকে ইফতার খাওয়ানো এমনসব পূণ্যঅর্জনের কাজগুলো সাধারণ মানুষেরাও খুব আনন্দের সাথে করে থাকেন।

কিং সাউদ ইউনিভার্সিটিতে স্কলারশিপ নিয়ে সৌদি আরবে আসার সুবাদে অনেকগুলো রামাদান মাস এখানে কাটানোর সুযোগ হয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ।
এখানে দিনের বেলায় অফুরন্ত অবসর, রাতে মসজিদে গিয়ে তারাবীহ’র সালাত পড়ে তাহফিজে কোরআন পড়া, আবার মধ্যরাত থেকে ক্বিয়ামুল লাইল।

পুরোটা রাতই কর্মব্যস্ত রাত। অথচ, কারোর চোখেমুখে ক্লান্তির লেশমাত্র নেই! সুবহান আল্লাহ। মানুষের পদভারে মুখরিত হয়ে যায় মসজিদ প্রাঙ্গন। ছোট ছোট শিশুরা বাবা মায়ের সাথে মসজিদে যায়, সমস্ত রাত জেগে থাকে খুশির আমেজে। হুইল চেয়ারে ভর করে বৃদ্ধ মানুষেরাও যান মসজিদে। হৃদয়ের সমস্ত আবেগ ঢেলে মহান রবের দরবারে নিজেকে সঁপে দেন। মানুষের মাঝে ভালো কাজের নিঃশব্দ প্রতিযোগীতা শুরু হয়ে যায়। শপিংমল গুলোতে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীগুলোতে ছাড়ের অফার চলে।

রামাদান মাস এলেই মক্কায় মসজিদে হারামে আবেগঘন তিলাওয়াতে ক্বিয়ামুল লাইল পড়ার জন্য মনটা কেমন ব্যাকুল হয়ে থাকে। এছাড়াও রমজান মাসে একটি ওমরা আদায় করলে, একটি হজ্জের সওয়াব, সেই লোভনীয় অফারটি হাতছাড়া করতে কারইবা মন চায়!

সাধারণত, শেষ দশকে মক্কায় যাওয়ার চেষ্টা করি, সঙ্গে থাকে আত্মজ চড়ুইপাখি দুটো আব্দুর রহমান ও আহমাদ এবং তাদের বাবা। পুরো রামাদান মাস জুড়েই মক্কায় যাওয়ার সাধারণ কিছু প্রস্তুতি চলতে থাকে। দেখতে দেখতেই চলে আসে আকাঙ্খিত সেই দিন।

রিয়াদ থেকে আমাদের সফর শুরু হয়, বিভিন্ন স্টপেজে থেমে থেমে সাত- আট ঘন্টার দীর্ঘ জার্নি শেষে তায়েফে পৌঁছে ইহরাম বাঁধি। তারপর, ওমরার নিয়ত করে মক্কার পথে রওয়ানা হই। আব্দুর রহমান ও আহমাদ খুব উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে ইহরামের কাপড় পড়ে, অযু করে, ওমরার নিয়ত করে। ইহরামের পোশাকে ছোট বাচ্চাদের যে কি অপূর্ব সুন্দর লাগে তা বলে বোঝানো যাবে না , সুবহান আল্লাহ!

মক্কায় যাবার পর কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে ওমরার কাজ সম্পন্ন করি। তারপর প্রতি ওয়াক্ত সালাত এবং ক্বিয়ামুল লাইল গুলো মসজিদে হারামে আদায়ের চেষ্টা করি। বাচ্চাদের নিয়ে খুব বেশি সময় মক্কায় কাটানো সম্ভব হয় না। তিন চারদিন কাটিয়েই বিষন্ন মনে চলে আসতে হয় রিয়াদে।

শেষ দশকের প্রতিটি বিজোড় রাত্রিতে মানুষের নির্ঘুম চোখগুলো ইবাদাতে নিমগ্ন হয় লাইলাতুল ক্বদরের সন্ধানে। দেখতে দেখতে রামাদানের দিনগুলো ফুরিয়ে আসে।

চলে আসে ঈদ। সরকারী – বেসরকারীভাবে পার্কগুলোতে বিভিন্ন রকম বিনোদনের আয়োজন করা হয়। আত্মীয় -পরিজনহীন প্রবাসীদের ঈদগুলোতে ভিন্নমাত্রা আনতে স্বদেশীরা সবাই একত্রিত হয়ে ঈদ উদযাপনের বিভিন্ন ধরনের আয়োজন করে থাকে।

ধর্মীয় আমেজের দিক থেকে সৌদি আরবে রামাদান মাস অনেক বেশি উপভোগ্য হলেও, প্রবাসীদের ক্ষেত্রে স্বজন পরিজনহীন হওয়ার কারণে ঈদের আনন্দ অনেকটাই ম্লান হয়ে যায়।


সৌদি আরবে রামাদান
মুসাফিরা মারিয়াম

(২৮/০৫/১৯)