কুরবানী ও ভোগবাদী সমাজ

আলহামদুলিল্লাহ পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপিত হয়েছে সারা বিশ্বব্যাপী। এ উপলক্ষে ঈমানের শাখা প্রশাখার উন্নতি করার চেষ্টা সাধনা কতটুক হলো জানি না তবে নানান রকমের রান্নার রেসিপি আর ফ্রিজ কেনার ধুম দেখে মনে হয় কুরাবনি নাম টা ঠিক খাটে না আমাদের সাথে। ভোগবানী বললে যথার্থ হয়।

মুসলিম উম্মাহ কেমন আছে জানার চেষ্টা আমাদের কাছে অনধিকার চর্চার মত! আরে! আমরা তো ভালো আছি! তারা তাদের দেশে ভালো নাই, তাদের আল্লাহ্ পরীক্ষা করছেন ইত্যাদি বলে দেই। ভাষণ দিয়ে দেই! এটা কি আমাদের জন্যেও পরীক্ষা নয়?

সেদিন সিরিয়ার এক বয়ষ্কো ভদ্রলোককে করা প্রশ্নের উত্তরে জানতে পারলাম , ঈদে তারা মাংস খেতে পারেন না। মাংসের অনেক দাম 30 অথবা 40ডলার , ওনাদের সামর্থ নেই। আর আমার অবাক লাগে আমরা কতটা বিলাসিতায় ভেসে যাচ্ছি।

চাইলেই রেষ্টুরেন্টে গিয়ে মুরগী ফ্রাই, গরুর মাংসের স্টেক আরো কত নাম না জানা রেসিপি তৃপ্তির সাথে ভোগ করি। একটা বারও চিন্তায় আসে না, সিরিয়ার ধ্বংস্তুপে কাতরাতে থাকা ছোট্ট ফাতিমা, প্যালেস্টাইনের অন্তঃসত্ত্বা হালিমা আর ইয়েমেনের অপুষ্টির শিকার শীর্ণ আমানএর কথা!

আচ্ছা আমরা কি প্রস্তুত আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে? কী উত্তর দিবো ? কখনো কি ভেবে দেখেছি!

আমার বিয়ের পর খুব অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতে পরতে হোত। এই রান্না জানা নিয়ে! অনেক কিছু রাধতে জানতাম না, এখনও জানি না। ” লোকের কথা” শুনে মন ই খারাপ হয়ে যেত। আসলেই বুঝি হরেক রকমের রান্না না জানলে গৃহিণী নামে অযোগ্য আমি।

তবে আমার ব্যক্তিগত ভাবে যেটা মনে হয়েছে সবসময়, খাবারের রেসিপি সর্বস্ব জীবন কি মুসলিমের হওয়ার কথা ছিল? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীদের জীবন থেকে কী শিখি তাহলে?

হরেক পদের ,বিদঘুটে নামের খাবার রাঁধতে যে উপকরণ লাগে সেটা অনেক মানুষের মাসিক বেতনের সমান! এটা চিন্তা করলেই রান্না বান্না (মিনিমাম প্রয়োজন ছাড়া) মাথা থেকে পালায়। আর কথায় কথায় বাইরে খাবার খেতে যাবার মত বদভ্যাস ও নাই আলহামদুলিল্লাহ। বাচ্চাদের কে সেটাই শেখানোর চেষ্টা করছি। আলহামদুলিল্লাহ।

এত কথা বলার একটাই কারণ, সবাই কে অনুরোধ কুরবানী ঈদ আমরা আমাদের নিপীড়িত ভাইদের বোনদের কথা স্মরণ করে যেন পালন করি। মুসলিম উম্মাহ এর আজকে এত দুর্বল দশার জন্য আমাদের ভোগবাদী চরিত্র ই দায়ী।

আমরা একটা অভিন্ন শরীর হতে ব্যর্থ , আমাদের নিজেদের ” ভাল খাবো” ” ভালো পড়ব” মনোভাবের জন্য। উমর বিন খাত্তাব (রা) এর পুত্রের ইচ্ছা হয়েছিলো মাংস খেতে। উনি (রা) বলেছিলেন, ” তোমার ইচ্ছা হলেই তুমি খাবে?” এই উক্তি থেকে আমাদের অবস্থান বিবেচনা করার অনুরোধ রইলো ইন শা আল্লাহ্।

আল্লাহ্ আমাকে আমার পিতামাতা, পরিবার ও সকল মুসলিম ভাই বোনদের কে বিচারের দিন যেন ক্ষমা করেন ও অপদস্ত না করেন। আমীন।

কুরবানী ও ভোগবাদী সমাজ
সামান্থা সাবেরীন মাহি

অগাস্ট ১৫, ২০১৯ইং